ইসলামিক প্রেম থেকে ফেরা
লিখেছেন লিখেছেন ইঁচড়ে পাকা ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:১৭:৫৯ সকাল
যখন স্কুলে পড়তাম, তখন থেকেই খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আমার স্কুলের দুষ্টের শিরোমনিতে পরিণত হলাম। হাইস্কুলে উঠতে না উঠতেই ইভটিজিং এও পারদর্শীতা অর্জন করে ফেললাম। আমার কয়েকটা বন্ধু তখন থেকেই প্রেম করতো। অনেকেই সিগারেট খাওয়া শুরু করে দেয় ঐ সময়ে। আমি অবশ্য সিগারেট খাওয়া বা প্রেম করা এগুলো না করে আমার ইভটিজিং কর্মসূচীতে মনোনিবেশ করলাম। মাঝে মাঝে তাবলীগের গাশতে বসা, তিনদিনের জামায়াতে যাওয়া ইত্যাদি কাজে আমি জড়িত ছিলাম। আর যাই করি না কেন, আমার ঈমান কিন্তু ঠিক ছিল।
যখন কলেজে উঠলাম, তখন এই ইভটিজিং করতে আর মন সায় দিত না। মেয়েদেরকে দেখলে কেন যেন ভালো লাগা শুরু করল। প্রেম করতাম না ঠিকই কিন্তু মেয়েদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, কল্পনার রাজ্যে তাদের নিয়ে সাঁতার কাটতাম। অবশেষে আসলো আমার ছাত্রজীবনের সেরা সাফল্য – বুয়েটে চান্স পাওয়া।
বুয়েটে চান্স পাওয়ার পর মেয়েদেরকে দেখলে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভাব আসতে লাগলো। কেন জানিনা। তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম।
একটা অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এবং তার পরবর্তী পর্যায়ঃ
লেভেল ১ এর শেষের দিকে একটা ললনা এসে একটা কাগজ দিয়ে বললো পড়ে দেখতে। মেয়ে দেখলে এমনিই লজ্জা করতো। তার উপর আবার চিরকুট দিয়ে বলে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে দেখতে। আমি ভীষণ অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম। ধীরে ধীরে চিরকুট খুলে দেখলাম। প্রথমে আমার বেশ কিছু প্রসংশা, তারপর মেয়েটির আমাকে ভালবাসার কথা। আমি চিঠিটা পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম। ঐ মুহূর্তের আমি কী করেছিলাম, তা আর কখনো মনে করতে পারি নাই। পরদিন থেকেই প্রেমে নেমে পড়লাম।
আমার জীবনে শুরু হয়ে গেল এক অভূতপূর্ব বিপ্লব।
আমার কেয়ার করার মত একজন মানুষ পেলাম। প্রথম প্রথম যখনই সময় পেতাম, সারাক্ষণই ফোনে কথা বলতাম, এক প্রকার ওকে বিরক্ত করে মারতাম। দিন যাওয়ার সাথে সাথে এই প্রবনতা একটু একটু করে কন্ট্রোলে আসলো। ধীরে ধীরে আমি অন্য মানুষে পরিণত হতে শুরু করলাম। পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ খুজেঁ পেলাম। একমাত্র সেই এর ক্রেডিট প্রত্যাশী। ঐ টার্মে ভালো করতে না পারলেও ২য় টার্মে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ১ম ও ২য় আমরা দুইজন হলাম। যখন ওকে নিয়ে ঘুরতাম, সবাই কেমন কেমন করে তাকিয়ে থাকতো। আমার খুবই বিরক্ত লাগত। একদিন ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে হিজাব পরতে রাজি করালাম। এর পাশাপাশি তাবলীগ করতাম। মাঝে মধ্যে তিনদিনের জামায়াতে যেতাম। তিনদিন যেন তিন মাসের মত লাগতো। নিয়মিত নামাজ পড়তাম, ওকে নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতাম। প্রথম দিকে নামাজ পড়তে অনীহা প্রকাশ করতো। বাসায় থাকা অবস্থায় নামাজ পড়তে রাজী হল। কিন্তু ক্যাম্পাসে নামাজের ব্যাপারে ওকে অভ্যস্ত করাতে আমার অনেক দিন লেগে গেল। আমার ইভটিজিং এর প্রতি ঘৃণা জন্মানোর মতো কঠিন কাজটি সে করলো। এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ধুমপান শুরু করতে গিয়েছিলাম। ওর প্রচেষ্টায় ধুমপান থেকে বেঁচে গেছি।
এভাবে আরো এক টার্ম পার হয়ে গেল। এরপরই একদিন আসল সত্যের সন্ধান পেলাম। আমার এক বন্ধুর কাছ থেকেই প্রথম ইসলামিক প্রেম সম্পর্কে জানলাম, শিখলাম এবং বুঝলাম। আমার বন্ধুর কয়েকটা কথা আমার বুকে আঘাত করলো।
প্রথমটা হলো,
তোমরা জেনার ধারে কাছেও যেও না।– আল-কোরআন
দ্বিতীয়টা হল,
কোন নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়লে কালবিলম্ব না করে দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। কারন প্রথম দৃষ্টি তোমার আর দ্বিতীয় দৃষ্টি শয়তানের।– আল-হাদীস
তৃতীয়টা হল,
যখন স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন দুইজন পুরুষ ও মহিলা একাকী বসে থাকে, তবে তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত থাকে শয়তান।– আল-হাদীস
চতুর্থটা হল, রাসুল (সঃ) বিয়ের উপযুক্ত হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথার বলেছেন। এক্ষেত্রে প্রেমের কোন স্তরের কথা বলেননি।
পঞ্চমটা হল, কাউকে পছন্দ হইতেই পারে, এটা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে প্রেম নয়, বিবাহই হল সমাধান।
আল্লাহ আমাদেরকে এই ইসলামিক প্রেম থেকে হেফাজন করে আল্লাহর প্রেমে ডুবে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২২০৯ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজকাল প্রেমটাকে সবাই হালাল করে নিচ্ছে।মেয়ে ইসলামিক ছেলেও ইসলামিক সমস্যা কোথায়????সমস্যা তো এখানেই...
সে বা তারা নাফসানিয়াতের আনুগত্য করছে।
এটা হারাম,সুস্পষ্ট হারাম।বিয়ের আগে কন্ঠ শোনা,দেখা.......ইত্যাদি কে হালাল করল?????????????
ঠিক যেমন ঘোড়ার আগে গাড়ি...
ঠিক তেমন বিয়ের আগে প্রেম...
আতিসত্বর ঘোড়ার পেছনে গাড়ি ঠিক করে নিন নাইলে যেকোন সময় Accident হতে পারে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন