গৃহ পালিত বিরোধী দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুধ এরশাদের জারিজুরি ফাঁস
লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ২৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৬:২৭:৫৪ সন্ধ্যা
তিন সিটি করপোরেশনে শেষ মিনিট পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে ছিলেন সরকার আশ্রিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।
ভোট শেষে অনুমিতভাবে বিজয়ী হয়েছেন সরকার সমর্থক তিন প্রার্থী আনিসুল হক, সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাছির উদ্দিন।
বেলা ১১টার পর ভোট বর্জন করার পরও উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম- তিন সিটিতেই দ্বিতীয় অবস্থানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ ভোটের আগে বলেছিলেন, ‘এদেশের মানুষ বিএনপিকে চিরতরে বর্জন করেছে। আমাদের চাইছেন, সে সুযোগ নিতে হবে। ভোটারদের কাছে যেতে হবে।’
ভোট নিয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের এই তর্জনগর্জন-ই যে সার, তার ছোট্ট একটি নমুনা তিন সিটির নির্বাচনে ভোটাররা দেখিয়ে দিয়েছেন। তার দলের তিন মেয়র প্রার্থী মিলে পেয়েছেন মাত্র ১৩,৬০০ ভোট। যেখানে ঢাকা দক্ষিণে অখ্যাত এক মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহমান একাই পেয়েছেন ১৪,৭৮৪ ভোট।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারে কাছেই আসতে পারেননি। এমনকি দখলদারিত্বের পরও বাতিল ভোটের ১০ ভাগের এক ভাগ ভোটও পায়নি দলটির প্রার্থীরা।
অবাক হলেও সত্য ঢাকা দক্ষিণে আব্দুর রহমান নামে এক অখ্যাত প্রার্থী যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন, এরশাদের তিন প্রার্থী মিলেও সে পরিমাণ ভোট পাননি।
এবার তিন সিটিতে মোট ভোটার ছিল- ৬০ লাখ ২৯,৫৭৬ জন। এর মধ্যে ভোট কাস্ট হয়েছে ১৮ লাখ ৫,১৪৭টি। বাতিল হয়েছে ১ লাখ ২১,০০৩টি ভোট। কিন্তু জাতীয় পার্টির তিন মেয়র প্রার্থী মিলে পেয়েছেন মাত্র ১৩,৬০০ ভোট।
বেশ ঘটা করে মেয়র প্রার্থী দিয়েছিলেন এরশাদ। ইসির নোটিশ উপেক্ষা করে নিয়ম ভেঙে নিজেও প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু ভোট শেষে তার মনোনীত ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল ‘চরকা’ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ২,৯৫০ ভোট।
ঢাকা দক্ষিণে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন মিলন ‘সোফা’ প্রতীকে পেয়েছেন ৪,৫১৯ ভোট। অথচ এখানে এক অখ্যাত প্রার্থী আব্দুর রহমান একাই পেয়েছেন ১৪,৭৮৪ ভোট।
এরশাদের প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রামে যা একটু মান রেখেছেন। এখানে কোটিপতি খ্যাত মো. সোলায়মান আলম শেঠ ‘ডিশ এন্টিনা’ প্রতীকে পেয়েছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬,১৩১ ভোট।
কিন্তু তিনি এখানেও তৃতীয় অবস্থানে আসতে পারেননি। এমএ মতিন নামে ‘চরকা’ প্রতীকে এক প্রার্থী তার দ্বিগুণ ১১,৬৫৫ ভোট পেয়েছেন।
এরপরই আছেন মো. ওয়ায়েজ হোসেন ভুইয়া ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকে ৯,৬৬৮ ভোট। সোলায়মান আলম শেঠ এখানে পঞ্চম হয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৫,৩৭৪ জন। কাস্ট হয়েছে ৮ লাখ ৪১,০০০। এরশাদের প্রার্থীর ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ২,৯৫০ ভোট। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণে মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০,৭৫৩ জন। কাস্ট হয়েছে ৯ লাখ ৫৪৮৪ ভোট। জাপা ভোটযুদ্ধে সংগ্রহ করতে পেরেছে ৪,৫১৯ ভোট।
আর চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩,৪৪৯। কাস্ট হয়েছে ৮ লাখ ৬৮,৬৬৩ ভোট। এরশাদের কপালে জুটেছে মাত্র ৬,১৩১ ভোট।
এরশাদের তিন প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, মোট ভোটের যে হার, তাতে তার দলের শতাংশ খুঁজে বের করাই দুষ্কর। এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনেও ভোটাররা জাতীয় পার্টিকে আরেকটি বার্তা দিলো- সরকারের আশ্রয়ে সংসদে বিরোধী দল হওয়া যতটা সহজ, ভোটারের মন জয় ততটা সহজ নয়। সূত্র- আরটিএনএন
বিষয়: বিবিধ
৯৭৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন