তাহারেই পরে মনে
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:১১:০৫ রাত
বছরখানেক আগে তার সাথে আমার পরিচয়। যতদূর মনে পড়ে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি কোন এক সময়ে হবে। শীতের অপরাহ্ন; প্রকৃতি কেমন যেন মুষড়ে রয়েছে, এর মাঝেই তার সাথে দেখা। প্রথম দেখাতেই অপলক তাকিয়ে ছিলাম বেশ কিছু সময়। তার সুন্দর গড়ন আর গায়ের রঙ আমায় উদাস করা এক মোহনীয়তায় আচ্ছন্ন করে দিল। খুব সহজেই জয় করে নিল আমায়, ঠাঁই পেয়ে গেল মনের মণিকোঠায়। ধীরে ধীরে চলে এলাম আরও কাছে। তাকে করে নিলাম একান্ত আপন। বেঁধে নিলাম হৃদয়ের বাঁধনে। দিনগুলো কাটতে লাগলো এক ঐন্দ্রজালিকতার আবেশে যেন কোন মাহেন্দ্রস্পর্শে।
প্রতিদিন ভোরে তার ডাকে আর তাকে দেখেই আমার ঘুম ভাঙতো। কানের কাছে মৃদু স্বরে স্মরণ করিয়ে দিত আমায় ফজরের সময়। কতদিন আমায় ডেকে দিয়েছে আর পাশ ফিরে আমি আবার ঘুমিয়ে গিয়েছি। তবুও বিরক্তি নেই, ক্লান্তি নেই; ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধের মিশেলে আবারও ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়েছে। সহায়তা করেছে আমার প্রভু, দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে সালাতে দাঁড়াতে। সকালে উঠেই পরম ভালোবাসা আর মমতায় জড়িয়ে নিতাম কাছে। কখনও বা শুয়ে শুয়েই খুব কাছে এনে করতাম মিষ্টি করে দৃষ্টি বিনিময়, আর জেনে নিতাম অনেক কিছু।
অল্প কয়েকদিনেই সে শুধু আমার সাথে নয় বরং এ বাড়ির সবার সাথেই গড়ে তুলেছিল অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। সবাই যেমন তাকে ভেবে নিয়েছিল নিজেদের একজন; ঠিক সেভাবে সে নিজেও সবার চাওয়া আর আবদার মিটিয়ে যেত নিঃস্বার্থভাবে।
মাঝে মাঝে বিষন্নতা আমায় খুব আঁকড়ে ধরে। কারও কথা ভাল লাগেনা। চুপচাপ থাকি মৌন হয়ে। ঠিক সে সময়েও সে আমার পাশে থেকে তার দরাজ গলায় বড় মিষ্টি কন্ঠে গান শোনাতো। আহ! কী সুন্দর কন্ঠ! আর সুর! শুনতে শুনতে নিজের অজান্তেই মন ভাল হয়ে যেত। আমি ইসলামিক নাশীদের ভক্ত বলে সে সযতনে আমার পছন্দের গানগুলিকে রেখে দিয়েছিলো তার স্মৃতিতে। কখনও শোনাতো অণুপ্রেরণামূলক, শিক্ষামূলক সব গল্প; যার সাহিত্যের ছোঁয়ায় নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে করেছি বিকশিত।
এইতো গত রমাদ্বানের প্রতি রাতেই ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে বড় যত্ন করে শোনাতো কুরআনুল কারীমের সূরা মূলক ও ছোট ছোট সূরাগুলো। তার সুমধুর তিলাওয়াতের আমি ছিলাম একনিষ্ঠ ভক্ত। শুনে শুনেই আত্মস্থ করেছি অনেকগুলি সূরা।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা কাটিয়ে রাতে ঘরে ফিরলে ও আমাকে আর সবার কথাগুলো বলতো। কার কী সমস্যা? দিন কার কেমন কাটলো? হুবহু সবার কথা আমায় জানিয়ে দিত। রাতে বিছানায় আমার একদম কাছে ছিল তার জায়গা, থাকতো আমার খুব কাছে। যতক্ষণ ঘুম আসতোনা, আমার অবাধ্য হাত তার সারা শরীরে বিচরণ করতো, অতৃপ্ত আঁখি অপলক চেয়ে থাকতো। আর শান্ত ও সৌম্যের প্রতীকি হয়ে আমার কাছে সঁপে দিয়ে সে জানাতো অনেক কথা। এরই মাঝে কখনও কখনও হালকা খুনসুটিতে তার উপর রেগে যেতাম। রাগ করে বকা দিতাম, হালকা আঘাতও যে করিনি কখনও তা নয়। কিন্তু সব সহ্য করে সে জ্বালিয়ে রেখেছিল তার ভালবাসা আর সেবার প্রদীপ্ত শিখা।
কোন কোন দিন তাকে সাথে নিয়েই বের হতাম বিকেলে হাঁটবো বলে। নদীর পাড়ে বসে থেকে চলত আমাদের মিষ্টি আলাপন; প্রেম বিনিময়, ভাবের অনুনয়। নিজে থেকে কিছু বলার চাইতে অন্য কারো কাছে থেকে আমি শুনতে ও জানতেই বেশি ভালবাসি; তাই চাঁদনী রাতে চুপ করে থেকে তার কাছে শুনতাম সাহিত্যের কথা, ইসলামী মূল্যবোধের কথা, ধৈর্য্য ধারনের সুফলতার কথা। সব মিলিয়ে মনের মাঝে এনে দিত এক স্বর্গীয় শান্তির বারতা। একটু রাত হলে, পাঁজরের এক পাশে কাছাকাছি হয়ে বাড়িতে ফিরতাম, কোনদিন বা হাতের মাঝে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো।
বিগত কিছুদিন কাজের ব্যস্ততার মাঝে, ক্যরিয়ারমূখী চিন্তায় নিজে এত বেশি ডুবে গিয়েছিলাম যে, তার তেমন খোঁজ নিতেও পারিনি। যে আমাকে আপন করে কাছে না নিয়ে ঘুমোতে যায়না, তাকেই একা ফেলে রেখেছি বিছানার পাশে এক প্রান্তে। আজ বুঝতে পারছি, বড় অন্যায় করেছি তার সাথে আমি। অনেক কষ্ট দিয়েছি তাকে।
গতরাতেও কখন যে সে বিছানার একপাশে তার ক্লান্ত দেহ ও মন নিয়ে এসে এলিয়ে পড়েছিলো, জানতেই পারিনি, দেখার ফুরসতই পাইনি। মাঝরাত পর্যন্ত কাজ শেষ করে পিসি অফ করে ওয়াশরুম থেকে ঘরে আসলাম, বিছানায় শুতে যাব; এমন সময় খেয়াল করলাম সে নেই। অনেক খুঁজলাম, কোথাও পেলাম না। সে হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকে, অন্যের হাত ধরে চলে গেল অভিসারে। জানালার পাশে শুধু তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখে গেল। শেষ সময়েও অভিমান করে বিদায় নিল; আর হৃদয় ছিঁড়ে আমায় দিল প্রতিদান। কী জানি! হয়তো এটিই আমার পাওনা, আমার নিয়তিতে লেখা অপমান!
খুব খারাপ লাগছে। কাউকে বোঝানোর ভাষা নেই। বড় নিঃসঙ্গ অনুভূত হচ্ছে। বারবার গলা ছেড়ে বলতে ইচ্ছা করছে–
ফিরে এসো, ফিরে এসো সাথিয়া
আমি তোমায় অনেক ভালবাসি
হে আমার সাধের নোকিয়া।
[পূনশ্চঃ গতরাতে আমার বড় সাধের Nokia 305 স্মার্টফোনটি খোয়া গিয়েছে। কে বা কারা রাতের আঁধারে জানালা দিয়ে বের করে নিয়ে চলে গিয়েছে। তবে দয়াপরবশ হয়ে সিম দুইটি খুলে জানালার পাশে রেখে গিয়েছে।]
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দোয়া করবেন।
অসাধারণ নান্দিকতায় আপ্লুত হলাম!
অনুপমেয় ভাল লাগায় মুগ্ধ হলাম!
একরাশ ভালবাসাময় সহানুভূতি ছড়িয়ে গেলাম!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান।
ব্যাপক মজা পেলাম।
মন খারাপ না করে আর একটা কিনে ফেলেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন