বার বার নিষিদ্ধের আবর্তে তুরস্কের ইসলামী আন্দোলন: প্র্রেক্ষিত বাংলাদেশ.
লিখেছেন লিখেছেন মীম রহমান ৩১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:১০:২৪ রাত
উসমানী খলিফারা অনেকটা ইসলামী আইন কানুনের আদলেই প্রায় আটশত বছর তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল. যদিও তাদের রাজতন্ত্র কায়েম, ব্যক্তিগত আচার-আচরনে ও চরিত্রের ব্যপারে কিছু সমালোচনা আছে তারপরও তারা বেশ দাপটের সাথেই ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার প্রায় ৭১ টি দেশ পরিচালনা করে. কিন্তু ইহুদীদের ষড়যন্ত্রে ১ম বিশ্ব যুদ্বে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহনে তছনছ হয়ে যায় তাদের সাম্রাজ্য. যার ফলে উসমানী খলিফাদের বিশ্বস্থ সেনা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল আতার্তুক অনেকটা আমাদের উপমহাদেশের মীরজাফরের মতই সেক্যুলার তার্কিশ প্রজাতন্ত্র কায়েম করেন ১৯২৪ সালে. ইসলামের উপর নেমে আসে সীমাহীন নির্যাতন. নিষিদ্ধ হয় আরবীতে আযান, আরবী হরফ সহ অনেক মৌলিক বিষয়গুলো. নিষিদ্ধ হয় বোরকা, দাড়ি সহ ইসলামের নিদর্শন গুলো. অনেক ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও দায়ীদেরকে করা হয় সীমাহীন নির্যাতন. এমন সময় মরহুম বদিউজ্জামান সাইদ নুরসী (রহ.) নামক ব্যক্তিটি ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসেবে. উনার লেখনির মাধ্যমে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন ইসলামকে. কিন্তু উনার উপরও নেমে আসে চরম নির্যাতন, জেল, নির্বাসন.
কিন্তু উসমানী খেলাফতের পতনের পর থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন সংগঠন করতে পারেনী/ গড়ে উঠেনী যারা ইসলামী আন্দোলনের জন্য কাজ করবে. এমনসময় ষাটের দশকে একজন মহামানবের আগমন ঘটে যিনি আনুষ্ঠানিক ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন. আর সেই মহান ব্যক্তিটি হলেন বিশিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ড. নাজিমুদ্দিন আরবাকান. তিনি তৎকালীন বড় বড় আলেমদের পরামর্শে মিল্লি গুরুশ নামে একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন. ইসলামী আন্দোলনের প্রাথমিক কাজগুলো শুরু হয়ে যায়.
১৯৭০ সালের ২৪ জুন মিল্রি নিজাম পার্টি নামে মিল্রি গুরুশের রাজনৈতিক শাখা চালু করা হয়. কিন্তু সেসময়ের সেক্যুলার সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে অর্ডিনান্স জারি করে নবগঠিত মিল্রি নিজাম পার্টিকে নিষিদ্ধ করে. নিষিদ্ধ করার পর পরই এরবাকান মিল্রি সালামাত পার্টি নামে আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন. খুব দ্রুত সময়েই পুরো তুরস্কে এর নাম ছড়িয়ে পরে. দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায় এবং ১৯৭৪ সালের সাধারন নির্বাচনে ব্যপক ভোট পেয়ে কোয়ালিশনে ক্ষমতায় চলে আসে. নাজিমুদ্দিন এরবাকান উপপ্রধানমন্ত্রী হন. ক্ষমতায় এসেই সালামাত পার্টি জনকল্যানে ব্যপক কাজ শুরু করে এবং দেশের উন্নয়নে গবেষণা ও পরিকল্পনা গ্রহন করে. মুসলিম বিশ্বকে শক্তিশালী করার জন্য উনি ব্যপক উদ্যোগ গ্রহন করেন. কিন্তু ১৯৭৮ সালে এসে আবারও অগণতান্ত্রিকভাবে এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিল্লি সালামাত পার্টিকে নিষিদ্ব করা হয়. এখানেই শেষ নয় সে বছরের ১২ সেপ্টেম্বর এরবাকানকে রাজনীতি থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়.
এরপর ১৯৮৩ সালে নতুন করে ওয়েলফেয়ার (রেফাহ) পার্টি নামে নতুন করে কাজ শুরু হয়. পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে এরবাকানের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাঙ্গা তুলে নেয়া হয়. ১৯৯৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে এই পার্টি সংখ্যাগরিষ্ট সিটি কর্পোরেশনগুলোতে জয়লাভ করে. ১৯৯৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যপক ভোটে রেফাহ পার্টি জয়লাভ করে. ১৯৯৬ সালের ২৮ জুন নাজিমুদ্দিন এরবাকানের নেতৃত্বে রেফাহ পার্টি সরকার গঠন করে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হন. আবারো দেশের জন্য ব্যপক কাজ করেন. মুসলিম বিশ্বকে এক করার জন্য লেগে পরেন, গঠন করেন D-8. কিন্তু ১১ মাসের মাথায় আবারো সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে উনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়. পার্টি নিষিদ্ধ হয়. উনাকে আজীবনের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়.
পরবর্তীতে ফাজিলত পার্টি নামে কাজ শুরু হয়. ২০০১ সালে এসে ফজিলত পার্টিও আবার নিষিদ্ধ হয়. কিন্তু এখানে এসে পার্টিতে কোন্দল দেখা দেয়. আব্দুল্রাহ গুল, এরবাকানরা লিবারেলিজম এর আদলে নতুন পার্টি গঠন করেন, যার নাম একে পার্টি. যারা ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তুরস্কের রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে. ধারনা করা হয় এই কোন্দল সৃষ্টিতে ইহুদীদের বিশাল এক চক্রান্ত রয়েছে (এ ব্যপারে পরে বিস্তারিত লিখবো). আর মূল ইসলামী আন্দোলনের কাজ শুরু সাদাত পার্টি নামে. জনপ্রিয়তার দিক থেকে তুরস্কে এখনো সাদাত পার্টির অবস্থান চতুর্থ. কিন্তু সরকার পরিচালনার অধিকাংশ লোকই সাপ্লাই দেয়/ নেওয়া হয় সাদাত পার্টি থেকে.
তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের উপর যতবেশী নির্যাতন এসেছে/ নিষিদ্ধ হয়েছে ততবেশী তার কাজ বেড়েছে. নিষিদ্ধ হওয়ার পর আবার নতুন করে যে নামেই এসেছে সাদারন মানুষ তাদেরকে আগের চেয়ে আন্তরিকভাবে গ্রহন করেছে.
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের উপর বিগত কয়েকবছর ধরে ব্যপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে. শীর্ষ দশ নেতাকে তথাকথিত বিচারের নামে আটক করা হয়েছে. শতশত ভাইদেরকে গুলি করে হত্য করা হয়েছে. হাজারো ভাইয়েরা আহত, পঙ্গুত্ব ও কারাবরণ করেছে.
তবে আমি আশাবাদী. বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির জনগনের প্রিয় সংগঠনে পরিনত হয়েছে. সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আজম স্যারের জানাজায় লাখো জনতার উপস্থিতি এই সংগঠনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সর্বশেষ দৃষ্টান্ত. অন্য দিকে একঝাক যোগ্য লোক তৈরী হচ্ছে যারা সবদিক থেকেই নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন. সবমিলিয়ে সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যেদিন এদেশের আকাশে কালেমার পতাকা উড়বে.
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১২৮৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Excellent Excellent
আল বাকারা ২:২১৪তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে ? অথচ পূর্ববতী নবীদের অনুসারিদের (বিপদের) মতো কিছুই তোমাদের উপর এখনও নাযিল হয়নি, তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট, কঠোর নির্যাতনে তারা নির্যাতিত হয়েছে, নিপীড়নে তারা শিহরিত হয়ে উঠেছে, এমনকি তৎকালীন নবী ও তার সংগী সাথীরা এই বলে আর্তনাদ করে উঠেছিল , আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে ? (আল্লাহ সান্তনা দিয়ে বললেন) নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।"
আল বাকারা ২:২১৪
মন্তব্য করতে লগইন করুন