গল্প হতেও পারতো.........
লিখেছেন লিখেছেন সায়েম আহমেদ ১৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:০২:০০ রাত
পোস্টমর্টেম করার জন্য এক বয়স্ক লোকের লাশ ল্যাবে আনা হলো। লোকটার সারা দেহে শুধু কিলগুসির চিহ্ন কালো বর্ণ ধরে আছে। মুখটা হা করা মুখের ভেতর থেকে কিছু সাধা জিনিস ইকুইপমেন্ট দিয়ে বের করে চেক করে দেখা গেল অইগুলো হচ্ছে আটার রুটি। সারা দেহে মাংশ বলতে শুধু হাড্ডি। লোকটাকে চোর আখ্যা দিয়ে লোকজণ গণপিটুনি দেয় আর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পেটের অংশ কাটার পর দেখা গেল, লোকটার পেটে অই রুটির চার ভাগের আরো একভাগ ছাড়া আর কিছুই নাই। পেটের অন্যান্য অংশ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল লোকটা আজ তিন-চারদিন যাবৎ কিছুই খায়নি।
ডাক্তারের সহকারী বলল স্যার, লোকটার যা কন্ডিশন এতে বুঝা যাচ্ছে পেটের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সামান্য পাঁচটাকার রুটি চুরি করে পেটকে সান্তনা দিতে চেয়েছিল আর এই অন্যায়ের বিনিময়ে তাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু ভোগ করতে হলো?
হ্যা সাইফুল, সে আসলে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। এই দেখ তার মুখ আর পেট থেকে আমরা অর্ধেক রুটিও পাইনি তাহলে বাকিটুকু গেল কোথায়? ঐ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখ সেখানে হয়তো রাস্তার একটা কুকুর কতো আয়েশ করে বাকি রুটিটুকু খাচ্ছে অই কুকুরটা কিন্তু নির্দোষ কারণ সে কুকুর। আর এই লোকটা দোষী হয়েছে কারণ সে মানুষ। আর এই লোকটাকে আজ পেটের জ্বালায় চুরি করতে হয়েছে কেন জানিস? কারণ এটা স্বাধীন বাংলাদেশ।
আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত একটি দেশ হচ্ছে চীন। জানিস ওরা দিন দিন এতো উন্নত হচ্ছে কেন? কারণ ওদের দেশের একটা আসামীও বেকার থাকেনা, সরকার যেকোন আসামিকে পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে পুলিশি হেফাজতে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয় কাজের জন্য। তার ইনকামের টাকার একটা অংশ তার সংসারের যা খরচ লাগে পরিবারের কাছে ততটুকু যায় আর বাকিটুকু দেশের উন্নয়নের কাজে লাগায়।
এই লোকটারও কিন্তু পরিবার আছে মেয়ে আছে, বউ আছে, ছেলে আছে। এদের নিয়ে হয়তো লোকটার অনেক স্বপ্ন ছিল, মেয়ে ডাক্তার হবে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে আর সে আর তার বউ আয়েশ করে জিবন কাটাবে।
কিন্তু? অভাবের তাড়নায় তারাও একসময় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে যাবে। ছেলে আর ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে পত্রিকার হেডলাইনে আসবে কু-খ্যাত অমুক মাস্তান পুলিশের গুলিতে নিহত। বিভিন্ন বাধিরা কলম গুঁতাবেন, এর জন্য দায়ী কে? ছেলের মা-বাপ। তারা ছেলেকে মানুষ করতে পারেনি।
মেয়ে হয়ে যাবে বেশ্যা রাতের আধারে নিজেকে বিলিয়ে দিতে বাধ্য হবে। পেটের জ্বালা মেটানোর জন্যে নিজের মনটাকে একদম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিবে। আর দিনে মানুষের মুখে বিভিন্ন কটুক্তি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হবে। ঘরের কোনে বসে চোখের জলে ভাসাবে গতরাতের সকল লজ্জা আর নিজেকে আবার তৈরি করবে আজকে রাতের জন্যে।
কিন্তু জানিস পাশের দেশের একটা মডেল জনসম্মুখে নিজের সব বিলিয়ে বস্ত্রহীন অবস্থায় ভিডিও প্রচার করে সে আজ ভক্তের সুনাম শুনতে শুনতে ক্লান্ত। ডাইরেক্টররা তাকে ফিল্মের কাজে নেয়ার জন্যে শিডিউল ই পাচ্ছেননা। তাকে যদি তুই বেশ্যা বলিস তাহলে কিন্তু সেটা গুরুতর অপরাধ হয়ে যাবে, তাকে বলতে হবে স্টার, পর্ণ স্টার।
কিন্তু দেখ, অই মেয়েটা বাধ্য হয়ে যে কাজ করে চোখের জল ফেলতে হয়। লজ্জায় মাথা নতো রাখতে হয়, তাকে কিন্তু মানুষের খারাপ খারাপ কথাও শুনতে হয়। আবার এই মানুষ গুলাই ঘরে বসে বেবি ডল গান বাজিয়ে মাথা ৩৬০ ডিগ্রীতে রাউন্ড খাওয়াতে মজে থাকে।
এই লোকটার স্ত্রীও হয়তো কোন বাসা বাড়িতে কাজের বুয়ার কাজে লেগে যাবে। খেতে হবে কতো লাত্তি, থাপ্পর, শুনতে হবে গালি আর তা পেটের দায়ে সইতে হবে নিভৃতে। কিন্তু মাস শেষে ঠিক তারিখে আর তার টাকা পাওয়া হয়না আর পেলেও সেই টাকা তার মাসের খরচের তিনভাগের একভাগও না।
কিন্তু?
এই দেশেরই হাযার হাযার মানুষ লন্ডন আমেরিকায় গিয়ে ল্যাট্রিন, ম্যানহোল, পরিষ্কার করে আর রেস্টুরেন্ট এ পেয়াজ কেটে আজ দেশে বিল্ডিং বানিয়ে ফেলছে, প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেছে। হায় আফসোস আমাদের দেশের অনেক মা পেটের জ্বালায় নিজের সন্তান গর্ভে থাকতেই বিক্রী করে দিচ্চে।
আমাদের দেশ এতোটাই গরীব যে এ দেশে আরাম আয়েশ করে বিলাশ বহুল জীবন কাটাতে হলে তোমাকে মন্ত্রী হতে হবে। বাংলাদেশে পদ্মাসেতু নির্মান করার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে দেশে ভিক্ষা না চেয়ে যদি একবার ওনার মন্ত্রীদের বলতেন পদ্মাসেতু নির্মানে তুমরা সাহায্য করো! তাহলে এতোদিনে পদ্মাসেতুর ভিত্তি নির্মান হয়ে যেতো। কিন্তু না, এবার অর্তনীতিতে নোবেল পেলেন জাঁ তিরোয়ে আর যদি অর্তক্যালেংকারীতে নোবেল দেয়া হতো তাহলে পদ্মাসেতুর উছিলায় বাংলাদেশে বেশ কয়েকটা নোবেল চলে আসতো ঠিকই।
ডাঃ সজাদ হঠাৎ তার কথা থামিয়ে দিয়ে বলেন, কী অবস্থা সাইফুল লাশের রিপোর্ট তৈরী করে ফেল। জ্বী স্যার। কিন্তু স্যার লাশের একটা জিনিস আগে খেয়াল করা হয়নি, মাত্র ধরা পড়েছে।
কেন কী হয়েছে? ডাক্তার সাজাদ বললেন।
না মানে স্যার, লাশের একটা কীডনি মিছিং। বেশ অনেকদিন আগে লোকটা তার কীডনি এবরশন করিয়েছিল সম্ভবত আর অন্য কীডনিতেও ইনফেকশন ধরা পড়েছে। লোকটাতো এমনিতেই মারা যেতো কিছুদিন পর।
ডাঃ সাজাদ হেসে ফেললেন। আর বললেন আহা এটা গল্প হতেও পারতো।
বিষয়: সাহিত্য
১৭৩০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চোখের জলে ধুয়ে দিলাম সাইফুলের মরদেহ
লাখো সাইফুল লাইনে আছে- খবর কি রাখে কেহ??
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আর অবশ্যই অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে আমাকে অণুপ্রেরনা দেয়ার জন্যে।
আবারো ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন