পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিস্তার করতেই কি সেনাবাহিনীকে নিয়ে তাদের এতো বিষোদগার
লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:১০:৩৬ বিকাল
দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী: বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ৩০ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী। এ বাহিনীকে আঘাত করার অর্থ হলো দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত করা
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে এবং অবমূল্যায়ন করে তাদেরকে কোণঠাসা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্রকারী চিহ্নিত ৮টি এনজিও এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক চিহ্নিত কুখ্যাত প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা।
গত ইয়াওমুল খামীস বা বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টারে ‘পদ্মা সেতুর পাশে নতুন সেনানিবাস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। পরের দিন ইয়াওমুল জুমুআ’ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় কৃষি জমি ও বনভূমিতে সেনানিবাস বা অন্য কোনো স্থাপনা না করার জন্য ৮টি এনজিও সংগঠনের দাবির সংবাদও প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়।
এ দুটি সংবাদপত্র একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার। এদেশের সার্বোভৌমত্ব ও সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংহতির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন ওদের বহুদিনের অভ্যাস। সংবাদ সম্মেলনের উক্তি উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বলা হয়েছে, “দেশের দুজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সেনা সদস্যরা হত্যা করেছে। তারা বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আর তারা আমাদের সুরক্ষার নামে জনগণের জমি, বনভূমি ও নরীাভূমি দখল করছে।”
সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠে এভাবে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা কী ঠিক? গুটিকয়েক লোক অন্যায় করলে তার জন্য সমগ্র সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা উচিত নয়।
দৃশ্যত দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকার সঙ্গে দৈনিক প্রথম আলোর পরিবেশিত সংবাদের একটি যোগসূত্র একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে। উভয় সংবাদই সেনানিবাস বা সেনা স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত।
দৈনিক ডেইলি স্টারে বলা হয়েছিল, “চার বছরে ১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর পাশে সেনানিবাস গড়ে তোলার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকার শ্লথ গতিসম্পন্ন এবং নিম্ন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প থেকে অর্থ ডাইভার্ট করে তা নতুন এই সেনানিবাস নির্মাণ ব্যয় নির্বাহের জন্য কাজে লাগাবে।”
এই সংবাদে সমালোচনা করা হয়েছিল- সরকার গত বছর দক্ষিণ অঞ্চলে একটি সেনানিবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং রামুর বনাঞ্চলে ১৮০০ একর জায়গায় একটি সেনানিবাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
দৈনিক প্রথম আলোতে রামু, রুমা, চাটমোহর, হাতিয়া-সন্দ্বীপ এবং গাজীপুরে সেনা স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান থাকার কথা উল্লেখ করে নেতিবাচকভাবে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির সম্পদ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের উপর যে গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করেছিল তা থেকে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশভূমি ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে উঠা সেনাবাহিনী এ দেশের গর্ব। মুক্তিযুদ্ধে রক্তঝরা সেই দিনগুলোতে দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের জনসাধারণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জাতির যে কোনো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনী সদাপ্রস্তুত থাকে। শুধু দেশে নয়, আমাদের সেনাবাহিনী বহির্বিশ্ব থেকেও দেশের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসিত ভূমিকা পালন করার কারণে কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ধন্যবাদ জানিয়ে গেছে বাংলাদেশে এসে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৪নং অনুচ্ছেদে ‘প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্বে সম্পত্তি গ্রহণের’ অধিকার সরকারকে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু গত ১৫ই নভেম্বর ইয়ামুল খামীস বা বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটে চিহ্নিত কুখ্যাত ৮টি এনজিও যথা- অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নিজেরা করি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যৌথভাবে যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে তাতে সেনা স্থাপনা নির্মাণকে ‘অন্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
বলাবাহুল্য, সেনাবাহিনী বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দায়িত্বে নিয়োজিত নেই। কোথাও কোনো নিবর্তনমূলক ক্ষমতাও প্রয়োগ করছে না। অথচ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আটটি এনজিও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে।
যে মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- চলছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে আল-কায়েদার শাখা খোলার ঘোষণা আয়মান আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ যখন যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ঘটাতে পারে। সে সময় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছে।
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কি এমন অনিয়ম হয়েছে যে- আটটি এনজিও একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে অবৈধভাবে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে? এনজিওগুলো কি রাজনৈতিক দল বা পেশাজীবী, দরকষাকষির এজেন্ট? যদি তা না হয়, তাহলে কিভাবে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে দাবি জানাতে পারে- এটি দেশপ্রেমিক জনগণের প্রশ্ন? তবে কি এনজিওগুলো সরকারের কোনো দুর্বলতার সুযোগ নিতে যাচ্ছে? সঙ্গতকারণেই সরকারের জোর নজরদারী ও অতিসত্বর সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
সরকারের প্রতি অনুগত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। তবে সেনাবাহিনীকে জনগণের বা সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করার ব্যাপারে একটি পক্ষ সবসময়ই সচেষ্ট থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরের সময় বাংলাদেশের শুভাকাঙ্খীদের পক্ষ থেকে তাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে শেখ সাহেবকে হত্যা করা হয়েছিল। ৩ নভেম্বর জেলখানায় ৪ জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপরও এরকম চেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। ডেইলী স্টার ও দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ সেনাবাহিনীর প্রতি এ ধরনের কোনো উসকানি কিনা তা একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিডিআর হত্যাকান্ডের পেছনেও পত্রিকা দুটির বিরুদ্ধে ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যায়।
অথচ টিআইবি নির্বাহী পরিচালক কুখ্যাত সিএইচটি নেতা বলেছে, ‘মূল সমস্যা আমাদের কোনো প্রতিরক্ষানীতি নেই। আমরা সেনাবাহিনীর হাতে আলাদিনের চেরাগ দিয়েছি। তারা যা চায় তা-ই তাদের দিতে হবে।’ তার এমন বক্তব্য সেনাবাহিনীর জন্য অসম্মানজনক ও শ্লেষপূর্ণ এবং সেনাবাহিনীর কর্মক্ষমতার প্রতি কুধারণার বহিঃপ্রকাশ নয় কি? সে কি তবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে একটি দক্ষ, পারদর্শী বাহিনী হিসেবে দেখতে চায় না?
সেনাবাহিনীর ব্যয় সম্পর্কে কথা বলার অধিকার কোনো এনজিও’র নেই। কারণ সশস্ত্র বাহিনী দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের ব্যয় মেটানো হয় জাতীয় বাজেট থেকে। নিয়মিত তা নিরীক্ষণ করেন সরকারের অডিট জেনারেল। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যেভাবে প্রতিরক্ষা বাজেট হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে হয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই সব দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট গোপন রাখা হয়।
মূলত জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে প্রতিরক্ষা নীতির বিষয়ে এনজিওগুলো যে প্রশ্ন তুলেছে, তা তারা তুলতে পারে না। কারণ সশস্ত্র বাহিনীর অস্তিত্ব ও নীতির বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ আছে।
অপরদিকে কুখ্যাত সিএইচটি নেতা সুলতানা কামাল বলেছে, ‘রাজধানীর বড় একটি অংশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তাদের এ পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। আর রাষ্ট্র তাদের এই মনোভাবকে সমর্থন জুগিয়ে চলছে।’
কি দুরভিসন্ধিমূলক কথা! রাজধানীতে সেনাবাহিনী থাকলে দেশের কি সমস্যা নাকি উল্টো সুরক্ষা? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে যায় না সুসংহত হয়? প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লির দুর্গগুলোতে কারা থাকে? পাশে আগ্রা ফোর্টে বা দেরাদুনে কারা থাকে? একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোতেও রাজধানীতে সেনানিবাস রয়েছে।
কুখ্যাত কুচক্রী সিএইচটি কমিশনারের পালের গোদা গন্ডমূর্খ সুলতানা কামালের বক্তব্যগুলো কি দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের প্রতি বিচার ষড়যন্ত্রমূলক নয়?
বিষয়: বিবিধ
১১০৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি দাঁড়ায় যাবেন, আর আমি বসতে বলতে থাকবো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন