আওয়ামী লীগ আর জামায়াতের সখ্যতা বহুদিনের; আওয়ামী লীগ অস্বীকার করলেই কি হবে??
লিখেছেন লিখেছেন অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার ১৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৩:৩৩ সন্ধ্যা
১৯৮১ সালের ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রক্ষমতায় আবির্ভুত হন। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি তৎকালীন সেনা প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট এরশাদ সংবিধান স্থগিত করে দেশে সামরিক আইন জারি করেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, জামায়াত এরশাদের স্বৈর শাসন ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ন ভুমিকা পালন করে। ১৯৮৩ সালের ২০ নভেম্বর জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর মরহুম আব্বাস আলী খান এরশাদ সরকারকে অবৈধ ঘোষনা করেন এবং অবিলম্বে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবী জানান। অন্যন্য এরশাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমন্বয় করে এরশাদের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনার উদ্দেশ্যে জামায়াত সে সময় ৫ সদস্যের একটি লিয়াজো কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে ১৯৮৩-১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দল ও ৭ দলীয় জোটের সাথে সমন্বয় করে জামায়াতে ইসলামী এরশাদের বিরুদ্ধে ব্যপক আন্দোলন পরিচালনা করে। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদসহ আরো বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বাসভবনে জামায়াতের নেতারা আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃত্বের সাথে বৈঠকে অংশ নেয়। এই সব বৈঠকে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা, আব্দুস সামাদ আজাদ, তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম প্রমুখ অংশ নেন। অন্য দিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে এই সব বৈঠকে অংশ নেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো: মুজাহিদ, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আব্দুল কাদের মোল্লা। জনাব মুজাহিদ তখন ঢাকা মহানগরীর জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ছিলেন। জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বলিষ্ঠ ভুমিকার কারনেই এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে বিচারপতি শাহাবুুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় যারা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম একটি অবাধ নির্বাচন সম্পাদন করে। উল্লেখ্য এই তত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলাটি ইতিপূর্বে জামায়াতে ইসলামী বিশেষ করে এর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম ঘোষনা করেন। এখানে এটিও বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই আন্দোলন পরিচালনার সময় জনাব আলী আহসান মো: মুজাহিদের সাথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অসংখ্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে এবং পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সময় জনাব মুজাহিদের সাথে টেলিফোনে শেখ হাসিনার অসংখ্য বার কথাও হয়। এছাড়া শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী মরহুম ওয়াজেদ মিয়ার সাথেও জনাব মুজাহিদের আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
এরশাদের পতনের পর তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তাতে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। জামায়াত সেই নির্বাচনে ১৮টি আসন পায় যা সেই সময় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় এবং গনতন্ত্র সুরক্ষায় বিশেষ ভুমিকা রাখে। ইতিহাসের বাস্তবতা হলো সরকার গঠনের জন্য সেই সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই জামায়াতের সমর্থন চেয়েছিল। আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়ামের গুরুত্বপূর্ন একজন সদস্য জনাব আমীর হোসেন আমু তখন জনাব আলী আহসান মো: মুজাহিদকে টেলিফোন করে সরকার গঠনে সমর্থন চান এবং এর বিনিময়ে কমপক্ষে ৩টি মন্ত্রী ও ৬ টি মহিলা আসন দেয়ার প্রস্তাব দেয়। বিএনপিও জামায়াতকে একই রকম প্রস্তাব দেয়। জামায়াতের তৎকালীন মজলিশ-ই-শুরা (দলের সর্বচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্ষদ) উভয় পক্ষের প্রস্তাব বিবেচনা করে বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নীতিগত কারনে জামায়াত সে সময়ে সরকারে যোগ না দিলেও দুটি মহিলা আসন নেয়ার পক্ষেও সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৯১ সালের অক্টোবরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন পান। তিনি জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমের সাথে সাক্ষাৎ করে জামায়াতের সমর্থন কামনা করেন। এই সাক্ষাতের ব্যপারটি ছবিসহ দৈনিক ইনকিলাবে ১৯৯১ সালের ৫ই অক্টোবর প্রকাশিত হয়। যদিও জামায়াত আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে সমর্থন দেয় এবং তিনিই পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হন।
১৯৯৪ সালের বিতর্কিত মাগুরা উপ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে এবং তখন জামায়াতের কেয়ারটেকার ফর্মুলা নিয়েই জামায়াত, আওয়মী লীগ ও জাতীয় পার্টি একই সাথে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে। সে সময় আওয়ামী লীগ ও জামায়াত একসাথে অসংখ্য মিটিং করে যা তৎকালীন সংবাদপত্রে ব্যপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
২১০৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরশাদকে নিজের স্বামীর / পিতার হত্যাকারী বলেও/জেনেও তো খালেদা / তারেক ২০০৬ এ ক্ষমতা ছাড়ার আগে তাকে জোটে নিতে কিই না করেছিল । একের পর এক মামলায় এরশাদকে খালাসও দিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার সে সময়ে । পরে এরশাদ স্বভাবসুলভ পল্টি মেরেছিল ।
জামায়াতও তো ১৯৯৫-৯৬ এ তাদের শরিক তাদের প্রতি তুলনামূলকভাবে সফটকর্নার্ড বিএনপিকে বিপাকে ফেলে ৭১ থেকে চিরশত্রু আওয়ামী লীগের সাথে একই সমান্তরালে আন্দোলন করেছিল , ফর্মুলাও দিয়েছিল ।
বিএনপির সাথে এই বেঈমানী করার ফল আজ জামায়াতকে চরমভাবে চুকাতে হচ্ছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন