জোনাক পোকা, অতঃপর…….
লিখেছেন লিখেছেন তৃতীয় চোখ ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫২:১৭ সন্ধ্যা
সে দিন ছিল শুক্ল পক্ষের তৃতীয় রবিবার । মধ্যরাত । আকাশে ভরা চাঁদ । ছাদের উপরে মাথার নিচে হাতদিয়ে শুয়ে শুয়ে আকাশের চাঁদ দেখছি । হঠাৎ আমার মাথার উপর দিয়ে একটা জোনাক পোকাকে উড়ে যেতে দেখলাম । মনের অজান্তেই হাতটা উচু করে দিলাম ওর গতি রোধ করতে । কিন্তু কেন জানি ওটা অন্য কোন পথ না ধরে আমার হতে এসে বসল । অনেকক্ষন ওটাকে দেখে আবার উড়িয়ে দিলাম । কারন এখন আর জোনাক পোকার প্রয়োজন নেই । প্রয়োজন এক সময় ছিল , যখন চারুলতা ছিল । ও হ্যা । চারুলতা হল আমার এক আত্মীয়া । আত্মীয়াই তো । কারন ওর সাথে আমার সর্ম্পকটা ছিল আত্মার ।তাই কেউ যখন জানতে চাইতো, ও কে ? আমি তখন বেশ শক্ত ভাবেই বলতাম আমার আত্মীয়া । আমরা একই ক্লাসে পড়তাম । ওর আসল নামটা আজ আর মনে নেই , চারুলতা নামটা আমারই দেওয়া । চারুলতা থেকে ছোট করে আমি ওকে চারু বলে ডাকতাম আর ও আমাকে অর্ণব থেকে ছোট করে অর্ণ বলে ডাকতো । ওর একটা খুব বদ অভ্যাস ছিল, কোন উপলক্ষ বা একটু সুযোগ পেলেই ও আমার হাতে একটা উপহার ধরিয়ে দিতে চাইতো আর আমি কিছু দিতে গেলে তখন দুনিয়ার সব সমস্যা, অজুহাত এসে জোগাড় হতো । সে যাই হোক জোনাক পোকার গল্পটা বলি । শুক্ল পক্ষের তৃতীয় সোমবার ছিল চারুর জন্মদিন । ও জন্মদিন গুলো বেশ ঘটা করেই পালন করতো, ওর বান্ধবীরা থাকত আর আত্মীয় হিসাবে থাকতাম আমি । সে বার ওর জন্মদিনের আগের দিন আমি ওকে বললাম – আচ্ছা চারু , আজ পর্যন্ত তো তুমি আমার কাছ থেকে কিছুই নেওনি, সামনের জন্মদিনে কোথায় থাকবো তা তো জানি না তাই এবার কিছু দিতে চাইলে আর না করো না । আমকে অবাক করে দিয়ে চারু কেন জানি আজ এই প্রথম খুব সহজে রাজি হয়ে গেল । আমিও বেশ সানন্দে চারুর কাছে জানতে চাইলাম – ও কী পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে । চারু উত্তরে জানতে চাইলো – ও যা চায় তা আমি দিতে পারবো কিনা । আমি তখন বেশ জোর দিয়ে বললাম – আকাশ থেকে চাঁদ, মাটি থেকে সোনা, সাগর থেকে মুক্তা, আমি সবই তোমার জন্য আনতে পারি ।আমার কথা শুনে চারু হাসতে হাসতে বলল – এটা যেন কোন সিনেমার ডায়ালোগ ? আমি তখন বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম – হেয়ালি করো নাতো । চারু একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল – সত্যিই তুমি দিতে পরেবে ? আমি তখন গলার স্বর আরও ৩ ডেসিব্যাল বাড়িয়ে বললাম – হ্যা অবশ্যই । কারন পকেট তখন বেশ গরম ছিল । তাছাড়া ও আর কিই বা চাইবে । তবে চারু আমাকে অবাক করে দিয়ে কি চাইলো জানেন ? চলেন চারু মুখ থেকেই শুনাই – ‘‘ তুমি আমাকে এক জোড়া জোনাক পোকা এনে দেবে । ওদের একটা হবো আমি আর একটা তুমি ।ওদেরকে কাচের কৌটায় করে আমার ঘরে রাখব ।যতবার ওরা আলো জ্বালবে তত বারই তোমার কথা মনে পড়বে । আর সাথে দুইটা লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া ফুল দেবে ।’’ ওর এই অপ্রত্যাশিত উপহারের কথা শুনে আমি কেমন জানি হতভম্ব হয়ে গেলাম । তারপর থেকে শুরু হল আমার অপারেশন - সার্চিং জোনাক পোকা , চারিদিকে লোক পাঠালাম, পুরুষ্কার ঘোষনা করলাম । তবুও জোনাক পোকা সেবার আমি আর পাই নি । তাই চারুর প্রথম উপহারটাও আর দেওয়া হয়নি । তারপরও ওর অনেক জোরাজুরির কারনে বাধ্য হয়ে ওর জন্মদিনের অনুষ্টানে আমাকে যেতে হল । অনুষ্টান শেষ । এবার সবার উপহার খোলার পালা । একে একে সবার উপহার খোলা হচ্ছে আর আমার ভিতরটা আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে । সব উপহার খোলা শেষ আর মাত্র একটা বক্স বাকি । চারু বক্সটা হাতে নিল, নামটা পড়ে শুনাল – অর্ণব । আমি কিছুই বুঝলাম না কারন আমি তো ওকে কোন উপহারই দিইনি ।তারপর আস্তে আস্তে বক্সটা খুলে বের করল – একটা নেকলেস ।কান্ড কারখানা দেখে আমি এই দ্বিতীয় বার হতভম্ব হয়ে গেলাম । সম্বিত ফিরে পেলাম, করতালির শব্দে । সবাই তখন প্রশংসা করতে লাগলো আমার পছন্দ নাকি অনেক সুন্দর । যাইহোক কোন রকমে বাসায় ফিরে আগে কল দিলাম চারু কে । জানতে চাইলাম এসব কী । কী বলেছিল চারু সেদিন ! চলেন চারুর মুখ থেকেই শুনাই – ‘‘ আমি জানতাম তুমি কখনো জোনাক পোকা আর কৃষ্ণচূড়া আনতে পারবে না , তাই আমার একটা নেকলেস প্যাক করে তোমার নাম লিখে আমি আগে থেকে রেখে দিয়ে ছিলাম । যাতে তুমি সবার সামনে লজ্জায় না পড়ো ।’’ এই ছিলো চারু । হ্যা ছিলো । আজ আর নেই । কি হয়েছে ? থাক আর একদিন না হয় বলবো………………
বিষয়: সাহিত্য
১৪৯৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন