খলিফা ইয়াজিদ, ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও কারবালা নিয়ে রচিত মিথ্যা ইতিহাস থেকে নিজের ঈমানকে হেফাযত করুন (দ্বিতীয় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন রাজাকারের বেয়াই ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৪:৪৪:৩৭ বিকাল
প্রথম পর্বের সার সংক্ষেপ হচ্ছে সাহাবাদের মর্যাদা নির্নয়ের মাপকাঠি ইতিহাস নয়, বরং কোরান ও হাদীস।
এই পর্বে আমি আলোচনা করব, কোরান হাদীসের আলোকে সাহাবায়ে কেরাম , বিশেষ করে মোয়াবীয়া (রাঃ) এর মর্যাদা এবং ইমাম হোসাইনের পরিবর্তে ইয়াজিদকে খলিফা বানানোর কারন কি ছিল?
প্রথমত,
*কোরানের আলোকে সাহাবায়ে কেরামদের মর্যাদাঃ
১) আল্লাহ পাক বলেন, "কুনতুম খায়রা উম্মাতিন" অর্থাৎ তোমরাই সর্বস্রেষ্ঠ মানুষ।
হাদীস ও তাফসীর শাস্ত্রের ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন এই আঅয়াতের প্রথম ও প্রত্যক্ষ সম্বোধিত। অবশ্য পরবর্তীরা নিজ নিজ আমল হিসাবে এ অভিধার অন্তর্ভুক্ত হবে, (দেখুন, ইবনে আব্দুল বার রচিত "আল-ইছতেয়াব" এর ভুমিকা)
২) "রাদিয়াল্লাহু আনহূম ও রাদু আনহূ" অর্থাৎ তাদের প্রতি আল্লাহ আর তারা ও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।
এই আ,ইয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্দুল বার বলেন, আল্লাহ পাক যেহেতু মানুষের আদি-অন্ত সম্পর্কে সর্বাধি জ্ঞাত তাই তার সন্তুষ্টি এমন মানুষের জন্য হবে যার আগামী জিবন ও শুভ সুন্দর পবিত্র বলে তিনি জানেন। হাফেজ ইবনে তাইমিয়া এবং আল্লামা সাফারানী ও এই মত বর্ননা করেছেন।
কোরানে এই রকম প্রায় ৬০০ এর উপরে সাহাবাদের মর্যাদা সম্পর্কিত আ,ইয়াত আছে।
* হাদীসের আলোকে সাহাবাদের মর্যাদাঃ
১) আওহাম ইবনে সাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুল (সঃ) বলেন, রিসালাতের জন্য আল্লাহ আমাকে নির্বাচন করেছেন, এবং আমার সাহচর্যের জন্য আমার ছাহাবাদের নির্বাচন করেছেন।( তাফসীরুল কুরতুবী, সুরাতুল ফাতিহা)
২) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুল (সঃ) বলেন, কাউকে আমার সাহাবাদের ব্যাপারে মন্দ বলতে দেখলে তোমরা তাকে বলে দিয়ো"তোমার উপর আল্লাহর লানত" (সুনানে তিরমিযি).
এরকম হাজারো হাদীস সাহাবাদের মর্যাদা সম্পর্কে বর্নিত আছে।
দ্বিতীয়ত, হযরত মোয়াবিয়ার ফযিলত।
*মোয়াবিয়া (রাঃ) ছিলেন কাতেবে ওহী, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন "বি আইদী ছাফারাহ, কিরামিন বারারাহ" অর্থাৎ এই কোরান যারা লিখেছেন তাদের হাত পবিত্র, তারা সম্মানীত ও পুন্যবান। আয়াতে "কিরামিন" শব্দের মুল অর্থ হচ্ছে যার অন্তর, দেহ, চিন্তা-চেতনা সব পবিত্র।
* রাসুল (সঃ) বলেন, আমার উম্মতের যেই বাহিনি সর্বপ্রথম নৌ যুদ্ধে অংশ নেবে তারা জান্নাতী। আর ইসলামের প্রথম নৌ যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন মোয়াবিয়া(রাঃ) (দেখুন, বোখারী শরীফ)
* রাসুল (সাঃ) আরো বলেন, হে আল্লাহ! তুমি মোয়াবিয়াকে পথপ্রদর্শক ও পথপ্রাপ্ত বানিয়ে দাও (তিরমিযি শরীফ)
তৃতিয়ত, ইয়াজিদকে খলিফা বানানোর কারনঃ
হযরত আলী (রাঃ) এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হাসান (রাঃ) এর সাথে কৃত চুক্তি মোতাবেক খেলাফতের যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন হোসাইন (রাঃ). কিন্তু কয়েকটি কারনে মোয়াবিয়া (রাঃ) তার পুত্র ইয়াযিদকে খলিফা বানিয়েছেনঃ
১) মোয়াবিয়া (রাঃ) পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে হোসাইন (রাঃ) চেয়ে তার পুত্রকেই খেলাফতের যোগ্য মনে করেছেন। এটা ছিল মুসলীম উম্মাহর বৃহত্তম কল্যানের চিন্তা করেই। এ ব্যাপারে উমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেন, সাহাবাদের অনুসৃত পথ অনুসরন করাই তোমাদের কর্তব্য, কেননা তারা যে সীমারেখায় থেমেছেন, জ্ঞান ও ইলমের ভিত্তিতেই থেমেছেন এবং মানুষকে যা থেকে বিরত রেখেছেন, সুতীক্ষণ অন্তর্দৃষ্টির কারনেই রেখেছেন। (দেখুন, মাকামী সাহাবা, ৪৫পৃষ্ঠা)
মোয়াবিয়া (রাঃ) কখনো নিজের ছেলের সুবিধার জন্য তাকে খলিফা বানান নাই। একদিন তিনি খোতবার সময় মিম্বারে দাড়িয়ে বললেন, এটা এমন এক মুহুর্ত যখন দোয়া কবুল হয়। হে আল্লাহ! আমি যদি পুত্র স্নেহে আমার ছেলেকে খলিফা বানিয়ে থাকি তাহলে তাকে ব্যার্থ্য করে দিয়ো। আর যদি ভাল বুঝে তাকে নির্বাচিত করি তাহলে তাকে কামিয়াব বানাও।
২) দামেস্ক ও সিরিয়া সহ মুসলীম বিশ্বের অনেক জায়গাতেই উমাইয়াদের প্রাধান্য ছিল। এই মুহুর্তে হোসাইন (রাঃ) কে খলিফা বানালে হিতে বিপরিত হবার সম্ভাবনা ছিল।
৩) ইয়াজিদের ভিতরে মোয়াবিয়া (রাঃ) নেতৃত্বের গুনাবলী দেখেছিলেন, এমনকি ইয়াজিদের নেতৃত্বে সব কয়টা যুদ্ধে মুসলমানদের জয় এসেছিল। ইয়াজিদের ব্যাপারে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয় সেগুলোর অনেকটাই শিয়াদের বানানো। আর খলিফা হবার সময় তার মধ্যে ভালো গুনের আধিক্ততাই বেশী ছিল।
৪) খলিফা হবার পর ইয়াজিদ কতৃক যদি কোন অন্যায় হয়ে ও থাকে সেটার জন্য মোয়াবিয়া (রাঃ) কখনো দায়ী হবেন না। কারন ইয়াজিদকে খলিফা বানানোর পিছনে তার ইজতেহাদ ছিল, এবং সেটা সঠিক ছিল,,,,(চলবে,,,,,)
--------------
তৃতীয় পর্বে থাকছে, কারবালা ট্রাজেডীর মূল হোতা কারা? ও এই ব্যাপারে ইয়াজিদের দায়বদ্ধতা।
বিষয়: বিবিধ
৩২০৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন