দরিদ্রকে নিপিড়ন আর কত দিনঃ ছেলের দাবি পূরন করতে গিয়ে বাবা জেলে, ছেলে সংশোধনাগারেঃ অভিযোগ হাসিনাকে কটুক্তি
লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:০৫:২৬ সন্ধ্যা
অনেকদিন থেকে মোবাইল ফোন কেনার বায়না ছিল অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া সিজানের। আবদারটি সামান্য হলেও বাবা চা বিক্রেতা শুকুর আলীর জন্য ছিল বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যপার।
ছেলের বায়না পূরণে সম্প্রতি ৫০০ টাকা দিয়ে একটি পুরনো মোবাইল ফোন সেট কিনে দেন শুকুর আলী। আর সেই পুরনো মোবাইল ফোনটি এখন শুকুর আলীর পুরো সংসার ডোবাতে বসেছে। বাবা-ছেলে দুজনই গ্রেফতার হয়েছে পুলিশের হাতে। শুকুর আলী বগুড়া কারাগারে আবদ্ধ আর ছেলে সিজানকে যেতে হয়েছে যশোরের কিশোর সংশোধনাগারে।
অভিযোগ হলো- মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি সংরক্ষণ ও তা বাজিয়ে শোননো। এই অপরাধে এ বছরের ১৭ অক্টোবর বাবা-ছেলে পুলিশের হাতের গ্রেফতার হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারায় কাহালু থানায় মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়।
এলাকাবাসি জানান, শুকুর আলী বগুড়ার কাহালু উপজেলার শীতলাই গ্রামের বাসিন্দা। নিজের জমি নেই। সরকারি খাস জমিতে ছেলে এবং দুই মেয়সহ স্ত্রীকে নিয়ে ছাপড়া ঘরে বসবাস তাদের। শুকুর আলীর পেশা হলো স্থানীয় স্কুলগুলোতে ফেরি করে চানাচুর-বাদাম বিক্রি করা। পাশাপাশি বিকেলে বাড়ির অদূরে ছোট্ট একটি চা দোকান দিয়েছেন। ছেলে সিজান লেখাপড়ার ফাঁকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করত।
অভিযুক্ত শুকুর আলীর স্ত্রী সেলিনা বেগম দাবি করেন, যে পুরনো মোবাইল ফোনটি তারা কিনেছিলেন তাতে আগে থেকেই ওই কটুবাক্যগুলো সংরক্ষণ করা ছিল।
তিনি জানান, ছেলের আবদার রক্ষা করতে গিয়ে এমন বিপদে পড়তে হবে তা জানা ছিল না। স্বামী সন্তানের যাই হোক এখন দুই মেয়েকে নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটছে। কীভাবে মামলা চলাবেন তা জনেন না। তার কাছে কোনো জমানো টাকা নেই। এখন স্বামীর অবর্তমানে সংসারের ফাঁকে স্বামীর চায়ের দোকানে সময় দিচ্ছেন। তবে তাতে সংসার চলছে না।
গ্রামবাসিরা জানান, অশিক্ষিত শুকুর আলী- যার নুন আনতে পানতা ফুরায়। তার তো দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাবার মতো সময় নাই। তারপরও এই পরিবারের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগে অবাক প্রতিবেশীরাও।
এদিকে পরিবারটিকে রক্ষা করতে গ্রামের অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ খাবার দিয়ে আবার কেউ মনোবল বাড়াতে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন।
প্রতিবেশী আব্দুল মালেক জানান, বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর তাই বাবা-ছেলেকে আটকের আগে ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্তের প্রয়োজন ছিল। পুলিশের অবহেলায় আজ দরিদ্র এই পরিবারটি পথে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুরইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এই ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ আর দরিদ্র মানুষ শুকুর আলী। তার পরিবারের কেউ কোনো রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। মোবাইল ফোনটি কেনাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অশিক্ষিত হওয়ায় পরিবারটি আজ ফেঁসে গেছে।’
এদিকে জেএসসি পরীক্ষার কারণে এ বছরের ৩ নভেম্বর যশোরের কিশোর সংশোধনাগার থেকে সিজান মুক্তি পায়। তবে শুকুর আলী এখনও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। কবে মুক্তি মিলেবে জানা নেই তার পরিবারের। হতাশা আর আতঙ্কের মধ্যে দিনকাটছে তাদের।
এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কটুক্তিকর ওই রেকর্ডটি কারা করেছে এবং কীভাবে তা শুকুর আলীর কেনা মোবাইল ফোনে এসেছে তারও অনুসন্ধান চলছে। সংবেদনশীল বিষয় হওয়ার কারণে বাবা-ছেলেকে আটক করা হয়েছে।
তদন্ত শেষে এ বিষয়ে সংযুক্তির প্রমান না পাওয়া গেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিষয়: বিবিধ
৮৪৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন