রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি আল্লামা সাঈদী
লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫৯:১০ বিকাল
দীর্ঘ এক দশক ধরে যাকে দেখে আসছি সত্য কথনও প্রচারে একনিষ্ট। নিক্ষিপ্ত বোমাও গুলির মাঝেও মুখে অমলিন হাসি নিয়ে অসীম সাহসী বীরের ভূমিকায় এবং মিথ্যার প্রতি প্রবল অবিমিশ্র ঘৃণা পোষণকারী হিসেবে সেই বীর পুরুষের চেহারায় আজ কোনো পরিবর্তন ঘটেছে কি না তা দেখার জন্য আমি মাওলানার চেহারার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালাম। আজ তার বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। না কোনো পরিবর্তন ই লক্ষ করলাম না বরং মহান মালিক আল্লাহ তায়ালার প্রতি অসীম নির্ভরতার দ্যুতি তার মখাবয়ব জুড়ে অমলিন রয়েছে। সুদর্শন চেহারায় স্নিগ্ধ মৃদু হাসি ডেউ তুলছে। মাওলানাকে লক্ষ করে বিচারপতি বললেন "আমি অর্ডার ইংরেজীতে দিয়েছি, এখন আপনার সুবিধার্তে বাংলায় বলবো। আপনি দোষী না নির্দোষ তা বলবেন। বিচারপতিকে লক্ষ করে তিনি বললেন -"বাংলায় বলার প্রয়োজন নেই, আপনার ইংরেজী অর্ডার আমি বুঝতে পেরেছি। আল্লামা সাঈদীর মুখে একথা শুনে আমার মনে পড়লো তুরস্কের সেই অকুতোভয় ইসলাম প্রচারক আল্লামা সাঈদ বদিউজ্জামান নূরসির কথা। আজ থেকে ছয় দশক আগে সত্য কথনও ইসলাম প্রচারের কারণে কল্পিত অভিযোগে সাঈদীর মতো তাকেও গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিলো। বিচারক ইংরেজী ভাষায় অর্ডার দিয়ে তুর্কী ভাষায় বলেছিলেন -এবার আমি আপনার বুঝার সুবিধার্তে তুর্কী ভাষায় অর্ডার দিচ্ছি। তখন আল্লামা নূরসী হাসতে হাসতে বলেছিলেন -কোনো প্রয়োজন নেই আমি আপনার ইংরেজী ভাষা বুঝেছি। এযেন সেই পুরনো ইতিহাসের কাকতালীয় পুনরাবৃত্তি। এর পর মাওলানা বললেন -১৯৭১সালে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী ছিলাম না। ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হয় তখন জাতীয় সংসদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপস্তিতিতেই আমি ২০মিনিট বক্তব্য দিয়েছিলাম। "আমি রাজাকার নই, কেবল মাত্র ভারতীয় রাজাকার রাই আমাকে রাজাকার বলতে পারে। মহান স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমার সামান্যতম ভূমিকাও ছিলোনা। আমার সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও স্পীকার এক্সপাঞ্জ করেননি। সেই বক্তব্য আজও সংসদে সুরক্ষিত আছে। তিনি বলেন আজ আমার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অভিযোগ উপস্তাপন করা হয়েছে। অথচ আমি গত অর্ধ শতাব্দি যাবৎ বিশ্বের অর্ধ শতাধিক দেশে মানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখে এসেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কে একটি রচনা ছাড়া আর কিছুই নয় উল্লেখ করে মাওলানা একটি মিথ্যা রচনার ভিত্তিতে বিচার নাটক মঞ্চস্ত হচ্ছে। এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে আমার প্রতি বিনা অপরাধে আক্রোশ মূলক ভাবে রাজনৈতিক প্রতি হিংসা বশত অবিচার করা হলে আল্লাহর আরশ কাঁপবে।" পার্লামেন্টে মাওলানাকে রাজাকার বলার হলে তিনি যেভাবে সিংহের মতো গর্জন করে এর প্রতিবাদ জানাতে দেখেছিলাম সেদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও তাকে একই ভাবে প্রতিবাদী হতে দেখেছি। আমি আজও একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি, মাওলানা সাঈদী কেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত? কী প্রয়োজন ছিলো তার জামায়াতের সাথে রাজনীতি করার? জামায়াতের রাজনীতি না করলে মাওলানা সাঈদী কে অন্য ভাবে বিবেচনা করা হতো ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক মহলে, এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত।
জামায়াত -শিবিরের বন্দ্বুগণ বিব্রত বোধ করলেও একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি জামায়াতের নায়েবে আমীর জনাব দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দিকে যেমন এদেশের মানুষ আড়চোখে তাকায় ঠিক তেমনি ভাবে বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কুরআন মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্বক রাহবার রাজনৈতিক সিপাহসালার আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সম্মান করে শ্রদ্ধা করে ভালো বাসে।
এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ যেদিন আল্লামার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হলো। পৃিথবীতে যুদ্ধ ছাড়া সম্ভবত একদিনে এত অধিক সংখ্যক মানুষের প্রাণ দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। সেই দিন যা ঘটেছে পাখির মতো নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষ হত্যা করে গণহত্যার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পুলিশ লীগ। রেহাই পায়নি নারী, শিশু, সাঈদী ভক্ত সংখ্যালঘু হিন্দু বৌদ্ধরাও। কারণ সেদিন বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো দেশ।আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির ক্ষমতার ভিত সেদিন ক্ষেপে উঠেছিলো। মাওলানা সাঈদীকে মুক্ত করতে সেদিন যেভাবে জামায়াত -শিবিরের নেতা -কর্মীদের পাশাপাশি আম জনতা প্রাণ উৎসর্গ করেছে সেটা সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বিরল। এটাই হচ্ছে মাওলানা সাঈদীর ক্যারিশমেটিক ও আধ্যাত্মিকতায় ব্যাকুল পাবলিক সেন্টিমেন্ট।
যেটি সাঈদী ভক্তরা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এটি মাওলানার ব্যক্তিত্বের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস এবং আকুন্ঠ ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। যেটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে খুব কমসংখ্যক নেতা বা মোল্লা মৌলভীর কপালে জোটেনি। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার পর মাওলানা সাইদী সহ বাংলাদেশের জামাতের সেই অধ্যাপক গোলাম আযম এবং জামাতের সর্বোচ্চ দুই শীর্ষ নীতি নির্ধারক ও হাই কমান্ড আমীরে জামাত মাওলানা নিজামী মহাসচিব আল মুজািহদ সহ শত শত নেতাদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন মৃত্যু দন্ডের রায় দেয়া হলে তেমন শক্ত প্রতিবাদ চোখে পড়েনি।
এদিক থেকে ভালোবাসা এবং আনুগত্যের চূড়ান্ত বিচারে সাঈদী ভক্তরা মোটা দাগে সেই ত্যাগ এবং কুরবানীর নজরানা পেশকরতে সক্ষম বলেই মাওলানা সাঈদী আজ ধর্মনিরপেক্ষতা বাদীদের কাছে ঈর্ষার পাত্র। যাই হোক সর্বশেষ পর্যায়ে জিঞ্জেস করি আল্লামা সাঈদীর তাফসীর শুনে যেখানে হাজারেও বেশী সংখ্যক হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টানরা ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হলেন -সেখানে তার লিখিত' তাফসীরে সাঈদী 'পড়ে আওয়ামিলীগের নামধারী মুসলমানরা কি নিজেদের কে খাঁটি মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন না
(সাংবাদিক এম. আহসান গিলানীর লেখা..........)
বিষয়: বিবিধ
১১৩৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন