বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট : আমাদের প্রত্যাশা
লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৫:৪৮:০৫ সকাল
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি বার বার যে যায়গাটিতে হোঁচট খেয়েছে তা হলো- সরকার পরিবর্তন পদ্ধতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সরকার থেকে শুরু করে তাঁরই সুযোগ্য কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার পর্যন্ত কোন সরকারই দেশের জনগণকে এ বিষয়টির নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি। অথচ শুরু থেকেই দেশের সাধারণ জনগণ এ বিষয়ে যথেষ্ট সোচ্চার ও প্রতিবাদি হওয়ার কারণে বিভিন্ন সরকারকে অনেক চড়ামূল্য দিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আর জনগণকে হারাতে হয়েছে অনেক সম্পদ ও মহামূল্যবান জীবন।
অনেক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক নাটকীয়তা শেষে সেনা শাসক এরশাদের পতনের পর এক ধরণের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপি সরকার গঠন করলেও পরবর্তীতে ত্ত্বাবধায়ক সরকার এর অধীনে নির্বাচন দিতে তারা অস্বীকার করে। ফলে তৎকালীন বিরোধী দল তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যন্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা নিয়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালের ব্যাপক আন্দোলন এবং ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি ও প্রাণ হানি ঘটার প্রেক্ষাপটে বিএনপি সরকার জনদাবী মেনে নিয়ে বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভক্ত করে।
দেশের মানুষ আশা করেছিল অন্তত সরকার পরিবর্তন পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে এ দেশের মানুষকে আর প্রাণ দিতে হবে না। কিন্তু জাতির জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- যেইমাত্র আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করার মত সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলো ওমনি সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতী বাতিল করে দিল।
অবস্থা এমন দাঁড়াল, যে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক এর দাবীতে ১৯৬ দিন হরতাল করল, ২৩ দিন অসহযোগ করল, অসংখ্য গাড়ি ও দোকান-পাট পোড়াল,
হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি করল, অসংখ্য মানুষের জীবন হানি ও বিপন্ন করল সে আওয়ামীগ আজকে তত্ত্বাবধায়কের কল্যাণে ক্ষমতায় আসীন হয়েই স্বীয় মসনদ চিরস্থায়ী করার জন্য প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বব্যপী সমাদৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিটিই বাতিল করে দিল। অপরদিকে যে বিএনপি আওয়ামী লীগের জ্বালাও-পোড়াও আর নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতী মেনে নিতে বাধ্য হলো, আজকে তাদেরকেই আবার আওয়ামী লীগের নিকই তত্ত্বাবধায়কের দাবীতে আন্দোলন করে জীবন দিতে হচ্ছে। দেশকে আবার অস্থিতিশী করে তুলতে হচ্ছে।
দেশে হাজারো সমস্যা আর সংকটের মধ্যেও মৌলিক সমস্যা কেবলমাত্র একটিই। সেটি হল- একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন।
আজকে বিরোধী জোট নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সংকট যেমনি তরান্নিত করছে, তেমনি আবার প্রতারণাপুর্ন নির্বাচনের ফসল নির্বাচন বিহিন সরকার, হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করছে।
বিরোধী জোট আজ গণ আন্দোলনের সুযোগ বঞ্চিত হয়ে যেমনি ককটেল আতংক ছড়িয়ে কর্মসূচী স্বফল করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় লিপ্ত, তেমনি সরকারী এজেন্সি বোমাতংক ছড়িয়ে বিরোধীদেরকে জঙ্গি প্রমাণের হীন প্রয়াসে লিপ্ত। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পেট্রোল বোমার আঘাতে জ্বলসে যাওয়া মানব সন্তানের আর্ত চিৎকার বাংলার আকাশ-বাতাশ যেমন ভারী করে তুলছে, তেমনি আবার অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষ সরকারী বাহীনির গুলির আঘাতে পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
একদিকে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের অফিসে অগ্নি সংযোগের মত ঘটনা ঘটছে, যুব লীগ ছাত্রলীগের সাধারণ ছাত্ররাও হামলার স্বীকার হচ্ছে। আইনের অতন্দ্র প্রহরী পুলিশ সদস্যরাও এখন আর নিরাপত্তাবোধ করছে না। হত্যাকান্ডের স্বীকার হচ্ছেন তারাও।
অপরদিকে কেবলমাত্র ছাত্র শিবির অথবা ছাত্র দল এর সাথে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন অসংখ্য নিরাপরাধ ও মেধাবী ছাত্র। মা বাবার সামনে থেকে, খাওয়ার টেবিল থেকে এমনকি পড়ার টেবিল থেকে তুলে নিয়ে তাদেরকে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে অথবা একপক্ষীয় বন্দুক যুদ্ধের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে।
হত্যাকান্ড কেবল হত্যাকান্ডকেই সাহিত করে। অতিরিক্ত বল প্রয়োগ কেবল বিদ্রোহের আগুনকেই প্রজ্জলিত করে। অন্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা মানে নিজেদের নিরাপত্তাকেই নষ্ট করা। প্রতিহিংসা একটি সমাজকে কেবল ধ্বংসই করতে পারে। আমরা আশা করি আমাদের রাজনৈতিক কর্মীগণ এবং বিভিন্ন সংস্থার লোকেরা বিষয়টি ভুলে যাবেন না।
আমরা আশংকা করছি, অনতি বিলম্বে সকল পক্ষ্য সহনশীলতার পরিচয় না দিলে দেশের অবস্থা আরো খারাপের দিকে ধাবিত হবে, যা কারোরই কাম্য হতে পারে না।
আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকার একগুঁয়েমী ও হটকারীতা ত্যাগ করে জরুরী ভিত্তিতে সংবিধান পুনঃ সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে একটি গ্রহন যোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। মানুষের প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব মানুষের হাতে ছেড়ে দিবেন। গাঁয় মানেনা আপনি মোড়ল অবস্থা ত্যাগ করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব অর্জনের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করবেন।
আমরা প্রত্যাশা করছি বিরোধী পক্ষ আন্দোলন করতে গিয়ে কোন অবস্থাতেই আতংক ছড়াবেন না। মানুষের জান-মালের ক্ষতি হয় এমন হটকারী কর্মসূচী দিবেন না। ক্ষমতায় আরোহনের মোহে হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে দেশের মানুষের কথা ভুলে যাবে না।
আমরা রক্তাক্ত বাংলাদেশ চাইনা। আমরা সবুজ শ্যামল সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। নিরাপদে বাঁছতে চাই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। আমরা ভবিষ্যত জেনারেশনের জন্য নিজেরা অভিশাপ হতে চাই না।
বিষয়: রাজনীতি
২১৩৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা রক্তাক্ত বাংলাদেশ চাইনা। আমরা সবুজ শ্যামল সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। নিরাপদে বাঁছতে চাই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। আমরা ভবিষ্যত জেনারেশনের জন্য নিজেরা অভিশাপ হতে চাই না --না -- না ।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আল্লাহর দরবারে আমাদের প্রার্থণা হল- হে আল্লাহ এদেশের মানুষকে তুমি রক্ষা কর। আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন