পবিত্র মদিনাতুল মুনাওয়ারা (আলোকিত শহর)
লিখেছেন লিখেছেন জিসান গাজী ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৬:৫০ দুপুর
পবিত্র মদিনাতুল মুনাওয়ারা (আলোকিত শহর) যা পবিত্র মক্কা মোকাররমা থেকে সোজা উত্তরে ৪২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হজরত নূহ (আ.)-এর এক ছেলে, নাম তার ইয়াসরিব। ইয়াসরিবের বংশধরদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি মদিনায় এসে বসবাস করেন। তার নামানুসারে এ শহরের নাম ইয়াসরিব রাখা হয়। ইয়াসরিব অর্থ অভিযুক্ত করা বা ধমক দেওয়া। হজরত রসুলে আরাবি (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর আল্লাহতায়ালার নির্দেশে পবিত্র মক্কা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কথা রসুল (সা.)-কে জানিয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে যখন কাফিররা আপনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিল, যাতে তারা আপনাকে আটক রাখতে পারে অথবা মেরে ফেলতে পারে অথবা দেশান্তর করতে পারে। তারা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আর আল্লাহতায়ালা আপনার নিরাপত্তার জন্য সূক্ষ্ম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালার (নিরাপত্তার) ব্যবস্থায়ই সর্বোত্তম। (সূরা আনফাল, আয়াত-৩০)। সঙ্গে সঙ্গে রসুল (সা.) মদিনার দিকে হিজরতের নিয়ত করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, হে পালনকর্তা, আপনি আমাকে প্রবেশ করান সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে। আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য দান করুন। (সূরা বনি ইসরাঈল আয়াত-৭৯) অপরদিকে পবিত্র মদিনার বাসিন্দারা রসুলে আরাবির নাম শুনে তার অবির্ভাবের কথা শুনে নিজেদের মনের অজান্তেই রসুল (সা.)-এর সঙ্গে মুহব্বতের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আবার যখন শুনেছে রসুলে আরাবি তাদের শহরে হিজরত করে আসছেন তাদের মধ্যে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার ভেসে চলেছে।
রসুল (সা.) রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন আমর ইবনে আউফের সন্তানদের বাড়িতে অবতরণ করেন এবং তিন-চারদিন সেখানে বিশ্রামের পর মসজিদে কুবার ভিত্তি স্থাপন করেন। সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত শহর পবিত্র মদিনায় হজরত আবু আইয়ুব আনসারীর বাড়িতে থেকে দাওয়াতের কাজ আনজাম দেন। মদিনায় তাঁর আগমনে সেখানকার গাছপালা, তরুলতা, হাওয়া, মাটি- এক কথায় সবকিছু এক ঐশী সুঘ্রাণে মোহিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ আত্তার (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-এর সুগন্ধি লাভ করে সেখানকার বাতাস সুগন্ধময় হয়ে গেছে। এটা এমন এক সুগন্ধি যা মেশক, কপূর এবং চন্দনের খুশবুকেও হার মানিয়েছে। হজরত শিবলী (র.) বলেন, রসুল (সা.)-এর মদিনায় পদচারণায় সেখানকার আলো, বাতাস, মাটি এমন সুঘ্রাণ যুক্ত হয়েছে যা কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না। যারা আরেফবিল্লাহ (আল্লাহর ওলি) তারা অনুমান করতে পারেন। রসুল (সা.)-এর আগমনে যে শহরের এত গুণাগুণ তার নাম ইয়াসরিব থাকতে পারে না, তাই রসুল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে ইয়াসরিব পাল্টে মদিনা তায়্যেবা রাখেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমাকে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন মদিনা শরিফের নাম 'তাবা' রাখি। ওয়াহাব ইবনে মনদা থেকে বর্ণিত আছে তাওরাত কিতাবে মদিনা শরিফের নাম 'তাবা', 'তৈয়্যেবা' 'তাইবা' আছে। রসুল (সা.) মদিনা শরিফকে ইয়াসরিব বলে ডাকতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, যে ব্যক্তি এ শহরকে ইয়াসরিব বলবে সে যেন ইস্তেগফার পাঠ করে। (ফতোয়ায়ে শামি) বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে রসুল (সা.) বলেন, মদিনা তাইয়্যেবা মানুষের মনের ময়লাকে এমনভাবে দূরীভূত করে যেমনভাবে কামারের রেত লোহার মরিচাকে দূরীভূত করে। বুখারি শরিফের অপর রেওয়াতে বর্ণিত আছে, মদিনা শরিফ পূত-পবিত্র। তা মানুষের গুনাহকে এমনভাবে দূর করে যেমনিভাবে কামারের রেত লোহার মরিচাকে দূর করে। এই শহরে রসুল (সা.)-এর ১০ বছর অবস্থান, মসজিদে নববী, রওজা মোবারক, জান্নাতুল বাকি, শুহাদায়ে উহুদ, মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইন এবং মসজিদে সাবআ বা সাত মসজিদ ইত্যাদি স্থানের কারণে শহরটি নূরে নূরান্বিত হয়ে আছে। যদিও মদিনা শরিফে জিয়ারত হজের অংশ নয়। কিন্তু শ্রেষ্ঠতম সওয়াবের কাজ এবং বরকত ও মর্যাদা লাভের উপায়। তিরমিজি, ইবনে মাজাহ শরিফের এক রেওয়াতে হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি বিশেষভাবে পরকালে তার জন্য সুপারিশ করব। দারে কুতনিতে উল্লেখ আছে, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায় এবং রসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, আমার মিম্বর এবং রওজার মাঝখানে রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ। মুসনাদে আহমদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চলি্লশ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সঙ্গে লাগাতার আদায় করবে, তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ প্রদান করা হবে এবং সে আজাব ও নেফাক থেকেও মুক্ত থাকবে। আল্লাহতায়ালা এই পবিত্র শহরে আমাদের বারবার যাওয়ার তৌফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন