ইসরা বা মেরাজ কি শিক্ষা নিয়ে আসে আমাদের জন্য ??
লিখেছেন লিখেছেন লজিকাল ভাইছা ১৬ মে, ২০১৫, ০৭:৩৩:৫৬ সন্ধ্যা
২০২৫ সাল লিভিং রুমে বসে পত্রিকায় নজর বুলাচ্ছি,
আজ কাল পত্রিকাগুলোতে আগের মত আরবি মাসের দিন তারিখ আর চাপায় না। আব্বু আজ কি পবিত্র মেরাজ ?? ছেলের প্রশ্নে চোখ তুলে দেখলাম তার হাতে দৈনিক সংগ্রাম, কাছে গিয়ে দেখলাম সে আবুল আসাদের কলাম পড়ছে। মনেপড়ে গেল সেই সালাউদ্দিন যুহুরী মারা যাওয়ার পর থেকে আর সংগ্রাম পত্রিকাটি পড়া হয়নি। স্মৃতির পৃথিবী থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম আবার ছেলের প্রশ্নে:
“আব্বু মেরাজ কি??”
আমি: নবুয়তের ১২ তম বছরের রজব মাসের ২৭ তারিখ রজনীতে মহান আল্লাহ্ তায়ালা তার হাবীব শেষ নবী বিশ্বমানবতার মুক্তিরদূত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে, তার দরবারে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যান। যাকে আমরা ইসরা বা মেরাজ বলে থাকি। এটা ছিল রাসুল (সঃ) এবং মুসলমানদের জীবনের চরম কঠিন সময়। এর কিছু দিন পূর্বেই রসূল (সঃ), মক্কাতে উনার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিপদের সময়ের যিনি উনাকে পাশে থেকে সান্ত্বনা এবং শক্তি যুগীয়ে গেছেন সেই প্রিয়তম সহধর্মিণী হযরত খাদিজা (রাঃ) কে হারিয়েছেন। আর এই মেরাজের ১ বছর পরই হিজরত সংগঠিত হয়েছিল।
এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১৭ নাম্বার সূরা- বনী ইসরাঈল বা ইসরা’র প্রথম আয়াতেই মহান আল্লাহ্ পাক ঘোষণা দিয়েছেন “মহিমান্বিত তিনি যিনি স্বীয় বান্দাহকে এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম হইতে মসজিদুল আকছায় পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে কিছু নিদর্শন দেখান হয়, নিশ্চয় তিনি(আল্লাহ্) সব কিছু দেখেন এবং শোনেন”।
এই সম্পর্কে আর জানতে হলে তোমাকে পড়তে হবে, বুখারী শরীফের হাদিস নাম্বার ৩৪২, সহি মুসলিম শরীফের ৭৩ - অনুচ্ছেদ ।
ছেলে: ঠিক আছে আব্বু আজই পড়ব ইনশাল্লাহ। কিন্তু আব্বু এক কথায় বলত এই মেরাজ থেকে আমরা কি পেলাম??
আমিঃ তার আগে বল, ধর তোমাকে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী তার বাসায় দাওয়াত দিল, কারণ উনি তোমাকে অনেক বেশী পছন্দ করেন। সেখানে উনি তোমাকে একটি গিফট হাম্পার দিলেন, বললেন “এটা তোমাকে এবং তোমার পরিবারের জন্য আমার পক্ষ থেকে গিফট” তোমার কাছে এই গিফটের মূল্য কি রকম হবে? আর তোমার অনুভূতিই বা কেমন হবে ??
ছেলে: আব্বু উদাহরণ দিয়ে বলি ??
আমি: হুম বল !
ছেলে: আব্বু, যেমন বিএনপির লোকজন বেগম জিয়া , আওয়ামীলীগের লোকজন হাসিনার সাথে একবার ফেস টু ফেস দেখা করতে পারলেই, মনে করে তার জীবন ধন্যহয়ে গেছে, তার উপর যদি কোন গিফট পেয়ে যায়, তবে সে ত খুশিতে এমন করবে যে ঐ গিফট গুলোকে শো – কেইস এ সাজিয়ে রাখবে, প্রতিদিন কয়েক বার করে দেখতে থাকবে। ঠিক তেমনি অবস্থা আমারও হবে, এটাই হবে জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন এবং সবচেয়ে মূল্যবান গিফট হবে।
আমি: হুম ! তাহলে এবার একটু চিন্তা কর, দুনিয়ার মালিক, তোমার-আমার স্রষ্টা, যিনি এই বিশ্ব জাহান সৃষ্টি করেছেন তিনি আমাদের রাসুল(সঃ) কে দাওয়াত করলেন, এবং নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ পরিবহণ সহ একজন বিশ্বস্ত দূত পাঠালেন, তিনি সেই দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলেন, বিশ্বমালিক আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। আল্লাহ্পাক তখন আমাদের রাসুল মুহাম্মদ(সঃ) কে গিফট দিলেন, যে গিফটা উনার এবং উনার অনুসারীদের জন্য। এক পর্যায়ে রাসুল(সঃ) আল্লাহ্র কে বললেন আমি আপনার সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য অর্জন করলাম কিন্তু আমার উম্মত!! আল্লাহ্ জানিয়ে দিলেন “ নামাজ এই হবে আপনার উম্মতের জন্য মেরাজ বা সাক্ষাত”
এখন একটু চিন্তা করে দেখ আমরা কি পেলাম!! আমরা পেলাম দিনে ৫ বার বিশ্ব জাহানের মালিকের আমাদের স্রষ্টার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ। যেটা এর পূর্বে আর কোন নবীর উম্মতরা পায়নি। আল্লাহ্ পাক আমাদের সাথে দিনে ৫ রার সাক্ষাতের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যেখানে আমরা আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়া, দুঃখ বেদনা,আল্লাহ্ পাক কে জানাতে পারব। এরপরও কেন আমরা সেই সাক্ষাতকে অবহেলা করছি? হেলায় নষ্ট করছি মহা সুযোগ! তাহলে বুঝ নামাজ যারা মিস করে তারা কত বড় দুর্ভাগা ।
ছেলে: হুম আব্বু এটা অনেক বড় লস আমরা যারা নামাজ মিস করি। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি এইরকম সাক্ষাতের সুযোগ দিত, তাহলে আমরা কিন্তু তা কিছুতেই মিস করতাম না। অথচ এর চেয়েও বিলিয়ন বিলিয়ন গুণ ইম্পরট্যান্ট সুযোগ আমরা হেলায় মিস করছি। আল্লাহ্ আমাদেরকে দিনে ৫ বার নামাজ জামাতের সাথে পালন করার সৌভাগ্য দিন। আমীন।
আমি: আমীন। ছুম্মা আমীন। কিন্তু বেটা, আল্লাহ্ শুধু নামাজ পড়তে বলেন নি, নামাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বলেছেন। আসুন আমরা সবাই আমাদের নিজেদের জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে নামাজকে প্রতিষ্ঠা করি।আর এটাই হোক পবিত্র ইসরা বা মেরাজ রজনী শিক্ষা।
বিষয়: সাহিত্য
২১৫২ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। আল্লাহ আপনার উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।
তবে শুরুটা মনে হয় একটু ভুল হয়েছে!!
দুদিন ধরে ভাবীদের ফোনে কান ধরে গেছে! একই প্রশ্ন কবে শবে মেরাজ? কবে নামায?
আমরাও আজকে মেয়েদের সাথে আলোচনা করেছি ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা ও তাৎপর্য! আশাকরি সবাই শুনে শুনে জেনে জেনে জ্ঞানার্জন না করে বরং কোরান হাদীস থেকে সঠিক জ্ঞানার্জন করবে! দিবস পালনের একটা ট্রেন্ড কাজ করছে সবার মধ্যে! আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন!
আপনার গল্পটি বেশ চমৎকার হয়েছে!শুকরিয়া
পরিশেষে পোষ্টটি পড়ে সুন্দর উৎসাহমূলক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহু খাইর।
ইসলাম কে আনুষ্ঠানিক ধর্মে পরিবর্তনের জোড় প্রচেষ্টা বর্তমানে! মূল শিক্ষা কে পাশ কাটিয়ে জাগতিক আনন্দময় করতেই কত কিছু করা হচ্ছে!
পবিত্র মেরাজের অনুপন উপহার 'সালাত প্রতিষ্ঠা'র শিক্ষা ফিরে আসুক সবার মাঝে -এই কামনা!
সুন্দর সাবলীল উপস্হাপনায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ শ্রদ্ধেয় লজিকাল ভাইছা!!
আপনারদের বিনয়তাই অনেক অনেক উপরে তুলে ধরে আপনাদের কে!
মহান রব আরো বড় করুন আপনাদের-এই প্রার্থনা অধম আমার!!
অনেক ধন্যবাদ লজিকাল ভাইছা ভাইয়া ।
আফরা আপু, আপনার সুন্দর মন্তব্য আমার মত যোগ্যতাহীন মানুষকেও অনুপ্রাণিত করে, প্রেরণা যোগায়, হয়ত এইভাবে একদিন যোগ্য বানীয়ে দিবে আল্লাহ্র রহমতে। সুন্দর মন্তব্য এবং প্রেরণার জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর।
দেরীতে উপস্থিত হওয়ার জন্য দুঃখিত ভাইছা। গল্পের আকারে ভবিষ্যত প্রজন্মকে মিরাজের তাৎপর্য শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতিটি বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ
আপু আমার বাবা খুব অসুস্থ, উনার জন্য দোয়ার আবেদন থাকল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন