অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশের রাজনীতি : দায়-দায়িত্ব কার
লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:১২:৫০ রাত
১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রটি সম্মানের সাথে স্থান করে নেয় তারই নাম বাংলাদেশ। আমার প্রিয় জন্মভূমি, আমার প্রিয় মাতৃভূমি সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলাদেশ। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনাবসানে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামে যে দেশটি সৃষ্টি হয়েছিল, তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান শোষণ, বৈষম্য, ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে সংগঠিত মুক্তিকামি জনতার সম্মিলিত সশস্ত্র যুদ্ধে চুড়ান্ত বিজয়ের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।
মুসলিম বিশ্ব হতে ভৌগলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন এ দেশটি বৃহত্তম হিন্দুরাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমার কর্তৃক পরিবেষ্টিত। এর দক্ষিণে রয়েছে বিশাল জলরাশির বঙ্গপোসাগর। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের তুতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। অশিক্ষা, দারিদ্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার নানান চ্যালেঞ্জ সত্বেও নাগরিক শ্রেণীর সামগ্রিক প্রচেষ্টার কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদেশের অর্জন রয়েছে অনেক।
অদক্ষ জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলে, আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে, অর্থনৈতিক বৈষম্য আর রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধ করে আস্থার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশটির রয়েছে অপার সম্ভাবনা। নাগরিক হিসেবে এদেশের মানুষ যথেষ্ট ভদ্র, মার্জিত, রুচিবান, আন্তরিক, বিনয়ী, আবেগময় ও উদার। একইসাথে তারা খুবই পরিশ্রমি, সাহসী, উদ্দ্যমী, সৃষ্টিশীল এবং উন্নয়ন মনস্ক। পশ্চিমাদের কাছে এদেশের সমাজ চিত্র এতই বিচিত্র যে, গোটা দেশের মানুষকে একটাই পরিবারের মত মনে হয়।
এদেশের রয়েছে হাজার বছরের ধর্মীয় ঐতিহ্য। হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর সময়েই আরব বনিক সাহাবিগণের মাধ্যমে এদেশে কালেমার বাণী পৌঁছায় বলে ঐতিহাসিকগণ মত দিয়েছেন। কয়েক শতাব্দি যাবত এঅঞ্চলে মুসলিমগণ শাসনকার্য পরিচালনাকালে সনাতন ধর্মের নির্যাতনের নিষ্ঠুর যাঁতাকলে নিষ্পেষিত সাধারণ মানুষ ইসলামে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মুক্তির অন্নেষায় ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করে। যার ফলে গোটা ভারতের চেহারাটাই বদেলে যায়। আজকের ভারতবর্ষও মুসলিম ঐতিহ্যের অসংখ্য সাক্ষ্য বহন করছে।
মুসলিম শাসন অবসানের পর এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভাগ্য যে, তারা আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই অর্জন করতে পারেনি। ১৯৪৭ সালে খেলাফত প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলেও বৃটিশ ভারতের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদেরই হাতের পুতুল দালাল শ্রেণীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কারণে মুসলিমগণের সে স্বপ্ন আর পুরণ হতে পারেনি। পাকিস্তানের ক্ষমতাশীনরা মুসলিমদের সাথে ইসলামের নামে প্রতারণা করেছে। গাদ্দারী করেছে গোটা রাষ্ট্রের জনগণের সাথে। ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্র আত্ম প্রকাশ করে। মানবিক সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক সুষম বন্টন আর গণমানুষের ভোটের অধিকারের অঙ্গিকার নিয়ে যাত্রা শুরু করে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
সে দিন মুক্তির নেশায় আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা আশা করেছিল তারা বিজয়ী হলে নতুন রাষ্ট্রে কোন অন্যায়-অবিচার থাকবেনা। কোন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও রাহাজানি থাকবেনা। ক্ষমতাবানরা মানুষের সম্পদ লুন্ঠণ করবে না। স্বদেশের পুলিশ তো আর গুলি চালিয়ে কোন মায়ের বুক খালি করবে না। তারা স্বপ্ন দেখেছিল সুখি সমৃদ্ধশালী গণমানুষের সম্মিলিত এক বাংলাদেশের। যেখানে সকল ধর্মের মানুষ থাকবে কিন্তু ধর্মীয় হানা হানি থাকবে না। যে দেশে সকল দল, মত ও পথের মানুষ থাকবে। সকলেই যার যার মত ও আদর্শ প্রচার করবে কিন্তু কোন বাড়াবাড়ি বা কোন্দল থাকবে না। মানুষ যাকে পছন্দ করবে তাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিবে কিন্তু উর্দি পরা কেউ এসে নাক গলাবে না।
আজকে স্বাধীনতার ৪৪ বছর ও কি এদেশের মুক্তিকামি মানুষের সে আশা পুরণ হয়েছে? মুক্তির নূন্যতম স্বাধ কি কোন সাধারণ নাগরিক পেয়েছে? নাকি বিদেশি জুলুমশাহীদের বীরদর্পে তাড়িয়ে স্বদেশি জুলুমবাজদের গোলামির জিঞ্জিরে কাপুরুষোচিত স্বেচ্চা বন্দিত্ব গ্রহন করেছে?
কি দেখছি চারদিকে আজ! বি এন পি আর আওয়ামী লীগের নামে বিভক্ত করে ভাইকে দিয়ে ভাই হত্যা করা হচ্ছে? শিবির আর ছাত্রলীগ, পুলিশ আর সরকার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, দলীয় পদ প্রাপ্ত আর পদ বঞ্চিত আরো কত যে বিভক্তি, বিদ্দেষ, বিদ্রোহ ও ঘৃনা সৃষ্টি করে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে।
আজকে কেবলমাত্র বিশেষ ইসলামি দলের সমর্থক হওয়ার কারণে নিরিহ ছাত্র যুবকদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। রাস্তার পাশে, জঙ্গলে, ঝোঁপে পড়ে থাকে মানুষের লাশ। সম্ভ্রম হারাচ্ছেন আমাদের মা- বোনেরা। বছরের পর বছর দেশে ইসলামের নামে কোন সভা সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিরোধি রাজনৈতিক দল সমুহের অফিস খোলা যাচ্ছে না দেশের কোথাও। তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রি মাসের পর মাস নিজ অফিসে অবরুদ্ধ।
অপরদিকে নিরীহ নিরাপরাধ ও দেশ সেবায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও আক্রমনের শিকার হচ্ছেন প্রতি নিয়্যত। বিপথগামী পুলিশ সদস্য কর্তৃক সংগঠিত হচ্ছেনা হেন কোন অপরাধ আজ আর পাওয়া যাবে না। সরকারী দলের সমর্থক পর্যন্ত আজ নিরাপদ নয়। তারাও হয়ত নিজ দলের ভাগ বঞ্চিত কারো দ্বারা অথবা অন্যকোন ভাবে আক্রমনের শিকার হচ্ছেন।
অতি সম্প্রতি সবচেয়ে ভয়ানক উপসর্গ দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা এখন প্রতি দিনের প্রতি মুহুর্তের খবর। তাও আবার সাধারণ কোন ককটেল নয়, পেট্রোল বোমা। আক্রমনের শিকার মানুষ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে মুহুর্তে। হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পুড়ে যাওয়া মাবন সন্তানের আর্ত চিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে স্বাধীন দেশের আকাশ।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র্যাব বা বিজিবি প্রধান কারো কথাই এখন আর বিশ্বাস হতে চায় না, কেবল হন্বি তম্বি আর নিরীহ মায়ের নিষ্পাপ সন্তান গুম আর খুন। সরকারের মন্ত্রিরা পাগলের প্রলাপ বকছেন, একটাকেও সুস্থ্য মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রির প্রতিটি বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। বিরোধি দল বলতে আজ আর কিছু নেই বলেই মনে হয়। সরকারের পকেট বিরোধি দল একটা অবশ্য আছে বলে শুনি। চরিত্রহীন এক বেহায়া বৃদ্ধ তার কর্নধার, যাকে বিশ্বের মানুষ সৈরাচার বলেই জানে। তিনি কিনা আবার নির্বাচন হীন সরকারের প্রধানমন্ত্রির উপদেষ্টা, জানিনা এটিও কিনা আরেক মিথ্যাচার।
আমেরিকা প্রবাসি আরেক মামা উপদেষ্টা আছেন আমাদের। তিনি আমার বোনকে কি উপদেশ দেন তা মামার এলোমেলো কথা থেকেই বুঝা যায়। বন্ধিদশায় অন্য সকল বিরোধি নেতা-নেত্রি। কেবল মনে হয় কিছু নাশকতাকারীর নিকট জিম্মি আমার স্বাধীন দেশ।
আসলে কে চালায় সরকার, কে চালায় দেশ? মাননিয় শেখ হাসিনা? না আমার তা মনে হয়না, কারণ ১৯৯৬-২০০১ তাঁর শাসন আমরা দেখেছি, কোনভাবেই মিলে না। খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান? না তারা ও তো বন্দিদশায়। তবে কি জামায়াত নেতারা চালাচ্ছেন দেশ? তা কি করে সম্ভব! অপমানজনক মিথ্যা মামলায় কারাগারে অন্তরীণ তারা আজ।
আজকে সরকারের নেতাদের নিরাপত্তা নেই। সরকার সমর্থকদের নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজির বিভিন্ন বাহিনির সদস্যদের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নেই। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নেই। সাধারণ জনতার ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। বিরোধি দলের নিরাপত্তাতো মোটেই নেই।
দায়িত্বশীল পর্যায়ের ব্যক্তিদের কথা ও আচরণ আরো অনিরাপদ করে তুলছে এ দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ। কেন এ অবস্থা?
পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লষণ করলে আপনি নিশ্চিভাবে যে বিষয়টি দেখবেন তা হল- কোন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ, পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষমতাশীনদের রাজনৈতিক আচরণের উপর।
বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসও এ সাক্ষ্যই দেয়। বাংলদেশের বর্তমান পরিস্থিতিও এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। সরকার তার আচরণ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনীতি সুলভ করলে অন্যান্যরা আবারও সে অনুযায়ী আচরণ করতে বাধ্য হবে।
সুতরাং দেশের সংকটাপন্ন এ পরিস্তিতিতে সরকার বলে পরিচিত সংস্থাকেই দায়িত্ব নিয়ে সকল সমস্যা সমাধান করতে হবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দায় আর কারো নয়। নাগরিক হিসেবে অবশ্য আমাদের সকলেই দায়িত্ব আছে। সত্যকে সমর্থন ও সহযোগীতা করা আর মিথ্যাকে পরিত্যাগ এবং প্রতিহত করা।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৩৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লষণ করলে আপনি নিশ্চিভাবে যে বিষয়টি দেখবেন তা হল- কোন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ, পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্ষমতাশীনদের রাজনৈতিক আচরণের উপর।
অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।
সাধারণ জনতার অভিব্যক্তিই চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে নান্দনিক উপস্হাপনায়!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আপনার লেখনীর শেষাংশের সাথে পুর্ণ সহমত আমিও!
'সত্য কে সমর্থন ও সহযোগীতা আর মিথ্যা কে পরিত্যাগ ও প্রতিহত করার মাধ্যমে আমাদেরও যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে!!
কুরআনের পথে চলব শপথ নিয়েছি আজ
নাহি মৃত্যুভয় নাহি সংশয় চলবে দাওয়াতি কাজ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন