$$$$$ সমস্যাটা হল, আমার চেতনায় !! $$$$
লিখেছেন লিখেছেন লজিকাল ভাইছা ২৬ মার্চ, ২০১৫, ০২:৪২:৩২ রাত
আজ ২৫ ই মার্চ শেষ হয়ে ২৬ ই মার্চের প্রথম প্রহর। ১৯৭১ সালের এই রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, এরই ফলশ্রুতিতে শতাব্দীর এক সাহসী নাবিক বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তবুও আমি আজ কাউকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে পারছি না !! কারণ আমার চেতনায় সমস্যা আছে !! আমি ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের কারাগারে বসে কাউকে কিভাবে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানাই ?? আমি ২৫ মার্চ দেখিনি কিন্তু ২৫ই ফেব্রুয়ারি ২০০৯ দেখেছি, দেখেছি ৫ই মে ২০১২ তাই আমি এমনিতেই শোকাহত, নতুন করে শোক পালন করার কিছুই নেই।
একঃ
সমস্যাটা হল, আমার চেতনায় !! চেতনা নামক এই আজব চিজটি নিজের মধ্যে ধারণ করলাম যত বার, ঠিক তত বারই তা কর্পূরের ন্যায় উবে গেল। যদিও এর কিছু যুক্তি সঙ্গত কারণও আছে।
১) তথাকথিত এই চেতনা, ইসলাম ধর্মের সাথে সাঙ্ঘসিক ।
২) ইহা একটি নতুন ধর্ম রীতি।
৩) এই একজন ধর্ম গুরু আছে ( যিনি জনগণের আবেগের সাথে খেলেছিলেন, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। পরে তিনি ঐ জনগণের সাথেই ফেরাউনের ন্যায় আচরণ করেছিলেন)
৪) এই চেতনা, বিজ্ঞান এবং গণতন্ত্রের সাথে ও সাঙ্ঘসিক।
৫) মিথ্যাচার, ধোঁকা, ছলনা , নিষ্ঠুরতা ও ফাঁফরে ভরা , এই চেতনা।
দুইঃ
এবার ও সমস্যা আমার চেতনায় !! সেই ২০০৯ সাল থেকে শুরু এই সমস্যার, তখন চেতনার ফেরিওয়ালারা ক্ষমতায় জেঁকে বসেছে মাত্র। মার্চ মাসের কোন এক দুপরে, ফার্মগেট ওভার ব্রীজের উপরদিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলাম, অনতিদূর হতে ভেসে আসছে অতি পরিচিত বজ্রকন্ঠের একটি ভাষণ। হঠাত থমকে গেলাম !! একি শুনছি !! দাঁড়িয়ে পড়লাম, সতর্ক হয়ে কান পাতলাম আরেক বার শুনার জন্য, ভেসে আসছে সেই কণ্ঠস্বর “ আজ ২৬ মার্চ, আমি পূর্বপাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। গত কাল,২৫ ই মার্চ গভীর রাতে, আমার নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর যে বর্বরতা চালিয়েছে হানাদার বাহিনী তার জবাব আমরা দিব। আপনারা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন, হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়ে জাপিয়ে পড়ুন, (তারপর সেই পুরাতন গান) ------------- রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দিব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। বিষণ ধাঁধায় পরে গেল আমার চেতনা !!!!
অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম, তার পর উপসংহার টানলাম এইভাবে, যেহেতু শেমুর ২৫ মার্চ এর শেষ সময় রাত ১১টায় দিকে গ্রেফতার হয়েছেন এবং এই কথাটি চরম সত্য তেমনি আবার এটাও সত্য যে শেমুর ২৬ মার্চ সকালে গ্রেফতার হয়নি। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় মনে, তিনি কি ভোর রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন !! দুইটি কারণে এটাও সম্ভব নয়। এক: ২৫ মার্চ রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে হানাদার বাহিনী বাঙ্গালী আমজনতার উপর জাপিয়ে পড়ে, এবং সেই খবর পরের দিন মানুষ জানতে পারে কারণ তখন তো আর আজকের মত ফেসবুক, ইন্টারনেট ছিলোনা। দুই: এটা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত যে সেইদিন রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে, শেমুর কে ঢাকায় এবং শেষ রাতের দিকে পাকিস্থানের এয়ারপোর্টে দেখা গিয়েছিলো,নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে।সুতরাং এটা কোনভাবেই সম্ভব নয় যে তার পক্ষে এই ভাষণটি দেওয়া, এই ঘোষণাটি দেওয়া। এমন কি ৭ই মার্চেও তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তাহলে এটা কি শুনলাম !! ??
চোখের পর্দায় ভেসে উঠল, মিশন ইম্পসিবল-২ মুভির একটা দৃশ্য যেখানে নায়ক একজনের মাস্ক পরে তার কণ্ঠ নকল করে, একটি ছোট টেকনোলজি ব্যাবহার করে। যাক সেটা না হোক, তাতে কি আজ কাল খুব ছোট এবং ফ্রী কিছু সফটওয়্যার দুনিয়াতে পাওয়া যায়, যা দিয়ে মানুষের ভয়েস এডিটিং করে অনেক প্রকার মিরাকল সৃষ্টি করা যায়। মনে মনে আল্লাহ্ কে ডাকলাম হে আল্লাহ্, তোমার এই দুনিয়া এত মিথ্যার ওজন কিভাবে সামলাচ্ছে ?? ও আল্লাহ্ গো উপর থেকে একটা দড়ি ফেল আমি আসমানে উঠে যাই, দুনিয়ার এত ছলনা, মিথ্যা আর সহ্য হয়না।
সেদিন থেকে,আমার চেতনায় অ্যালার্জি চূড়ান্ত রূপধারণ করল।
তিনঃ
কয়েক বছর আগের কথা, মামার কাছে গেলাম একটা কাজে। মামা আমার মায়ের ভাই, বড়ই হাইপো-থিটিক্যাল আওয়ামীলীগ বা চেতনা বাজ।এমনিতে আমাকে দেখলেই মামার চেতনার Thermometer অপটিমাম হয়ে যায়, তার উপর সেদিন ছিল ২৫ই মার্চ সন্ধ্যা বেলা। মামি বলল বস, চা নিয়ে আসছি, এদিকে মামা দিল চেতনার চুলকানি। অনেকক্ষণ চুলকানি দেওয়ার পর ভাবলাম এবার আমার পালা, দেই মামাকে একটা চেতনা নাশক ইঞ্জেকশন !!বললাম আচ্ছা মামা “ এই যে কালো রাত সেদিন হানাদার পাকি বাহিনী, নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙ্গালী জাতির উপর হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছিল, এটা ঠিক কখন ঘটে ছিল ?
মামা: কেন- ২৫ই মার্চ রাতে, এটাত সবাই জানে কিন্তু তুমি জাননা !! লজ্জার কথা।( ফুলটস পেয়ে মামায় তুলে মারলেন কিন্তু লং অনে ফিল্ডার মজুদ, টেনশন ফ্রী আমি)
আমি:২৫ ই মার্চ কখন ?? দিনের বেলায়, নাকি সন্ধ্যা বেলায় নাকি রাতের বেলায়?
মামা: গভীর রাতে, অর্থাৎ আনুমানিক রাত ১:৩০ টা থেকে ৪ টার দিকে সংগঠিত হয়েছিল শতাব্দীর ভয়ংকর এই বর্বরতা।
আমি: ঠিক আছে মামা । এখন বলেন আপনি গণিত বিশ্বাস করেন? বিজ্ঞান বিশ্বাস করেন?
মামা: হু করি।
আমি: গাণিতিক বিজ্ঞানের হিসাবে যদি সময়কে হিসাব করি তবে এই কালো রাত্রিটি হওয়ার কথা ২৬ ই মার্চ, যেহেতু ২৫ ই মার্চ রাত ১১:৫৯:৫৯ টার পর ২৬ই মার্চ শুরু তাই হত্যাযজ্ঞটা ঘটেছিল ২৬ই মার্চ এর প্রথম প্রহরে, তাই আমাদের উচিৎ এটাকে ২৬ই মার্চ কালো দিবস হিসাবে পালন করা।
মাম একটু রাগ হয়ে বললেন: এই সব কথা বলে তারা, যারা তোমার মত নির্বোধ।
ঠিক আছে মামা আমি নির্বোধ, গাণিতিক এই ছোট্ট একটা মারপ্যাঁচ যারা গুলিয়ে পেলে, তারাই তো বিশ্ব দরবারে জাতিকে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ৩ লক্ষ কে ৩ মিলিয়ন বলে। যারা জানে না ২৫ তারিখ রাত ১১:৫৯ মিনিটের পরে ২৬ তারিখ হয়, তাঁদের পক্ষেই সম্ভব ৩ লাখ কে ভুলে ৩ মিলিয়ন বলা। আন্তর্জাতিক মহল টিটকারি করে আমাদেরকে নিয়ে, আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে।
মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ! তাহলে আমাদের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ কি ৫ বছর ব্যাপী চলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও হরর, ভয়ংকর ছিল !! তাহলে কেন আমাদের রক্তে কেনা এই স্বাধীনতা যুদ্ধকে হেয় করা হল? উদ্ভট সব কিচ্ছা কাহিনী জুড়ে দিয়ে। আজ কেন এই বিতর্ক? সেই দিন যদি ঐ জ্ঞান পাপীরা ৩ লাখ কে ইংরেজিতে বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন ( বাংলায় ৩০ লাখ) বানিয়ে না পেলতেন, তাহলে আজ কোন নির্বোধ প্রশ্ন করতে সাহস পেতনা। যারা এই কাজ করেছে তারা জ্ঞানপাপী, আপনারা জ্ঞানপাপী, যে চেতনায় জ্ঞানপাপীর জন্মদেয়, সেই চেতনা নিপাত যাক।
চারঃ
গতকাল ফেসবুক এ দেখলাম ঘাদানিক’রা ২৫ মার্চ কাল দিবস কে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস না আন্তর্জাতিক কালদিবস ঘোষণার দাবীতে শহীদ মিনারে তেঁতুল মেলার ডাক দিয়েছে। সেই সাথে শহীদদের উদ্দেশ্যে মোমবাতি প্রজ্বলিত করিয়া তাঁদের কে সম্মান জানানোর ডাক দিয়েছে। এটা একটা ভাল কাজ কিন্তু আমার যে চেতনায় সমস্যা!! আমি কমেন্ট করলাম “ আমি আসব তবে,জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আসব। আমি হিন্দু নই, যে অগ্নিপুজা করব !! আমি ডাক দিচ্ছি , যারা মুসলমান তারা সবাই বায়তুল মোকাররমে চলে আসুন, আমিও আসব, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে সকল শহীদ দের জন্য দোয়া করব”। তা নাহলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুই রাকাত তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে দোয়া করব। এতেই নাকি গাঁজন নষ্ট হয়ে গেল, আমি নাকি মৌলবাদী, রাজাকারের প্রেতাত্মা, ব্লা ব্লা ব্লা------- । বললাম ভাই আমার চেতনায় সমস্যা আছে, শুধু সমস্যাই না মহাসমস্যা ।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজ আমার কাছে ঈদ এর মত খুশি লাগতাছে !!
আজ ঈদ বাংলার ঘরে ঘরে আনন্দ !!!! এমন খুশি বছরে দুই বার আসলেও এই বছর তা চার বার হওয়ার সম্ভবনা আছে, যদি আল্লাহ্ রহম করেন বাংলাদেশীদের উপর । একটা ঈদ এর খুশি আজ উজ্জাপন করলাম, ইনশাল্লাহ বাকি তিনটি খুব শিগ্রয় উজ্জাপন করব।
এই যে ভারতের হারে আমার এত খুশি, এটাও এক প্রকারের চেতনায় সমস্যা
মন্তব্য করতে লগইন করুন