ওলামা লীগের ব্যানারে আ.লীগের সমাবেশে যায় হুজি জঙ্গিরা?

লিখেছেন লিখেছেন ইঁচড়ে পাকা ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:৫৫:৩০ রাত

রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অভিযুক্ত আসামি আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদারকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গতকাল দুপুরে র‌্যাব হেফাজতে থাকা আবু বকর সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ও হুজির আরেক সদস্য আহসান উল্লাহ কাজলসহ আরও কয়েকজন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে আওয়ামী ওলামা লীগের ব্যানার নিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে শেখ হাসিনার সমাবেশে গেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার র‍্যাবের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আবু বকরকে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে র‌্যাব-১০-এর একটি দল ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। বকর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য। তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হামলায় গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিলেন। দুবার আফগানিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

২০০৮ সালে আদালতে সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্র অনুযায়ীও, ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় যে কয়েকজন গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিলেন, তাঁদের একজন আবু বকর।

তিনি দাবি করেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সকালে তাঁর পূর্বপরিচিত হুজির নেতা কাজল তাঁকে ফোন করে ‘প্রোগ্রাম আছে’ বলে জানিয়ে ঢাকায় আসতে বলেন। তখন তিনি কিশোরগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ঈশা খাঁ পরিবহনে সকাল ১০টার দিকে রওনা দেন। সাড়ে ১২টার দিকে গুলিস্তানে নামেন।

আবু বকর বলেন, ঢাকা পৌঁছানোর পর তাঁকে দুপুরে খাওয়ান হুজি নেতা কাজল। বিভিন্নজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর প্রেসক্লাবে গিয়ে তাঁরা আসরের নামাজ পড়েন। সেখানে ওলামা লীগের সভাপতি আখতার হোসেন বুখারি ও গাজীপুরের জয়দেবপুরের একটি মসজিদের ইমামসহ ৪০-৫০ জন টুপি পরিহিত লোক ছিলেন। এরপর তাঁরা সবাই ওলামা লীগের ব্যানারে মিছিল নিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা এগিয়ে যাও, আমরা আছি তোমার সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দিকে যান। সেখানে যখন পৌঁছান তখন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এরপর শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপর আবু বকর দৌড় দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে যান। সেখানে মাগরিবের নামাজ পড়ে কিশোরগঞ্জে চলে যান।

তবে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্য আসামিদের জবানবন্দি ও সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২১ আগস্ট সকালে রাজধানীর বাড্ডায় কাজলের বাসায় হামলায় অংশগ্রহণকারী সবাই একত্র হন। তাঁদের মধ্যে আবু বকরও ছিলেন। ওই বাসায় তাঁরা দুপুরের খাবার খান। তারপর কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে হামলাস্থলের দিকে রওনা হন।

কেবল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাই নয়, আবু বকর ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। এ মামলায় মুফতি হান্নানসহ যে আটজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, তাঁদের একজন বকর।

গ্রেপ্তারের পর আবু বকর জানালেন, এই কয় বছর তিনি রাজধানীর বাদামতলীতে ফলের ব্যবসা করেছেন। থাকতেন কেরানীগঞ্জে। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ধারণ করেছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভুল, শুধু আমি ওদের (হুজি) সঙ্গে মিছিলে গেছিলাম। আমি কোনো গ্রেনেড মারি নাই।’

কাউকে গ্রেনেড মারতে দেখেছেন কি না, জানতে চাইলে আবু বকর বলেন, ‘কাউকে গ্রেনেড মারতে দেখিনি।’ রমনা বটমূলে বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। তবে কাজল যে হুজি নেতা, সে পরিচয় তিনি আগে থেকেই জানতেন। কাজল তাঁকে আখতার হোসেন বুখারির সঙ্গে ওলামা লীগে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

আবু বকরের বক্তব্যের সূত্র ধরে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওলামা লীগ নেতা আখতার হোসেন বুখারির সঙ্গে মুঠোফোনে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রসঙ্গটি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তারপর বলেন, ‘আমি রিকশায় করে যাচ্ছি। কিছু কথা স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। তাই এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’ আবু বকরকে চেনেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নামাজের সময় হয়েছে, এখন কথা বলতে পারব না।’

পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আবার আখতার হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, আবু বকর বা হাফেজ সেলিম নামে তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করতে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। অনেকেই মিছিলে আসে। এই সবার নাম তো মনে রাখা সম্ভব না।’

আবু বকর বরিশাল সদর থানার চর আবদানী গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে। তাঁকে গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাব রমনা থানায় হস্তান্তর করেছে।

এ ছাড়া আবু বকর যে কাজলের কথা বলেছেন, তাঁর বাড়ি ফরিদপুর শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে। তিনিও ২০০৬ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে এক বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।

আনসারুল্লাহর এক সদস্য গ্রেপ্তার: আরেক জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক সদস্যকে গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাঁর নাম মোরশেদ আলম। তিনি আনসারুল্লাহর প্রচার শাখার প্রধান বলে জানিয়েছে ডিবি।

এ বিষয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন মোরশেদ। এরপর একটি মুঠোফোন কোম্পানিতে চাকরি নেন। পাশাপাশি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রচার শাখার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তাঁর ১১৭টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তিনি বিভিন্ন নামে ব্লগে লিখতেন। গ্রেপ্তারের পরে মোরশেদ আলমকে আদালতে নেওয়া হলে আদালত পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

রিমান্ডে পাঁচ জেএমবি: সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ৩১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ জেএমবি সদস্যকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে সিরাজগঞ্জ রেল পুলিশ। গতকাল আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই জঙ্গি হলেন আবদুন নুর, নুরুজ্জামান আরিফ, নুর ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ ও ফারুখ আহম্মেদ।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/364507/%E0%A6%93%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86.%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BFhttp://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/364507/%E0%A6%93%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86.%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BF

বিষয়: বিবিধ

১১৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File