প্রিয় বাংলাদেশ আমার : আজব বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:২১:৩৯ রাত
সারা বিশ্বের মধ্যে অত্যন্ত ব্যতিক্রম ধর্মী একটি দেশ হচ্ছে আমার প্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ। এমনকি অত্যন্ত আজব দেশ এটি, যার তুলনা পৃথিবীতে পাওয়া মুশকিল। আরবরা এদেশকে বলে বানযালা আর চাইনিজরা বলে মানজালা। আরব কোন পণ্ডিত এর কোন অর্থ বা ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম কিনা জানি না তবে চাইনিজ এক ভদ্র লোক যিনি চিন সফরে আমার গাইড ছিলেন, তিনি এর অর্থ যা বললেন তাহলো: মানজালা। মানে দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, বন্যা, খরা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় কবলিত দেশ।
অবশ্য দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ অর্থ আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে। তা হল- দুশ্চিন্তা, দুরাশা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসন, দুর্দশা আর দুর্ভাবনা কবলিত দেশ এটি।
এখানে কেউ মুক্তি যোদ্ধা, কেউ আবার রাজাকার। কেউবা মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আবার কেউ বিপক্ষের শক্তি। কেউ হয় চেতনায় মুক্তি যোদ্ধা আবার রাজাকারও হয় চেতনাগত বিরোধের কারণে। এখানে যুদ্ধ না করেও মুক্তি যোদ্ধা আছে, আবার মুক্তি যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের পরও চেতনায় কেউ রাজাকার রয়ে গেছে। এমনও খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন যিনি কিনা ভুল ক্রমে মুক্তি যুদ্ধ করেছেন বটে, আসলে পাকিদের দোসর ই ছিলেন। আবার যুদ্ধকালীন পাকি সরকারের অনুগত ও বিশ্বস্ত এমন কর্মচারীও আছেন, যিনি এখন ১০০% খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। দীর্ঘ ৯ টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হল। অসংখ্য বীর বাঙ্গালী জীবন দিল। ৪৩ বছর আগে দেশ স্বাধীন হল বটে, এখনো জানতে পারলাম না মুক্তিযুদ্ধে শহিদের প্রকৃত সংখ্যা কত? কেউ বলে ৩০ লাখ, কেউ বলে কয়েক লাখ। আসলে কেউ জানে না কত লাখ!
এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আছে, তাদের শক্তিও সত্যি সত্যি আছে, নেই কেবল যুদ্ধাহত বীর মুক্তি যোদ্ধাদের সঠিক কোন তালিকা। এখানে নেই বাংলার গৌরব ঐ মা-বোনদের সঠিক কোন পরিসংখ্যান, যারা সম্ভ্রম হারিয়েও পাকিদের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি। অবশ্য সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার এখানে কোন অভাব নেই। এখানে শাহবাগের মোড়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদের কথা শোনা যায়। অবশ্য তারা নাকি এখন তৃতীয় মুক্তি যুদ্ধের অপেক্ষায়। এদেশে বাস করে আমরা বুঝতে অক্ষম কে সরকার চালায়! অবশ্য সমালোচকেরা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বা বিদেশে থাকা উপদেষ্টারা দেশের বাইরে থেকে সব করে যায়। কখনো শুনি পতাকা উত্তোলনকারীরা ই নাকি আসল সরকার। এখানে গণতান্ত্রিক জাতীয় নির্বাচন হয়, সে নির্বাচনে আবার সরকারও গঠিত হয় কিন্তু কোন ভোটার লাগে না এমনকি এখন আর প্রার্থীও লাগে না।
আজব এক দেশ বটে। এখানে নেশাখোর, মদখোর, গাঁজা বা ইয়াবা খোর, সুদ খোর, ঘুষ খোর, চোগল খোর, এমনকি চোর-ছেঁচড় বা ডাকাত, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী, চাপাবাজ, দাগাবাজ, চাঁদাবাজ ইত্যাতি কাউকেই পুলিশে খোঁজ করে পায় না। তবে নবীজীর সুন্নত একটু দাড়ি বা টুপি দেখলেই তারা কাঙ্ক্ষিত আসামি পায়। জঙ্গি বা সন্দেহ ভাজন পায়। ঘরে বাইরে সবখানে অশ্লীল বইয়ের ছড়াছড়ি কিন্তু আমার পুলিশ খুজে পায়না। কেবল ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বই পেলেই তারা জেহাদি বই পায়।
এটি যে মানজালা। যারা যুদ্ধ বাঁধায়, যারা যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, যারা অসহায় মানুষকে রেখে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে, অথবা যারা পক্ষে বা বিপক্ষে যুদ্ধ করে তারা এখানে কোন ভাবেই যুদ্ধাপরাধী হয় না। এখানে যারা যুদ্ধের পর প্রতিপক্ষ অপরাধী দেরকে রাজকীয় সম্মানে রাষ্ট্রীয় অতিথি বানায় অথবা যারা যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরও কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে লক্ষাধিক নাগরিককে হত্যা করে, এমনকি যুদ্ধের পর যাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী আচরণ বা অন্যায় অত্যাচারের অভিযোগ উঠে, সদ্য স্বাধীন দেশে যাদের নামে অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়, যাদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য পরিচালিত হয় অথবা অপরাধীদের সাথে যারা আপোষ করে বা তাদের ছেড়ে দেয় তারা কেউ এখানে যুদ্ধাপরাধী নয়।
এমনি ব্যতিক্রমী দেশ এটি, এখানে যারা নিতান্তই নিরীহ মানুষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ পছন্দ করেন না, যারা জীবনে কাউকে একটি ধমকও দিয়েছেন বলে বিবেক সাড়া দেয়না প্রমাণও নেই, যারা অতি সাদামাঠা সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত, যারা আল্লাহর ইবাদাত করেন, মানুষকে ভাল পথে ডাকেন আর যুদ্ধকালীন সময়ে কেবল এতটুকুই বলেছেন: 'সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধের চাইতে আলোচনাই কি উত্তম নয়।' আজকে তাঁরাই এদেশে খাঁটি যুদ্ধাপরাধী।
হায়রে আজব দেশ এটি। মুক্তি যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হল গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর এর দাবীতে, আর যুদ্ধ বিজয়ের পর নির্বাচনী ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্রকেই তারা অস্বীকার করে বসল এবং নির্বাচন বিহীন এক ব্যক্তির আজীবন শাসন তথা বাকশাল কায়েম করে ছাড়ল। অর্থনৈতিক সুষম বন্টন আর সামাজিক সুবিচারের দাবীতে দেশ স্বাধীন হল অথচ সদ্য স্বাধীন দেশে নাকি চোরের খনি পাওয়া গেল। জননেতা ফেরাউনের প্রেতাত্মায় পরিণত হল, আর তারই নেতা গণমুক্তির কথা বলায় কারা বন্দি হল। মানুষ যাকে মহা ত্রাণকর্তা ভেবে অকুণ্ঠ সমর্থন করেছিল, সেই ক্ষমতার মসনদে বসে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসে জুলুম শাহির রূপ নিল।
মানজালা নামের স্বার্থকতা মনে হয় এখানেই যে, এদেশে সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা মনে হয়। ব্যক্তি আর গোষ্ঠীগত স্বার্থে সবকিছুই যেন এখানে দ্রুত রং বদলায়।
আর হ্যাঁ এখানে আবার শুরু হতে যাচ্ছে যুদ্ধ। রাজনীতিতে চলবে বাকযুদ্ধ আর অশ্লীল আচরণ এবং কথা চালাচালির যুদ্ধ। কারো ক্ষমতায় টিকে থাকার যুদ্ধ, আবার কারো ক্ষমতায় আরোহনের যুদ্ধ। এছাড়াও রয়েছে কতিপয় রাজনৈতিক শত্রুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার যুদ্ধ। এখানে কেউ করবেন গণতন্ত্র রক্ষা করার যুদ্ধ, কারণ তারা ভোটার ও প্রার্থী বিহীন গণতন্ত্র এর নজির স্থাপন করেছেন। আবার কেউ করবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ, কারণ তাদের তরুণ প্রজন্মকে এখনো যে দেশের অর্থ চুরি করে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। এজন্য দরকার প্রত্যেকের নিজস্ব মডেলের গণতন্ত্র, সুবিধাজনক অবস্থায় নির্বাচন, নিজের মত করে সরকার গঠন ইত্যাদি। যাতে সরল জনতাকে দেয়া ভেলকিবাজি আর ধোঁকাবাজি অব্যাহত রাখা যায়। এতো গেল তন্ত্রের কথা, কেউ আবার আসছেন মন্ত্র নিয়ে। তৃতীয় বা চতুর্থ মুক্তি যুদ্ধের মন্ত্র শেখাবেন তারা।
সব মিলে আবার হরতাল, আবার অবরোধ, অদৃশ্য শক্তির অগ্নি সংযোগ, সম্পদ হানি, মানুষ হত্যা, পুলিশি অভিযান, গ্রেফতার বানিজ্য ইত্যাদি। অচল হবে যানবাহন, বন্ধ হবে কল কারখানা, অফিস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর অসংখ্য কৃষি খামার। থেমে যাবে উন্নয়ন আর উত্পাদন। দেখা দিবে অভাব, হতাশা, ক্ষোভ, অপরাধপ্রবণতা আর সামাজিক বিশৃঙ্খলা। ভুলুণ্ঠিত হবে মানবতার মুক্তির প্রকৃত চেতনা।
অবশ্য তাতে কার কি যায় আসে, কারণ এদেশ যে মানজালা। দুর্যোগের দেশ। দুর্যোগই কি আমাদের নিয়তি? হে আমার তরুন ভাই-বোনেরা! একটুও কি ভেবে দেখবে না?
বিষয়: বিবিধ
১৭৬০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চীনাদের দেয়া নাম 'মানজালা' বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থই মনে হয়!
চেতনার মহা স্রোতে আমরা ভেসে যাচ্ছি অজানায়!
সুন্দর উপস্হাপনায় ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম!
ইনশা আল্লাহ সে দিনের প্রতিক্ষায়......।
অনেক ভাল হয়েছে ভাইয়া । আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন