নগরীতে নানাভাবে লংঘিত হচ্ছে ট্রাফিক আইন, নিরসন হচ্ছে না যানজট
লিখেছেন লিখেছেন মো নজরুল ইসলাম ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:৩৫:০০ সকাল
মো. নজরুল ইসলামঃ সিলেটে নানাভাবে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের নানা উদ্যোগ সত্বেও নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত এখন হাকারদের দখলে। কর্পোরেশনের উদ্যোগে লেন নির্মাণ করা হলেও অনেক চালকের এটা ব্যবহারে অনীহা রয়েছে। যে কারণে নগরীর যানজট দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে।
সূত্র মতে, সিলেট নগরীতে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে রিক্সা-ভ্যানের জন্য পৃথক লেন। এই লেন দিয়ে স্বাভাবিকভাবে রিক্সাসহ হালকা যান চলাচলের কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যায় না। অনেকটা বাধ্য করে তাদের ঐ লেনে ঢুকাতে হয়। কারণ হিসেবে রিক্সা চালকরা জানান, লেনে জ্যাম হলে অনেক সময় বসে থাকতে হয়। বের হওয়ারও কোন পথ থাকে না। আর লেনের রাস্তাও ভালো না। বিশেষ করে সিটি পয়েন্ট টাউন বাস স্ট্যান্ড সামন থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা নাজেহাল। খানা-খন্দ আর উচু-নিচু রাস্তা হওয়ায় রিক্সা চালানো দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। আবার কেউ জানালেন, প্যাসেঞ্জারের চাপের কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়ে লেন ছেড়ে মেইনপথে যেতে হয়। প্রায়ই গালি-গালাজ, নির্যাতন সহ্য করতে হয় রিক্সা চালকদের। এর থেকে রেহাই পাননা যানজট নিরসনে নিয়োজিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নিয়োজিত বেসরকারি সিকিউরিটি সংস্থার সদস্যরা। কখনো রিক্সা চালকের সাথে বাকবিতন্ডা আবার কখনো যাত্রীরাও দেয়ে আসেন মারতে। আর হকাররা ফুটপাত দখল করায় লেনের রাস্তা ব্যবহার করতে হয় আম জনতাকে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত ও যানজট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশাস ফেলে নগরবাসী। তবে, জনসচেতনতার অভাবে যানজট থেকে মুক্ত হতে পারছে না সিলেট নগরী। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গত কিছুদিন পূর্বে রিক্সা চালকদের লেন ব্যবহারে বাধ্য করতে ট্রাফিক পুলিশের ন্যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। লেনের প্রতিটি মুখে রাখা হয়েছে সিটি কর্পোরেশন নিযুক্ত বেসরকারি সিকিউরিটি সংস্থার সদস্য। একপথে রিক্সা ঢুকালেও অন্যপথ দিয়ে প্রধান সড়কে চলে যায় এসব রিক্সা।
সরেজমিন সিলেট নগরী ঘুরে দেখা যায়, সুরমা পয়েন্টে দু’জন সিকিউরিটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সা চালকদের লেন ব্যবহার করতে বাধ্য করছেন। অন্যদিকে আদালতের রাস্তা ও জেলা প্রশাসকের রাস্তা দিয়ে প্রধান সড়কে চলে যাচ্ছে রিক্সাসহ হালকা যান। এসব পয়েন্টে সিকিউরিটির সদস্য থাকলেও জোরপূর্বক চলে যাচ্ছে তারা। আর সিটি পয়েন্টে থেকে কোর্টপয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা খারাপ হওয়ায় ঢুকানো যাচ্ছে না কোন রিক্সা-ভ্যান। অপরদিকে নগরীর পেপার পয়েন্ট থেকে সিটি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রতিটি মুখে সিকিউরিটি সদস্য থাকলেও সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলের মুখ পর্যন্ত কোন সদস্য না থাকায় মেইন রোড দিয়ে চলছে এসব হালকা যানবাহন। ফলে যানজট লেগেই আছে নিত্যনৈমিত্তিকভাবে।
আর হকাররা ফুটপাত দখল করায় ফুটপাত ছেড়ে রিক্সার লেনের রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। দেখা যায়, সুরমা পয়েন্টের আদালত সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান বেশ কয়েকটি দোকান। কোমল পানীয় বিক্রেতা থেকে শুরু করে কাপড় সহ আসবাবপত্র বিক্রেতা হকাররা ফুটপাত দখল করে সিটি পয়েন্ট পর্যন্ত দখল নিয়েছে। সিটি পয়েন্ট থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত স্থায়ীভাবে দখল করে নিয়েছে জুতা ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কোরবানী ঈদের সময় হকাররা ফুটপাতে বসলে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। জিন্দাবাজার গার্লস স্কুল, সোনালী ব্যাংকের সামনে তাদের অবস্থান। ফলে আর ফুটপাতের জন্য রাস্তা থাকছেনা পথচারীদের জন্য।
নগরীর সুরমা পয়েন্টে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড কাউসার ও ফয়সল জানান, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু কিছু রিক্সাচালকরা আমাদের নির্দেশ অমান্য করে মেইনরোডে চলে যায়। আমরা লাঠিচার্জ ও টায়ার পাংচার করে দেই। তবুও অনেক রিক্সা আমাদের নির্দেশ মানছে না। এদিকে তারা অভিযোগ করে বলেন, লেন ব্যবহার করার নির্দেশ দিলে অনেক রিক্সা ও রিক্সার প্যাসেঞ্জার তাদের মারতে দেয়ে আসেন। এসব সমস্যা সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চান তারা।
নগরীর ছড়ারপাড়ে বসবাসকারী সুনামগঞ্জ, দিরাইর রিক্সা চালক লোকমান আহমদ জানান, গরমের মধ্যে লেনে ঢুকলে অনেক দেরী হয়। গরম সহ্য হয় না। একটার পর একটা রিক্সার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়ে। এছাড়া বন্দরের লেনের রাস্তা ভালো না। টায়ারের হাওয়া চলে যায়। তাই লেনে ঢুকতে চাই না। আবার কখনো প্যাসেঞ্জাররা লেনে ঢুকতে নিষেধ করে।
রিক্সার প্যাসেঞ্জার সায়েম আহমদ জানান, হকাররা ফুটপাত দখল করায় মানুষ রিক্সার লেন দিয়ে চলাচল করে। ফলে রিক্সা স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছতে দেরী হয়। আবার রাস্তার অবস্তাও ভালো না। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে প্রধান সড়ক ব্যবহার করতে হয়।
এসএমপি’র ডিসি(ট্রাফিক) রেজাউল করিমের সাথে যানজট নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, জায়গা স্বল্পতার কারণে অবৈধ রিক্সা ধরতে তেমন একটা অভিযান চালানো হয় না। মাঝে মধ্যে রিক্সা আটক না করে সীট সীজ করা হয়। আগামী নভেম্বর মাস থেকে অভিযানে নামবে ট্রাফিক পুলিশ যা চলমান থাকবে। এরপূর্বে নগরীতে মাইকিং করা হবে বলে জানান তিনি।
রেজাউল করিম বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি মেয়র আরিফুল হকের বিশেষ বাহিনী নগরীতে যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করছে। যা দেখে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি।
নগরীর যানজট ও ফুটপাত বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফুটপাত দখল মুক্ত করতে শিগগিরই আবার অভিযান চালানো হবে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও আইন-শৃঙখলা বাহিনীর লোক মাঠে রয়েছেন। নগরীর রাস্তা সংস্কারের কাজও কিছু দিনের মধ্যে শুরু হবে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ট্রাফিক পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন