বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২২তম বার্ষিকী আজ

লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:১১:৩৬ সকাল



হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবর শাহ-র আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারিখে৷

রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৭ সালে সেখানে বাবর শাহের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে মসজিদটির নাম জনমুখে বাবরি মসজিদ। আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান' বলেও পরিচিত ছিল৷

আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে মিথ্যা প্রচারনা চালায় হিন্দুরা৷

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবার পর মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা কোন মন্দিরের চিন্হ না পেলেও সিদ্ধান্ত করেন যে, মসজিদের নিচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷

আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী'-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নিচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷

অথচ মসজিদের নিচে মন্দির থাকার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷

ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র দু'বছর পরেই – অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷ যা বিচারকরা জানার পরও না জানার ভান করে।

তখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থ-কে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, কেননা ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে''৷ সবচেয়ে বড় কথা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং অন্যান্য হিন্দু সংগঠন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র যে সব বিবরণের উপর নির্ভর করে তাদের দাবি পেশ করে থাকে, মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে সেই সব রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷

বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷ অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী ১৮৫৫ সাল অবধি নাকি হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পুজা করেছে৷ কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের পর মসজিদের সামনেটা ঘিরে দেওয়া হয় এবং হিন্দুরা বহিরাঙ্গণের একটি ‘চবুতরা'-র উপর তাদের পুজাপাঠ করতে থাকে৷ ১৮৮৩ সালে হিন্দুরা ঐ চবুতরার উপর একটি মন্দির নির্মাণের প্রচেষ্টা করলে পর, জেলা প্রশাসন তা নিষিদ্ধ করেন৷ ১৯৩৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদের চারপাশের প্রাচীর ও একটি গম্বুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু বৃটিশ সরকার তা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করেন৷

১৯৪৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে পুলিশ গার্ডরা নিদ্রিত থাকা অবস্থায় মসজিদে রাম-সীতার মূর্তি ঢুকিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ কিন্তু যে আন্দোলনে শেষমেষ বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবে, তা শুরু হয় ১৯৮৪ সালে, যখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷ ১৯৮৫ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷ ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস'-এর অনুমতি পায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে তাঁর দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রথযাত্রা' শুরু করেন৷

১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আদভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়ার ইত্যাদি নেতারা পুজা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে একটি প্রতীকী ‘কার সেবা' করেন৷ সেদিন দুপুরে এক কিশোর ‘কার সেবক' একটি গম্বুজে চড়ে – যার পরেই মসজিদের বাইরের কর্ডন ভেঙে ফেলা হয়৷ অতঃপর বাবরি মসজিদ বিনাশের পথে আর কোনো বাধাই থাকে না৷

ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে আর একটি কলঙ্কিত অধ্যায় যুক্ত হয়৷ ধ্বংস করা হয় ইতিহাসের মূর্তপ্রতীয়মান বাবরী মসজিদ। যা আজও বিশ্ব মুসলিমদের মনে দাগা দেয়।

বিষয়: বিবিধ

৮৩৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291701
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৯

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : ইসলামী রাষ্ট্রে প্রায় প্রতিদিনই মুসলিমদের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ/ফ্যাসাদ/আত্মঘাতী বোমায় মসজিদ ধ্বংস হচ্ছে।











291708
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ফালতু মন্তব্যটি মুছে দিন।

এই দিনটি পৃথিবির বুকে ভারতের চেহেরা কে সত্য করে প্রকাশ করেছে।
291713
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
খান জুলহাস লিখেছেন : মুসলমানের আভ্যন্তরীন কোন দ্বন্দ নেই। কারণ মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হয়না। ভারত আমেরিকাসহ বিধর্মী রাষ্ট্রগুলো মুসলমানের সম্পদের উপর নজর করে ধ্বংস লিলা চালাচ্ছে। আর মুক্তিযুদ্ধের কন্যার মতো বদমাইসরা মিথ্যা প্র্রচারণা চালাচ্ছে যে এটা মুসলমানদের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ ।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৪
235287

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : ইসলামের ঊষালগ্নে- আলী-আয়শা উটের যুদ্ধ, আলী-মুয়াবিয়া সিফফিন যুদ্ধ, কারবালা হত্যা যজ্ঞ............... তখন কিন্তু আমেরিকার জন্মও হয়নি। দাঙ্গাবাজ মুসলিমরা তখনও নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি করেছে, যেমনটি করছে এখনও।
291745
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০০
খান জুলহাস লিখেছেন : আমেরিকার জন্ম না হলেউ এদের দোসররা জন্ম-এ সিল
291754
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৩
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : তবে আপনি ঢালাওভাবে মুসলমান তথা আমাদের ভিতর কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা বলতে পারেন না। মুসলমানদের ভিতরই বেশী দ্বন্দ্ব বলে আমরা আজ বেশী মার খাচ্ছি।
291813
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৫
খান জুলহাস লিখেছেন : মার খাওয়ায় জন্য যতটা না দ্বন্দ্ব তার চেয়ে ষড়যন্ত্র বেশি। এবং ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাও একটি কারন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File