পরনিন্দা :আত্ম বিনাশী এক প্রবণতা
লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:০৮:০৩ সকাল
গীবত বা পরনিন্দা হল, অন্যের ব্যাপারে ঐ সত্য কথাটুকু তার পিছনে বলা, যা কোন কারণে তার সামনে বলা যাচ্ছেনা। অথবা সামনে বলতে আপনি ভয় পান, অথবা সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশংকায় বলেন না, অথবা বলার প্রয়োজন বোধ করেন না। কিন্তু তার অনুপস্থিতে কথাটা আপনি খুব সহজেই বলতে পারেন। এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তির কোন ক্ষতি হোক, এমন কামনা যদি নাও থাকে, তথাপি এটি গীবত। যেখানে সমাধান নেই শুধুই আলোচনার জন্য আলোচনা-পর্যালোচনা সেটিও গীবত।
রাসূল (সা.) বলেন, গীবত হচ্ছে কারো অসাক্ষাতে তার সম্পর্কে এমন সব কথাবার্তা বলা, যেগুলো শুনলে সে অপছন্দ করবে। এসব দোষ চর্চা সে ব্যক্তির দেহ, বংশ, কথা, কাজ, ধর্ম, দুনিয়া, আখিরাত, এমনকি তার পোষাক পরিচ্ছেদ, এবং আরোহণের জন্তু বা বাহনের সাথে সম্পর্কিত হলেও তা গীবত বলে পরিগণিত হবে। জনৈক বুজুর্গ বলেছেন, যদি এ কথা বলা হয় যে, অমুক ব্যক্তির গায়ের পোশাকটি লম্বা অথবা খাট, তাহলে এটিও গিবতের মধ্যে গন্য হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, 'প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দা কারীর জন্য দুর্ভোগ।' তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। 'তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা একে ঘৃণাই কর।'
রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা গীবত থেকে সতর্ক থাক; পুরোপুরি তা পরিহার কর, কেননা গীবত ব্যভিচারের চাইতেও জঘন্য। কারণ, ব্যভিচারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তওবা করলে তিনে তা ক্ষমা করে দিবেন; কিন্তু গিবতের জন্য গীবত কৃত ব্যক্তির মার্জনা ব্যতীত আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
পরের দোষ চর্চা ইদানিং মানব সমাজে অতি সাধারণ একটি বিষয়ে রূপ নিয়েছে। দুজন ব্যক্তি একত্রিত হলে তৃতীয় ব্যক্তির সমালোচনাই যেন সাক্ষাতের মূল খোরাক। আবার তৃতীয় জন উপস্থিত হয়ে গেলে চতুর্থ জনের দোষ চর্চায় মজলিস যেন বেশ জমজমাট হয়ে উঠে। ফলে পারস্পরিক আস্থা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার আর মানসিকতা থাকেনা। নিজের ভুল-ত্রুটি আর দেখতে পাওয়া যায়না বিধায় সংশোধনেরও উপায় থাকেনা। অপরদিকে বন্ধু গণের তো এখন অভ্যাসই হল আপনার দোষ আপনার সামনে বলবেন না। আপনিও তা জানেন, তাই যখন আপনিও কিছু বলেন, পেছনেই বলেন। সামনে বলতে পারেন না। আবার আপনার কোন শুভাকাঙ্ক্ষি আন্তরিকভাবে আপনার কোন দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দিলেও আপনি সাদরে তা গ্রহন করতে পারেন না। তার প্রতি সম্মানবোধ হারিয়ে ফেলেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিভিন্ন অজুহাতের আশ্রয় নেন। যা নিতান্তই মিথ্যার নামান্তর। এমতাবস্থায় আত্ম সংশোধনের সকল পথ রুদ্ধ প্রায়। বরং চলছে আত্ম বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের জোর প্রতিযোগিতা। সমাজ হচ্ছে কলুষিত। মানুষ হারাচ্ছে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান। খুব ভিতর থেকে অত্যন্ত সন্তর্পণে ক্ষয়ে যাচ্ছে মানবতা। মানবাত্মা হচ্ছে জরাজীর্ণ ও রোগাক্রান্ত। বিজয়ী হচ্ছে পাশবিকতা। এখান থেকে জন্ম নিচ্ছে : অহংকার- অনাস্থা- হিংসা- ক্ষোভ- আর বিধ্বংসী মানসিকতা।
অতএব, পরনিন্দা আত্মাকে কলুষিত করে, সামাজিক বন্ধন নষ্ট করে, এবং বহু গুনাহের উৎস রূপে কাজ করে। আমাদেরকে শুভাকাঙ্ক্ষিদের পরামর্শ সাদরে গ্রহন করতে হবে। কারো ব্যাপারে কিছু বলার থাকলে আন্তরিক পরিবেশে একান্তে তাকেই বলতে হবে। নিরহংকার ও বিনয়ী হতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর পোষ্ট । জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন