ভুমিকম্প! কেন পৃথিবী মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে?
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ১৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:০০:৫৫ দুপুর
কিছু আগে টিভির স্ক্রল নিউজ ও অনলাইন পত্রিকার বরাতে জানলাম যে- “ভয়াবহ ভূমিকম্প ইন্দোনেশিয়ায়"। শনিবার মলুক্সে ৭.৩ তীব্রতার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ইউ এস জিওলজিকাল সার্ভের তরফে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পেসিফিক সাগরের হাওয়াই সুনামি সতর্কা কেন্দ্র জানিয়েছেন ভূমিকম্পের কেন্দ্রের ১৮৫ মাইলের মধ্যে সুনামি আছড়ে পরতে পারে। মনে করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, পালাউ, পাপুয়া গুইনা, সোলেমন আই-ল্যান্ড, মারসেল আই-ল্যান্ড-এ সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রথম ঢেউ আছড়ে পরবে। ৬ ঘণ্টা ঢেউ তাণ্ডব চালাবে বলে মনে করা হচ্ছে।“
“ইদানিং কয়েকদিন পর পরই ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বকে বারবার কাঁপিয়ে তুলছে ভূমিকম্প। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ ঠেকাতে পারছে না ভূমিকম্পকে। জাপান-আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলোও রেহাই পাচ্ছে না এর আক্রমণ থেকে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের সুউচ্চ-সুরম্য বিল্ডিং, বড় বড় প্রাসাদ-অট্রালিকা। একযোগে মৃত্যুবরণ করছে হাজার হাজার মানুষ।
এই পৃথিবীর বুকে মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতিনিধি। আল্লাহর খলিফা এবং আল্লাহর কুদরতের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন। পৃথিবীর বুকে মানুষ যেমন আমল করে, আল্লাহ তায়ালা ও তাদেরকে তেমন প্রতিদান দেন। মানুষের কাজ-কর্ম,ইবাদত-বন্দেগী যখন একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়, ভাল থাকে, তখন আল্লাহও পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত-স্থীতিশীল রাখেন, ভাল রাখেন। আর যখন মানুষ তাদের কৃতকর্মের দোষে আল্লাহ থেকে দূরে থাকে, তখন আল্লাহ ও অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। সুতরাং মানুষ যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের উপর পূর্ণ ঈমান আনে, পাপাচার বর্জন করে, সৎ ও কল্যাণের কাজে আত্মনিয়োগ করে, খোদাভীতি অর্জন করে, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও তাদের উপর নিজ রহমত, দয়া-অনুগ্রহ দান করবেন। আসমান-জমীনের বালা-মুসীবত থেকে তাদেরকে হেফাজত করে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করে দিবেন।
পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত আছে- আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনতো এবং পরহেযগারী ও খোদাভীতি অর্জন করতো, তবে আমি তাদের জন্য আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। (১)
আর যদি মানব সম্প্রদায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুম, আইন-কানুনকে অবজ্ঞা করে, আল্লাহর অবাধ্য হয়, তাহলে আল্লাহ ও তাদের উপর দুঃখ-দূর্দশা, বিপদ-আপদ, বালা-মুসীবতকে চাপিয়ে দেন।
পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে- স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে…(২)
অনেক সময় মানুষ বিপদে পড়ে, মুসীবতে পড়ে, দুশ্চিন্তায় পড়ে, দারিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ঠ হয়, আল্লাহ তায়ালার উপর অভিযোগ উত্থাপন করে অথচ ঘূর্ণাক্ষরেও সে এই চিন্তাটুকু করে না যে, এ বিপদ, এ বিপর্যয় তার নিজের দোষেই।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (৩)
ভুমিকম্পের কারনঃ ভূমিকম্প কেন হয়, এর দুটি কারণ হতে পারে।
১. প্রাকৃতিক কারণ: আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীকে একটা নিয়ম-শৃংখলার মাধ্যমে পরিচালিত করছেন। পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে, এর বাহ্যিক কোন কারণ অবশ্যই রয়েছে এবং তা আল্লাহ তায়ালাই রেখেছেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণার দ্বারা কখনো কখনো সে কারণ ও রহস্যটি নির্ণয় করতে সক্ষম হয় আবার কখনো হয় না। যদি কখনো নির্ণয় করতে সক্ষম হয় তখন এতটুকুই বলতে পারে যে, এই ভূমিকম্পের গতি হবে কী পরিমাণ এবং উচ্চতা হবে কতটুকু? তেমনি ভূ-তত্ত্ববিদরাও শুধু এতটুকু জানতে পারে যে, ভূ-পৃষ্ঠের কোন অংশ হেলে পড়ার কারণে এ ভূমিকম্প এল। কিন্তু প্রকৃত এবং পুরোপুরি রহস্য তারা জানে না।
বিজ্ঞানের ব্যর্থতা: বাস্তব কথা হল, বিজ্ঞানের পরিধি সীমাবদ্ধ। যখন আল্লাহ তায়ালা কিছু করতে বা দেখাতে মনস্থ করেন, তখন বিজ্ঞান মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। বলতে পারেন, তা কিভাবে? বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীরা অবশ্যই অবগত যে, বিজ্ঞানের সকল নিয়ম-কানূন পরিবর্তনশীল। এ কারণে বিজ্ঞান শুধু এতটুকুই বলতে পারে যে, ভূমিকম্প কি কারণে আসল? কিভাবে আসল? কত মিটার গতিতে আসল? কোন কোন এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। কিন্তু এই তুফানকে ঠেকানো, প্রতিরোধ করা, আসতে বাধা দেয়া; এ ধরণের কোন কাজই বৈজ্ঞানিক দ্বারা সম্ভব না। তুফান যে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থতা নিয়ে আসে তার থেকে বাচাতেও পারে না সাইন্স। যদি পারত তবে আমেরিকার উন্নত রাষ্ট্রে ভূমিকম্প আসতে পারত না। তেমনি আসলেও তারা ঠেকিয়ে রাখত বা এর ক্ষতি থেকে বাচতে পারত। কিন্তু তা কিছুই তো পারল না। তাদের বড় বড় অট্রালিকা-প্রাসাদ, বিল্ডিং, লোকালয় সবই ধ্বংস হয়ে গেল ভূমিকম্পের থাবায়। ভালোভাবে জেনে রেখ, এ ব্যাপারে যাবতীয় জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কারো নেই।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে নবী আপনি বলে দিন, এর জ্ঞান তো আল্লাহ তায়ালার কাছেই আছে। আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী। (৪)
২. শরয়ী কারণ: প্রশ্ন হতে পারে, ভূ খন্ডের কোন জায়গায় ভূমিকম্প হয়? কখন হয়? প্রতিদিন কেন হয় না? এর জন্য কি কোন নির্ধারিত নিয়ম-নীতি আছে?
ইসলামী শরীয়ত এই সকল প্রশ্নের জবাব আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে প্রদান করেছে। শরীয়ত বলে, প্রাকৃতিক সবকিছু আল্লাহ তায়ালার অধিনস্ত। তার হুকুমের প্রতি আনুগত্যশীল। যখন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তখন প্রকৃতিও বান্দার সুবিধামত থাকে। আর যখন আল্লাহ বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান তখন প্রকৃতিও বিরূপ ধারণ করে। অনেক সময় কোন এলাকার মানুষের আমল আল্লাহর ক্রোধকে শানিত করে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে, ফলে তাদেরকে সতর্ক ও এর উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি ভূ-পৃষ্ঠকে কিঞ্চিৎ নড়া-চড়া করার আদেশ দেন। তখন ভূ-পৃষ্ঠ নড়া-চড়া করে, ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে। (৫)
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন- হে নবী, আপনি বলুন! তিনিই শক্তিমান যে, তোমাদের উপর কোন শাস্তি উপর দিক থেকে অথবা তোমাদের পদতল থেকে প্রেরণ করবেন অথবা তোমাদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করে সবাইকে মুখোমুখি করে দিবেন এবং এককে অন্যের উপর আক্রমনের স্বাদ আস্বাদন করাবেন। দেখ, আমি কেমন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিদর্শন বর্ণনা করি যাতে তারা বুঝে নেয়। (৬)
“(হে মানুষ) যে বিপদ আপদই তোমাদের উপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই, এবং (তা সত্ত্বেও) আল্লাহ তাআলা তোমাদের অনেক (অপরাধ এমনিই) ক্ষমা করে দেন।” (৭)
“যে কল্যাণই তুমি লাভ কর (না কেন, মনে রেখো), তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, আর যেটুকু অকল্যাণ তোমার উপর আসে তা আসে তোমার নিজের থেকে”। (৮)
নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর দেওয়া গজব ভুমিকম্প হতে রক্ষাঃ
মানুষ যদি সৎ হয়, তাক্বওয়া ও খোদাভীতি অর্জন করে, আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে জীবন যাপন করে তবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করেন। তাকে আকস্মিক শাস্তি, ভূমিকম্প, জ্বলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি দ্বারা ধ্বংস করেন না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- আর তোমার প্রভু নেককার অধিবাসীদের কোন এলাকা অন্যায়ভাবে ধ্বংস করেন না। (৯)
আল্লামা ইবনুল জাওযী রহ. ভূমিকম্পের তথ্যাদীপূর্ণ একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ ও রচনা করেছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, হিজরী বিশ সনে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা. এর যুগে একবার ভূমিকম্প দেখা দিলে তিনি পায়ের গোড়ালী দ্বারা মাটিতে আঘাত করে ভূমিকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভূমি! তুমি নড়াচড়া করছ কেন! তোমার বুকে ওমর কি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেনি? ওমরের একথা বলামাত্রই ভূমিকম্প থেমে গেল।
ভুমিকম্প এক সতর্কবার্তাঃ বড় কম্পন তথা কিয়ামাতের সেই কম্পনের কথা যা সূরা আল যিলযাল এ বর্নিত আছে তার আগে এই ছোট কম্পনগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সতর্কতা।
মহান আল্লাহ বলেন- “(এ) লোকালয়ের মানুষগুলো কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে (তারা মনে করে নিয়েছে), আমার আযাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে! অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে, আমার আযাব তাদের উপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না-তখন তারা খেল-তামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহ তাআলার কলা-কৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে, অথচ আল্লাহ তাআলার কলা-কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।” (১০)
আল-আল্লামা ইবনে আল-কাইউম (রহ) বলেন: “মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে উঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়; এইটা মানুষগুলোকে ভীত করে, তারা মহান আল্লাহর নিকট তওবা করে, পাপ কর্ম করা ছেড়ে দেয়, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়”। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতেন: “মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সতর্ক করছেন”। মদীনায় যখন একবার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তার জনগনকে ভাষণে বললেন: “যদি আরো একবার ভূমিকম্প সংগঠিত হয় তাহলে আমি এখানে তোমাদের সাথে থাকবো না।”
ভূমিকম্পের পেছনে দায়ী কেঃ যখন পাপাচার খুব বেশী বৃদ্ধি পায়, তখন আল্লাহ তায়ালার আদেশেই ভূমিকম্প দেখা দেয়। এবং বান্দাদেরকে গুনাহ থেকে সতর্ক ও সাবধান করে। ভূমিকম্প মূলত একথাই সকলকে জানিয়ে দেয় যে, এখানে অবশ্যই গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়েছে। যার ফলস্বরূপ এই ভূমিকম্পের আবির্ভাব। তাই ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতদেরকে বিভিন্ন জাতিকে পাপাচারের শাস্তি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দিয়েছেন। যেমন-
হযরত শুয়াইব আ. এর জাতির উপর শাস্তি ও গজব: হযরত শুয়াইব আ. এর জাতি হল সেই জাতি, যারা ওজনে ও মাপে কম দিত। শুয়াইব আ. তাদেরকে দীর্ঘদিন বুঝানোর পরেও তারা সে অভ্যাস ছাড়ল না। পরিশেষে তাদের উপর নেমে এলো আল্লাহর ভয়াবহ আযাব।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- অনন্তুর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে তারা সকাল বেলা গৃহের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (১১)
হযরত মুসা আ. এর জাতির উপর আযাব ও শাস্তি:
হযরত মুসা আ. এর সাথে বনী ইসরাঈলের চল্লিশজন ব্যক্তি গিয়েছিলেন; এ উদ্দেশ্যে যে, তারা আল্লাহর সাথে মুসা আ. এর কথোপকথনকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে। তারা চলল, পথিমধ্যে তারা বাহানা খুঁজতে লাগল। বলতে লাগল, এটা যে আল্লাহ তায়ালার আওয়াজ তা আমরা কিভাবে বুঝবো? এটা তো অন্যের আওয়াজও হতে পারে! আসলে যারা সত্যকে গ্রহণ করতে না চায়, তাদের বাহানার কোন শেষ নেই। বুঝে শুনে যারা এমন ভাব ধরে, তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত হন। ক্রেধান্বিত হন।
আমার অপরাধের কারণেই কি ভূমিকম্প আসছেঃ আল্লাহ তায়ালা কোন অপরাধ ব্যতিত বান্দাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন না। বান্দা নিজের অপরাধ ও পাপাচারের মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তিকে টেনে আনে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.এর নিকট একব্যক্তি জানতে চাইল, ভূমিকম্প কেন হয়? উত্তরে তিনি বললেন, ভূমিকম্প হয় তিনটি কারণে, তাহলো-
১. মহিলাদের মধ্যে বেগানা পর-পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য সুগন্ধি ও সাজ-সজ্জার প্রবণতা দেখা দেয়া। বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, স্কুল-কলেজে, বিভিন্ন পার্টিতে, হাট-বাজারে, মার্কেটে যাওয়ার সময় পর-পুরুষকে দেখানোর জন্য সুগন্ধি ও সাজ-সজ্জাকারী রমণীরাই মূলত ভূমিকম্পের কারণ।
২. মহিলাদের পর্দাবিহীন উলঙ্গ দেহ পর পুরুষের সামনে প্রকাশ করা। অর্থাৎ ব্যভিচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া। আজ পর্দা না থাকার কারণে যে যার মত নিজের দেহকে মানুষের সামনে প্রকাশ করছে। আর তাতে আকৃষ্ট হয়ে শত শত হাজার হাজার যিনা-ব্যভিচারের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
৩. মদ এবং গান-বাদ্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া। এই তিনটি কারণে ভূমিকম্প দেখা দেয়। হযরত আয়েশা রা. পরিশেষে বলেন, যখন এই তিনটি কারণ দেখা দিবে তখন (যে কোন মুহুর্তে) ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থেকো।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন- যখন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারা নিজেরাই নিজেদেরকে আল্লাহর আযাবের জন্য সপে দেয়। (১২)
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝতে পারলাম- সুদ এবং ব্যভিচার আল্লাহ তায়ালার আযাবের কারণ। এখন আমরা একটু আমাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখি তো, আমাদের আশে পাশে উল্লেখিত কারণগুলো পাওয়া যাচ্ছে নাকি যাচ্ছে না।
মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন সকল মুসলিমদের খারাপ অবস্থা থেকে ভাল অবস্থার দিকে উন্নীত করেন এবং তাদেরকে হিদায়াত করেন যেন তারা ইসলামকে ভালভাবে বুঝতে পারে ও দৃঢ়তার সাথে একে আকড়ে ধরে রাখে এবং তিনি যেন তাদের সকল পাপকে ক্ষমা করে দেন। আমরা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন যারা মুসলামানদের ক্ষমতায় আছে(সরকার) তাদের সংগঠিত করেন, এবং তাদের মাধ্যমে সত্যকে সাপোর্ট আর মিথ্যাকে দূরীভূত করে দেন, এবং শরীয়া আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করার জন্য যেন তিনি তাদের সাহায্য করেন, এবং শয়তান যেন তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত, প্ররোচিত ও প্রতারিত করতে না পারে তা থেকে মহান আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন, কারণ মহান আল্লাহই একমাত্র সবকিছূ করার ক্ষমতা রাখেন।
মহান আল্লাহর রহমত এবং শান্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারের এবং সাহাবাদের এবং কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর আপতিত হোক।
তথ্যসূত্রঃ
১. সুরা আরাফ:আয়াত-৯৬
২. সুরা রূম:আয়াত-৪১
৩. সূরা ত্বহা:আয়াত-১২৪
৪. সূরা মুলক, আয়াত:২৬
৫. সূরা আনকাবূত:আয়াত-৪০
৬. সূরা আন‘আম,আয়াত:৬৫
৭. সূরা আশ শূরা : ৩০
৮. সূরা আন নিসা : ৭৯
৯. সূরা হুদ, আয়াত:১১৭
১০. সূরা আল আ’রাফ :৯৭-৯৯
১১. সূরা আ‘রাফ, আয়াত:৯১
১২. আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৮৫
সহায়ক প্রবন্ধসমূহঃ
১। Why are there so many earthquakes? - Abd al-‘Azeez ibn ‘Abd-Allaah ibn Baaz (may Allaah have mercy on him) (islamqa.info/en/2593)
২। ভূমিকম্প; বারবার কাঁপাচ্ছে পৃথিবীকে! ইসলাম কী বলে?- মাওলানা আকরাম হুসাইন (islambikas.com)
৩। আল-কোরানের মুজিঝা ও রহস্য : মুজিঝা নং- ১৫৫ : বিপর্যয়কারী ভূমিকম্প- মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি; অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি (islam.priyo.com)
বিষয়: বিবিধ
২১৯৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কখনো সতর্কত করতে আবার কখনো শাস্তি হিসেবে পরাক্রমশালী আল্লাহ ভূমিকম্প ইত্যাদির প্রকাশ ঘটান!এ থেকে মুমিনের শেখার আছে অনেক কিছু!যদিও নামধারী মুমিন অভিযোগের ঢালাই মেলে ধরে!
ভূমিকম্প-এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে হ্রদয়গ্রাহী বোধগম্ম আলোচনা উপস্হাপন করায় জাযাকুমুল্লহু খাইরান জানাচ্ছি!
খোদা তায়ালার কাছে সুন্দর বিনয়ী এমন আবেদনে আমিন ছুম্মা আমিন!!
বিজ্ঞানের ব্যর্থতা: বাস্তব কথা হল, বিজ্ঞানের পরিধি সীমাবদ্ধ। যখন আল্লাহ তায়ালা কিছু করতে বা দেখাতে মনস্থ করেন, তখন বিজ্ঞান মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। বলতে পারেন, তা কিভাবে? বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীরা অবশ্যই অবগত যে, বিজ্ঞানের সকল নিয়ম-কানূন পরিবর্তনশীল। এ কারণে বিজ্ঞান শুধু এতটুকুই বলতে পারে যে, ভূমিকম্প কি কারণে আসল? কিভাবে আসল? কত মিটার গতিতে আসল? কোন কোন এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। কিন্তু এই তুফানকে ঠেকানো, প্রতিরোধ করা, আসতে বাধা দেয়া; এ ধরণের কোন কাজই বৈজ্ঞানিক দ্বারা সম্ভব না। তুফান যে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থতা নিয়ে আসে তার থেকে বাচাতেও পারে না সাইন্স। যদি পারত তবে আমেরিকার উন্নত রাষ্ট্রে ভূমিকম্প আসতে পারত না। তেমনি আসলেও তারা ঠেকিয়ে রাখত বা এর ক্ষতি থেকে বাচতে পারত। কিন্তু তা কিছুই তো পারল না। তাদের বড় বড় অট্রালিকা-প্রাসাদ, বিল্ডিং, লোকালয় সবই ধ্বংস হয়ে গেল ভূমিকম্পের থাবায়। ভালোভাবে জেনে রেখ, এ ব্যাপারে যাবতীয় জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কারো নেই। - ভালো লাগা রেখে গেলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক সুন্দর পোষ্ট ।জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইয়া ।
গত ৫০ বছরের ভুমিকম্পের ইতিহাস যদি দেখা যায় , তাহলে আমেরিকা , ইসরায়েল ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে কি পরিমান ভুমিকম্প হয়েছে যেরকমটা হয়েছে চীন , পাকিস্তান , ইরান , ইন্দোনেশিয়া - এসব দেশে ? এসব দেশে কি খুব অন্যায় কাছ হচ্ছে বা বেশরিয়তী কাজ হচ্ছে ইসরায়েল , আমেরিকার তুলনায় ?
আমেরিকানরা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অশান্তি করছে । পৃথিবীটাকে তারা কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না ।
তাহলে তো তাদের দেশ ভূমিকম্পে সয়লাব হয়ে যেত ।
ভাই, পৃথিবীতে সব এলাকা ভুমিকম্প প্রবণ নয়। কিছু এলাকা অধিক ভুমিকম্প প্রবণ, কিছু কম আবার কিছু মোটামুটি রিস্ক ফ্রি। যাহোক, যেখানে যে গজব বা শাস্তি প্রযোজ্য সেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেরকম শাস্তি পাঠিয়ে থাকেন। এইটি তার প্রজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত।
আবার কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে- পাহাড়গুলোকে তিনি কীলকের আকারে স্থাপন করেছেন। বাস্তবেও আমরা দেখতে পাই যে এলাকায় পাহাড় বেশি সেখানে ভুমিকম্প বেশি হয়।
তাই সব জায়গায় যে শুধু ভুমিকম্প দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শাস্তি দিবেন এমন নয়। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দিন। আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন