পথের মাঝের ভাবনা কিছু
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:২৪:৩২ দুপুর
তিলোত্তমা নগরী ঢাকার ব্যস্তময় এলাকা দিয়ে বাস সামনে এগিয়ে চলছে। হঠাৎ সামনে কোন সিগন্যালে এসে আচমকা থেমে যাচ্ছে। ট্রাফিক জ্যামের কারনে যেন স্বাভাবিক চলমানতা নষ্ট হচ্ছে। জানালার পাশে বসে এক যুবক আনমনে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। উৎসুক চোখ দুটো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে এ শহরের রূপ, কর্মব্যস্ততা আর পাহাড়সম বৃহৎ অট্টালিকা। কখনও চোখ আটকে যাচ্ছে বাইরের কোন ফ্যাশান হাউসে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা পোষাকগুলিতে, কখনও বা জুয়েলারির দোকানের স্বর্ণালংকারে।
মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ে গতি জড়তার কারনে একটু ধাক্কা খেয়ে যেন সম্বিত ফিরে পাচ্ছে। নিমিষেই আবার হারাচ্ছে কল্পলোকে। বাহ্ কত চমৎকার সব রাস্তাঘাট, দোকানপাট আর বাড়িগুলো। একদৃষ্টে বুঁদ হয়ে এই শহরের মায়া ও ভালোবাসায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। বাসে প্রচন্ড ভীড়ের মাঝেও তার কষ্ট অনুভূত হচ্ছেনা কারন সে একাগ্রচিত্তে মিশে গিয়েছে ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাওয়া শহরের একপাশের সৌন্দর্য্যে।
মানুষ চলাচলের জায়গাটাতেও গাদাগাদি করে অনেক পাসেঞ্জার দাঁড়িয়ে আছে। তারা যেন একটা প্রাচীর করে রেখেছে জানালার অপর পাশের চিত্রাবলোকন থেকে। এসবে আজ যুবকের কোন খেয়াল নেই, সে একপাশের সৌন্দর্য্য নিয়েই ভীষণ আপ্লুত; বলা চলে ব্যস্তও বটে। অন্যপাশের দৃশ্য দেখায় যারা তার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের নিয়েও তার কোন অভিযোগ নেই কারন সে তো বসতে পেরেছে, যাত্রাপথে আয়েশেই যেতে পারছে। এভাবে বেখেয়াল হয়ে থাকতে থাকতে একসময় সে বেমালুম ভুলে গেল তার গন্তব্যস্থলের কথা যা যাত্রার শুরুতে তাকে বলে দেওয়া হয়েছিল। সে হারিয়ে ফেলল তার প্রকৃত ঠিকানা। কোথায় যাবে সে? কেন তার এই যাত্রা? আর এর শেষ বা হবে কোথায়?
এবার একটু নতুন করে ভাবুন; সময়ের রথে চড়ে পৃথিবী নামক এই নগরীতে এসে আজ অনেক সময় আমি, আপনি বা অন্য কোন ভাই সেই যুবকের মত হয়ে পড়েছি যে, পৃথিবীর রূপ আর তার চাকচিক্যে আমাদের মন একাকার হয়ে গিয়েছে। সীমাহীন মুগ্ধতায় জড়িয়ে গিয়েছি। বাসের মাঝে মানুষের প্রাচীরের মত আজ আমাদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে কাফির, মুশরিকগন আর তাদের গৎবাঁধা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় আমরা জীবনের আরও এক পাশের কথা ভুলে গিয়েছি, বেমালুম গাফেল হয়ে রয়েছি। কি আছে ঐ পাশে, কেমন সৌন্দর্য্য ওপারের তা জানতেও চাইনি। তার মনোহর ধামে চক্ষু শীতল ও হৃদয় জুড়ানোর আশাও করছিনা।
এরই মাঝে একদল মানুষ যাত্রাপথের জ্যামে আটকা পড়লে, গাড়ি হোঁচট খেলে, সংকেত স্বরূপ গ্রহন করেছেন, সম্বিত ফিরে পেয়েই চেষ্টা করে চলেছেন। প্রাচীর ভেদ করে ওপারের দৃশ্য নিয়ে ভাবছেন। দুপারের দৃশ্য মিলিয়ে সঠিক গন্তব্যে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছেন আর পৌঁছে গিয়েছেন তার আসল ঠিকানায়। যেথায় তার পৌঁছাবার কথা ছিল। যে স্থানের জন্য শুরু হয়েছিল তার পথযাত্রা।
কিন্তু তবুও ঠিকানা হারানো মানুষগুলো সঠিক ঠিকানার উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষকে দোষারোপ করে, নানান রকম আঘাতে করে জর্জরিত। যখন যেখানে সুযোগ পায় বলে বেড়ায় যে, ওদের ওয়ার্ল্ড ভিউ সংকীর্ণ। বলে, ওরা দুনিয়াটাকে শুধু সংকীর্ণভাবেই দেখতে শিখেছে, সংকীর্ণ মানসিকতা লালন করেছে। কখনও আঘাত হানে আদর্শ আর মূল্যবোধের জায়গাটাতেও। সরাসরি কখনও বলেও ফেলে যে ঐ দু’কলম আরবী পুঁথি পড়ার এমন আর কী ফায়দা?
কখনও কষ্ট হয় আবার কখনও হাসি পায় যে কতই না বোকা তারা; ছোট্ট জানালা দিয়ে যাত্রাপথের একপাশ দেখে এরা ঠিকানা হারিয়েছে। আবার সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বলছে তাদের, যারা দুইপাশের দৃশ্যের সামঞ্জস্য করে এগিয়েছে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে। যাদের চিন্তা আর সুখের মোহ শুধু দুনিয়ার সীমাবদ্ধ গন্ডিতে আবদ্ধ নয় বরং তার পরিধি অসীম জগতে, চিন্তার রেখা পেরিয়ে চিরায়ত সুখের আস্বাদনে।
একবার ভেবে দেখবে কি বন্ধু? সংকীর্ণতার গন্ডিতে আবদ্ধ কে? তুমি না কি সে?
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উপলব্ধিতার দৈন্যতা আমাদের কে মিথ্যা ফানুসে প্রলুব্ধ করে আসল গন্তব্য থেকে কী ভাবে দুরে সড়িয়ে দেয়,আপনার অসাধারণ লেখনী পঠনে কিছু টা অনুভূত হয়!
মিথ্যে মরিচিকার পিছু নিয়ে আমরা কল্পিত সুখের সন্ধানে ছুটছি শুধু!
আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দিন,আমিন।
ভালো থাকবেন,অনেক ভালো এই শুভ কামনা আমার!!!
জাজাকাল্লাহ খায়ের ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন