যেখানে পথের শেষ
লিখেছেন লিখেছেন সায়েম আহমেদ ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৫৪:২৫ বিকাল
মাইক্রো’র জানালা দিয়ে মুখের কিছু অংশ বের করে গতির হাওয়া উপভোগ করছে মাসুদ, তার ঠুট জুড়ে একবিন্দু তৃপ্তির হাসি। অনেকদিন পর মাসুদের মুখে এক রেখা হাসি দেখতে পেরে তার প্রাইভেট ড্রাইভার আজমলও আজ মহা আনন্দিত। এভাবে হাওয়া উপভোগ করা মাসুদের খুব পছন্দের তা অবশ্য নয়, তারিনের ছিল। তারিন তার চুল হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে গাড়িতে এভাবে বসে থাকতে খুব পছন্দ করতো, চুলগুলোকে ঢেউ খেলিয়ে অদ্ভুতভাবে মাথা ঝাঁকাতো পাগলীটি, আনন্দের যেন কোন সীমা নেই। মাসুদ খুব বিরক্তি প্রকাশ করলেও তাতে তারিনের কিছু যায় আসতোনা!
একবার কি হলো, হাইওয়েতে খুব গতিতে চলছিলো তাদের গাড়ি তারিন বরাবরের মতো তার মাথা গাড়ির জানালা দিয়ে বের করে চুখ, মুখ, ঠুট দিয়ে যেন হাওয়ার সাথে যুদ্ধ করছে। হঠাৎ একটি বড় বাস তাদের সামনে দিয়ে হরণ বাজিয়ে এমন বেগে আসল কিছু বোঝে ওঠার আগেই প্রায় তাদের গাড়ির গা ঘেষে বাসটি চলে গেল, সামান্যর জন্যে তারিনের মাথাটি আল্লাহ রক্ষা করলেন। মাসুদ তখন পাতরের মূর্তির মতো হয়ে যায় কী বলবে বোঝে উঠতে পারেনা! ড্রাইভার গাড়ির ব্রেক কষলো! সকলের দৃষ্টি তারিনের দিকে; তারিন তার চুখ-মুখ বড় বড় করে নির্বিকার বসে রইলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে বাসটি যেন তার মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে আর সে বিকারগ্রস্থ হয়ে ভাবছে, কীভাবে বাঁচলাম? ড্রাইভার চুখ-মুখ ফ্যকাসে করে বলল, ম্যডাম আফনে ঠিক আছেনতো? তারিনের কোন জবাব নাই তারপর মাসুদ তারিনের কাঁধে হাত রেখে আলতো করে বলল, তারিন! ঠিক তখনই তারিন সকলকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাসুদের উপর ঝুঁকে পরল।
প্রায় এক সপ্তাহ জ্বরে ভোগার পর ধীরে ধীরে তারিন সুস্থ হয়ে ওঠে কিন্তু গাড়িতে চলার সময় সেই স্মৃতি তাকে বারবার তাড়া করে বেড়াতো, এরকমভাবে মাস পাঁচেক যেতে না যেতে সবাইকে তাক লাগিয়ে সে আবার সেই পুরনো অভ্যাসে ফিরে যায়।
তারিনের স্মৃতি মনে করেই মাসুদের মুখে হাসির বিন্দু। আজমল তখন বলল, স্যরের মুখে অনেকদিন পর হাসি দেইখা আমার অনেক ভালা লাগতাছে, মনে হইতাছে আজকে ঈদ ঈদ......
- মাসুদ হেসে হেসে বলল, তাই বুঝি?
- হঃ
- জানিস আজকের দিনটা একটা বিশেষ দিন?
- হঃ জানি
- সত্যিই জানিস?
- হঃ সত্যিই জানি। আজকের দিনে ম্যডামের লগে আফনার ভালবাসা হইছিল, হেইদিনতো আমিই আফনেরে লইয়া গেছিলাম পার্কে।
- হ্যাঁ তাইতো! তাহলে তুই মনে রেখেছিস দিনটির কথা?
- কেমনে ভুলি কনতো? আফনার যতো ইস্পিশাল দিন আছে সব দিনের কথা একদম টেপ রেকর্ডারের লাহান মুখস্থ আছে।
মাসুদের হাসির রেখাটা আরো একটু বিস্তৃত হলো। সে আর কোন কথা না বলে আবার জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালো। তখন ড্রাইভার বলে উঠল, স্যার ম্যডামের কোন খবর-টবর পাইলেন?
- মাসুদ হতাসার নিস্বাস ছেড়ে বলল; নারেহ, কোন খবর নাই।
- আহহারে আইজ এক বছর হইয়া গেল ম্যডামের কোন, খুঁজ নাই। কই গেল আল্লা-মালিক জানে! তবে দেইহেন স্যার ম্যাডামের খুঁজ আপনি নিশ্চয়ই পাইবেন। আমি একজন পীরের মাজারে টেহা দিয়া দোয়া চাইছি ম্যডামরে ফিরা পাওনের লাইগা, অনেক গরম মাজার যে যা মানত করে সব পুড়া হয়। তিনি আল্লার অনেক খাস ওলী আছিলেন কেওরে হতাশ করেন না।
- মাসুদ একটা তরল হাসি দিয়ে বলল, সেটা কবে?
- এই কথা কইতে পারুম না, কিন্তু খুব ঝলদি পাইয়া যাইবেন।
- এই এক শান্তনা আর কতোবার দিবিরে আজ্জু? এক বছরে মানতের হিসেবে, সারা ঢাকার পথে ঘাটের সকল মাজারেই খুঁজ নিলে তোর নামের একটা নোট না মিলে উপায় নাই। (এই প্রথম মাসুদ তার ড্রাইভারকে তারিনের ডাকা নামে আজ্জু বলে ডাকলো, শুধু ভাইটা মিসিং)
- আজ্জু নাম শুনে আজমল আর কোন কথা বলল না বা বলার সাহস পেলনা, দুইবার শুধু ফোঁপানির শব্দ শোনা গেল। মাসুদও আর কোন কথা না বলে বাইরে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনই একটা মেয়েকে গাঁড় বাকা করে কানের দূল ঠিক করে টেক্সিতে বসে তাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে সে আঁতকে উঠল, ড্রাইভারকে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল জলদি এই গাড়িটাকে ফলো কর।
- ক্যান স্যার! কী হইছে?
- তোমাকে যেটা বলছি আগে সেইটা করো জলদি। আজমল টেক্সিটাকে সঙ্গে সঙ্গে অভারটেক করে গাড়ি থামিয়ে দিল, মাসুদ গাড়ি থেকে নেমে কৌতুহলি চিত্তে দৌড়ে গিয়ে টেক্সির ভেতর তাকালো। এই অল্প সময়ের মধ্যে তার হৃদয়ে ভরসাহীন বিশ্বাস, বিশাল বড় আশা জমাট বেঁধে ফুসফুস ফেটে যাবার মতো অবস্থা। তার পিছু পিছু আজমলও দিল দৌড়। মাসুদ তখন টেক্সিটির জানালার ভেরত উঁকি দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকালো, মেয়েটি অনেক ভয় পেয়ে হাত-পা গুটিসুটি করে বসে আছে। তার চোখ-মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে চরম রকমের ভয় পাচ্ছে, ড্রাইভারও নির্বাক। মাসুদের মুখ তখন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। মেয়েটি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলো কে আপনি? কি চাই? তখন মেয়েটির কণ্ঠ শুনে মাসুদের বুকে ধক করে ছোট্ট একটি ধাক্কা লাগল, প্রথমে মেয়েটির চুল দেখে মনে হয়েছিল অবিকল তারিনের মতো তাই গাড়িটি সে থামিয়েছে এবার মেয়েটির কণ্ঠও শুনে মনে হচ্ছে ঠিক যেন তারিনের কণ্ঠ। আসলে ব্যাপারটা মনগড়াও হতে পারে তারিনের মতো লম্বা চুল দেখে আমার মন ধরেই নিয়েছে এটা তারিন তাই বোধহয় মেয়েটির কথার ধ্বনিকে মন তারিনের কণ্ঠ হিসেবে গ্রহণ করছে; কে জানে মেয়েটির নামও হয়তো তারিন। আমি বোকার মতো ভাবতে লাগলাম নিজেকে, কি করব ভেবে না পেয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি তারিন? মেয়েটি তার চোখ দুটি বড় বড় করে বলল, আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? কে আপনি? কী চান?
- মাসুদ তার টুঠের ফাঁকে আলতো একটি নকল হাসি এনে বলল, না আসলে এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি মাত্র আর আপনার নামটা আপনার চেহারা দেখে অনুমান করেই বলেছি! আমি অত্যন্ত দুঃখিত আপনি যেথে পারেন।
টেক্সিটি চলে গেল। তারিন নামের মেয়েটি আজ রাত আর ঠিকমতো ঘুমোতে পারবেনা তা তার কপালের বিশ্বয় চিহ্ন দেখেই বোঝতে পেরেছি। মেয়েটি বোধহয় জীবনের প্রথম এইরকম একটি বাজে ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হলো। আজমল খুব ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে, কিছুক্ষণ পর সেও বলল, স্যর আপনের মতন আমিও অই আপারে ম্যডাম ভাইবা বসছিলাম কী অদ্ভুত মিল, মাইয়াটার চোখ দেখছেন? এক্কেবারে ম্যডামের লাহান। মেয়েটার চোখ খেয়াল করা হয়নি যাই হোক মোটকথা হলো এই মেয়েটা তারিন না, একে নিয়ে এতো ভাবার কিছু নাই। যা হবার তা হয়ে গেছে।
- আজমল
- জ্বী স্যর।
- তুমি তুমার ম্যডাম কে খুব ভালবাসতে তাইনা?
- হঃ স্যর একদম মায়ের মতো!
- আমাকে ভালবাসনা?
- ভাসিনা মানে? আফনে হইলেন আমার সবকিছু, আপনের লাইগা আমি আমার জান দিতেও কোন দ্বিধা নাই।
- সত্যি বলছ?
- কসম খোঁদার। যদি মিছা কথা কই তাইল আমার উপর আল্লার গজব পরুক, ঠাডা পরুক।
- শুধু কি জান দিতে পারবে, জান নিতে পারবিনা? (আজমলের সাথে সম্বোধনটা এবার তুই-তুমিতে চলছে কোন কারণ ছাড়াই)
- স্যর! আমি আসলে আফনের কথা ঠিক বোঝিনাই!!
- আসলে জীবনটা খুব বিস্বাদ লাগছে দিন দিন, সবসময় একটা জড়তা কাজ করে মনের মধ্যে। কষ্টের কারাগারে আর বন্ধি থাকতে পারছিনা দম আটকে আসেরে তুইকি আমাকে মুক্তি দিতে পারবিনা এই অসহ্য যন্ত্রণার ব্যাধি থেকে? এভাবে বাঁচাযে বড়ই কঠিন, পারবিনা আজ্জু!
- স্যর আফনের কথায় আমার ডর লাগতাছে, আমি আফনের লাইগা যেকোন কিছু করতে ফারি কিন্তু আফনের কথায় আমি খুব ভয় পাইতেছি।
- হা হা হা, ভয়ের কি আছে? আমি তোর পরিবারের জন্যে সব ব্যবস্থা করে যাবো তুমি শুধু এই ২০ দিনের মধ্যে মানে তোর ম্যডামের আর আমার বিবাহ বার্ষিকির পূর্বে একটা এক্সিডেন্ট করতে হবে, খুব ভয়ংকর এক্সিডেন্ড যার ফলে আমার নিশ্চিৎ মৃত্যু হতে হবে কিন্তু তুই বেঁচে যাবি। আমি নিজে নিজে অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি সাহসের ঘাটতি আছে। দেখিস কাজটা করতে হবে খুব নিখুঁতভাবে এবং আমার অজান্তে যেন আমি টেরই না পাই।
- ইয়াআল্লা, ও স্যার আফনে এইডা কি কন আফনের লাইগা জান দিমু কইছি তাই বইলা আফনের জান আমি নিমু কেমনে? সারা জীবনেও নিজেরে মাফ করতে পারুমনা।
- তুই আমার জান নিচ্ছিস কোথায়? তুইতো আমাকে মুক্তি দিচ্ছিসরে পাগলা, তুইকি চাস আমি তিলে তিলে মরে যাই?
- তা ছাইনা তাই বইলা...
- মাসুদ খুব অসহায়ের স্বরে বলল, তারমানে তুই পারবিনা? আজমলের কোন জবাব নাই, তার চোখ বেয়ে অনর্গল অশ্রুর স্রোত বইছে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে তার আজ। যে স্যরের কারণে সে শূন্য থেকে এখন একটা ছোট্ট ঘরের আর সুখের সংসারের মালিক আজ সেই স্যরের একটা কঠিন চাওয়াকে তার অগ্রাহ্য করতে হচ্ছে। ও আল্লা তুমি আমারে এই কোন কঠিন পরীক্ষায় ফেললা? কতো সুন্দর একটা দিন ছিল কতো রঙিন, আজ সবকিছুরে তুমি উল্টাইয়া দিলা কেন? ও আল্লা তুমি সব কিছু আগের লাহান ঠিক কইরা দাও ম্যডামরে ফিরাইয়া দাও... ফিরাইয়া দাও।
কিছুদিন পর......
ব্যবসার কাজ শেষ করে ঢাকা ফিরছে মাসুদ, আজমল গাড়ি ড্রাইভ করছে। ঈদানীং মাসুদ আরো বেশী অস্থির ভোধ করছে, খুচা খুচা দাড়িতে তাকে দেখতে অদ্ভুত রকমের দেখাচ্ছে। মাইক্রোতে চলার সময় মাসুদ এখন সবসময় জানালার মধ্যে শুয়ে শুয়ে চিন্তিত থাকে। তারিনের কোন খবরই পাওয়া গেলনা সারা দেশে তাকে খুঁজার জন্যে মাসুদ মানুষ লাগিয়ে রেখেছে, যারা তন্নতন্ন করে খুঁজ চালিয়ে যাচ্ছে।
পুরনো স্মৃতিগুলো ঈদানীং খুব বেশী মনে পড়ে মাসুদের। তারিন খুব কবিতা পছন্দ করতো আর মাসুদের কবিতার প্রতি কোন রুচিই ছিলনা। তারিনের সখ ছিল তার বয় ফ্রেন্ড বা হাসবেন্ড একজন কবিতা প্রিয় বা কবি হবে কিন্তু তা শেষমেশ হয়ে উঠেনি। তারপরও তারিন চাইতো মাসুদ কবিতা ভালবাসুক, পড়ুক নিজে লিখবে এবং তাকে পড়ে পড়ে শুনাবে তা যতো বিশ্রী হোক বা অদ্ভুত হোক সে খুব মন দিয়ে মুখে আলতো হাসি নিয়ে তা শুনবে। কিন্তু সে এটাও জানতো তার এই স্বপ্ন কল্পনায়ই মানায় বাস্তবে না। একবার তারিন মারাত্মক রকম টাইপের রাগ করে বসে মাসুদের সাথে, সব ধরনের কথা বন্ধ, ফোন অন থাকে কিন্তু রিসিভ করেনা এমনকি তার বাড়িতে পর্যন্ত গিয়ে দেখা না করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে মাসুদকে। কিছুদিন পর হঠাৎ তারিন ফোন রিসিভ করেই ধমকের সুরে বলল,
- তোমার কী মাথায় কোন প্রব্লেম আছে?
- মাসুদ খুব জুড়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে হতাসার সুরে বলল, আগে ছিলোনা তবে ঈদানীং নির্ঘাত কিছু একটা ডিফেট ধরেছে বলে আমার মনে হচ্ছে।
- তাহলেতো কোন পাগলের ডাক্তারের কাছে যাবে আমাকে জ্বালাচ্ছ কেন?
- তুমি ভাল করেই জান এই রোগের চিকিৎসক একমাত্র তুমিই।
- আমি তুমার সাথে প্যাঁচাল পারতে ফোন রিসিভ করিনি, আমি তুমাকে হুশিয়ার করতে রিসিভ করলাম এর পর থেকে তুমি আমাকে আর একটা ফোন করলে তুমাকে আমি আস্ত কি একটা করে-টরে বসবো। বুঝলে?
- এখনো তুমার রাগ কমেনি?
- নাহ, কমবেও না।
- যদি একশবার স্যরি বলি?
- তাতেও না।
- দুইশবার!
- তুমি এক লক্ষ বার স্যরি বললেও কাজ হবেনা।
- তাহলে কি বললে কাজ হবে?
- খামাখা কেন প্যাঁচাল পারছ? আমি ফোন রাখলাম!
- আরে আরে শুনো, তুমি বিশ্বাসই করবেনা! এই কদিনে দিনরাত না ঘুমিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আমি তুমার জন্যে একটা কবিতা লিখেছি; সেটা শুনলে অবশ্যই তুমার রাগ কমবে?
- কবিতা! তুমি? বিশ্বাস হয়না।
- আগে শুনবেতো।
- শুনছি।
-
গভীর রাতে সে এসে চুপিচুপি আমার দরজায় কড়া নাড়ে
আমি ধড়ফড় করে উঠে দরজা খোলে ফিরে আসি নিজের যায়গায়
বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকি।
ধীরে ধীরে সময় গড়িয়ে চলে।
- হা হা হা।
- একি হাসছো কেন? কবিতাটা তুমার ভাল লাগছেনা?
- আচ্ছা তুমি আস্ত একটা বোকা এটা আমি ভালকরেই জানি কিন্তু তুমি যে একটা কাঁচা চুরও সেটা জানলাম আজ!
- মানে?
- মানে এই কবিতাটি জাহিদ ভাইয়ের। আর আমি অনেক আগে জাহিদ ভাই ফেসবুকে শেয়ার করার পর কবিতাটি পড়েছিলাম এবং মুখস্থও করে রাখা আছে, বাকীটুকু কি বলব? মিস্টার চুর কবি! মাসুদ নিশ্চুপ আর তারিন তার মধুর কন্ঠে কবিতার বাকীটুকু আবৃতি করছে,
খোলা দরজা দিয়ে বাইরের শীতল বাতাস এসে আমার সমস্থ ঘর ভরে দেয়ে।
অদুরে কোথাও ডেকে উঠে রাত জাগা কোন এক অচিন পাখি।
আমার বড় ভালো লাগে আবার একটু একটু ভয় ভয়ও করে।
আসতে আসতে নিজেকে ফিরে পাই। স্বপ্নের রেশ কেটে যায় দ্রুত।
উঠে গিয়ে বাইরে তাকাই। কোথাও কেও নেই। ঘন গভীর অন্ধকারে
ডুবে আছে সমস্ত ধরনী।দরজাটা বন্ধ করে চুপচাপ অন্ধকারে বসে থাকি।
রাত গভীর হতে গভীরতর হতে তাকে। ঘন কালো অন্তহীন রাত।
মাসুদ স্বপ্ন দেখতে দেখতে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়লো, হঠাত তার মোবাইলের ধ্বনিতে ঘুম ভাংগে। ফোনের স্ক্রিনে থাকিয়ে দেখে হুসেন নামে কেও তাকে ফোন দিয়েছে, কিচুক্ষণ ভবার পর সে আবিস্কার করে হুসেন হলো তার এসিস্টেন্ট। মাসুদ হেসে হেসে ফোন রিসিভ করে বলল, কে হুসেন? ঈদানীং বড় বেশী ভুলে যাচ্ছি সব বুঝলে! তুমার নাম্বার নাম দেখার পরও তুমাকে আমি চিনতে পারিনি, কী ভয়ংকর ব্যপার তাইনা? হা হা হা......
- স্লামালিকুম স্যার। স্যর একটা বেডগুড নিউজ আছে, ম্যডামকে পাওয়া গেছে স্যার।
- মাসুদ প্রায় বিশ্বয়ের সুরে বলল, কী!! কোথায়? কীভাবে? কেমন আছে আমার তারা?
- স্যর ম্যডামকে একটি হাসপাতালে পাওয়া গেছে, এলাকার কিছু লোক বছর খানেক আগে ম্যডামকে নদী থেকে উদ্ধার করেছিল। স্যর বেড নিউজটা হলো ম্যডাম আজ এক বছর ধরে কোমায় আছেন.........
- কী সব বলছ? কোমা? ওর কিচ্ছু হবেনা, আজ আমার খুব খুশীর দিন তুমরা দেখো আমার তারার কাছে আমি যেতেই সে সুস্থ হয়ে যাবে, সে রাগ করে বসে আছেরে পাগলা তুমরা তা বুঝবিনা। তোরা ওখানে থাক আমি আসছি......
- জ্বী, স্যার।
মাসুদের চোখ-মুখ আনন্দে লাল হয়ে গেল, পুরো গাল অশ্রুতে ভিজে একাকার। আজমল, আজমল শুনলি? তোর কথা ফলে গেছেরে তো ম্যডামকে......
মাসুদের কথা শেষ হতে না হতে আজমলের কাঁধে হাত রাখার আগেই হঠাৎ তাদের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের রেলিং ভেঙ্গে উড়ে গিয়ে পড়ে নদীতে। আশপাশের লোকজন সবাই হতবাক, গাড়িগুলো সব থমকে গেল পুরো ব্রীজ মানুষে গিজগিজ করছে। কেও কেও বলছে হায় আল্লায় এমুন ফাঁকা রাস্তায় এই গাড়িটা কেমনে এক্সিডেন্ড কইরা বসল। সবার চুখে-মুখে কৌতুহল......
পুলিশের গাড়ি এলো ক্রেং দিয়ে পানির নিচ থেকে গাড়ি উদ্ধার করা হলো গাড়ির সামনা একদম ঝুড়িঝুড়ি হয়ে গেছে, প্রথমেই মাসুদের লাশ উদ্ধার করা হলো, সে গাড়ির পেছনে সিটের নিচে গাড়ির দরজার লক ধরে বসে আছে, পাশ থেকে একজন বলল, আল্লাগো লোকটা দেহেন বাঁচার জন্যি অনেক চেষ্টা করছেগো কিন্তু দড়জা খুলতে পারে নাই হায়রে কষ্টরে। দড়জার লক থেকে অনেক চেষ্টা করে তার শক্ত হাত ছোটানো হলো। তারপর ড্রাইভারকে উদ্ধার করা হলো অনেক মুশকিলে। পুলিশ অবাক হয়ে বলল, ওহ গড এই ড্রাইভারতো দেখছি মরার জন্যে প্রস্তুতই ছিল? পাশ থেকে আরেকজন বলল, কেন স্যার?
- তার সিট বেল্ট দেখ! রশী দিয়ে এমনভাবে বেঁধে রাখা যাতে খুলা না যেতে পারে, এর থেকে কী বোঝায়?
- স্যর দেখেন ড্রাইভার তার কানে তুলো গুজে রাখলো কেন? এমনভাবে গুজা যাতে কেও কিছু বললে শুনা অসম্ভব বিশেষ করে এই গাড়ি চলার রোডেতো সবসময় আওয়াজ থাকে এমন অবস্থায় কারো কথা বা শব্দ শুনা অসম্ভব।
- অবাক! কান্ড...!
তখন আরেকজন পুলিশ অফিসার মাসুদের সবকিছু চেক করে বলে ওঠলো, স্যর লোকটার পকেট থেকে সব ডিটেইলস পাওয়া গেছে, অনেক বড় একজন ব্যবসায়ী তিনি নাম মাসুদ আহমদ। আর এই দেখেন ওনার মোবাইলে পানি ঢুকলেও মোবাইল কাজ করছে এবং লাস্ট কল হুসেন নামে কেও একজন করেছিল এবং কিছুক্ষন আগে অনেক গুলা আরো কল দিয়েছে যেগুলা রিসিব হয়নি, সময়ের হিসেবে তখন মাসুদ সাহেব জীবিত থাকার কথা নয়, আর এই দেখেন শেষে একটা মেসেজও দিয়েছে এই হুসেন,
- কি মেসেজ? পড়তো!
- জ্বী স্যার, সে লিখেছে,
স্যার ফোন রিসিব করছেননা কেন? খুশীর খবর আছে, আপনার কথাই সত্যি হয়েছে স্যার। ম্যডাম আপনার জন্যেই হয়তো এতোদিন রাগ করে ঘুমিয়েছিলেন, কিন্তু এখন আপনি আসার আগেই তিনি আপনার নাম ডেকে ডেকে জেগে ওঠেছেন। ওয়াও ইটস আমেইজিং স্যার, স্যার জলদি আসেন...... জলদি।
তখন আশপাশের সবাই বলে উঠলো, আহহারে...
বিষয়: সাহিত্য
২০০৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমুন কৈরে আমার জন্য কেউ রাগ কৈরে থাকলিপরে আমার কুপ ভালো লাগবি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন