মরন একদিন মুছে দিবে সকল রঙ্গিন পরিচয়
লিখেছেন লিখেছেন এস এম আবু নাছের ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:০০:৪৯ সকাল
যোহরের সালাতে মসজিদে ঢোকার সময় দেখলাম মসজিদের বারান্দায় খাটিয়া এনে রাখা হয়েছে। মসজিদের সংস্কার কাজ চলছে আর সে কারনেই হয়ত খাটিয়া বারান্দায় জায়গা পেয়েছে। দেখামাত্রই বুকটা দুর দুর করে কেঁপে উঠল। ভিতরে এক ভয় ও শংকা নিয়েই নামাজে দাঁড়ালাম। আসলে কি করছি এই দুনিয়ায়? আমরা কিসের পিছনে অহর্নিশি ছুটে চলেছি? প্রতিমুহুর্তে মৃত্যুকে ভুলে থাকায় যেন আমাদের কাছে বিরাট বিজয় আর সাফল্য মনে হচ্ছে। প্রতিমুহুর্তে নিজের সাথে ও বিবেকের সাথে এক অন্তহীন লড়াইয়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু তবুও কি পারব আমরা এই মৃত্যুকে দুরে রাখতে পারবোনা। তবে কেন এই প্রানান্তকর বৃথা প্রচেষ্টা!! কেন এই অভিনয়!!
মানুষের মরন কখন কোথায় কিভাবে আসবে বা ঘটবে তা মানুষ জানেনা এবং জানার কোন উপায়ও নেই। এমন বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ বলেন -
“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে এগুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে একমাত্র তিনিই জানেন”। (সুরা আনআমঃ আয়াত ৫৯)।
এই আয়াতে অদৃশ্যের জ্ঞান দ্বারা এমন বস্তু বুঝানো হয়েছে যা জ্ঞান লাভ করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ কাউকে অবগত হতে দেননি। যেমন- কে কোথায় জন্মগ্রহন করবে? কে কি কি কাজ করবে? কতটুকু সময় পাবে? কতটুকু শ্বাস গ্রহন করবে? কতবার পা ফেলবে? কখন কোথায় কিভাবে মরবে? কোথায় সমাধিদথ হবে? আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অন্যত্র বলেন-
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষন করেন এবং গর্ভাশয়ে যে ভ্রুন অস্তিত্ব লাভ করে, তা আল্লাহ ছাড়া (তার প্রকৃতি) কেউ জানেনা এবং মানুষ জানেনা যে, সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে এবং মানুষ জানেনা কোন জমীনে তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সব জানেন, সব বিশয়ে অবগত”। (সুরা লোকমানঃ আয়াতঃ ৩৪)
এই আয়াতে বিভিন্ন বাচন ভঙ্গিতে পাঁচটি জিনিসের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর সাথে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আরও কিছু অভিনব তত্ত্ব ও তাতপর্য্য পরিলক্ষিত হতে পারে। পাঁচটির শেষ হচ্ছে মানুষের জানা নেই তার মরনের স্থান, অথচ মরনের স্থানটি দুনিয়াতেই বিদ্যমান। আর এই মরনের সময়টি হচ্ছে অবিদ্যমান, অনির্দিষ্ট (আমাদের কাছে)। স্থান বিদ্যমান থাকার পরেও যখন মানুষ তা জানতে পারেনা, তখন মরনের সময় জানতে পারার তো কোন প্রশ্নই আসে না।
সাহাবিগন রাঃ বলেন, নবী করীম সাঃ বলেছেন, যখন আল্লাহ কোন মানুষের কোন জমীনে মরন ঘটানোর ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্য সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন করে দেন (সিলসিলা সহীহা হা/১২২১)।
অত্র হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের মরনের জন্য নির্ধারিত স্থান রয়েছে আর মরনের সময় আল্লাহ সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না। (আন নিসা: 78)
আমি খুব ভালভাবে মনে করতে পারি, আমাদের খুব কাছের এক ছোট ভাই যখন মারা গেল তখন বেশ কয়েকদিন আমাদের অনেকের মুখের দিকে তাকালে স্পষ্ট যে কেউ বুঝতে পারত যেন এক টর্নেডো বয়ে গিয়েছে। সবাই এত বেশি ইবাদত বন্দেগী ও দ্বীনি তালিমে সোচ্চার যেন সবাই মৃত্য কে সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করছে। কিন্তু? কয়দিন? কয়েকদিন পরে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমরা ভুলে যায় আমাদের এই দুনিয়ায় আসার উদ্দেশ্য আমাদের গন্তব্য। আবারো বৃথা চেষ্টা করি মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়াতে। আজ অনেক আগে পড়া কয়েকটা ছত্র খুব বেশিভাবে নাড়া দিচ্ছে মনে...
বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর, তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে না। তখন তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে। (আল আযহাব: 16)
আমরা হয়ত জানিনা যে আমাদের সেই সময়টা কখন কিন্তু সবাই এব্যাপারে নিশ্চিত যে গন্তব্য একদম ঠিক "আমলে বারযাখ" শুধু সামান্য কিছুদিনের অবকাশ মাত্র এই দুনিয়া। জন্মের পরে থেকে আস্তে আস্তে ছুটে চলেছি সেই নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে।
"মৃত্যু থেকে যতই পালাও
মৃত্যু তোমায় লইবে ঘিড়ি
যদিও সূদুর আকাশ পানে
পালাও সেথা লাগিয়ে সিঁড়ি"
ইয়া আল্লাহ ! গাফুরুর রাহীম ! তুমি আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। আমাদের কবরের আযাব থেকে বাঁচাও। তুমি আমাদের দুনিয়ার ফিত্না থেকে বাঁচাও আর মাসীহ দাজ্জালের ফিত্না থেকে বাঁচাও। আমীন।
-------------০-----------------------
এস এম আবু নাছের
১৬-০৮-২০১৪ ঈসায়ী
বিষয়: বিবিধ
৪৯৩৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"ওগো কবর গায়ের মাটি,
দুনিয়ার সব মায়ার পিছনে-
তোমায় জেনেছি খাটি।"
মাওলানা নুমানীর এই জনপ্রিয় গজল টি
কিছুটা মনে করিয়ে দিল- আপনার অসাধারণ লেখনী।
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে।
ইয়া আল্লাহ ! গাফুরুর রাহীম ! তুমি আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। আমাদের কবরের আযাব থেকে বাঁচাও। তুমি আমাদের দুনিয়ার ফিত্না থেকে বাঁচাও আর মাসীহ দাজ্জালের ফিত্না থেকে বাঁচাও। আমীন।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন