ছিটমহল বাংলাদেশ এর প্রাপ্য , উপহার নয়
লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:০৩:৩৪ বিকাল
বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি লোকসভায় পাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। ভারতের এই সময় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ইয়াওমুল খামীসি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু তারা হেডিং করেছে- আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমরা এ খবরের গভীর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ শুধু ৫২ টি ছিটমহলই নয়, সব ছিটমহলই দিলেও বাংলাদেশের পাওনা শেষ হবেনা। সুতরাং পাওনাই যেখানে পূরণ হয়না সেখানে উপহারের প্রসঙ্গ আসে কোথা থেকে?
ছিটমহল বিনিময়ে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে হাসিনা-মনমোহনের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রটোকল ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এজন্য ভারতের সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ‘দি কনস্টিটিউশন (ওয়ান হান্ড্রেড এন্ড নাইনটিনথ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৪ রাজ্যসভায় সংশোধন হয়ে চলমান শীতকালীন অধিবেশনে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই চুক্তির পোশাকি নাম ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট বা স্থল সীমান্ত চুক্তি। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ২০১১ সালে মনমোহন সিং বাংলাদেশে গিয়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি করে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী, পার্লামেন্টে এই চুক্তির অনুমোদন করতে হবে ও সংবিধান সংশোধন বিল পাশ করাতে হবে। বাংলাদেশের পার্লামেন্টে বিল অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু ভারতে মনমোহনের আমলে বিল পাশ করা যায়নি।
বলা হচ্ছে, এখন অবস্থা পাল্টেছে। মমতা এবার দিল্লি এসে জানিয়েছে, কেন্দ্র উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিলে সে ছিটমহল বিনিময়ে রাজি। এই ক্ষতিপূরণ রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করতে হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনো আপত্তি নেই।
মমতা এভাবে আপত্তি তুলে নিতে রাজি হলেও বেঁকে বসেছে আসামের বিজেপি নেতারা। আসামের প্রচুর জমি বাংলাদেশে চলে যাবে বলে ওই রাজ্যের বিজেপি নেতাদের দাবি।
দেখা যাচ্ছে ঘোষণা দিলেও এখনো তা শঙ্কা মুক্ত নয়। অথচ শুধু ছিটমহল নয় পুরো আসামসহ আরো অনেক ভূমি বাংলাদেশের জন্য পাওয়ার কথা আরো অনেক আগেই।
বাংলাদেশ-ভারতের ভূন্ডের অভ্যন্তরে ১৬২ টি ছিটমহল রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার অভ্যন্তরে এবং ভারতের ১১১ টি ছিটমহল বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত।
তবে প্রত্যেক স্ব-স্ব দেশের মূল ভূ-খন্ডের সঙ্গে এসব ছিটমহলের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। নেই কোনো রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব। ফলে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা এবং মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ছিটমহলবাসীরা অবরুদ্ধ জীবনযাপন করে আসছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ কর্তৃক স্কেল দিয়ে ভারতের ম্যাপ বিভক্ত করার সময় কোচবিহার রাজা ভারতীয় ইউনিয়ন ও পাকিস্তানে যোগ না দেয়ায় ব্রিটিশের অধীনে করদমিত্র রাজ্যে পরিণত হয়।
পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের কূটনৈতিক কারণে কোচবিহার ভারতীয় ইউনিয়নে যুক্ত হলে ভারত ও পাকিস্তান অংশে বিভিন্ন মৌজায় রাজার খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ভারতের অধীনে চলে গেলে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহল ভারতের অংশ হয়ে যায়।
দীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলো নিজভূমে পরবাসী। দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেও পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে পারেনি।
একটি দেশের অভ্যন্তরে সে দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার পরও অন্য একটি রাষ্ট্রের অংশ হওয়ায় ছিটমহলবাসীরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা নেন। জমি রেজিস্ট্রারের সুযোগ না থাকায় কেনাবেচাও বন্ধ। নেই কোন আইনের শাসন। ফলে সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে গা ঢাকা দেয়ায় তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়না। এ কারণে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ছিটমহলগুলো। সর্বক্ষেত্রেই তারা সুবিধাবঞ্চিত।
ছিটমহলের লাখো মানুষকে ৬৭ বছরের বেশি সময় ধরে নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার বঞ্চিত রাখা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, অমানবিক ব্যাপার। কয়েক দশক ধরে এ সংক্রান্ত চুক্তি উপেক্ষিত হওয়া, এমনকি দুদেশের মধ্যে সম্প্রতি সই হওয়া প্রটোকলও অগ্রাহ্য করা- কোনোটিই যুক্তিযুক্ত নয়। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ এবং দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল হস্তান্তর বিষয়ে উভয় দেশের সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা রাখাই বেশি জরুরি।
মূলত বর্তমান বাংলাদেশ ভূখ-ের মানুষ গত ৬৭ বছরে দুই-দুইবার স্বাধীনতা পেলেও আমাদের দেশেরই ছিটমহলগুলোর প্রায় দু’লাখ মানুষ স্বাধীনতা পূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারছে না- এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।
এক্ষেত্রে মমতা-মোদি তথা বিজেপি ও আসাম কোনো বিষয় নয়। বিষয় হলো ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। আমরা মনে করি ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি প্রদর্শনের কোন কারণ ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের নেই। ’৭১-এ বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছে।
প্রয়োজনে ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ করতে সদা প্রস্তুত। এদেশের মুসলমানদের এ আবেগ সরকারকে সম্যক উপলব্ধি করতে হবে।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে সম্মানিত ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে।
বিষয়: বিবিধ
৮৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন