ছোটগল্প - অন্ধ ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন সায়েম আহমেদ ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৪১:৩৭ রাত
খুব তাড়াহুরু করে রাস্তায় হাটতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হলো আজ আবিদ কে। অজ্ঞতা বসৎ একটি মেয়ের ছাতার শিকের কোনা তার কপালে লেগে কিছুটা যায়গা চিড়ে অল্প রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। তখন রাহাত মেয়েটিকে বলল, হ্যালো ম্যাডাম ছাতা মানুষ রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে ব্যবহার করে,অন্যের চোখ কানা করার জন্যে নয়। মেয়েটি তখন চুইঙ্গাম চাবাতে চাবাতে কোন কথা না বলে তার এক হাত দিয়ে একটা দূরত্ব মেপে শেষে বলল, ছাতাটি যদি মোট দুইহাত দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে আর আমি যদি ছাতাটির ব্যাস অথবা কেন্দ্র হই তাহলে আমার থেকে ছাতার চারপাশের দূরত্ব কতো হলো? মেয়েটি তখন তার ডান হাতটি কনুই থেকে বেকে আকাশের দিকে লম্বে দাঁড় করিয়ে বলল, মাত্র এক হাত। আপনি এই এক হাত দূরত্ব ছাড়া এখানে আর কোন জায়গা খুঁজে পেলেন না? এত্তেকে এই ব্যপারটা খুব সহযেই নির্ণয় করা যায় যে আসলে এখানে আপনারই মতলব খারাপ ছিল! আরো একটি জিনিস এখানে প্রমাণীত হলো যে, ছাতা শুধু রোঁদ বৃষ্টি থেকে মানুষকে সিকিউরিটি দান করেনা বরং আত্মরক্ষার্থেও অনেক কাজে আসে!
হাউ ডেয়ার ইউ? আপনি খারাপ উদ্দ্যেশ্য বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন? নিজের দোষ ঢাকাবার জন্যে কতো লম্বা লম্বা কথার গাণিতিক যোক্তি দেখিয়ে দিলেন আর এটা একবারও চিন্তা করলেন না আপনি ছাতাটা হাতে নিয়ে এক জায়গায় স্থিরই ছিলেন না ফলে এক হাতের দূরত্বটা দুই-তিন হাত জুড়ে রাউন্ড খাচ্ছিল যে কারণে এই দেখেন আমার কপালটি শিকের সাথে টান খেয়ে একদম চিড়ে গেছে।
- তো আমি এখন কি করবো? দুই-তিনহাত জায়গা আমি যদি ছাতা দিয়ে রাউন্ড খেলেই থাকি তাহলে আপনি অবশিষ্ট জায়গা দিয়ে যেতে পারতেন? আর মাথা চিড়ে গেছে এখন আমার আমার কি করার আছে? নাকি আপনি আশা করছেন আমি আপনাকে ফিল্মের ইস্টাইলে বলব, ইশ আমার কারণে আপনার মাথাটা একদম ফেটে গেছে কত্ত রক্ত পড়ছে আহা একদম ক্ষতবিক্ষত, আর টুশ করে গায়ের ওড়নার একটা অংশ ছিড়ে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিবো? (নামিরা খুব তাচ্ছিল্যের সুরে কথাগুলো বলল আবিদকে)
- আপনারতো দেখছি মাথার এন্টেনা একদম সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থা। একমাত্র পাগল ছাড়া আর কেউই আপনার মতো মেয়ের সাথে সাধু আলাপ করা অসম্ভব।
- আপনার এতো বড় সাহস! আপনি আমাকে পাগলের সাথে তুলনা করলেন?
- আরে তাওতো কম করেছি! আর শুনুন আপনার মতো একটা মাথা খারাপের সাথে খামাখা এতো সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয়না। আমার তারচেয়ে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে......... (আবিদ ফাইলগুলো দুই হাত দিয়ে ধরে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গেল, নামিরা রাগে এক হাত কোমরে ধরে ফুসফুস করে তাকিয়ে আছে আবিদের দিকে)
⓿⓿
⓿⓿
প্রথম সাক্ষাতেই নামিরা আবিদের চোখে একটা জগন্য বস্তুর নাম হয়ে দাঁড়ায়। নামিরার কারণে আবিদের অইদিনের একটা চাকরীর ইন্টারভিউ ও একদম বিফলে গেল, কিন্তু আবিদ এই ইন্টারভিউর জন্যে যে পরিশ্রম করেছিল তার বিনিময়ে সে ইন্টারভিউটা দিতে পারলে চাকরী হওয়ার সম্ভাবনাটা খুব ছিল। তাই সে মনে মনে একটা পণ করে রেখেছিল নামিরার সাথে আর একটা বার দেখা হলে তার পাগলামোর একটা উচিৎ শিক্ষা সে দিবে। নামিরার সাথে আবিদের দ্বিতীয়বার দেখা হলো সেই একই যায়গায় কিন্তু সেই দেখায় নামিরার প্রতি আবিদের দৃষ্টিভঙ্গির একটা বিশাল পরিবর্তন ঘটে যায়.........
একটি পথশিশুকে এক প্যাকেট কেক নিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে নামিরা। মেয়েটি পেটের খিদায় রাস্তার পাশে পড়ে খুব কাতরাচ্ছিল সে মমতার টানে মেয়েটির পাশে এসে দাঁড়ায়। নামিরা খাবার দিতে দিতে মেয়েটিকে জিগ্যেস করে, তুমার নাম কি?
- খাবার গিলতে গিলতে মেয়েটি বলে উঠে, কুলসুমা।
- বাহ খুব সুন্দর নামতো। কে রেখেছে নামটা? আব্বু না আম্মু?
কুলসুমা তখন গলা চেপে ধরে বলে, আফা পানি খামু।
- অহহ আমিতো পানি আনতেই ভুলে গেছি, আচ্ছা একটু সময় আমি পানি নিয়ে আসছি। ঠিক তখনই আবিদ এক বোতল পানি নিয়ে হাজির।
- এই নেন।
- আপনি? আপনি সেই না অইদিন যার সাথে......
- আরে ওইদিনেরটা রাখেন আগে মেয়েটাকে পানি খাইয়ে বাঁচান।
- নামিরা পানি নিয়ে মেয়েটিকে খাওয়াতে লাগল।
- থ্যাংক্স। নামিরা বলল।
- থ্যাংক্স? কেন?
- কেন আবার! পানির জন্যে। আমি খুব জগন্য হলেও কিছু ক্ষেত্রে মানুষকে থ্যাংক্স দিতে একটুও দ্বিধা করিনা।
- আপনি জগন্য এটা কে বলল?
- আমিই বলছি! অকারণে মানুষের ভেজাল করা একটা জগণ্য মেয়ের পক্ষ্যেই সম্ভব। আপনিওতো বলেছিলেন আমার মাথার তার ছেঁড়া?
- অতীত টেনে আমাকে কেন খামাখা লজ্জা দিচ্ছেন?
- লজ্জা দিচ্ছিনা সত্যিই বলছি।
দুজনেই তখন খুব হেসে ওঠে.........।
⓿⓿
⓿⓿
নামিরা আর আবিদের প্রায় প্রতিদিন কোন না কোনভাবে সাক্ষাৎ হয়, ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কটাও দিন দিন আরো গভীর হতে থাকে একসময় প্রেম। তাদের প্রেম ছিল একদম নির্ভেজাল একে অন্যের বিপদেআপদে জীবন বাজী রাখার মন-মানষিকতা। হঠাৎ করেই আবিদের জীবন থেকে নামিরার প্রস্থান ঘটে কোন কারণ ছাড়া কোন অঘটন ও না। নামিরা আবিদের সাথে হঠাৎ কোন নোটিশ ছাড়াই দেখা সাক্ষাৎ একদম বন্ধ করে দেয়। মোবাইল নাম্বার আবিদ প্রায় কয়েকমাস প্রতিদিন পাগলের মতো ফোন দিতে থাকে কিন্তু বন্ধ। নামিরার ঘরের সামনে একবার হলেও সে ঘুরে আসে সেই তালা জুলানো। এভাবে বছরও কেটে যায় কিন্তু নামিরাকে আবিদের আর খুঁজে পাওয়া হয়না। আবিদ ধীরে ধীরে নামিরাকে ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে নিজের সাথেই যুদ্ধ করতে তাকে। কিন্তু ফলাফল সেই রাতের স্বপ্নে নামিরার আগমন আর মাঝরাতে তাকে হারিয়ে যাওয়ার অন্ধকার একটি দুঃস্বপ্ন আবিদের ঘুম ভাঙ্গায় সেই রাত আর ঘুমানো হয়না। এভাবেই চলতে তাকে আবিদের জীবন। কোথায় গেল নামিরা? কেন? কি কারণে? এরকম হাযারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেয়ে দেয়ালে কপাল ঠুকরানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তার।
⓿⓿
⓿⓿
জরুরী কিছু কাজে আবিদ শহরের বাইরে একটি কোম্পানিতে আসে। দুপুরের দিকে সে তার কাজ শেষ করে বাইরে হেটে হেটে সামনে এগুতে থাকে। এই জায়গায় এর আগে কখনো আবিদের আসা হয়নি তারপরও একটা খুব পরিচিত গন্ধ চারিদিক এমনভাবে ছড়িয়ে আছে আবিদের মধ্যে প্রশ্নেরা খেলা করতে শুরু করে কীসের গন্ধ? কোন এক রেশমী চুলের গন্ধ, খুব পরিচিত কারো আচলে ঢেউ খেলে আসছে এই হাওয়া। কে? নামিরা?
আবিদ চারিদিকে হনহন করে খুঁজতে তাকে সেই রহস্য কিন্তু কোথাও কিছু নেই। হঠাৎ একটি ছাতার শিকের সাথে তার কপালটা খুব জুরে টান খেল। একবিন্দু রক্ত সেখানে জমে আছে। সঙ্গে সঙ্গে একটি মেয়ে বলে উঠল......
- অহ স্যরি। আপনার কোথাও লাগেনিতো?
- আসলে স্যরিতো আমার বলার কথা......... এই বলেই আবিদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনের এই মেয়েটি নামিরা।
- নামিরা আবিদের কণ্ঠ শুনেই বলে উঠে... আবিদ?
- আবিদও অবাক হয়ে বলে উঠে... নামিরা? তুমি?
- নামিরা ঠিক তখনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে? কেমন আছ আবিদ?
- আবিদ আরো অবাক হয়ে বলে... নামিরা তুমি ঘুরে দাঁড়ালে কেন? কি হয়েছে তুমার? কেন আমার থেকে এতো দূরে সরে গেলে? আমাদের ভালবাসা কি এতোই দূর্বল ছিল যার জন্যে তুমি আমাকে এভাবে অকারণে ছেড়ে চলে এলে?
- নামিরা হেসে হেসে বলল... ভালবাসা? হা হা হা কীসের ভালবাসা? সেটাতো ছিল অভিনয়।
- অভিনয়? তারমানে তুমি আমাকে কখনো ভাল বাসনি? সেই দীর্ঘ দিনের সম্পর্কটা ছিল সম্পূর্ণ নাটক?
- হ্যাঁ নাটক ছিল। তুমি কীভাবে ভাবলে তুমার মতো একটি ছেলের সাথে আমি প্রেম করবো? আমিতো সেদিন তুমার অপমানের বদলা নেয়ার জন্যেই এই অভিনয় করেছিলাম। আজ আমি অনেক খুশী যে তুমাকে আসলেই আমি অনেক কষ্ট দিতে পেরেছি। আজকের দিনটা আমার জন্যে অনেক স্পেশাল হয়ে গেল তুমার জন্যে আবিদ, সে জন্যে তুমাকে একটা থ্যাংক্স।
- আবিদ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল... জানো নামিরা। আমি প্রতিদিন খুব কষ্টে তুমার ব্যথা ভুলে রাত্রে ঘুমাতে যাই কিন্তু তুমাকে হারানোর দুঃস্বপ্ন আমাকে আর সারা সাত ঘুমাতে দেয়না। খুব ভাল হতো যদি আজকের এই দিনটা একটা দুঃস্বপ্ন হতো। কিন্তু... আসি নামিরা তবে তুমি আমাকে অভিনয়ের ভাল বাসলেও জেনে রাখ আমার ভালবাসা ছিল একদম দাগশূণ্য। আজ কিছুটা হলেও শান্তি পেলাম এই জেনে যে তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব সুখে আছ। এটাই আমার জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি হয়ে থাকবে, স্বপ্ন ছিল তুমাকে যেভাবেই পারি সুখি করব আজ নাহয় নিজে কষ্ট নিয়ে তুমাকে সুখ দিয়ে গেলাম।
- অহ কি সব ফালতু বকবক শুরু করেছ? আমার শুনতে একটু ভাল লাগছেনা। অসহ্য......
আবিদ আর এক মূহুর্তের জন্যে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেনি, পাগলের মতো হাটা শুরু করে সে একরকমের পালিয়ে যায় সে।
আপু তুই কাঁদছিস কেন? কোন অসুবিধা হচ্ছে? নামিরার ছোট বোন সামিয়া বলল...
- কই কাঁদছিনাতো? আসলে চোখে কিছু প্রব্লেম করছে তাই।
- প্রব্লেম করবেনা? তোর চশমা কই? ডাক্তার বলেছিলনা সবসময় চোখে কালো চশমা দিয়ে রাখতে? আমিও আসতে একটু দেরী করে ফেললাম তোর কিছু রিপোর্ট আনতে গিয়ে। চল ডাক্তার চলে এসেছে ভেতরে চল। নামিরাকে নিয়ে তার বোন চক্ষু হাসপাতালে ঢুকে পড়ে নামিরার চোখ ওয়াস করাতে মাঝে মাঝেই নামিরার চোখ ওয়াস করাতে হসপিটালে আসতে হয় দীর্ঘ কয়েক বছর দরে। একটি রোড এক্সিডেন্টে তার চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায় তাই আজ সে অন্ধ.........
আপনাদের সাপোর্ট পেলে আরো প্রচুর গল্প অপেক্ষা করছে কিন্তু.......
বিষয়: সাহিত্য
১৬৫৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন