দুষ্টু-মিষ্ট
লিখেছেন লিখেছেন সায়েম আহমেদ ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:২৬:৩৬ সন্ধ্যা
ভোর সকালে আজমল সাহেবের চিৎকার শোনে শ্রাবনের ঘুম ভেঙ্গে যায়, অনেক বিরক্ত নিয়ে সে দরজা খুলে দেখে তার বাবা বাড়ান্দায় বসে শিহাবের মুখে ডানহাত দিয়ে চেপে ধরে বারবার বলছেন না... না... না... না... বল বল আমার সাথে। শিহাব ছেলেটা চোখ দুটি বড় বড় করে চাঁপা মুখে কষ্ট করে বলতেছে, হু... হু... হু... হু...।
আসল ঘটনা হচ্ছে শিহাব শ্রাবনের বড় বোনের ছেলে, বয়স দেড়-দুই বছর হবে, এখনো কথা স্পষ্ট করে বলতে পারেনা তাই সে, বাবা কে বুবু ডাকে, মামা কে মুমু, চাচা কে ছুছু, দাদা কে দুদু আর নানা কে ডাকে নুনু। শ্রাবণের বাবা শিহাব আসার পর থেকে চরম বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছেন, শিহাব যে কারো সামনে ওনাকে নুনু ডেকে বসে। তাই তিনি সকাল সকাল তার এই স্পোকেন ক্লাস নিচ্ছেন।
শ্রাবণ কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে পড়ল হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে যায়। শ্রাবনের আপু সাবিনা নাস্তা রেডি করে বলেন, কীরে তোর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন?
- কই? মাত্রতো মুখ ধুয়ে এলাম এখনো ভেজা পানি লেগে আছে?
- ধুর! সবসময় খালি ফাজলামো করিসনাতো এমনিতেই বাবার কাণ্ডকারখানা দেখে মেজাজ ভাল না, ছেলেটা আমার ভয়ে কাবু হয়ে যাচ্ছে।
- ভাল কাজইতো করছেন, তোমার ছেলে কখন কাকে কি বলে বেইজ্জত করে বসে কে জানে, গাঁয়ে যাবার কথা বলতে গিয়ে বলে বসবে গুঁয়ে যাবো।
- ছিঃ খাবারের সময় এসব নোংড়া কথা না বললেই নয়?
- হা হা হা...
- আচ্ছারে মেঘলার কি খবর? তোরা এখন আর আগেরমতো ঝগড়া করিসনাতো?
- আরে নাহ কি বলো এখন আর ঝগড়া টগড়া করিনা।
- বাহ অনেক সুইট, তাহলেতো ভাল।
- এখন আমরা ঝগড়া না করে একে অন্যের চুল ছিঁড়ি বুঝলি, আমি মেঘলার ২১টা চুল ছিঁড়তে সক্ষম হলেও সে এখনো পর্যন্ত আমার একটিও ছিঁড়তে পারেনি। চুলগুলো আমার বাথরুমে একটি প্লাস্টিকের বাটিতে রাখা আছে যা দেখে আয়।
- কী তারমানে তুই আর মানুষ হলিনা মেঘলা মেয়েটা কতো কষ্ট পেতে হলো তোর জন্যে একবার চিন্তা করেছিস?
- হা হা হা
- হাসিস কেন বেহায়ার মতো?
- না একটি কথা মনে পড়ল, মেঘলা মাঝে মাঝে আমাকে খুব সুইট করে বলে, এই তুই লম্বা চুল রাখিসনা কেন? অন্য ছেলেদের দেখিসনা লম্বা চুলে কত্ত সুইট লাগে।
- ঠিকইতো বলেছে, এখানে হাসার কি আছে?
- আরে হাসবোনা? ও কি আমাকে সুন্দর দেখাবে বলে চুল লম্বা করতে বলছে? ওতো আমার চুল ছেঁড়ার জন্যই এসব প্লান করতেছে।
তখনই শ্রাবণের ফোনটা বেজে উঠল, কুরুত কুরুত কুরুত...... রিসিব করার পর ওপাশ থেকে মেঘলার আওয়াজ, গুড মর্নিং। কেমন আছিস?
- আপাতত ভাল আছি। তুই ভালোতো?
- অন্নেক ভাল। একদম ফ্রেশ মুড।
- বাহ! এত্ত ভাল আছ? বিষয় কি! আজ ফেসবুকে তোমার প্রো-পিক এক হাযার লাইক পারি দিয়েছে বুঝি?
- মানে? তুইকি ফাজলামো ছাড়া একটা মুহুর্তও থাকতে পারিসনা? আজ আমার মন ভাল এই জন্য যে, বাবা আজকে সকালে আমাকে একটা নতুন মোবাইল গীফট দিয়েছেন। বাবার কোম্পানী নতুন একটি সাফল্য অর্জন করেছে তাই বুঝলি।
- হুম বেশ খুশীর সংবাদ। কনগ্রাচুলেশন...
- আচ্ছা আজ তাহলে তোর সাথে কলেজে দেখা হচ্ছে, আসবি কিন্তু।
- দেখি চেষ্টা করে।
- চেষ্টা করে মানে? তোকে আসতেই হবে! এই বলে মেঘলা ফোনটা কেটে দিল...
∞∞
∞∞
আচ্ছা তোর বাবাকি অই কবিতাটি লিখে ফেলেছেন? মেঘলা শ্রাবণকে বলল।
- কোনটা? বল্টু নাম্বার ওয়ান অইটা?
- আরে অইটা হতে যাবে কেন, আরেকটা ছিলনা “পাগল প্রেমিক”
- আচ্ছা এই এক কথা তোকে আর কতোবার বলব? বাবা তার লাইফে এখন পর্যন্ত কোন কবিতা হেডলাইন ছাড়া আর কিছু লিখতে পারেনি। বাবা যখন কোন গভীর বিষয় নিয়ে চিন্তায় পড়েন তখন তিনি অই বিষয়ের উপর একটি হেডলাইন তৈরী করতে পারেন আর সারা রাত চিন্তা করে কবিতার একটা লাইনও লিখতে পারেন না। কাল দিনে হাত থেকে চশমা পড়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় রাতে দেখেছি খাতায় একটি শিরোনাম লেখা “ভাঙ্গা চশমা” কিন্ত কবিতা আর বের হয়নি।
- তাহলে তুই সাহায্য করিসনা কেন? তুইতো ভাল কবিতা লিখতে পারিস!
- আমি কেন সাহায্য করতে যাবো? আর তুইকি আমাকে এই কবিতার খবর নেয়ার জন্যে এখানে ডেকেছিস?
- আচ্ছা তোকে কাছে ডাকার জন্যেও কি একটা কারণ লাগবে?
- তাহলে খামাখা এখানে বসে থেকে লাভ কি? তুইকি আমার প্রেমিকা যে কোন কারণ ছাড়া সারাক্ষণ পাশে পাশে বসে থাকবো।
- মেঘলা লাজুক গলায় বলল, হতেওতো পারি!
- কী? এসব ফালতু চিন্তা কখনো ভুলেও মাথায় আনিসনে বাপু।
- কেন? তুইকি আমায় পছন্দ করিসনা?
- নাহ করিনা, তুইকি একটা পছন্দ করার জিনিস হলি?
- কী? তুই আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করলি? আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ? তুই জানিস কতো ছেলে আমাকে পাওয়ার জন্যে পাগল?
- হুম জানিতো, তারা তোকে পাওয়ার জন্যে পাগল না, তারা মূলতই পাগল তাই তোকে পেতে চায়।
- দেখ শ্রাবণ এখন কিন্তু সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি তুই আমাকে পছন্দ করিস কেন এতো ফাজলামী করছিস?
- আমি ফাজলামো করছি না, আমি তোকে পছন্দই করিনা।
- কিন্তু কেন? সমস্যটা কোথায়?
- সমস্য হচ্ছে এ এ এ, হু। তোর নাকটা একটু পেঁচি টাইপের তাই, হইছে?
- কই? নাকতো ঠিকই আছে? মেঘলা নাকে চেপে বলল।
- তোর সাথে এতো পেচাল পারার আমার সময় নাই! আসি বাই...... বলে শ্রাবণ চলে গেল। মেঘলার ডাকে আর সাড়া দেয়নি?
পরের দিন......
মেঘলার বোনের ফোন পেয়ে শ্রাবণ হসপিটালে হাজির। গতকাল মেঘলা একটি গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে অবস্থা বেগতিক।
কয়েক ঘন্টা পর......
মেঘলার জ্ঞান ফিরেছে, শ্রাবণ মেঘলাকে দেখতে একগুচ্ছ ফুল হাতে হাজির। মেঘলা শ্রাবণকে দেখে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। শ্রাবন কপাল কুঁচকে বলে উঠল......
- কী এমন এক্সিডেন্ট করলি এটা? মানুষ এক্সিডেন্ট করে হাত পা ভেঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থা হয়, বাঁচবে কিনা মরবে এই চিন্তায় দুই তিন দিন বেহুশ থাকে আর তুই? মাথায় আগাত আর পায়ে জখম, বেঁচেও গেলি।
- মেঘলা চোখ দুটি লাল করে রাগের মাথায় বলল, আর হাতের এই ব্যাণ্ডেজ ডাক্তার ফেশন করতে দিছে তাইনা?
- ও স্যরি হাতও সামান্য মচকে গেছে। এই আর কী?
- বাবা বলল তুই নাকি আমাকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছিস?
- হ্যাঁ দিয়েছি। কেন আমার রক্ত তোর পছন্দ না? না হলে টাকা ফেরত দিয়ে দিস।
- তুই কেন আমার মতো জগন্য একটা মেয়েকে রক্ত দিলি?
- নাহ, ভাবলাম তুই আমার কাছে কিছু টাকা এমনিতেই পাস আর তখন তোর কণ্ডিশন দেখে চিন্তা হলো যদি মরে-টরে যাস তাহলে দাবী থেকে যাবে তাই রক্ত দিয়ে পরিশোধ করলাম।
- তুই এখনই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ।
- আরে রাগিস কেন? সমস্যা হবেতো এখন রেস্ট নে পরে কথা হবে।
- তখন মেঘলা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, তুইকি সত্যিই আমায় পছন্দ করিস না?
- তোকে বললাম রেস্ট নিতে? কথা বলছিস কেন?...
- তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হলেই আমি শান্তি পাবো, যা ভাগ।
- ঠিক আছে চলে যাচ্ছি, আর হ্যাঁ। বাবা অই কবিতাটা কমপ্লীট করে ফেলেছে, আমি তোর জন্য নিয়ে এসেছি। এই নে।
- মেঘলা অনিচ্ছা সত্যেও মেলে দেয়া কাগজের কবিতাটা পড়তে লাগল এক হাত দিয়ে......
---পাগল প্রেমিক---
তোমার সাথে ঝগড়া মানে
প্রেমের গভীরতা,
তোমার চোখের বহ্নি বলে
ভালবাসার কথা।
এটাইতো চাই বিরক্ত তাই
করি তোমায় মিছে,
তোমার মাঝে স্বপ্ন আমার
সাজে রাগের পিছে।
চাঁদ বলেছে শান্তি দেবে
আলো হবে পথিক,
ছোট্ট একটি ঘর বানাবে
বলেছিল শালিক।
আমি এক পাগল প্রেমিক
পাগল এই মন,
তবোও বুঝবেনা পাশে
থাকব যতক্ষণ।
মেঘলা পিছন থেকে শ্রাবণকে ডেকে মুচকী হেসে বলে, এই কবিতাটা তুই লিখেছিস তাইনা?
- আমি লিখবো কেন? বাবা লিখেছে বললাম না?
- আর মিথ্যা বলিস না, তুই ধরা পড়ে গেছিস।
তখন শ্রাবণও হেসে ফেলে......
বিঃদ্রঃ এই গল্পে যদি সবার ভাল রেস্পন্স পাই তাহলে আরো গল্প আসছে...
* গল্পের কবিতাটিও আমার লিখা, ভাল না লাগলে নিজ গুনে মাফ করবেন, আর ভাল লাগলে অল্প হলেও দোয়া করবেন। যেন আরো ভাল লিখতে পারি।
বিষয়: সাহিত্য
১৮১৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো রেসপন্স কেমনে দিতে হয় সেটা বলে দিলে ভালো হতো
কিন্তু গল্প-কবিতার সংখ্যাও ভালো হওয়া চাই
ভাল রেস্পন্স বলতে আপনাদের ভাল লাগাকে বোঝালাম।
গল্প-কবিতার সংখ্যাও ভালো হবে ইনশাআল্লাহ, শুধু আমার জন্যে দোয়া করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন