মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন যা বলতে চাই ১৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৬:৫৯ রাত
মানুষ আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্ট জীব সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। এটি শুধুমাত্র কথার কথাই নয়, বাস্তবে এর হাজার প্রমাণ এবং উদাহরণ আল্লাহ্ পাক মানুষের মধ্যেই রেখেছেন।
আবার চরম অধঃপতনের ও ধ্বংসের অতল গভীরে তলিয়ে যাওয়ার সমুদয় যোগ্যতাও সুযোগ মানব সত্তায় বিরাজমান। বাস্তবে মানুষের মধ্যে রয়েছে প্রধানত দুটি সত্তা। তার একটি হল- মানবিকতা,
এবং অপরটি হল- পাশবিকতা
মানবিকতা হচ্ছে মানবের প্রধান সত্তা। যেটির সম্পর্ক মনের সঙ্গে, মানের সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে এবং আলোর সঙ্গে। আর মনের সম্পর্ক রুহ বা আত্মার সঙ্গে। মানবাত্মার বৈশিষ্ট্য হল- এটি এক ঊর্ধ্বগামী অবিনাশি সত্তা, যার কোন শেষ নেই, বিনাশ নেই। কালের পরিক্রমার এটি আলোর (নুরের) বেশে মিলিত হবে মহা সত্তা তথা আল্লাহ্ তাআলার সান্নিধ্যে। আর পরিতৃপ্ত হবে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব দর্শনে নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধির মাধ্যমে। অন্তকাল কাটাবে আপন স্রষ্টার দীদার লাভে। তবে মানুষকে অবশ্যই মানবিকতা, আত্মশুদ্ধি এবং আলোর পথ ধরেই সেখানে পৌঁছাতে হবে।
মানবিকতার খোরাক হল: মানব কল্যাণের চিন্তা, মানব কল্যাণ মুখি আচরণ ও মানবতার সম্মান। উক্ত বৈশিষ্ট্য কেবল তখনই মানুষ অর্জন করতে পারবে যখন তার মধ্যে থাকবে- দয়ামায়া, ভালবাসা, উদারতা, সামাজিকতা, ত্যাগের মানসিকতা, শুভকামনা, সহযোগীতা, স্নেহ-সম্মান, সাম্য চিন্তা ও ন্যায়বিচার। এ সমস্ত গুনের কারণে মানুষের মধ্যে মানবিকতার বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়।
আর উক্ত গুণসমূহ মানব চরিত্রে ফুটে উঠার পর তার আত্মশুদ্ধির পথ সুগম হয়। এটি মানবীয় উন্নতির উচ্চতর ধাপ। মানবাত্মার খোরাক হল: "(এটি আল্লাহর আদেশ বিশেষ।)" আল্লাহর যিকর বা স্মরণ। এটি হতে হবে সার্বক্ষণিক চিন্তায় ও বিশ্বাসে, সকলপ্রকার কর্মে ও আচরণে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসার মাধ্যমে।
আল্লাহর যিকর এ মশগুল থাকার ইসলামি উপায় হচ্ছে- সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় ও বন্টন করা, সিয়াম বা রোজা পালন করা, হজ্ব আদায় করা, আল্লাহর কালাম তথা আল কুরআন অধ্যয়ন করা, সুন্নাহ প্রতিপালন করা, জীবনের প্রত্যেকটি বিষয় আল্লাহর বিধান মোতাবেক পরিচালনা করা এবং সমাজের প্রত্যেক স্তরে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে সর্বাত্মকভাবে অংশ গ্রহন করা।
এ পর্যায়ে মানুষ আস্তে আস্তে আত্মার পবিত্রতা লাভ করে এবং মহা সত্তার সাক্ষাত লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে থাকে। আর মানুষ সত্যিকারের মানুষ হতে পারে।
এখন সমস্যা হল মানুষের ভিতরকার সম্পূর্ণ বিপরীত ও নেতিবাচক একটি সত্তা। যাকে কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, এমনকি অবহেলা করা ও বাস্তব সম্মত নয়। যার নাম আমরা বলেছি পাশবিক সত্তা। অবশ্য এটিকে পাশবিক সত্তা বলার কারণ হল, মানুষ সহ যাবতীয় হিংস্র পশুর মধ্যেও বৈশিষ্ট্যগুলো সমভাব বিদ্যমান।
এটি মূলত দেহ সত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর দেহ সত্তা মাটির সাথে সম্পর্ক যুক্ত ওমাটি থেকেই খাদ্যরস গ্রহন করে এবং মাটির সাথেই মিশে যাবে। আর মাটি ক্ষয় ও ধ্বংসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এ সত্তার খোরাক হল: অহংকার, হিংসা, রাগ, লোভ, অলসতা, আরামপ্রিয়, ভোগ ও স্বার্থপরতা। এর বৈশিষ্ট্য হল- কেবলমাত্র দেহকে মোটা তাজা করণ, সাজ-সজ্জায় বিভোর হওয়া, আরামের বিছানায় নিদ্রা যাওয়া, কর্তব্য অবহেলা ও সম্পত্তি সঞ্চয় করণ ইত্যাদি।
মানবীয় সত্তা মানুষকে ঊর্ধ্বলোকে স্রষ্টার পানে টানে আর পাশবিক সত্তা মানুষকে নিম্নগামিতা ও অধঃপতনের দিকে ডাকে। দুটি সত্তা দুটি উত্স থেকে খাদ্যরস গ্রহন করে এবং সর্বদা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত থাকে। যে সত্তা খাদ্যরস গ্রহনে দুর্বল সে শক্তিতেও দুর্বল থাকে। আর যে দুর্বল সে তো পরাজিতই হবে। বিজয়ী তার বৈশিষ্ট্য মোতাবেক মানুষকে পরিচালিত করে। আর এ কারণেই আপনি দেখতে পান সমাজে দুধরনের মানুষ। মানবিক মানুষ আর পাশবিক মানুষ। (সংক্ষিপ্ত) পরবর্তীতে মানবিক মানুষ চার প্রকার এবং পাশবিক মানুষ চার প্রকার এবিষয়ে আমার মত প্রকাশের আশা রাখি। ইনশা আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১২৪২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর উপস্হাপনায় অনেক ধন্যবাদ ও ভাল লাগা ছড়িয়ে গেলাম!
জাযাকাল্লাহু খাইরান আপনাকে......
মন্তব্য করতে লগইন করুন