তিনি আসলেন, জামাতের নামে কুৎসা রটালেন এবং চলে গেলেন।
লিখেছেন লিখেছেন লজিকাল ভাইছা ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:১৩:১৭ রাত
তিনি আসলেন, বসলেন,জামাতের নামে কুৎসা রটালেন এবং চলে গেলেন।
আমাদের অতি মানবীয় প্রধান মন্ত্রী ডুবাই সফরে আসলেন গত ২৪ই অক্টোবর ২০১৪ইং। তার এই আগামন উপলক্ষে সেখানে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে জেগেছে নতুন স্বপ্ন, আশা, এবং অনেক আকাঙ্ক্ষা। গত দুই বছর যাবত চরম প্রতিকূলতার মধ্যে থাকা প্রবাসীরা রঙিন স্বপ্নের জাল বুনেছে, এই একটি সফরকে ঘিরে।সকল রাজনীতির উদ্দে উঠে সবার একটাই চিন্তা বাংলাদেশীদের ভিসা কবে চালু হবে। সেই স্বপ্নে রঙিন পালক যুক্ত করেছে দেশের হলুদ মিডিয়া গুলোর চমকপ্রদ সব খবর, পড়লেই মনে হয় ভিসা এখনই চালু হচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই চালু হচ্ছে। আমি একজন অধম এই বিষয়ে অনেক অনুসন্ধান করে যা ফেলাম, আপনাদের কে সে বিষয়ে অবহিত করা দায়িত্ব মনে করলাম।
UAE এর প্রধান দুটি ইংরেজী পত্রিকা Gulf News এবং Khaleej Time .এখানে বলে রাখা ভাল যে Gulf News পত্রিকাটি কে এদেশের সরকারী মুখপাত্র ও বলা যায়। একটা বাংলাদেশের প্রথম আলো(Gulf News) অন্যটি জনকণ্ঠ (khaleej Time) । আর সংযুক্ত আরব আমিরাত(UAE) সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তিদের ১নং ব্যাক্তি হলেন দেশের প্রেসিডেন্ট ও আবু ধাবির শেখ, শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। ২নং ক্ষমতাধর ব্যাক্তি হচ্ছেন দেশের প্রধান মন্ত্রী ও ডুবাইয়ের শেখ শেখ মুহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাক্তুম। ৩নং ব্যাক্তি হচ্ছেন দেশের আবু ধাবির ক্রউন প্রিন্স, দেশের সেনা প্রধান, ডিফেন্স মিনিস্টার শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। শেখ খলীফা অসুস্থ তাই এখন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি হচ্ছেন শেখ মুহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাক্তুম( কাগজে কলমে না হলেও নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইনিই হচ্ছেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি) তার পর হলেন শেখ মুহাম্মাদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
এই গরিবের মনে খটকা লাগে প্রথম দিনই, যখন তিনি আবুধাবি আসলেন, বিমান বন্দরে তাকে গ্রহণ করতে গেলেন UAE এর সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী। তাতে সমস্যা নেই কিন্তূ সমস্যা হল তাকে নিয়ে করা নিউজ টা, মাত্র ৫ লাইনের একটা নিউজ করল Gulf News( এদের প্রথম আলো)। দেখুন ১নং ছবিতে:
দ্বিতীয় দিন উনার সাথে বৈঠক হল UAE এর বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এর সাথে। এই বৈঠকে অতি মানবীয় পুদান মন্ত্রী৫ টি পয়েন্ট এ কথা বলেছেন (১) দক্ষিন এশিয়ান দেশ গুলো উচিৎ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন এর মত একটি আঞ্চলিক সংগঠন করা। যাতে তারা একসাথে খাদ্য সমস্যা, স্যানিটেশন সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে, শিক্ষা , স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এর সুযোগ সুবিধা জনগনকে প্রদান করা যায়। এতে কোন শক্তি তাদের ক্ষতি করতে পারবেন। (২) আমি একজন শান্তিকামি মানুষ, আমি শুধু বাংলাদেশে শান্তি চাই না, আমি চাই প্রতিবেশি দেশ গুলোতেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক, এজন্য আমি আমার দেশ কোন উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ব্যাবহার করতে দিবনা। (৩) আমাদের দেশে হিন্দু- মুসলিম- বৌদ্ধ সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে। (৪) সার্ক নিয়ে কথা বললেন, আফগানিস্থান এবং চীন সার্ক এর অবজারভার হিসাবে আছে।(৫)আমরা ভারত, নেপাল, ভুটানকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত, রাস্তা ও রেল খাতে ইনভেস্ট করার আহ্বান করেছি, ভারত এতে প্রায় রাজী, এখন আপনারা চাইলে, ইনভেস্ট করতে পারেন। এই হল তার মোটামুটি একটা অনুবাদ। দেখুন ২নং ছবিঃ
নিউজটা পড়ে দেখলাম পুরো বৈঠকে তিনি গান গেয়েই গেলেন, সাধের রবীন্দ্র সঙ্গীতের মত, শ্রোতার কোন মন্তব্যই পেলেন না বা শ্রোতা ইচ্ছে করেই কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেন।
পরে হোটেলে এসে প্রথম আলো ও জনকণ্ঠকে ডাকলেন এবং এদের সামনে জামাত কে গাইলেন কিছুক্ষণ। জামাত চরম্পন্থি,সন্ত্রাসি, ইসলামী জঙ্গিবাদী সংগঠন, ব্লা...ব্লা......ব্লা......ব্লা, বিএনপি তাদের মদদ দাতা। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশে সেক্যুলার রাষ্ট কায়েম করা, ভারতে সাথে আমাদের অনেক অনেক গভীর প্রেম, ব্লা...ব্লা......ব্লা......ব্লা । জনকণ্ঠ পত্রিকার(খালিজ টাইম) ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক সহ প্রায় সাংবাদিক ইন্ডিয়ান, তারা খুব খুশি হল এবং পরের দিন পত্রিকায় বুবুর বিশাল একখান ছবি দিল এবং হেন তেন বহুত কিছু লিখল। উনি হয়ত জানেন না, এরা সংবাদ সম্মেলন কালচার টার সাথে খুব পরিচিত না, এরা কাজে বিশ্বাসী। এরা এদের জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পোঁছেয় দেয়, মিডিয়াতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেড়ায় না। দেখুন ৩নং ছবিঃ
অবশেষে তিনি আজ সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষটির ( এই লোকটাকে হল আরেক জন মাহাতির মুহাম্মদ, এই জন্য আমি তার একজন ভক্ত,তিনি আমার অনেক প্রিয় মানুষ। তিনি একাকী মেট্রো তে চড়েন, একাকী মার্কেট গুলোতে চক্কর লাগান, একাকী পাবলিক বাসে ঘুরে বেড়ান, কোথায় ও কোন অনিয়ম হচ্ছে কিনা নিজেই যাচাই করেন।)সাথে বৈঠক করতে পারলেন। কিন্তু পারলে কি হবে, অতি মানবীয় পুদান মন্ত্রী যে কামলাদের কথা আলোচনায় আনলেন না । কামলাদের কথা আলোচনা করলে যদি উনার সম্মানে লাগে। ফাঁসির আসামীদের নিয়ে কথা বললেন চুক্তিও করলেন, ফাঁসির আসামীদের দেশে নিয়ে যাবেন। এই ফাঁসির আসামীরা উনার কাজে আসে তাই কি তাদের ব্যাপারে এত আন্তরিক? দেখুন ৪নং ছবিঃ
সর্বশেষ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যে সম্পর্কে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় কিছুদিন আগে রিপোর্ট করেছিল। ধন্যবাদ মানবজমিন হলুদের যুগে ও সত্য সংবাদ প্রকাশ করার জন্য। আর আমি দুঃখিত স্বপ্ন দেখার জন্য, Sorry আমার দেশের সকল কামলা ভাইয়েরা, আরও একটু সবর করুন।
বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে ৩ চুক্তি স্বাক্ষর চুক্তির মায়েরে বাপ
চুক্তি কি কি হলোঃ (1) সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা
(2) ঢাকায় ইউএই দূতাবাসে নির্মাণে জমি হস্তান্তর
(3) দণ্ডিত বন্দী বিনিময়
আলেকজান্ডার আসলেন, জয় করলেন এবং চলে গেলেন । আর আমি বলি “ তিনি আসলেন, জামাতের কুৎসা রটালেন এবং চলে গেলেন”
বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে যেতে পারেনঃ
http://gulfnews.com/news/gulf/uae/government/mohammad-receives-bangladesh-s-prime-minister-1.1404604
বিষয়: বিবিধ
১৫০৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন