বাসে সংরক্ষিত নারী আসন অসংরক্ষিত
লিখেছেন লিখেছেন না বলা কথা ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৪:৪৬ সকাল
আমার মা, দাদি,নানী, খালা, ফুফু, মামী, বোন ও জীবন সাথী স্ত্রী প্রত্যেকেই একটি নামে পরিচিত সে হলো নারী। জীবন সাজাতে ও জীবন বাচাঁতে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। দুঃখের সংসারে একটু সুখের জন্য অনেক নারী আজ ঘর ছেড়ে কর্মমুখী হয়েছে। কর্মের জন্যই নারীকে প্রতিদিন যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। বাসে সংরক্ষিত আসনের অধিকারটুকু পেতে নারীকে যে কতটা বেগ পেতে হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া কাউকে কোন ভাষায় বুঝানো সম্ভব না।
নগরীতে চলাচলকারী প্রতিটি বাসে মহিলা আসন থাকা সত্ত্বেও মানবিকতাহীন কিছু পুরুষের জন্য সেখানে তাদের ঠাই হয় না। বিআরটিএ এর লিখিত নির্দেশ অনুযায়ী , প্রতিটি বাসে মহিলাদের জন্য এক -তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত করার কথা। সেক্ষেত্রে ৩০ আসনের বাসে ১০টি আিসন সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন , বিআরটিসি সহ কোন বাসেই ৯টির বেশী আসন সংরক্ষণ করা হয় না। বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধিদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখার জন্য সরকার গেজেট প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পূর্নাঙ্গ কোন আইন তৈরি করা হয়নি বিধায় নারী আসনে পুরুষরা নির্ভয়ে বসে পড়ে। আর নারী যাত্রীকে দাড়িঁয়ে থেকে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করে গত্মব্যে পেীছতে হয়।
বাসে নারী আসনে বসে পুরম্নষরা কিছু কথা বলেন ও কিছু কাজ করেন। যেমনঃ
1. নারী পুরুষ সমান অধিকার।
2. নারীরা পুরুষের আসনে বসে কেন?
3. বাসে টাকা দিয়েছি উঠেছি, ছিট ছাড়ব কেন?
4. আমি অসুস্থ।
5. দেখেও (নারীকে) না দেখার ভান করে বসে থাকা।
6. জানালা দিয়ে ( নারী যাত্রী দেখে) দিনের বেলায় আকাশের চাঁদ দেখা।
7. নারীকে বাসে উঠতে দেখলেই ঘুমের ভান করা।
আবার অনেকে প্রশ্ন করেন , সংরক্ষিত আসন কতটা আইনসম্মত ? নারী আসনের আদি সুত্র হলো ১৯৭৯ সালের ১৮ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহিত ‘‘সিডো’’ বা নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ আইনকে চিহৃিত করা যায়। এই সনদে উল্লেখ আছে যে, নারীর প্রতি বৈষম্য দুর করার লক্ষ্যে আইনগত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। বাংলাদেশ এই সনদে ১৯৮৪ সালের ৬নভেম্বর স্বাক্ষর করে। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানেও নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছদ অনুযায়ী , রাষ্ট নারী বা শিশুদের অনুকুলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রনয়ন করতে পারবে। সে হিসেবে নারী যাত্রীরা আইনগত ভাবেই বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন।
বাসে সংরক্ষিত আসন না থাকলে নারীরা নিন্মোক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হবেঃ
১.কোন বাসের ষ্টাফরা নারী যাত্রী তুলতে চাইবে না।
২. গাড়িতে উঠার পর পুরুষের দ্বারা যৌন হয়রানির সম্ভবনা প্রবল।
৩. শাড়ি পরিহিত নারী পোষাকের কারণে চলন্ত বাসে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে পারবে না।
৪. গর্ভবতী মহিলার ( যেহেতু দেখে বুঝা যায় না) বাসের ঝাকিতে গর্ভের সন্তান নষ্ট হতে পারে।
আমি সেইসব পুরুষদের বলছি যারা বলেন, নারীরা পুরুষ সিটে বসে কেন? আপনি কি বলতে পারবেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিতমহিলা আসন হতে কোন পুরুষ এমপি হয়েছেন। উত্তর অবশ্যই না। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরুধী দলীয় নেতা পুরুষের সাথে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। সুতরাং বুঝা গেল যে, নারীরা আসন খালী থাকলে যে কোন আসনে বসতে পারবে এবং সংরক্ষিত আসনগুলোও শুধুই মহিলা , শিশু ও প্রতিবন্ধিদের জন্য । আপনি যদি নিজেকে মহিলা বা প্রতিবন্ধি মনে করেন তবে আমার কিছু বলার নেই।
আবার অনেকে টাকার গরম দেখিয়ে বলেন, আমরা কি বাসে টাকা দেইনি ? প্রশ্নটা টাকার নয়। প্রশ্নটা হলো ভদ্রতার, মানবিকতার, আর মায়ের জাতির প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার। আজ যে নারীকে দাড়ঁ করিয়ে রেখে আপনি বসে আছেন, জানালা দিয়ে আকাশের চাদঁ দেখছেন, ঘুম ও অসুস্থতার ভান করছেন তার জায়গায় আপনার মেয়ে , বোন,বউ অথবা বৃদ্ধা মাকে দাড়ঁ করিয়ে দেখুন তো ? টাকার অহংকার আপনার মধ্যে থাকে কি না? থাকার কথা না , যদি আপনার মধ্যে মনুষ্যতববোধ কিছুটা অবশিষ্ট থাকে। আপনি যদি আজকে কোন বোনকে নিজের আসনটি ছেড়ে দেন নিশ্চিত কালকে কেউ আপনার বোনকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে তার ইজ্জত রক্ষ করবে।
তবে শুধুমাত্র পুরুষদের দোষ দিলে ভুল হবে। বাস্তব সত্য হলো অনেক নারীও বাসের মহিলা আসনে পুরুষকে বসতে উদ্ভুদ্ধ করে এবং নারীর বিরুধীতা করে। কয়েকদিন আগে আমি আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে মানিকনগর থেকে বিআরটিসি বাসে উঠলাম। বাসে উঠা মাত্রই একটি ছেলে দ্রুত মহিলা সিটটি ছেড়ে দিয়ে পেছনে চলে গেল। আমার স্ত্রী ছেলেটির ছেড়ে দেওয়া আসনে বসার পর পাশের মহিলাটি রেগে গেলেন তার ছেলের উপর। কেন সে বোকার মত সিটটি ছেড়ে দিল। আমার স্ত্রী মহিলাকে বলল, আপনি রাগ করছেন কেন, আপনার ছেলেতো অনেক ভদ্র, আপনার তো রাগের পরির্বতে গর্ব করা উচিত যে, আপনি তাকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শিখাননি তথাপি সে নারীকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে। মহিলাটি প্রতিউত্তরে বলল- ভদ্রতা ও শ্রদ্ধাবোধ দিয়ে কি হবে? বলুনতো একজন মা যদি তার ছেলেকে ভাল কাজের উপদেশ আর উৎসাহ না দেয় তবে আমাদের দেশ কবে সভ্য হবে। আমি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নিকট সকল কর্মজীবি মহিলা ও বিবেকবান পুরুষদের পক্ষ হতে অনুরোধ করছি -আপনি একজন নারী হিসেবে নারীদের এই কষ্ট থেকে রক্ষ করুন। সংসদে একটি আইন তৈরি করে নারীদের অধিকার আদায় করে দিন।
পরিশেষে বলব,সকল পুরুষই খারাপ তা কিন্তু নয়। অনেক পুরুষ আছেন যারা চলার পথে নারীকে সম্মান করেন। নিজের আসন ছেড়ে বসতে দেন নারীদের। আমরা চাই দেশের প্রতিটি পুরুষ হোক নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল । কবি বলেছেন-
আমাদের দেশে হবে, সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে,
মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
মানুষ হতেই হবে, এই তার পন।
আসুন আমরা মানুষের মত মানুষ হই।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসুন আমরা মানুষের মত মানুষ হই । ভাল আহ্বানের জন্য ধন্যবাদ ।
তাহলে কোটার নামে আর সুবিধা ভোগ করা কেন ? এটা কি তাদের এগিয়ে যাবার দাবীকেই অসার করে দেয় না ?
সংরক্ষিত মহিলা আসন করেছিলেন এরশাদ , আর এরশাদ কি ধরনের মানসিকতার ছিলেন তা কি কেউ না জানে !
এদেরকে কোন এক সাংবাদিক ৩০ সেট অলংকার বলে অভিহিত করেছিলেন ।
সংসদে এদের ভাষার চমতকার ব্যবহার সংসদকে আরও পরিশিলীত করে তুলেছে !
ভাড়ার কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলবো - যাদের জন্য সিট বরাদ্দ করা থাকে তাদেরকে তো আলাদাভাবেই ট্রিট করা উচিত । যারা কষ্ট করে গাদাগাদি করে যাবে তাদের ভাড়া আর যারা সংরক্ষিত আসনে পরে উঠেও বসে যাবে তাদের উভয়েরই ভাড়া সমান হবে - এটা খুবই বেআইনী ।
আর ভদ্রতা কি শুধু নারীদের প্রতিই দেখাতে হবে ? মেয়েরা যদি মায়ের জাত হয় তাহলে ছেলেরাও বাবার জাত । আপনি যাদেরকে মা বোন জ্ঞান করে ছিট ছেড়ে দিচ্ছেন তারা কি আপনাকে ভাই বা ছেলে জ্ঞান করে ইনস্ট্যান্ট কি কিছু দিচ্ছে বাসের মধ্যেই ?
দুনিয়ার সব মহিলা আমার মা নন , বোন নন । আমার মা বোনের প্রতি আমার দায়িত্ব থাকবে । বাকীদের জন্য আমি কেন দরদ দেখাবো ? উনারা কি উনাদের ছেলেকে যে সম্পত্তি দেবেন তার সমান ভাগ আমাকে দেবেন ?
সাধারনত বাস গুলোতে মহিলারা তাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে না বসে জেনারেল সিটগুলোতে বসে । এটা খুবই ইরিটেটিং । বাসের লোকদের উচিত মহিলাদের আগে সংরক্ষিত আসন গুলোতে বসিয়ে দেওয়া ।
মহিলাদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করা উচিত । গত ২৪ বছরেও মহিলারা এটা তাদের স্বজাতিদের দিয়ে করাতে পারে নি ।
এটা খুবই দুঃখজনক
মন্তব্য করতে লগইন করুন