খলিফা ইয়াজিদ, ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও কারবালা নিয়ে রচিত মিথ্যা ইতিহাস থেকে নিজের ঈমানকে হেফাযত করুন (শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন রাজাকারের বেয়াই ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৪১:০৯ সকাল

তৃতীয় পর্বে বলেছিলাম, কুলাংগার ইবনে যিয়াদ যখন ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও আহলে বাইয়াতদের নির্মমভাবে শহীদ করছিল তখন কুফার শত শত শীয়ারা চোখ বুজে তামাশা দেখছিল, ইয়ামামের হেফাযতের জন্য তাদের পক্ষ থেকে একটা তীর ও ছোড়া হয় নাই।

হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের সংবাদ যখন ইয়াজীদের কানে পৌছল তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। উপস্থিত সভাসদবৃন্দদের সামনে নিজের দুঃখ এভাবেই প্রকাশ করলেনঃ খোদার লানত পড়ুক সেই কুকুরটিত উপর (ইবনে যিয়াদ), আমি তাকে কি করতে বললাম আর কুকুরটা করল কী? তার এই কর্মকান্ডের কারনে ইতিহাস আমাকে চিরকাল ধিক্কার দিবে।(দেখুন, খেলাফতে উমাইয়া)

কোন কোন বর্ননায় পাওয়া যায়, হোসাইন (রাঃ) এর কর্তিত মস্তক মোবারক ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয় (যদি ও বিশুদ্ধ সনদে এর কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না). ইবনে যিয়াদ মনে করেছিল হোসাইন (রাঃ) যেহেতু ইয়াজিদের প্রতিপক্ষ তাই তার কর্তিত মস্তক ইয়াজিদের দরবারে পাঠালে তার পদন্নোতি ঘটবে। কিন্তু ইয়াজিদ কখনো এই হত্যাকান্ডকে সমর্থন করেন নাই, এমনকি যারা তার দরবারে হোসাইন (রাঃ) এর মস্তক নিয়ে গিয়েছিল তাদের তিনি কুকুর আখ্যা দিয়ে দরবার থেকে বের করে দিয়েছিলেন।

ইমামের হত্যাকান্ডের পর খলিফা ইয়াজিদ অনেক মর্মাহত হন, এমনকি তিনি তার স্বাভাবিক আনন্দটুকু হারিয়ে ফেলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ঘটনার জন্য তিনি পেরেশান ছিলেন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তিনি ইবনে জিয়াদকে শাস্তি দিলেন না কেন? এর উত্তরে ঐতিহাসিকরা বলেন, ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের পর সারা মুসলীম জাহানে যেই ধরনের বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল তা এতটাই মারাত্মক রুপ ধারণ করে যে খলিফা ইয়াজিদ যদি সেই মুহুর্তে এই হত্যাকান্ডের বিচার করতে যেতেন তাহলে অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে পৌছে যেত। এই হত্যাকান্ডের পিছনে ইরাকীদের যে ইন্ধন ছিল তা বিষয়টিকে আরো ঘোলাটে করে ফেলে, কারন প্রশাসনের অনেক জায়গায় ইরাকীদের মযবুত অবস্থান ছিল। এই সব ঝামেলা মোকাবেলা করে পকৃত খুনীদের শাস্তি দিতে যেই পরিমাণ সময়ের দরকার ছিল তা ইয়াজিদের ভাগ্যে জুটলোনা। এই হত্যাকান্ডের কিছুকাল পরেই তার মৃত্যু হয়। অনিবার্যকারন বশত হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের কালীমা নিয়েই তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হল। যদি ও এই হত্যাকান্ডের পিছনে তার কোন হাত ছিলনা। এইবার যদি কেউ এ কারনে ইয়াজিদকে দোষারোপ করে তাহলে সে ব্যাপারে আমার বলার কিছু নাই।হযরত উসমান (রাঃ) এর হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে হযরত আলী (রাঃ) এর সময় ও এই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু মুসলীম উম্মাহর বৃহত্তম কল্যানের চিন্তা করেই আলী (রাঃ) সেই বিচারকার্যে হাত দিতে ইতস্তত করেছিলেন।

ইতিহাস তার গতীতেই চলে। কিন্তু ঐতিহাসিকরা নিজেদের মত-মর্জি মোতাবেক ইতিহাসের ধারাকে পরিবর্তন করে ফেলেন। কারবালার ঘটনা নিয়ে যা কিছু বর্নিত হয়েছে এর অনেকটাই শিয়াদের বানানো বিকৃত ও সাজানো। নিজেদের ভন্ডামী আড়াল করতেই এদের এই অপচেষ্টা।

আমার চার পর্বের ধারাবাহিক এই আলোচনা থেকে যদি কেউ মনে করেন আমি ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর বিরুদ্ধে (নায়ুযুবিল্লাহ) ইয়াজিদের পক্ষে সাফাই গাইছি তাদের বলব, আপনারা আমার লেখা শুরু থেকেই নিজেদের মন-মগজে থাকা বিকৃত ইতিহাস ও চিন্তা-চেতনার আলোকে পড়েছেন। আমি আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খেলাফতে উমাইয়া, মুসলীম জাহানের ইতিহাস এই কিতাবগুলো থেকে শুরু করে বিগত ১৪শত বছরের ইতিহাস জানার জন্য নুন্যতম দেড় শতাধিক কিতাব অধ্যয়ন করেছি। কোরান-হাদীসের উপর ও মোটামুটি বিগত ১৮ বছর থেকে গবেষনা করে আসছি। এই সামান্য অধ্যয়ন থেকে আমি লেখাগুলো বাছাই করেছি। আমার মনে হয়েছে, এই ব্যাখ্যা যদি আমরা সামনে রাখি তাহলে কোরান হাদীসে বর্নিত সাহাবায়ে কেরামদের মর্যাদার ব্যাপারে কোন আপত্তি উত্থাপিত হয় না। মোয়াবীয়া (রাঃ) ও ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর প্রতি যথাযথ মর্যাদা রাখা সম্ভব হয়। খোদার ক্বসম, সাহাবাদের ব্যাপারে ইতিহাসে হাজার হাজার পৃষ্টা প্রমান থাকার চেইতে কোরানের একটি আ,ইয়াত কিংবা রাসুলের একটি হাদীস আমার জন্য যথেষ্ট ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্য। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

২০৫৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

281059
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১৩
মামুন লিখেছেন : আপনার লিখাটি পড়লাম। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File