জাতীয় উন্নয়ন ও সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন

লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:০৮:৩৮ রাত

কোন সমাজ বা জাতিকে উন্নতি ও কল্যাণের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য অবশ্যই সত্যাশ্রয়ী, যোগ্য, আমানতদার ও ঈমানদার নেতা নির্বাচন করা নাগরিকদের জন্য অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন হচ্ছে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত আমানত আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে যোগ্য ব্যক্তির উপর সমর্পণ করা। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপি নির্বাচনের যে পদ্ধতি প্রচলিত আছে তাকে ভোটাধিকার প্রয়োগ বা ভোটদান পদ্ধতি বলা হয়। ইসলামে রাষ্ট্রের সকল অধিবাসি তথা নারী বা পুরুষ, যুবক বা বৃদ্ধ, শহর বা গ্রামবাসী, ডিগ্রিধারী বা ডিগ্রিহীন, বিত্তশালী বা বিত্তহীন এমনকি পথিক বা নিজ বাড়িতে অবস্থানকারী সকলেরই ভোটাধিকার রয়েছে। এটি নাগরিকদের সর্বজনীন অধিকার যা কোন অবস্থাতেই কেউ হরণ করতে পারেনা। কারণ ইসলামি সমাজব্যবস্থা প্রকৃতই গণ অধিকারের প্রতীক। এখানে চেতনা শীল প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষই আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি।

ইসলামের নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রতিটি নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তার পছন্দের নেতা বা দায়িত্বশীল নির্বাচন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে নাগরিকগণ কে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয় যে- তার ভোট সত্য অথবা মিথ্যার পক্ষে সাক্ষ্য সরূপ, সুপারিশ সরূপ এবং জাতীয় স্বার্থে উকিল বা অভিভাবক নির্বাচন স্বরূপ।

সুতরাং এ ভোটাধিকার তথা আমানতের প্রয়োগ অত্যন্ত বিবেচনা প্রসূত এবং সতর্কতামূলক হতে হবে। দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাবাদী, ওয়াদা ভঙ্গকারী, আমানতের খেয়ানতকারী, সন্ত্রাসবাদী, ভীতু বা দুর্বল চিত্ত, দুর্বল ব্যক্তিত্ব ও শারীরিক বা মানুষিকভাবে অক্ষম এমন ব্যক্তিকে কোনভাবেই নেতা নির্বাচন করা যাবেনা।

অপরদিকে ইসলামি আদর্শ পরিপন্থি কোন রাজনৈতিক দর্শন বা মতাদর্শে বিশ্বাসি ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনে সত্যাশ্রয়ী হলেও নেতৃত্বের যোগ্য মোটেই নয়। কারণ, ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা উক্ত ব্যক্তির চেতনা বিরোধী এবং উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা (সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে) সম্পূর্ণ ভঙ্গ করেছেন। নির্বাচিত হবেন তিনি, যিনি আল্লাহর আইন ও বিধানে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন, যেমন আল্লাহ পাক বলেন, 'হে রাসূল আপনি বলুন যারা জানে, আর যারা জানেনা তারা কি সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো নসিহত কবুল করে থাকে।' নেতৃত্বে যোগ্য হবেন কেবলমাত্র তিনি যিনি আল্লাহর খিলাফত ব্যবস্থায় পরিপূর্ণ আস্থাশীল হবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছ এবং ন্যায় কর্ম করেছ, তাদের সাথে আল্লাহ অঙ্গিকার করছেন যে, তিনি তাদেরকে জমিনে খলিফা করবেন, যেমন তিনি খলিফা করেছিলেন পূর্ববর্তীদের কে।' নেতৃত্বে যোগ্য হবেন তিনে যিনি সমাজ কল্যাণ ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা রাখেন। যিনি সদা সত্যাশ্রয়ী এবং আমানতদারিতার মানদণ্ডে শতভাগ উত্তীর্ণ। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, 'হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল(সা.) ও তোমাদের উপর ন্যাস্ত আমানতের খেয়ানত করোনা, অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান। '

ইসলামি সমাজে যিনি তাকওয়া বান বা আল্লাহ ভীরু কেবলমাত্র তাকেই নেতা নির্বাচন করা যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, 'হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে, সে আগামী দিনের জন্য(পরকালের) কি সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে, আল্লাহকেই ভয় করতে থাক, আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের সেসব কর্ম সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করছ।'

ইসলামি সমাজের নেতা নির্বাচিত হবেন তিনি, যিনি সাহসী, ধৈর্যশীল, ইবাদতকারী ও ন্যায় নিষ্ঠ। এ ব্যাপারে নাগরিকগণ অযোগ্যতা ও ব্যার্থতার পরিচয় দিলে অযোগ্য ও অসৎ নেতৃত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর ঝেঁকে বসবে। আর সমাজ পাপ পঙ্কিলতা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, হানাহানি, সন্ত্রাস, খুন-খারাবি, ও অন্যায় অনাচারে ভরে যাবে এবং সার্বিক অবক্ষয় সমাজকে অনুৎপাদন, অনউন্নয়ন ও অশান্তির অতল গহবরে নিমজ্জিত করে ছাড়বে।

সুতরাং সত্যাশ্রয়ী ও যোগ্য নেতৃত্বই পারে সমাজ ও রাষ্ট্রকে আধুনিক ও উন্নত করতে। আর নাগরকিদের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজ উন্নয়নে আল্লাহর আমানত স্বরূপ যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করা। আল্লাহ আমাদেরকে খিলাফতে রাশেদার মত যোগ্য নেতৃত্ব দান করুণ। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

285754
১৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৫৫
বিবেকবান লিখেছেন : In Bangladesh we are facing the shortage of such kind of leadership.. অনেক ধন্যবাদ
285791
১৯ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
যা বলতে চাই লিখেছেন : বাংলাদেশে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আমাদেরকে ব্যাপক প্রচারণায় অংশ গ্রহন করতে হবে। কারণ দেশের সাধারণ মানুষ নিজ থেকে ততটা সচেতন নয়। আর নিজেদেরকেও নেতৃত্বে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File