অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাজা পূর্ব সমাবেশে এবং দাফন পরবর্তী দোয়ায় তার ছেলে আমান আজমী যা বলেছিলেন....
লিখেছেন লিখেছেন অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার ২৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৪২:২৬ বিকাল
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, অধ্যাপক গোলাম আযমের চতুর্থ সন্তান। শনিবার জানাজা পূর্ব সমাবেশে এবং দাফন পরবর্তী দোয়ায় জনাব আমান আজমী বলেন, আমার পিতা ইতিহাসের এক ক্ষনজন্মা পুরুষ। তার মত একজন নেতার সেবা থেকে এই দেশের মানুষ বঞ্চিত হলো, এটা এই জাতির দুর্ভাগ্য। অধ্যাপক গোলাম আযমের একমাত্র অপরাধ তিনি তার সারাটা জীবন ইসলামী আন্দোলনের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তার অপরাধ, আমৃত্যু এই স্বপ্ন লালন করা যে, আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা।
তিনি বলেন, আমার আব্বা জ্ঞানত কোন মানুষকে আঘাত করেননি। কাউকে কোন দিন কষ্ট দেননি। এমনকি জীবনের শেষ দিনগুলোতে যখন তিনি কারাবন্দী ছিলেন, তখনও কারও প্রতি কোন অভিযোগ করেননি। আমি যদি কোনদিন জেলের কোন কর্মকর্তা বা কারারক্ষীর সাথে আমার আব্বার প্রতি তাদের অযত্ন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতাম, তখনও আব্বা আমাকে থামতে বলতেন। তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে বলতেন।
আযমী বলেন, আব্বার অসুস্থতার কারনে শেষ দিকে আমি কিছুদিন তাকে পাশে বসে খাওয়ানোর সুযোগ পেয়েছি। আমাকে তিনি যখনিই দেখতেন, অপলক তাকিয়ে থাকতেন আর বলতেন, আমান, তুমি যখন আসো, আমার দেহটা যেন রুহ ফিরে পায়। আর তুমি যখন চলে যাও মনে হয় আমার দেহ থেকে রুহুটা বুঝি বেরিয়ে চলে যায়। ক্রন্দনরত অবস্থায় আমান আযমী বলেন, আমি একজন ব্যর্থ সন্তান। বৃদ্ধ বয়সেও আমি আমার আব্বাকে আরামে রাখার ব্যবস্থা করতে পারিনি।
আমান আযমী বলেন, আপনারা আমার প্রতি, আমাদের পরিবারের প্রতি, আমার আব্বার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তার মূল্যায়ন করা বা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি জানি, আপনারা আমার আব্বা ব্যক্তি গোলাম আযমকে শুধু তার জন্য ভাল বাসেন না। আপনারা তাকে ভালবাসেন, কেননা তিনি ইসলামী আন্দোলনের একজন সেনানী ছিলেন।
তিনি বলেন, আমার দাদা জনাব গোলাম কবীর সাহেব ১৯৪৮ সালে এই এলাকায় (মগবাজারে) বাসা নির্মান করেন এবং এই এলাকায় আবাস গড়ে তোলেন। সেই থেকে আমরা এই এলাকায় আছি। এই এলাকার মানুষই স্বাক্ষ্য দেবে যে অধ্যাপক গোলাম আযম কেমন মানুষ ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম একজন আদর্শ নেতা ছিলেন, আদর্শ পিতা ছিলেন, আদর্শ স্বামী ছিলেন, আদর্শ ভাই ছিলেন, আদর্শ সন্তান ছিলেন একজন আদর্শ প্রতিবেশী ছিলেন।
ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ৫ ভাই প্রবাসী। তারা আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু কতৃপক্ষের অসহযোগিতার কারনে তারা আসতে পারেননি। তাদের যে কত কষ্ট হচ্ছে তা আমি বুঝি। আমারও প্রচন্ড মনোকষ্ট হচ্ছে। একা এই ভার আমি সামলোতে পারতাম না যদি না আপনারা আমার পাশে না থাকতেন। বৃহস্পতিবার রাতে যেদিন অধ্যাপক গোলাম আযম ইন্তেকাল করেন, সেদিন হাজার হাজার জনতা পিজি হাসপাতালে জেগেছিলেন। তার লাশ বাসায় আনার পর থেকে হাজার হাজার জনতা আমাদের বাসায় সমবেত হয়েছে। আমাদের মত নির্ঘুম রাত জেগে লাশ পাহাড়া দিয়েছে। আপনারা আমার রক্তের সম্পর্কের ভাই না হলেও আমার আত্মার সম্পর্কের ভাই।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যারা বিষাদগোর করেন, তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে এই মানুষটার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো বন্ধ করুন। আপনারা তাকে জানার চেষ্টা করুন। তার শতাধিক বই লেখা আছে, সেগুলো পড়ুন। আমি নিশ্চিত আপনারা তার ভক্ত হয়ে যা্বেন, কুরআনের পথের সেনানী হয়ে যাবেন।
জনাব আমান আযমী চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হে আল্লাহ, তোমার ফায়সালা ছাড়া কিছুই হয়না। আর তোমার ফায়সালার ব্যপারে আমাদের কোন কথা নেই। কিন্তু আল্লাহ শেষ বয়সে এসেও অধ্যাপক গোলাম আযমকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে ধুকে ধুকে মরতে হয়েছে। আমরা কিছুই করতে পারিনি। আজ আমি তোমার কাছে এ্কটি দাবী জানাতে চাই।
হে আল্লাহ যারা অধ্যাপক গোলাম আযম এবং জামায়াত নেতৃবৃন্দের মত মানুষের বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা করে, তুমি তাদের হেদায়াত দাও। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন তাদেরকে ধিক্কার দেয় কেননা তারা গোলাম আযমের মত একজন ইসলামী আন্দোলনের সেনানীর বিরুদ্ধে নোংরা অপপ্রচার চালিয়েছে। আজকে যারা গোলাম আযমসহ ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প রচনা করেছে, তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তুমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য কবুল করে নাও।
আমান আযমী এই সময় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারী গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে এই সব জঘন্য কাহিনী অপপ্রচার বন্ধ করুন। আপনাদেরও একদিন মাটির নীচে যেতে হবে। আপনাদের যদি আখেরাতের ব্যপারে বিন্দুমাত্র ভয় থাকে, তাহলে এই সব অপপ্রচার বন্ধ করুন। নইলে আপনাদেরকেও ইতিহাসের কাঠগড়ায় জবাবদিহি করতে হবে।
জনাব আমান আজমী সবশেষে তার আব্বা জনাব অধ্যাপক গোলাম আযমের রুহের মাগফিরাত কামনা চেয়ে দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহতায়লা তার দোয়া কবুল করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন