"জাযাকাল্লাহু খায়রান"
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ১০ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:২৮:১৬ দুপুর
"জাযাকাল্লাহু খায়রান" ছোট্ট দুটি শব্দে একটি দুয়া। রাসূল صلی اللہ علیہ وسلم বলেছেন যে, কেউ আমাদের কোন উপকার করলে, কোন সাহায্য করলে, কৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ পেলে কিংবা নেক কাজে আনুকূল্য পেলে আমরা যেন তার জন্য অনুরূপ করি, তার জন্য দুয়া করি। আর তিনি صلی اللہ علیہ وسلم শিখিয়েছেন ছোট্ট একটি দুয়া- "জাযাকাল্লাহু খায়রান" অর্থাত্ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান/বিনিময় দিন। (১)
দুয়াটি ছোট কিন্তু তাৎপর্য্য চমৎকার। একজন মুসলিম বিশ্বাস করে তার জীবনের সকল ভাল ও খারাপ কাজের প্রতিবিধানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং একদিন তিনি সবকিছুর প্রতিদান পাবেন। তাই কারও কোন উপকার করলে বা কারও কাছে থেকে উপকার পেলে তিনি সর্বোচ্চ প্রতদান্টুকু আশা করেন মহান রবের কাছে থেকেই।
প্রতিদান শব্দটি সাধারণ অর্থে দৃশ্যত পরিশ্রমের বা সাহায্যের বদলা বা বিনিময় হিসেবে ভাবতেই আমরা অভ্যস্ত। যেমন ধরুন কেউ আপনার প্রয়োজনে আপনাকে কিছু পরিমান টাকা ধার দিল আপনি তার প্রতি খুশি হলেন আবার সুবিধামত সময়ে সমপরিমান ফেরতও দিয়ে দিলেন। পরবর্তীতে কোন বিপদে আপনি তার পাশে দাঁড়ালেন কিংবা ঠিক একই পরিমান আর্থিক সহযোগিতা করলেন। স্বভাবতই আমরা ভেবে নিই যে, আমরা বদলা দিতে পেরেছি, আর কিছু না হোক ভালো কাজের বিনিময় করতে পেরেছি বলে কিছুটা তৃপ্ত হই, আমার প্রতি তার সুধারনা ও বন্ধুত্বের প্রতিদান আমি দিতে পেরেছি ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকি।
আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, আপনার প্রয়োজনের তাগিদে কিছু দিনমজুরকে কাজে লাগিয়েছেন। কাজ সম্পন্ন হলে তাদের মজুরি হিসেবে অর্থ দিয়ে দিচ্ছেন আর স্বাভাবিকভাবে এটিকেই প্রতিদান বা বদলা হিসেবে ভেবে নিচ্ছেন। একজন রিক্সাওয়ালা আপনাকে আপনার প্রদেয় অর্থের বিনিময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছেন আর কিছু অর্থ ধরিয়ে দিয়ে আপনি ভেবে নিচ্ছেন যে তার পরিশ্রমের প্রতিদান আপনি দিয়ে দিলেন।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যথার্থ প্রতিদান বা বিনিময় এভাবে নিশ্চিত হয়না। প্রতিদান তো সেটিই যার মাধ্যমে মানসিক, দৈহিক, সামাজিক ও আরও অনেক বিষয়ের সামঞ্জস্য বিধান হয়। সর্বৈবভাবে যেখানে বিনিময় পাওয়া সম্ভব হয়।
হ্যাঁ, উপরে আপনি যা করেছেন তা দিয়ে আপনার পক্ষ থেকে কিছুটা দায়মুক্ত হয়েছেন বটে তবে প্রতিদান হয়নি। অর্থনীতির ভাষায় আপনি একজন ভোক্তা আর কোন দ্রব্য বা বস্তু থেকে যে উপযোগিতা পেয়েছেন আপনি তার চোখে দেখা বিনিময় শোধ করছেন মাত্র। ঠিক বুঝতে পারছেন না তো?
একটু ভেবে দেখুন- আপনার যে বন্ধু আপনার উপকার করেছে বা আর্থিক সাহায্য দিয়েছে তাকে আপনিও সহায়তা ও সমপরিমান আর্থিক সাহায্য করলেও দুজনের আন্তরিকতা, প্রয়োজনের মাত্রা বা সাহায্য করার সামর্থ্যের মাঝে থাকতে পারে বিরাট ফারাক। তাই দুজনের উপরোক্ত বিষয় না জেনে শুধু টাকার অংক দিয়ে উপকারকে এক করে ভাবা যাবেনা। এমনকি যে লোক আপনার দিনমজুর খেটে গেল তার আন্তরিকতাও আপনি মাপতে পারবেন না। আর কয়েকজন কাজ করলেতো প্রত্যেকের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজের পরিমান বা আন্তরিকতার তফাত্ থাকার পরেও আপনি সমান পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। তাই এর কোনটাই প্রকৃত প্রতিদানের খাতায় পড়ছেনা। ঠিক একইভাবে ঐ রিক্সাশ্রমিকের শারীরিক কষ্টের মজুরিটুকু আপনি দিতে পারলেও আপনার মত বাবুগিরি হালের কাউকে যে নিজ পরিশ্রমে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আনতে গিয়ে মানসিক কষ্ট করছে তার দাম আপনি কী দিয়ে শোধ করবেন?
এজন্যই ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে আল্লাহর কাছে থেকে প্রতিদান চাইতে এবং কারও জন্য উত্তম প্রতিদানের দুয়া করতে। এর মাধ্যমে জানানো হচ্ছে যে আমাদের পক্ষে কোন কিছুরই যথাযথ প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র যিনি পারবেন তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন; যার কাছে দৃশ্যমান বস্তুর খবর যেমন রয়েছে তেমন যা অদৃশ্য তার খবরও আছে। আবার মনের যত ভাবনা তাও তাঁর আয়ত্বে। আর তিনি চাইলেই সব পারেন। তাই একজন মুসলিম কারও প্রতিদান দিতে চাইলে নিজের দিক থেকে সর্বোচ্চটুকু করার পরেও বাকীটা আল্লাহর সমীপে পেশ করবে এই বলে যে,জাযাকাল্লাহু খায়রান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)।
কারও উপকারের প্রতিদান দেয়া বা বিনিময় প্রদানের জন্য একজন ধন্যবাদ জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করে নিচ্ছে। ধন্যবাদ বাংলা শব্দ। এটি প্রশংসাবাদ, সাধুবাদ বা কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক উক্তি। আর Thank you ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অথচ এই ধন্যবাদটুকু তার ইহজীবন বা পারলৌকিক জীবনে ন্যূনতম উপকারও কি করতে পারে? পারে কি তার মর্যাদা বাড়াতে? আর একজন মুসলিম যখন জাযাকাল্লাহু খায়রান বলছে তখন সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান চাওয়া হচ্ছে। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানেন যে, বান্দার মঙ্গল কোথায় আছে? কী তার প্রয়োজন? তা দুনিয়া বা আখিরাতের যেকোন জায়গাতেই হতে পারে।
এ শব্দগুলোর মধ্যে কোনটা আরবী, বাংলা বা ইংরেজি-এদিকে না তাকিয়ে শুধু এগুলোর অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে দেখব, জাযাকাল্লাহু খায়রান বাক্যটি সবচেয়ে সারগর্ভ। কারণ এতে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, উপকারীর জন্য কল্যাণের প্রার্থনাও আছে। আর যদি বলা হয়, জাযাকাল্লাহু খায়রান ফিদ দারাইন (আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
কেউ জাযাকাল্লাহ বললে উত্তরে ওয়া ইয়্যাকা বা ওয়া ইয়্যাকুম বলা যায়। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকেও দান করুন।
কত চমত্কাার! তাইনা? ইসলামের ছোট্ট ছোট্ট বিষয়, নিয়ম আর অনুশাসনের মাঝে লুকিয়ে থাকে গভীর মাহাত্ম্য, অনুপম সৌন্দর্য্য। ইসলাম শুধু সুন্দর আর শান্তির কথা বলেই চুপ থাকেনা বরং দেখিয়ে দেয় সেই পথ। কত সুন্দর শিক্ষা আমাদের ছিল, কিন্তু আমরা শুধু অবহেলা করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
কখনো এমন হতে পারে যে, যাকে জাযাকাল্লাহ বলা হল তিনি তা বুঝলেন না। সেক্ষেত্রে আমরা জাযাকাল্লাহর সাথে ধন্যবাদও বলতে পারি অথবা বাংলাতেই তার জন্য দুয়া করুন এই বলে যে, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আজ থেকেই তাই অসাড় বাক্য Thank you (ধন্যবাদ আপনাকে) এর পরিবর্তে জাযাকাল্লাহু খায়রান বলার অভ্যাস গড়ি।
আপনার যে বন্ধু বা আপনজন আপনার উপকার করেছে তার জন্যও দোয়া করুন, আবার যে রিক্সাওয়ালা কয়টা টাকার বিনিময়ে আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিল তার ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়েও দুয়া করুন। কারন আপনি দৃশ্যত বিনিময় করতে পারছেন, ভাড়া দিয়ে নিজের দায়মুক্তি করেছেন তবে যথার্থ প্রতিদান দিতে পারবেন না। তাই সংকোচ, দ্বিধা আর সংকীর্ণতা ঠেলে ফেলে বলুন "জাযাকাল্লাহু খায়রান"।
সর্বশেষ কথা এই যে, আমরা মুসলিম জাতি। আমাদের আছে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। অথচ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আস্তে আস্তে আমরা তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এমনকি জাতীয় জীবনেও এখন বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ হচ্ছে। এটা খুবই ভয়ানক বিষয়। এটা একদিন আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলবে; বরং প্রভাব ফেলছে।
তথ্যসূত্রঃ
১। জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪১৩; সুনানে আবু দাউদ; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারীঃ ২১৬
বিষয়: বিবিধ
৪৮১১ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আবেগময়ী বিশ্লেষনে বিষয়টা বোধগম্য হল সুন্দর ভাবে!চিন্তার অনুভূতিকেও একটু ঝাকি দিয়ে গেল আপনার নান্দনিক উপস্হাপনা!
দরদভরা এমন আহবানে সব সময়ই যেন শরিক থাকতে পারি এই দোয়া চাই আপনাদের কাছে!
জাযাকুমুল্লাহু খাইরাল জাযা-ই ফিদ্ দুনিয়া ওয়ালআখিরাহ!!!
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বারাকাল্লাহু ফিকুম।
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
আল্লহুম্মা লা তু'আখিযনি- বিমা- ইয়াক্বুলুনা, ওয়াগ্বফিরলী- মা- লা- ইয়া'লামুন (ওয়াজ'আলনী- খইরন-মিম্মা- ইয়াযুন্নুন)
হে আল্লাহ! যা বলা হচ্ছে তার জন্য আমাকে ধরো না, আর আমাকে ক্ষমা করো, যা তারা জানে না (আর আমাকে তাদের ধারণার চেয়েও ভালো বানিয়ে দাও।)
[আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ৭৬১]
মন্তব্য করতে লগইন করুন