ষাঁড় জাফ্রিকবাল অমনিবাস (একটি রম্য সায়েন্স ফিকশান)
লিখেছেন লিখেছেন লজিকাল ভাইছা ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:১৬:৪৬ রাত
## মৃত্যুভয় এতপর সিন্দুক আবিষ্কার (পর্ব- মৃত্যুভয়) ##
আজব দুনিয়ার বিশিষ্ট বিদ্বানী, গত দুই দিন ধরে বিষণ চিন্তিত!! যখন সে দেখল তার দুই চোখের সামনেই, তার প্রিয় দোস্ত নাস্তিক নাহিদ ভুল চিকিৎসায় মারা গেল।যদিও অনেক মৌলবাদী,স্বাধীনতা বিরোধীরা মনেকরে এই ভুল চিকিৎসা এবং মৃত্যুর কারণ নাহিদ নিজেই।
সময়কালঃ২০২১খ্রিস্টাব্দ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ২০২১ নং বেড। তার পাশের ২০২০ নং বেডের রোগীটাই একসময়ের ডাকসাইটের মন্ত্রী,টাকলু নাহিদ। যে বঙ্গদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে রসাতলে নিয়ে ছেঁড়েছিল।
তারও একযুগ আগের কথা,বঙ্গদেশে তখন বিরাজ করছিল এক ডিজিটাল স্বৈরশাসন। পুরো দেশের আকাশ ভরে গিয়েছিল একদল শুকুনের কালো ছায়ায়,জমিনে বিরাজ করছিল হায়নার দল।দেশে চলছিল নরকের কীটদের রাজ্যত্ব।শাসন ক্ষমতা চলেগিয়েছিল একদল জোকারের হাতে,ভাল মানুষ গুলো নিজেদের মানসম্মান এবং জীবন বাঁচানোর তাগিদে নিজের বন্ধিশালায় নিজেকে বন্ধী করে রেখেছিল।সাধারণ মানুষ হয়ে পড়েছিল অসহায়, কখনও হতভম্ব, কি বলবে, হাসবে না কি কাঁদবে!!!! টোটালি স্পীচলেস!!!!!
তখন ৫ম শ্রেণী থেকে শুরু করে এইচএসসি সহ সবধরনের পাবলিক পরীক্ষার এক-দুই দিন আগে, অনলাইনে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যেত। পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে A+ পেত, দশ গ্রাম খুঁজেও একজন ফেল মারা ছেলে-মেয়ে পাওয়া দায়ছিল।কোথায়ও কোন ছেলে-মেয়ে পরীক্ষায় ফেল মেরেছে শুনলে,দশ গ্রামের লোকজন দলে দলে ছুটে যেত সেই আজব প্রাণীটিকে দেখতে!!তাদের চোখে থাকত বিস্ময় !! এই যুগে ফেল করা কিভাবে সম্ভব !! কিছু কিছু মানুষ ভাবত, হায় একি যুগ আসল!! আগেত এমন ছিলনা। একসময় আশপাশের গ্রামের কেউ এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করলে, দশ গ্রামে সাড়া পড়েযেত, মানুষজন দলে দলে তাকে দেখতে আসত, দোয়া করে যেত অনেক বড় হও বাবা, গ্রামের নাম উজ্জ্বল করিয়ো।
তার ও দের যুগ পরে, যখন কেউ বোর্ড স্ট্যান্ড করত, তখন লোকজন পাগলপারা হয়ে ছুটে যেত তাকে দেখতে, শুভেচ্ছা জানাতে। আর বলাবলি করত অমুকের ছেলে কিংবা অমুকের মেয়ে বোর্ডস্ট্যান্ড করেছে।মোটামুটি মাসকাল ব্যাপী এলাকার মানুষজনের মুখে মুখে থাকতো তাদের নাম।এর পর ধীরে ধীরে এই তল্লাটের মানুষ জনের জীবনে আসল সেই আজব ডিজিটাল যুগ। তখন পরীক্ষার দুই-এক দিন আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েযেত, পাওয়া যেত ফেসবুক কিংবা দৈনিক খবরের কাগজে।ফলে দেশ থেকে ফেল নামক শব্দটা বিলীন হয়ে গিয়েছিল প্রায়। কোন ছেলে-মেয়ে পরীক্ষায় ফেল মেরেছে শুনলে মানুষ অবাক বিস্ময়ের সাথে প্রতিক্রিয়া দিত, দলে দলে লোকজন ছুটে যেত সেই ফেল মারা আজব আদু ভাইকে দেখতে। যেন কার পুকুরে তিমি মাছ ধরা পরেছে কিংবা কারো ধান ক্ষেতের ইঁদুরের গর্ত থেকে সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ধরা পরেছে। অবস্থা যখন এই, তখন কিছু কিছু শিক্ষিত মানুষ এর প্রতিবাদ করল, কিন্তু মন্ত্রী নাহিদ উল্টো তাদের কে রাষ্টদ্রোহী, মিথ্যাবাদী বললেন, এই সবকে প্রোপাগান্ডা, সরকারের সফল্যকে কালিমা মাখার অপচেষ্টা বলে চালিয়ে দিলেন। তার পর আর শেষ রক্ষা বলেই কোন কিছুই থাকলনা,শিক্ষা ব্যাবস্থা এমন হয়ে গেল ৫ম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠল, বাকীরা বই পুস্তকের পরিবর্তে, যন্ত্রপাতি বা চাকু, ঘোড়া এই সব নিয়ে চেতনা বাজিতে ব্যস্ত হয়ে গেল। তখন দেশে একটি প্রবাদ বাক্য চালু হল “আদু ভাই বেঁচে থাকলে আজ তার ও ১৪ টা ডক্টরেট ডিগ্রী থাকত”।
এই রকমই এক অপশিক্ষার আর চেতনার দুষ্ট চক্রের মাধ্যে দেশে তৈরি হল এক গুচ্ছ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সঙ্গাতিক, আমলা , দালাল এবং চুতিয়া সমাজ। ফলে দেশে চিকিৎসা ব্যাবস্থা একটা মরন ফাঁদে রুপান্তরিত হল। বঙ্গদেশে তখন একটা জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন চালু হল, সকল রোগের ঔষধ প্যারাসিটামল, ২টা করে দিন দুই বেলা।
আজ ২০২১ সাল, গতকাল বিদ্বানী ষাঁড় জাফ্রিকবালের সামনেই মৃত্যু হয়েছে নাহিদের, তারই তৈরি মৃত্যু ফাদে,তারই হাতের তৈরি ডাক্তারদের নকল চিকিৎসায়, এই ২০২০ নং বেডে। বন্ধুর মৃত্যুর ক্ষণটি এখন চোখের সামনে ভাসছে, এখন কানে ভাঁজছে সেই সময়ে ডাক্তার ও নাহিদের কথোপকথনঃ
নাহিদঃ ডাক্তার আমার বুকে ব্যাথা!! হু !! খুব কষ্ট পাচ্ছি।
ডাক্তারঃ প্যারাসিটামল ২টা করে দুই বেলা খেয়েছেন।
নাহিদঃ খেয়েছি। কিন্তু ব্যাথা মনেহয় আর বেড়ে গেছে !!!!
ডাক্তারঃ বলেন কি !! তাহলে তো আপনার বাইপাস করা লাগবে!!!!
নাহিদঃ বাইপাস মানে !!
ডাক্তারঃ বাই মানে টাটা- বিদায়, পাস মানে চিরতরে চলে যাওয়া। মানে আপনাকে টাটা বলে চিরকালের জন্য বিদায় করে দিব। আর একটা অর্থ ও হতেপারে বাইপাস মানে বাই চাঞ্জ প্রান পিরে পাওয়া। শেষটা আল্লাহ উপর কিন্তূ আপনি তো আল্লাহ্য় বিশ্বাস করেন না।
নাহিদঃ কে বলেছে তোমাদের এই সব? কোথায় থেকে শিখেছ এই সব শিক্ষা? পাস করেছ কিভাবে?
ডাক্তারঃ ইশারা করল তার সহকারীকে, ফেসবুক এ দেখ এই সব প্রশ্নের উত্তর আছে কিনা!! হতাশ হয়ে ডাক্তার নাহিদকে বলল, স্যার ফেসবুক এ তো প্রশ্ন গুলো পেলামনা!! আপনার সময় তো পরীক্ষার আগে ফেসবুক কিংবা পত্রিকায় প্রশ্ন পাওয়া যেত, তা দিয়ে জীবনে সকল পরীক্ষায় A+ পেয়ে ডাক্তার হয়েগেছি।তার পর ইমাম সাহেবের ভাইভা দেখার সুযোগ নিয়ে সোজা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে।
নাহিদের চেহারা মলিন হয়েগেল !! হায় একি হল !! ইতিমধ্যে ডাক্তাররা তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়েগেল, চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নাহিদ দেখল, একজন ফেসবুকে, একজন ইউটিউব এ,একজন কিছু বই পুস্তকের পাতা উল্টাচ্ছে । চোখ কপালে তুলে নাহিদ জিজ্ঞাস করল, এসব কি হচ্ছে? জবাবে ডাক্তার বলল, স্যার আপনার অপারেশান এর প্রস্তূতি চলছে !!
নাহিদঃ মানে কি?
ডাক্তারঃ কিভাবে বাইপাস অপারেশান করতে হয়, তাতো পরীক্ষার হলে নকল করে লিখেছিলাম !! তাই আজ অপারেশানও ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে দেখে দেখে নকল করে করতে হবে !!!! কিছু মনে নিয়েননা স্যার!! আমরা আপনার বাইপাস করেই ছাড়বো। আর এই ভাবেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে পরকালের ট্রেন এ চড়তে হল নাহিদকে, নিজের অবিশ্বাস সর্তেও।
আর ঠিক তখনই ষাঁড় সিদ্ধান্ত নিলেন মৃত্যুকে ঠেকাতে হবে। কিছু আবিস্কার করতে হবে তাকে, কমকি আমি, আমিই বাংলার হকিংস!!!! ঠেকাতে হবে আজরাইলকে!! জীবনে অনেক কিছু করলাম, দ্রোণ, চেতনা ফিল্টার, আরও কতকি !! না আমি মৃত্যুকে বয় পাই না, কিছু একটা করতেই হবে আমাকে----------
(শেষ পর্ব—আবিষ্কার!!)
বিষয়: সাহিত্য
২১৬০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হতাশ হয়ে ডাক্তার নাহিদকে বলল, স্যার ফেসবুক এ তো প্রশ্ন গুলো পেলামনা!! আরো অনেক আছে সব নিলাম না!
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ষাঁড় কি এবার চির জিবন-যৈাবন এর দাওয়াই আবিস্কার করবেন??
না ভাই, ওটা প্রথম লাইনেই দেওয়া আছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
এখন এর কিছু কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে । ঢাবি এডমিশন টেস্টে পাশ নম্বরও ওঠাতে পারে নাই এইসব জিপিএ স্টারদের ৭০% এর মত ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন