ঘ্রাণ এবং স্বাদ: দারুণ এক সম্পর্ক

লিখেছেন লিখেছেন এম এস উল্লাহ ১৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:৪৬:৪৪ দুপুর

মানুষ কে সর্বশক্তিমান মহান সৃষ্টিকর্তা খুবই সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এই সুন্দর সৃষ্টির অন্যতম হলো মানুষের চিন্তা শক্তি যা তাদেরকে তামাম মাখলুকাত থেকে আলাদা করে উচ্চতম আসনে আসীন করছে। আবার এই চিন্তা শক্তির মূল সোর্স হল মানুষের ব্রেন যা পৃথিবীর সকল প্রকার টেকনোলজি থেকে সর্বোত্তম এবং সবচয়ে আধুনিক।সবচয়ে আধুনিক এই অর্থে যে যত নতুন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হচ্ছে তার একমাত্র সোর্স মানুষের ব্রেন, ইহা সময়ের সাথে সাথে তাল মিলেয়ে অতি সহজেই সবচেয়ে আধুনিক ধারণা দিচ্ছে এবং নিজেকে মানিয়ে ও নিচ্ছে। উদাহরণসরূপ: কম্পিউটার এর প্রজন্ম ভিত্তিক উন্নয়ন যেমন: ১ম, ২য়, ৩য়, ৪থ ইত্যাদি ইত্যাদি আরো আধুনিক হচ্ছে এবং হবে, আবার Apple মোবাইল ফোন(i-phone): আই ফোন-ওয়ান , আই ফোন-two, আই ফোন-থ্রী , আই ফোন-ফোর , আই ফোন-ফাইভ এবং আই ফোন-সিক্স ইত্যাদি ইত্যাদি আরো আধুনিক হচ্ছে এবং হবে । কিন্ত মানুষের ব্রেন এর কোনো আধুনিকায়ন দরকার হয় না, latest ভার্সন লাগে না সর্বদাই আধুনিক এন্ড আরো বেশি latest. মানুষের ব্রেন জনে জনে আলাদা এই শুধু ডিফারেন্স। মানুষ পৃথিবী থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বিচরণ করছে কিভাবে- উত্তর হলো ব্রেন,ব্রেন এবং ব্রেন। কি এক বিস্ময়কর টেকনোলজি সেট করা আছে এই ব্রেনে , এর জন্য ব্রেনএর সৃষ্টিকর্তার কাছে অতিশয় কৃতজ্ঞ।

ব্রেন এর সাথে সম্পর্কীয় দুটি অঙ্গ এর একটি হলো নাক এবং আরেকটি হলো জিহ্বা। নাক সাধারণত আমাদেরকে ঘ্রাণ নিতে সহায়তা করে আর জিহ্বা সহায়তা করে স্বাদ নিতে। একটি খাবার খেয়ে খুবই তৃপ্ত হলাম কেন? স্বাদ। স্বাদ না পাইলে খাবার যতই ভালো হোক আমরা খাবার খেয়ে তৃপ্ত হতে পারি না. স্বাদ এক মহা নেয়ামত। কিন্তু আমরা কি চিন্তা করি এই জিহ্বা তে কতটা আধুনিক এবং latest প্রযুক্তি সেট করা আছে? উদাহরণসরূপ:খাবার শুরু করলাম সূপ দিয়ে একটা স্বাদ পেলাম, পোলাউ খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, মুরগী খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, গরু খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, মাছ খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, সবজি খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, শাক খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, ডাল খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, বোরহানি খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, পানি খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, তারপর দই খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, রসগুল্লা খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, রসমলাই খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, জিলাপি খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, পান খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, নরমাল পান খেলাম একটা স্বাদ পেলাম, মিষ্টি পান খেলাম একটা স্বাদ পেলাম ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি , সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ। যেই খাবার আগে কখনো খাই নি এইমাত্র প্রথম খেলাম তার ও একটা ভিন্নস্বাদ পেলাম. কত আধুনিক আমাদের জিহ্বা- অতীত অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাজ করতে সক্ষম। আগে পরে অথবা একই সাথে হাজার আইটেম খেলাম বা খাই প্রত্যেকটারই এক আলাদা স্বাদ, আলাদা মজা আলদা তৃপ্তি। জিহ্বার মধ্যে কি অছে যে যা মুখে দেই একটা ভিন্নরকম স্বাদ পাই আর পাই এই পৃথিবীর সব আনন্দ। অন্যদিকে, প্রত্যেক আইটেম এ এত স্বাদ কে দিলেন ? যদি পৃথিবীর সব স্বাদ কেবল আমার জিহ্বা থেকে চলে যায় তবে কেমন হবে আমার জীবন?

এবার আসি, নাক এর কথা. আগেই বলেছি নাক সাধারণত আমাদেরকে ঘ্রাণ নিতে সহায়তা করে. উদাহরণসরূপ: উপরুক্ত খাবার আইটেম গুলুর প্রত্যেকটার একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে. ঘ্রাণে আমরা মুগ্ধ হই , হই পুলকিত। এই ঘ্রাণ কি কেবল খাবার এই?- না নাকের ক্ষমতা আরো ব্যাপক আরো বিস্তৃত। গোলাপ ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, বেলি ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, জবা ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, হাসনাহেনা ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, বকুল ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, চামেলি ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, গন্ধরাজ ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, টগর ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, শাপলা ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, জুই ফুলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে.

আবার আমের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, জামের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, কাঠালের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, লিচুর একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, আনারসের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, বেল একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, কলার একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, আপেলের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, কমলার একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, স্ট্রবেরির ফুলে একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, আঙ্গুরের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, ডালিমের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে, এভাবে হাজার হাজার ফুল এবং ফল ছাড়াও যাবতীয় বিষয়ের একটা ভিন্নরকম ঘ্রাণ আছে.সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ। কত আধুনিক আমাদের নাক - অতীত অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাজ করতে সক্ষম।আবার তাই একই প্রশ্ন? নাকের মধ্যে কি অছে যে, যাই আমার নাকের কাছে আসুক সার্টিফিকেট দিয়ে দেয় ইহা ভালো- না ইহা ভালো না. ইহা সাস্থ্যকর- না ইহা সাস্থ্যকর নয়. যদি কেবল আমার নাক পৃথিবীর কোনো ঘ্রাণ নিতে না পারে তবে কেমন হবে আমার জীবন?

শুধুই কি তাই ? নাক হলো জিহ্বার কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণকারী। নাক যদি কাজ না করে তবে জিহ্বা কাজ করবে না। একে অপরের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণসরূপ: আমাদের ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে যায় প্রায়ই, তখন আমরা কোনকিছুর স্বাদ পাই না, কেন? নাক সার্টিফিকেট না দিলে জিহ্বা কাজ করে না. নাক যেহেতু কর্ম উপযুগী না তাই জিহ্বাও না. তাই আসুন নাক এবং জিহ্বার যত্ন নেই এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মহা বিশ্বের অধিপতি, সকল ক্ষমতার মালিক মহান প্রভুর যিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন এবং চিন্তা করার শক্তি দিয়েছেন। দয়া করে মহান রবের দেওয়া অনুদান(নাক এবং জিহ্বা) নিয়ে গভীর চিন্তা করি, তাকে স্মরণ করি প্রতি মুহুর্তে।

আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে এবং কষ্ট করে এই লেখা পরার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।

বিষয়: বিবিধ

২০০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284438
১৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
ফেরারী মন লিখেছেন : আল্লাহর সৃষ্টি বড়ই রহস্যময়। একটির সাথে যে আরেকটি কি সুন্দরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটা কেবল মুমিনরাই কল্পনা করতে পারে। লেখা সুন্দর হয়েছে গোল্ডেন প্লাস দিলাম।
284723
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইর। সুন্দর পোষ্ট।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File