জ্ঞানীদের চোখে ফিকাহের অবস্থান
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৪১:১৮ সন্ধ্যা
বর্তমান সময়ে একটি বিষয় প্রায় লক্ষ্য করা যায় যে, আমাদের সমাজে কেউ দু কলম বিদ্যা শিখে বড় বড় ফিকাহের মাসয়ালা দিয়ে দেন বা ইজতিহাদী বিষয় সমূহে সিদ্ধান্ত দেন। আসুন এ ব্যাপারে সালাফ গনের আমল কেমন ছিল একটু জেনে নেই।
ইমাম শা’বী (রাহিঃ) কে প্রশ্ন করা হল-
উত্তরে তিনি বললেন আমার জানা নেই।
প্রশ্নকারীঃ আপনি ইরাকের মুফতী ও ফক্বীহ অথচ আপনি বলছেন যে, আমার জানা নেই এমন উত্তর দিতে কি আপনার শরম হচ্ছেনা?
উত্তরে তিনি বললেনঃ ফেরেশতারা তো ঐ সময়ে শরম পান নাই যখন তারা বলেছিলেনঃ “আমরা ত অতটুকুই জানি যতটুকু আপনি আমাদের শিখিয়েছেন”
উতবা বিন মুসলিম বলেনঃ আমি ৩৪ মাস আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাযিঃ) এর খেদমতে ছিলাম এর মধ্যে কত লোক তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, যার উত্তরে তিনি বলেছেন আমার জানা নেই।
প্রসিদ্ধ তা’বেয়ী সাঈদ বিন মুসায়্যির (রাহিঃ) যখন কোন প্রশ্নের সন্মুখীন হতেন তখন বলতেনঃ
“হে আল্লাহ! আমাকে ভুল ফতোয়া দেয়া থেকে রক্ষা কর এবং তাদেরকেও ভুল ফতোয়া নেয়া থেকে রক্ষা কর।"
একদা ইমাম শাফেয়ী (রাহঃ) কে প্রশ্ন করা হল। উত্তর দানে তিনি চুপ থাকলেন। বলা হলঃ উত্তর কেন দিচ্ছেন না? বললেন, “আমি ততক্ষন পর্যন্ত উত্তর দেইনা যতক্ষন না আমি এ কথা বুঝতে পারি যে, আমার কল্যান কি চুপ থাকার মাঝে নাকি উত্তর দেওয়ার মাঝে”
ইবনে আবু লাইলা (রাহিঃ) বলেনঃ
আমি একশত বিশ জন আনসারি সাহাবা (রাযিঃ) কে দেখেছি। তাদের যে কোন একজনকে কোন প্রশ্ন করা হত তখন সে অন্য একজনকে দেখিয়ে দিত। আর দ্বিতীয় জন তৃতীয় জনকে, তৃতীয় জন চতুর্থ জনকে দেখাত। শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন ফিরে আসত প্রথম জনের নিকট।
সাহাবায়ে কিরামগনের আমল এর পদ্ধতি ছিল এই যে, যখন কোন সাহাবী হাদীস বর্ননা করতেন এবং তাকে কোন প্রশ্ন করা হত, তখন সে আপ্রান চেষ্টা করত যে, এর উত্তর অন্য একজন দিক।
আবুল হূসাইন আযাদী বলতেন- মানুষ নিশ্চিন্তায় ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে অথচ যদি মাসয়ালা
উমার বিন খাত্তাব (রাযি) এর নিকট পেশ করা হত তাহলে এর উত্তরের জন্য বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী শাবীদের একত্রিত করতেন।
কাসেম বিন মুহাম্মাদকে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেনঃ আমার এর উত্তর জানা নেই।
প্রশ্নকারী বললঃ আপনার নিকট এসেছি, আপনাকে ব্যতীত অন্য কাউকে চিনিও না, আমার উত্তর পাওয়ার দরকার।
কাসেম বিন মুহাম্মদ বললেনঃ আমার আশে পাশে অনেক লোক জানা আছে। আল্লাহর কসম আমি এর উত্তর জানি না।
কুরাইশ বংশের এক লোক প্রশ্নকারীকে বললঃ হে আমার ভাতিজা! কাসেমের সাথেই থাক, এ যুগে তার চেয়ে বড় আলেম আর নেই।
কাসেম বলতে লাগলেনঃ আল্লাহর কসম! আমার জিহবা কেটে দেয়া মার জন্য উত্তম। তবুও আমি এমন বিষয়ে কথা বলতে অপছন্দ করি যে ব্যাপারে আমার জানা নেই।
একদা সালমান (রাযিঃ) আবু দারদা (রাযিঃ) কে এক চিঠি লিখলেন এ বলেঃ
আমি জানি যে, তুমি ডাক্তারের প্রেশক্রিপশনের কাজ করছ, একথা স্মরন রাখবে যে, কখনও যেন এমন না হয় যে, তুমি কোন ধ্যানে পড়ে গিয়ে স্বীয় স্বল্প জ্ঞানের কারনে কোন মুসলমানকে হত্যা করে ফেল।
এ সতর্কতার পর আবু দারদা (রাযিঃ) কোন ফায়সালা করার ব্যাপারে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতেন। বরং কয়েকবার এমন হয়েছে যে, দুই ব্যক্তি তার নিকট কোন সমস্যা নিয়ে এসেছেন। তখন তিনি ফায়সালা করার পর পুনরায় বলেছেনঃ এ উভয় দলকে আমার কাছে আবার নিয়ে এস। আমি ধ্যানে পড়ে গিয়েছিলাম। যখন তারা আসল, তিনি বিষয়টি দ্বিতীয়বার শুনতেন এবং এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করে ফায়সালা করতেন।
ওয়াল্লাহি! কত ভয়ে ভীত ছিল তাঁদের অন্তরাত্মা। তাড়াহুড়ার কারনে যেন কোন ভুল সিদ্ধান্ত না হয়ে যায়, ভুল ফায়সালা না হয়।
আজকের মুসলিম সমাজ কি এ ব্যাপারে চিন্তা করবে? নাকি নিজের ইচ্ছামত কয়েকটা বই পড়ে, বা শুধুমাত্র নিজস্ব চিন্তা, বিবেক বা আক্বল নির্ভর হয়ে বা মাত্র দুই একজন আলেমের মতকে প্রাধান্য দিয়েই ফায়সালা দিবে?
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের করনীয় কি? তা জানতে চাইলে পড়তে পারেন মুসলিম মোরা পরস্পর ভাই ভাই-চর্বিত চর্বনে কেন সম্প্রীতি হারাই
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক দ্বীন মেনে চলার ও বুঝার তাওফিক দিন। সবাইকে প্রকৃত সত্য জেনে ও মেনে নেওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক দ্বীন মেনে চলার ও বুঝার তাওফিক দিন। সবাইকে প্রকৃত সত্য জেনে ও মেনে নেওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।
ভয়াবহ ভাইরাসের মত বিষয়টা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে আজ! মাসয়ালা হয়তো জানা থাকলে বলে যেতে পারে কিন্তু সঠিক যোগ্যতা না থাকলে কোন বিষয়ে'ফতোয়া'দেয়া মানে ধ্বংশের কিনারে অবস্হান করা,যে কোন মুহুর্তেই তাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা!
চিন্তাশীল নান্দনিক উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ খাইরান শ্রদ্ধেয় এস এম আবু নাছের ভাই.........
মন্তব্য করতে লগইন করুন