হিমুরাইজ = 08
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:০৪:২৮ দুপুর
হিমুরাইজ = 08
এখন রাত বারোটা।মিঃ আজাদ অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।ইদানিং আমার স্যারের অনিদ্রা রোগ দেখা দিয়েছে।অনিদ্রা রোগের অন্যতম কারন টেনশন আর উত্তেজনা।স্যারের এখন একটাই টেনশন শেষ পর্যন্ত মেয়ের সাথে ভালভাবে দেখা করতে পারবেনা কিনা । মেয়ের সাথে দেখার করার আনন্দে তিনি মাঝে মাঝে ভিষন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।অথচ টেনশন করা উত্তেজিত হওয়া তিনার জন্য একদম নিষেধ।ডাক্তার বলে দিয়েছেন অতিরিক্ত টেনশন আর উত্তেজনার কারনে যে কোন সময় তিনি হার্ট অ্যাটাক কিম্বা স্ট্রোক করতে পারেন।কিন্তু তিনি কোন রকম বারন না শুনে টেনশন উত্তেজনা দুটাই বেশ ভালভাবে করে যাচ্ছেন। আর এদিকে আমারও ভয় করছে না জানি কখন কি ঘটে যায় ।স্যারকে শোয়ার আগে একটা কড়া ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি।যাতে করে সকালের আগে আর ঘুম না ভাঙে।আমার মনে হয় স্যার এখন ঘুমের মধ্যে জেরিনের সপ্নই দেখছেন।রক্তের প্রতি রক্তের কি আশ্চর্য টানই না থাকে মানুষের।আজাদ স্যারকে না দেখলে তা বুঝতামই না।
একটা বই পড়ছিলাম।বইয়ের নাম ভালবাসা দাও মিসকল ফ্রি দেব।লেখক পর্বত চৌধুরী।মনে হয় মুরগা লেখক ।এই সব মুরগা লেখকদের কারনে ভাল ভাল নবীন লেখকরা সমাজে সমাদৃত হচ্ছে না।মুরগা লেখকদের বই আমার ভাল লাগেনা।তাই বইটা পড়া বন্ধ করে দিলাম।জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই গোল থালার মত চাঁদটা দেখে মন ভাল হয়ে গেল।আকশে যে দিন গোল থালার মত চাঁদ ওঠে সে দিন আমার খুব হাঁটতে ইচ্ছে করে।অনেক দিন রাত্রে হাঁটা হয়নি।আজ সুযোগটা হাত ছাড়া করা যাবে না।স্যারের ঘুম যে সহজে ভাঙবে না এটা আমি নিশ্চিৎ।বাইরে বেরিয়ে দারোয়ানকে ডেকে গেট খুলে দিতে বললাম।দারোয়ানকে বললাম হাঁটতে যাচ্ছি।সকালের আগেই ফিরে আসব।দারোয়ান যেন কিছুটা অবাক হল এত রাত্রে হাটতে যাওয়ার কথা শুনে।পিচ ঢালা রাস্তায় একা হাটছি চারিদিকে নিশ্চুপ।মাথার উপরে গোল থালার মত চাঁদ।নিজেকে এখন সব চেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে।হঠাৎ দেখি সামনের দিক থেকে কেউ একজন হেটে আসছে।কাছে আসতেই চিনতে পারলাম।বিল্টু ভাই।বিল্টু ভাইও কি আমার মত এই রাত দুপুরে হাটতে বেরিয়েছে।আমাকে এই অচেনা রাস্তায় রাত দুপুরে হাটতে দেখে বিল্টু ভাই অবাক হননি ।কারন তিনি জানেন আমি মাঝে মাঝে রাত দুপুরে রাস্তায় রাস্তায় হেটে বেড়ায়।কিন্তি বাল্টু ভাই এখানে কেন?
কি ব্যাপার বিল্টু ভাই তুমি এই রাত দুপুরে এখানে?
আর কিছু দূর গেলে আমার এক আত্বীয়র বাসা।সন্ধ্যার পরে খবর পেলাম তার খুব শরীর খারাপ।আপনার ভাবী তখনই এসেছে।আমি দোকান বন্ধ করার পরে আর কোন রিক্সা ভ্যান পেলাম না তাই সোজা হেটে চলে এসেছি।খুব ভাল করেছেন।হাটা সাস্থের জন্য খুবই উপকারী।এখন কি আমার সাথে কিছুক্ষন হাঁটবেন।না থাক আপনি ক্লান্ত তার চেয়ে আপনার আত্বীয় বাড়ি না আসা পর্যন্ত আমি আপনার সাথে হেটে যায়।বিল্টু ভাই আর আমি এখন এক সাথে হাঁটছি।এক সময় বিল্টু ভাই আমাকে বলল,আচ্ছা নীল ভাই এই যে আপনি বেকার মানুষ সময় অসময় নাই পাগলের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেন ক্যান।সত্যি করে আজ আমারে কইবেন আপনার কি হইছে?
আসলে বিল্টু ভাই আমার না হিমুরাইজ হয়েছে।
হিমুরাইজ!! এইড্যা আবার কি?ঠিক বুঝলাম না।
হিমুরাইজ একটা ভাইরাস।হিমু নামক অদ্ভুদ এক লোকের কাছ থেকে আমার এ রোগ হয়েছে।তুমি হুমায়ূন আহমেদকে চেন।উনি বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখক।জ্বী না ভাইজান চিনি না।আমি সামান্য চায়ের দোকানদার অত বিখ্যাত লেখকদের চিনব কি ভাবে কন।এই বিখ্যাত লেখকের গল্পে একটা চরিত্র আছে।যার নাম হিমু।এই হিমু ব্যাক্তির কাছ থেকেই আমি হিমুরাইজ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি।তবে পুরোপুরি নয় যৎসামান্য ।জান বিল্টু ভাই হিমু সব সময় হলুদ পান্জাবী পরে খালি পায়ে হেটে বেড়ায়।আবার মানুষের চোঁখের দিকে তাকিয়ে সে কি ভাবছে তা বলে দিতে পারে ।অথচ আমাকে দেখ আমি সেন্ডেল পায়ে হাটি গায়ে টি শার্ট।আর কারও চোখের দিকে তাকিয়ে সে কি ভাবছে তা বলে দিতে পারিনা।তবুও আমার মতে আমি কিছুটা হলেও হিমুরাইজ ভাইরাসে আক্রান্ত।ভাইরাসটা চলে গেলেই আমি ঠিক হয়ে যাব।কথা বলতে বলতে বিল্টু ভাইয়ের আত্বীয়ের বাসার কাছে চলে এসেছি।বিল্টু ভাই আমাকে কিছুতেই ছাড়বেন না।জোর করেই চলে এলাম।বাংলার যত মজার গালি বইটা মনে হয় আর লেখা হবে না।কারন বেশী গালি সংগ্রহ করতে পারিনি।সোমাকে বলেছিলাম একটু হেল্প করতে ।কিন্তু সেও কোন হেল্প করল না।আমি একটা বই লিখব খারাপ তো কিছু করছি না।অথচ দেখ এই ভাল কাজে সহযোগীতা করতে আমার পাশে কেউ নেই।এটাই যেন প্রকৃতির নিয়ম ভাল কাজে কাউকে পাশে পাবে না।
হঠাৎ দুই ছিনতাইকারী আমার পথ আগলে ধরল।হাতে ধারালো ছুরি।কাছে এসে একজন বলল,যা আছে সব বাইর কর।আমি তাদের কে লম্বা করে একটা সালাম দিলাম।কাছে একটা টাকাও নাই।নিশ্চয় আজ কপালে অনেক মাইর আছে।সাথে কিছু মজার গালি ফ্রি।এদের কাছে অস্ত্র না থাকলে একটা রিক্স নেওয়া যেত।কিরে তরে না কইলাম কাছে যা আছে সব বাইর করতে ।নাকি এই ছুরির গুতা খাইতে ইচ্ছে করতাছে।আমি অতি বিনয়ের সাথে বললাম,দেখেন ভাইজানেরা আমি বেকার মানুষ শখের বসে রাতবিরাতে রাস্তায় রাস্তায় হেটে বেড়ায়।আমার কাছে টাকা পয়সা কিছু নাই।দুজনের মধ্যে একজন বলল,দেখলে তো হাইফাই ঘরের পোলা মনে হয় কিন্তু এ দেখি ফকিরনির পোলার মত ঝুল দেয়।দ্বিতীয় জন বলল,ধইরা হালারে একটু টাইট দিয়া দেই সব ঠিক হইয়া যাইব।প্রথম জন এবার বলল,একটু খাড়া ওস্তাদ পাশের গলিতে গেছে আসুক তারপর ব্যাবস্তা নিব।কপালে আজ অনেক বিপদ।এখন মনে হচ্ছে এই রাত দুপুরে হাটতে বের না হওয়াটাই ভাল ছিল।আপনাদের ওস্তাদ কখন আসবে।তোর দরকার কি।না মানে দেরি না করে যা করার আপনারাই করে ফেলুন।মারতে চাইলে মারুন আর মজার গালি দিতে চাইলে গালি দিয়ে ছেড়ে দিন।এক জন বলে উঠল ওই তো ওস্তার আইতাছে।ওস্তাদ মাস্তান কাছে আসতেই তাকে দেখে কেমন চেনা চেনা মনে হল।হ্যা মনে করতে পেরেছি।এই টেংরী বান্দরের মূখেই আমি ঘুসি মেরেছিলাম ভুতের গলিতে।তাহলে খবর আরও খারাপ।আজ নিশ্চয় বাদরটা প্রতিশোধ নিবে।কিরে কি হইছে।ওস্তাদ এই হালারে ধরছি কিন্তু এর কাছে এক কানা কড়িও নাই।এখন কন এরে কি করুম।এবার ওস্তাদ আমার দিকে তাকালো আরে নীল ভাই আপনি কেমন আছেন ভাইজান।আমার সাথে ওস্তাদের এমন আচরন দেখে অন্য দুজন অবাক।আমি ওস্তাদের কাছ থেকে এমন ব্যাবহার আশা করিনি পাব।আপনার সাথে কি এই দুই বন্দর খারাপ ব্যাবহার করছে।এই তোরা ভাইজানের পা ধরে মাফ চা।ওস্তাদের কথা মত ওরা দুজন আমার পা ধরে মাফ চাইল।ভাইজান মনে কিছু নিয়েন না।ওরা আপনারে চিনতে পারে নি।আপনি এখন নিশ্চিন্তে বাসায় যান।আমি কোন কথা না বলে ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলাম।ভোর হতে আর দেরি নেই আজকের মত হাটা বন্ধ করে স্যারের বাসার দিকে পা বাড়ালাম।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দারুণ লিখেছেন।
হিমানীল হলে কেমন হয়?
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন