প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে আমাদের করনীয়
লিখেছেন লিখেছেন না বলা কথা ০৮ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:১২:০৮ দুপুর
প্রতিষ্ঠানের বা সংগঠনের জন্য শুধু জনবল সংগ্রহ করাই যথেষ্ট নয় তাদের প্রশিক্ষন দিয়ে ক্ষ করে গড়ে তুলাই সবচেয়ে বড় কাজ। ১৫ কোটি মানুষের ৩০ কোটি হাত আছে কিন্তু ক্ষ হাতের সংখ্যা খুবই কম। তাই প্রশিক্ষনএকটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় যার মাধ্যমে অক্ষ হাতকে ক্ষ করে গড়ে তোলা যায়।
প্রশিক্ষন: স্ব স্ব পেশায় ক্ষতা অর্জনের জন্য যে শিক্ষাদান করা হয় তাকে প্রশিক্ষনন বলে। অন্যভাবে বলা যায় হাতে কলমে শিখানোর একটি প্রক্রিয়া হল প্রশিক্ষন।
প্রামান্য সংজ্ঞাঃ মাইকেল আর্মষ্টং বলেন: নির্দিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একজন ব্যক্তির প্রয়োজনীয় জ্ঞান, ক্ষতা ও মনোভাব উন্নয়নের রীতিবদ্ধ এগুলোই হলো প্রশিক্ষন
Ricky w. Griffin এর মতে: কর্মীদের যে কাজের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে সে কাজটি কিভাবে করতে হবে তা শিক্ষাদান করাকে প্রশিক্ষনবলে।
Gary Dessler এর মতে: নতুন ও পুরাতন কর্মীদের কাজের ক্ষতা বৃদ্ধির পদ্ধতিকে প্রশিক্ষনবলে।
অর্থ্যাৎ প্রশিক্ষনকর্মীর তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাসত্মবে প্রণয়নের ক্ষতা অর্জনের মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয়।
প্রশিক্ষনউদ্দেশ্যঃ
প্রশিক্ষনপ্রোগ্রামের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো নিচে তুলে ধরা হল-
1. পারস্পরিক পরিচিতি
2. সম্পর্ক উন্নয়ন
3. ক্ষতা বৃদ্ধি
4. মনোভাবের পরিবর্তন
5. নিষ্ক্রিয়তা দূরীকরণ
6. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা প্রদান
7. বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষ সাধন
8. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
9. বহুমূখী শিক্ষাাদান
10. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
প্রশিক্ষনগুরম্নত্বঃ
প্রশিক্ষনভাল ব্যবস্থাপনার ভিত্তি প্রসত্মর স্বরূপ। এটি কর্মীদেরকে অধিক কার্যকর ও উৎপাদনশীল করে গড়ে তুলে। নিমেণ এর গুরম্নত্ব তুলে ধরা হল-
1. মানসিক পরিবর্তন সাধন
2. উৎপাদন বৃদ্ধি
3. সময় ও কাঁচামালের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিতকরন
4. মনোবল বৃদ্ধি
5. আচরনের পরিবর্তন
6. দূর্ঘটনা হ্রাস
7. অপচয় রোধ
8. শ্রম অসমেত্মাষ হ্রাস
9. সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা
10. তথ্য সরবরাহ
প্রশিক্ষনপ্রোগ্রামের পরিকল্পনাঃ
একটি প্রশিক্ষনপ্রোগ্রাম বাসত্মবায়ন করার জন্য কমপক্ষে ৩ মাস পূর্বে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিৎ। তাহলে তা সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে বাসত্মবায়ন করা সম্ভব হবে।
1. প্রশিক্ষনার্থী নির্বাচন করাঃ একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদের লোক কর্মরত থাকে। এদের মধ্য থেকে কোন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে তা পূবেই নির্ধারণ করতে হবে।একই সাথে বিভিন্ন পদবীর জনবলকে একত্রে প্রশিক্ষণ দিলে তা ফলপ্রসূ হয় না।
2. প্রশিক্ষনউদ্দেশ্য ঠিক করাঃ প্রশিক্ষনের মূল উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট থাকতে হবে। কেন আমরা প্রশিক্ষনদিব এই প্রশিক্ষনপ্রোগ্রাম থেকে আমরা কি অর্জন করতে চাচ্ছি তা স্পষ্ঠ থাকতে হবে।
3. ট্রেনিং সূচি তৈরী করাঃ প্রশিক্ষণের সূচি পূর্বেই ঠিক করা উচিত । এতে করে শিক্ষর্থী ও প্রশিক্ষকগণ নিজেদেরকে মানসিক ভাবে প্রস্ত্তত করতে পারে ।
4. প্রশিক্ষনের সিদ্ধাত্ম অটল থাকাঃ সিদ্ধামেত্ম অটল থাকতে হবে।ঘন ঘন সিদ্ধামত্ম পরির্বতন করা যাবে না।
5. প্রশিক্ষক ঠিক করাঃ আলোচনার বিষয়ের উপর বিবেচনা করে প্রশিক্ষক ঠিক করা উচিত। মার্কেটিং বিষয়ের আলোচনা অবশ্যই একজন ক্ষ লোককে দিতে হবে । কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে আলোচককে তার আলোচনার বিষয় ও সময় জানানো উচিত যাতে করে তিনি উক্ত বিষয়ের উপর আলোচনার শিট তৈরি করতে পারেন।
6. প্রশিক্ষনের তারিখ ও সময় নির্ধারন করাঃ নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ নির্ধারণ করা দরকার।
7. আয় ও ব্যয়ের বাজেট তৈরি করাঃ প্রোগ্রাম বাসত্মবায়নের আয় ও ব্যয়ের বাজেট করা দরকার। কত জন ডেলিগেট হবে, ডেলিগেট ফি নির্ধারণ, মেহমান কতজন ও খাবার ও নাসত্মার পূর্ন বিবরন বাজেটে উলেস্নখ থাকা দরকার।
8. কমিটি গঠনঃ একটি অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে বাসত্মবায়ন করার জন্য বাসত্মবায়ন কমিটি করা খুবই জরম্নরী। কমিটি নিমণরম্নপ হতে পারে-
পরিচালক
ব্যবস্থাপক
অফিস বিভাগ
খাদ্য বিভাগ
ডেকোরেশন বিভাগ
পানি ও সেনিটেশন
শৃংখলা ও চিকিৎসা বিভাগ
সাংস্কৃতিক বিভাগ
মেহমান বিভাগ
9. দায়িত্ব বন্টনঃ বাসত্মবায়ন কমিটির আলোকে প্রতিটি বিভাগে একজন করে ক্ষ ও যোগ্য জনবলকে দায়িত্ব প্রদান করা। প্রতিটি বিভাগেই সহকারী হিসাবে একাধিক জনবলকে দায়িত্ব দেয়া দরকার তবে খাদ্য ও শৃংখলা বিভাগে পর্যাপ্ত লোক দেওয়া প্রয়োজন।
বাসত্মবায়ন কমিটির কাজঃ বাসত্মবয়ন কমিটির প্রত্যেকেরই কাজ রয়েছে । নিমেণ তা তুলে ধরা হল:
পরিচালকের দায়িত্বঃ একটা প্রোগ্রাম সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে বাসত্মবায়ন করার জন্য পরিচালকের দায়িত্বই হচ্ছে প্রধান। তিনি সকল বিভাগীয় প্রধানদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা ও যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিবেন। সকল বিভাগীয় প্রধানদের কাজ বুঝিয়ে দিবেন ও মাঝে মাঝে সমন্বয় মিটিং আহবান করে কাজের তদারকি করবেন। প্রোগ্রাম শুরম্নর আগের দিন অবশ্যই বিভাগীয় মিটিং করে সকল বিভাগের প্রস্ত্ততি সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরম্নতে উদ্বোধনী বক্তব্য ও শেষে অবশ্যই সমাপনী বক্তব্য প্রদান করবেন।
ব্যবস্থাপকের কাজঃ ব্যবস্থাপক মূলতঃ পরিচালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। প্রোগ্রামের সকল ব্যবস্থাপনা করাটাই আসলে ব্যবস্থাপকের কাজ। বিভাগীয় প্রধানদের দিয়ে কাজ সুষ্ঠু ও সময় মত করানো হল ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব। মেহমান ও ডেলিগেটদের যথাসময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত নিশ্চিত করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রোগ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব ব্যবস্থাপকের উপরই ন্যসত্ম তবে অনুষ্ঠান পরিচালনায় যদি কোন ক্ষ লোক থাকে তবে সে তা পরিচালনা করতে পারে। তবে পরিচালককে অবশ্যই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে এবং শ্রোতাদের মোটিভেট করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
অফিস বিভাগঃ অফিস বিভাগের কাজের সৌন্দেয্যের উপর সম্পূর্ন প্রোগ্রামের সৌন্দয্য নির্ভর করে। অফিস বিভাগের অনেক কাজ রয়েছে নিমেন্ তা তুলে ধরা হল:
1. প্রোগ্রামের চিঠি তৈরি করা।
2. চিঠি টার্গেটকৃত জনবলের কাছে পৌছানো।
3. হল রম্নম ভাড়া করা।
4. হাজিরা সিট তৈরি ।
5. ডেলিগেট ফি সংগ্রহ।( যদি থাকে)
6. ডেলিগেট কার্ড তৈরি।
7. সাদা কাগজ ও কলম সরবরাহ।
8. প্রোগ্রামের ছবি ও আলোচনা সংগ্রহ করা।
9. আলোচনা ফটোকপি করা ও তা সকলকে সরবরাহ।
10. প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে একজনকে স্টেজের কাছাকাছি রাখা যেন কোন প্রয়োজন হলে পরিচালক তাকে বলতে পারে।
হল রুমে যা নিয়ে যেতে হবেঃ প্রোগ্রাম স্থলে যা যা লাগবে তার একটি তালিকা তৈরি ও প্রোগ্রাম শেষে ঔ তালিকা দেখে তা ফিরত নিয়ে আসা।নিমেণ তালিকা তুলে ধরা হল:
ক. ব্যানার
খ. দাওয়াতী চিঠি
গ. হল রুম ব্যবহারের অনুমতি পত্র
ঘ. কর্মসূচি
ঙ. ফাইল
চ. কলম ও কাগজ
ছ. ষ্টাপস্নার মেশিন ও পাঞ্চ মেশিন
জ. কলমদানী ও ওয়েট পেপার
ঝ. হোয়াইট বোর্ড ও মার্কার পেন
ঞ. প্রজেক্টর ও স্কিন
ট. ল্যাপটপ ও চার্জার।
ঠ. ক্যামেরা
ডেকোরেশন বিভাগঃ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায় এমন একটি জায়গায় প্রোগ্রাম স্থল নির্ধারণ করা উচিত। দীর্ঘ সময় বসে থাকা তখানই সম্ভব যখন হল রম্নমটি হয় সুন্দর ও মনোরম। তাই ডেকোরেশন বিভাগকে হল রুমের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। নিমেন্ এ বিভাগের কাজ তুলে ধরা হল:
1. হল রম্নম সুন্দর করে সাজানো।
2. আধুনিক ব্যানার তৈরি।
3. কাচা ফুলের ফ্লাড ঝুড়ি স্টেজে রাখা।
4. রম্নম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
5. কিছুক্ষণ পর পর এয়ার ফ্রেশার ব্যবহার করা।
6. বিরতির ফাকে হল রম্নম পরিস্কার করা।
7. হল রম্নমে পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার ঝুড়ি রাখা।
8. স্টেজে খাবার পানির ব্যবস্থা করা।
9. নামাজের বিছানা রাখা।
10. জায়নামাজ সংগ্রহ করা।
খাদ্য বিভাগঃ খাদ্য বিভাগ সফল হলে একটি প্রোগ্রাম সফল হয়। তাই এই বিভাগের কাজ খুবই যমেত্মর সাথে করতে হয় ।খাদ্য বিভাগের কাজ নিমণ তুলেধরা হলঃ
1. মেহমানসহ মোট ডেলিগেট সংখ্যা হিসেব করা।
2. সকাল, দুপুর ও রাতের আলাদা খাবার মেন্যূ তৈরি করা।
3. মেন্যু অনুযায়ী বাজেট তৈরি করা।
4. খাবার পেস্নট ও গস্নাস ব্যবস্থা করা।
5. প্রোগ্রাম সূচি দেখে সময়মত খাবার সরবরাহ।
6. সম্ভব হলে চায়ের ব্যবস্থা করা।
7. সকলে খাবার পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া।
8. নাস্তার ক্ষেত্রে মৌসুম অনুযায়ী ফলের ব্যবস্থা করা।
পানি, সেনিটেশন ও চিকিৎসা বিভাগঃ পানি সেনিটেশন বিভাগের কাজ নিমেণ তুলে ধরা হল:
1. প্রয়োজনীয় খাবার পানির ব্যবস্থা করা।
2. বাথ রম্নমে সাবান ও টিস্যুর ব্যবস্থা করা।
3. ঘন ঘন টয়লেট পরিস্কার করা।
4. টয়লেট র্দুগন্ধমুক্ত রাখা।
5. কেউ অসুস্থবোধ করলে তার সেবা করা।
6. খাবার স্যালাইনসহ প্রাথামিক ঔষধ পত্র সংগ্রহে রাখা।
অর্ভ্যথনা ও শৃংখলা বিভাগঃ এ বিভাগের কাজ নিমণরম্নপঃ
1. হাসিমুখে সবাইকে অর্ভ্যথনা জানানো।
2. সকল ডেলিগেটদের বসার ব্যবস্থা করা।
3. হলরম্নমের প্রতিটি গেটে শৃংখলা বিভাগের লোক রাখা।
4. বিশৃংখলা এড়াতে সব সময় সর্তক থাকা ।
5. হল রম্নমে কে প্রবেশ করছে ও বাহিরে যাচ্ছে তা নজরে রাখা।
6. অপরিচিত কাউকে হল রম্নমে প্রবেশ করতে না দেওয়া।
7. নামাজ ও খাবার বিরতির পর সবাইকে হল রম্নমে বসতে সহযোগিতা করা।
8. সকলের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা। কোন ক্রমেই রাগ করা যাবে না।
মেহমান বিভাগঃ এ বিভাগের কাজ ন্মিনরম্নপঃ
1. মেহমানদের প্রোগ্রামের একদিন পূর্বে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়া।
2. মেহমানদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।
3. আমত্মরিকতার সাথে মেহমানদের গ্রহণ করা।
4. মেহমানদের নাসত্মা ও খাবার ব্যবস্থা করা। ( এক্ষেত্রে কোন মেহমান কি খাবার পছন্দ করে তা পূর্বে জেনে নেয়া)
5. মেহমানদের চায়ের ব্যবস্থা করা।( এর জন্য কাপ পিরিজ সংগ্রহে রাখা)
6. আলোচনা শেষে মেহমানকে ধন্যবাদ জানানো।
7. বিদায় বেলায় তার প্রাপ্য সম্মানী অবশ্যই প্রদান করা।( খামের ভিতরে)
সাংস্কৃতিক বিভাগঃ প্রোগ্রামের একমুখী ভাব দূর করার জন্য এবং মানসিক প্রশামিত্মর জন্য বিনোদন প্রয়োজন। এই জন্য সাংস্কৃতিক বিভাগ থাকার দরকার। নিমেণ এ বিভাগের কাজ তুলে ধরা হলঃ
1. সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারন করা।
2. সাংস্কৃতি গোষ্ঠির সাথে পূর্বেই যোগাযোগ করা।
3. সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটা সূচি তৈরি করা।
4. ডেলিগেটদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাক বলেছেন বলেইতো শুনতে পারলাম, জানতে পারলাম এবং কাজেও লাগবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন