কোরআন দিবসে কোরআনের আরেক পাখির শাহাদাত
লিখেছেন লিখেছেন ইঁচড়ে পাকা ১১ মে, ২০১৬, ০৬:২৪:৫৮ সন্ধ্যা
১১ মে ১৯৮৫ ইং।
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি মিসেস খাস্তগীরের আদালতে কুরআনের সকল আরবী কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশের প্রতিবাদে বিকাল ৩ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে এক প্রতিবাদী জনসভার আয়োজন করা হয়।
প্রতিবাদ কমিটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডেকে চাপ দিয়ে সভা স্থগিতের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয় এবং প্রশাসন নিজ উদ্দোগে সভা স্থগিতের ঘোষণা মাইকিং করতে থাকে। কিন্তু সাধারন জনগন ও ছাত্ররা প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। উচ্ছসিত জনতার মিছিল শ্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
এ সময় কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট ওহেদুজ্জামান মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে জনতাকে গালি গালাজ করতে থাকে এবং কোনভাবেই এখানে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানায়। এ পরিস্থিতিতে মাওলানা ইসারুল হক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শুধুমাত্র মুনাজাত করেই সভা শেষ করে চলে যাওয়ার অনুমতি চান। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ওহেদুজ্জামান মোল্লা এ আবেদন প্রত্যাখান করে ।
এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠি চার্জ শুরু করলে জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাজিস্ট্রেট নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে নির্দেশ দিলে ঘটনা স্থলেই এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে ৮ জন মৃত্যু বরন করে।
পুলিশের নিশৃংসতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, গুরুতর আহতদের নিয়ে রাজশাহী হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যখন থানার সামনে দিয়ে একটি বাস যাচ্ছিল তখন সেই বাসেও তারা হামলা চালায় এবং গুলি করে একজনকে হত্যা করে এবং হেলপারসহ অনেককে আহত করে।
এই দিনে এদেশের ইসলাম প্রিয় জনতা প্রমাণ করে ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোন ষড়যন্ত্র নিজের জীবন দিয়ে হলেও তারা প্রতিরোধ করবে ইনশাল্লাহ। বিশ্ব মুসলিমের প্রতিবাদের মুখে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ মামলাটি খারিজের জন্য এটর্নী জেনারেলকে নির্দেশ দেয়। ১৩ই মে কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বি. সি. বসাকের আদালতে স্থানান্তরিত হলে মামলাটি তিনি খারিজ করে দেন।
উল্লেখ্য, ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮৫ সালের ১০ ই এপ্রিল । পদ্মমল চোপরা ও শীতল সিং নামের দুই ব্যাক্তি কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি মিসেস খাস্তগীরের আদালতে কুরআনের সকল আরবী কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানিয়ে একটি রীট আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ১২ই এপ্রিল’৮৫ বিচারপতি তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভারতসহ সারা বিশ্ব প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের মুসলিম জনতাও এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকে মিছিল সমাবেশের মাধ্যমে।
সেদিন যারা শাহীদ হলেন কোরআনকে ভালোবাসার অপরাধে-
১. শহীদ আব্দুল মতিন-১০ ম শ্রেণী (ছাত্র)
২. শহীদ রাশিদুল হক-১০ ম শ্রেনী (ছাত্র)
৩. শহীদ শীষ মোহাম্মদ- ৯ম শ্রেণী (ছাত্র)
৪. শহীদ সেলিম-৮ম শ্রেণী (ছাত্র)
৫. শহীদ শাহাবুদ্দিন-৬ ষ্ঠ শ্রেণী (ছাত্র)
৬. শহীদ আলতাফুর রহমান - কৃষক
৭. শহীদ মোক্তার হোসেন - রিক্সাচালক
৮. শহীদ নজরুল ইসলাম - রেল শ্রমিক
কোরআনের পাখিদের এই শহীদী মিছিলে আজ যুক্ত হল আরেকটি নাম। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার, আলেমে দ্বীন, কোরআনের আন্দোলনের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
যিনি তার গোটা জীবনটাই বিলিয়ে দিলেন কোরআনের রাজ কায়েমের আন্দোলনের পথে। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত অকাতরে সময়, শ্রম, মেধা এবং মননকে আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ব্যয় করেছেন। জীবনের সর্বশেষ ছয়টি বছর কাটিয়েছেন জালিমের কারাগারে।
যেই কোরআনের সম্মান রক্ষার জন্য জীবনের সকল প্রচেষ্টা সেই কোরআনানুভুতিতে আঘাত দেওয়ার হাস্যকর এবং মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন ২০১০ সালের জুন মাসে। অতঃপর আগস্টে সাজানো যুদ্ধাপরাধের মামলা যেটা সাজাতে সময় লাগে দীর্ঘ ছয়টি বছর। কিন্তু তবুও মিথ্যার মাঝে ফাঁক-ফোকর থাকেই। আর তাই কোন মামলাই ধোপে টেকাতে পারেনি সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। কিন্তু তাদের সাথে আছেন তাদের পোষা বিচারপতিগণ। সুতরাং, রায় একটাই- ফাঁসি।
কোরআনের আন্দোলনের সাথে থাকার চুড়ান্ত তৃপ্তি শহীদী মৃত্যু। আল্লাহ তাকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন