আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনকে ভগবান, ঈশ্বর, গড বা খোদা বলে ডাকা প্রসঙ্গ

লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুর-রহমান ১৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:০৭:১৩ রাত

“ওয়ালিল্লাহিল আছমাউল হুসনা ফাদ উ হু বিহা ওয়াজারুল্লাজিনা ইউল হিদু না ফি আছমা ইহি ছাইউজঝাউনা মা কা নু ইয়ামালুন” সুরঃ আ রাফ, আয়াতঃ ১৮০


আল্লাহ্‌ শব্দটি মহান স্বত্বার ইছমে “যাত”। আল্লাহর এই স্বত্বা মূলক নামটি পবিত্র কুরানে ২৫৮৪বার উল্লেখ রয়েছে। হাদিস শরীফে ও ইহার কোন প্রতিশব্দ উল্লেখ করা হয়নি। আল্লাহ্‌ শব্দটি তুলনা রহিত এমন এক অনুপন মহা স্বত্বার ইছমে “যাত”, যার কোন লিঙ্গান্তর, ভাষান্তর, ভাবান্তর, অর্থান্তর ও বচনান্তর অকল্পনীয়। এ “যাত” নামটি হচ্ছে সর্ব প্রকার সম্বন্ধ রহিত একক ও অনুপম।

আল্লাহ্‌ কোনক্রমেই হিন্দুদের ভগবান, খ্রিষ্টান বা পৌত্তলিকদের ঈশ্বর ইংরেজদের গড বা ইরানিদের খোদার প্রতি শব্দ নয় এমনকি আল্লাহ্‌ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে এগুলোর প্রয়োগ বা প্রয়োগের কল্পনাও করা যায় না। কেননা আছমায়ে হুছনার মাঝে এ শব্দ গুলোর কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না এবং ভগবান, ঈশ্বর, গড ও খোদা শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দও রয়েছে। ইরানের অগ্নি পুজকদের ব্যবহৃত পাহলভী ভাষায় খোদা (স্বয়ম্ভু) শব্দ আমাদের মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আছামায়ে হুসনার বহির্ভুত খোদা শব্দটি গ্রহন করলে ভগবান, ঈশ্বর ও গড শব্দ গ্রহনের পথ উম্মুক্ত হয়। সাতশত খৃষ্টাব্দে ইরান হতে আগত ধর্ম প্রচারক মুসলমান ও বণিকদের মাধ্যমে ভারত বর্ষে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে বলে এদেশের মানুষ আল্লার পরিবর্তে খোদা শব্দের ব্যবহার শিখে। বিভিন্ন সময় বই পত্রে লিখায় ও বলায় এ শব্দটির প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং গতানুগতিক ভাবে খোদা শব্দের ব্যবহার আমাদের সমাজে চলে আসে।

আমাদের সমাজে এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবি, কবি সাহিত্যিক, জ্ঞানপাপী আল্লাহ্‌, ঈশ্ব্‌র, ভগবান ও গড ইত্যাদিকে ধর্মিয় উদারতায় একাকার করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এদের কেউ কেউ আল্লাহ্‌ শব্দটিকে ভিষন সাম্প্রদায়িক বলে ঈশ্বরই গ্রহনীয় মনে করে। কিন্তু উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় ভগবান ঈশ্বর গড ও খোদা কখনও এক নয় এবং একই অর্থে ব্যবহার করা মারাত্মক অপরাধ। অতএব আমাদের ঈমান আকীদার স্বার্থে ও ইসলামী সংস্কৃতি রক্ষার্থে বিজাতীয় শব্দ গুলোর পরিবর্তে আল্লাহ্‌ শব্দটি তামাম দুনিয়ার মুসলমানদেরকে একই ভাষায় এবং একই শব্দে উচ্চারণ করা উচিৎ।

সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে রাসুলে কারিম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্‌ পাকের ৯৯টি ছিফাতী নাম রয়েছে এগুলাকে যে আয়ত্ত করে নিবে সে পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করেবে; তবে এ ছিফাতী নাম গুলো তাঁর একক আল্লাহ্‌ শব্দকে পুরোপুরি ধারন করার ক্ষমতা রাখে না এবং আল্লাহ্‌ শব্দের পুর্ন মূলভাব প্রকাশ করতেও পারে না; কেননা ছিফাতী নামগুলো আল্লাহ্‌র প্রকৃত স্বরূপ নয়। কারন গুণ থেকে বস্তু সম্পুর্ন পৃথক হয়ে থাকে। শিখার জ্যোতি যেমন শিখা নয়, আল্লাহ্‌র গুণও তেমনি আল্লাহ্‌ নয়; শুধুমাত্র ইছমে যাতের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের কিছু আসমায়ে হুছনা রয়েছে সে সমস্ত আসমায়ে হুছনা গুলো একমাত্র আল্লাহ্‌র স্বত্বার সাথেই নির্দিষ্ট যা হাদিসের মাধ্যমেন জানা যায়; যখন কেউ আল্লাহ্‌কে ডাকবে তখন এসব নামেই ডাকা অপরিহার্য। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে যে আল্লাহ্‌র জন্য রয়েছে আসমায়ে হুছনা কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত ইছমে যাত ও ইছমে ছিফাতকে পরিবর্তন করে নিজেদের ইচ্ছা মত অন্য যে কোন নামে খেয়াল খুশিমত ডাকে শিঘ্রই তারা তাদের কৃত কর্মের ফল পাবে।

কুরআন ও হাদিসে বর্নিত আল্লাহ্‌ ইছমে যাত ও ইছমে ছিফাতের পরিবর্তন করে সঠিক অর্থ ছেড়ে তাতে এদিক সেদিক করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন জুড়ে দেওয়াকে কোরআনের পরিভাষায় এলহাদ বলে। যারা আল্লাহ্‌ তাআলার আছমায়ে হুছনার ব্যাপারে বাঁকা পথ চলে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হেদায়েত আল্লাহ্‌ তাঁর নবীকে দান করেছেন। কুরআন ও হাদিসে বর্নিত ইছমে যাত ও ইছমে ছিফাতকে বাদ দিয়ে অন্য কোন নামে বা অন্য কোন গুনে আল্লাহ্‌কে ডাকার বা গুণ কির্তন করার ইখতিয়ার বা অধিকার আল্লাহ্‌ তাঁর কোন বান্দাকে দেন নাই। যেমন আল্লাহ্‌কে নূর বলা যাবে কিন্তু জ্যোতি বলা যাবে না। কারিম বলা যাবে কিন্তু সখী বা দাতা বলা যাবে না। এখানে দ্বিতীয় শব্দ সমার্থক হলেও কুরআন হাদিসে না থাকার বলা যাবে না।

আল্লাহ্‌র ইছমে যাত ও ইছমে সিফাত কুরআন ও হাদিসে বর্নিত আছে সে গুলোর মধ্যে কোন নামকে অশোভন মনে করে বর্জন বা পরিত্যাগ করা যাবে না; এতে সে নামের প্রতি অবজ্ঞা বা বেয়াদবী প্রদর্শন বুঝায়।

আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য নির্ধারিত নামে সম্বোধন করে কোন লোককে ডাকা যাবে না। যে গুলো শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ ব্যাতীত অপর কাহারো জন্য ব্যবহার করবার কোন প্রমান কুরআন ও হাদিসে নেই; সেগুলো কার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। আর যে সব নাম আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাহারো জন্য ব্যবহার করার উদাহরন কুরআন হাদিস দারা প্রামানীত সেসব নাম অন্যের জন্যও বব্যহার করা যেতে পারে। যেমন রাহিম, কারিম, রাশিদ, আজীজ আলী ইত্যাদি।

যে সব নাম আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাহারো জন্য ব্যবহার কুরআন হাদিস দারা প্রয়ামানীত নয় এবং যে গুলো একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই নির্দিষ্ট আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের জন্য এগুলো ব্যবহার করাই এলহাদ। যা একেবারেই হারাম। যেমন রাহমান, সুবহান, রাজ্জাক, খালেক, কুদ্দুস ইত্যাদি। আল্লাহ্‌ ব্যতীত ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাউকে ডাকলে হবে কুফর, আর ভ্রান্ত বিশ্বাস না হলে শেরেকী সুলভ শব্দ ব্যবহারের কারনে হবে পাপের কাজ।

অতএব; আল্লাহ্‌ শব্দের পরিবর্তে খোদা শব্দটি ভারতবর্ষে মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত হয়ে পড়েছে; বিশেষতঃ যাদের মাতৃ ভাষা উর্দু বা হিন্দি। খোদা শব্দটি যেন তাদের হাড় মজ্জার সাথে মিশে গেছে। এমন কি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের লেখা পড়া ও লিখনির মাঝে আল্লাহ্‌ শব্দের পরিবর্তে খোদা শব্দটি অত্যন্ত সম্মানের সাথে স্থান লাভ করেছে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন সময় ওয়াজ নছীহতে বিভিন্ন বই পত্রে বিশেষ করে ধর্মীয় কিতাবাদিতে আল্লাহ্‌ শব্দের পরিবর্তে খোদা শব্দ ব্যবহার করা এলহাদের অন্তর্ভুক্ত। আসুন আমরা জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে খোদার পরিবর্তে আল্লাহ্‌ পাকের ইছমে যাত ও ইছমে সিফাতের ব্যবহার করে আল্লাহ্‌র আযাব ও গজব থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা সমুহ যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

২৩৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File