লালমনিরহাটে শহীদ মিনার ভাঙাল ছাত্রলীগ
লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:৩১:২৩ সন্ধ্যা
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ‘কতিপয়’ নেতাকর্মী জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠপ্রাঙ্গণের শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলল।
বিজয় দিবসের কয়েকদিন বাকি। বিষয়টি ইতিমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা শহীদ মিনার ভাঙার বিষয় নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলা করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় ও জোংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে শহীদ মিনারটি ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ শহীদ মিনারটি জোংড়া ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
গত মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা শহীদ মিনারটি গুড়িয়ে দেয়। বিষয়টি বুধবার জানাজানি হলে জোংড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জোংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল হাসান আশরাফীর নেতৃত্বাধীন পক্ষটি বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ মোর্শেদ টিটুর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করেন।
জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২০ নভেম্বর শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) সিরাজুম মুনিরা ও শরীর চর্চা শিক্ষক গোলাম রায়হান বসুনীয়াকে নিয়োগ দেয়ার ঘটনায় ওই পক্ষটি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। পরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষকদের ডোনেশনের ২০ হাজার টাকা ছাত্রলীগের অফিসঘর নির্মাণ বাবদ প্রদান করেন।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে ২০ হাজার টাকা নগদ অনুদান গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ মোর্শেদ টিটু ও জোংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতোয়ার রহমান।
তবে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি শহীদ মিনার ভাঙার বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শহীদ মিনার ভাঙার অভিযোগটি অপপ্রচার কি না জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ মোর্শেদ টিটু বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার ভাষাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ আলীর বড় ছেলে খালিদ মোর্শেদ টিটু।
উপজেলার জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একেএম শহিদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের অফিসঘর নির্মাণ বাবদ টাকা দেয়া হয়েছে কি না তা আমি বলতে পারছি না। গত মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবস উদযাপনের বিষয়ে অবহিত করতে আসলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করতে পরামর্শ দেই। তবে তারা এ সময় শহীদ মিনারটি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
কিন্তু বুধবার সকালে স্কুলে এসে দেখতে পাই শহীদ মিনারটি কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এ নিয়ে আজ বিকেলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এক জরুরি বৈঠক করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলা করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
উপজেলার জোংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতোয়ার রহমান বলেন, আমাকে ফোনে ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আতাউর রহমান আতাসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মহান বিজয় দিবস পালনের ব্যাপারে জোংড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চাওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেন। আমি তাদের সেখানে যাওয়ার পরার্মশ দিয়েছিলাম। কিন্তু শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমার কাছে নেই। তবে এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ‘কতিপয়’ সমর্থকের নাম শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তিনি বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
জোংড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদুন্নবী শাহীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রকৃতভাবে জড়িতদের খুঁজে বেড় করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওসি রেজাউল করিমকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জোংড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
জোংড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ মোর্শেদ টিটু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘ঘটনার তিন দিন আগে থেকে আমি এলাকায় ছিলাম না। শুনেছি গত মঙ্গলবার জোংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতোয়ার রহমানের নির্দেশে মহান বিজয় দিবসের পূর্বপ্রস্তুতির সমন্বয় করতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুর রহমানের কাছে যান। এসময় তারা স্কুলের শহীদ মিনারটি মেরামত করারও দাবি জানিয়েছিল। তবে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী বা সমর্থকের বিরুদ্ধে যদি শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ মোর্শেদ টিটু অফিসঘর নির্মাণ বাবদ জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে ছাত্রলীগের প্যাডে টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষের টেলিফোনে শোনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এরপরও শহীদ মিনার ভাঙার সঙ্গে জড়িত কারা তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অনুসন্ধান চলছে।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী ছাত্রলীগকে চাঁদা দেয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, ‘শহীদ মিনার ভাঙার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের কমকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
খালিদ মোর্শেদ টিটু অনুদান নেয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন বললেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিষয়: বিবিধ
১১১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন