হিমুরাইজ = 07
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:০৫:২৬ সকাল
হিমুরাইজ = 07
সজিব ভাইয়ের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে মি আজাদ সাহেবের বাসায় হাজির হলাম।গেটে দারোয়ানের কাছে পরিচয় বলতেই আমাকে বসার ঘরে নিয়ে গেল।আজাদ সাহেব বসার ঘরেই ছিলেন।বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।আমি সালাম দিয়ে পরিচয় দিলাম।আজাদ সাহেবের চুল সব পেকে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে বয়স ষাট বছরের নিচেও হতে পারে আবার উপরেও হতে পারে।কেমন আছ নীল? জ্বী স্যার ভাল আপনি কেমন আছেন?আমি বেশি ভাল নেই নীল।তবে তুমি আসাতে এখন কিছুটা সস্তি পাচ্ছি।আমার সজিবের সাথে কথা হয়েছে।তোমার মত ভাল বিশ্বস্ত একজন লোকই এখন আমার দরকার।যে সর্বসময় আমার পাশে থেকে আমাকে হেল্প করবে।আচ্ছা নীল তুমি রান্না করতে জান?
সমস্যা হবে না স্যার আমি সব কিছু ম্যানেজ করে নিতে পারব।
রান্নার জন্য অবশ্য বুয়া ছিল।কিন্তু যেই আসে সেই ঘরের দামী জিনিস চুরি করে নিয়ে পালায়।তাই রাগ করে আর বুয়া রাখিনা।আজকাল বুয়াদেরও ঈমান নাই।
জ্বী স্যার।
বেতন নিয়ে ভেব না মাস গেলে পাঁচ হাজার পাবে যদি তোমাকে বেশী ভাল লেগে যায় তাহলে বেতন আরও বাড়িয়ে দেব।
আপনার মর্জি স্যার।
এই স্যার শব্দটা আমার সামনে একটু কম বলবে।কেউ আমার সামনে স্যার স্যার করলে আমার মনে হয় সে যেন আমাকে ষাড় ষাড় বলছে।
আচ্ছা স্যার।
বর্তমানে আমার শরীর খুবই খারাপ।তবে মন খারাপ নেই মন ভাল আছে।আল্লাহর কাছে দোয়া কর তিনি যেন আমাকে আর মাত্র পনের দিন বাঁচিয়ে রাখেন।
জ্বী স্যার দোয়া করব।জানো নীল পনেরো দিন পরে আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে।মেয়েকে দেখে মরলে আমি শান্তি পাব।
আপনার মেয়ে কোথায় থাকে স্যার?
আমার মেয়ে আমেরিকা থাকে ।জীবনে প্রথমবারের মত আমি তাকে দেখব।
এর আগে আর কখনও আপনি তাকে দেখেননি?
না নীল দেখিনি।
কিন্তু কেন দেখেননি।
তাহলে ঘটনাটা শোন।তুমি যখন আমা প্রাইভেট এসিসটেন্ট তখন তোমার সাথে সব কিছু খুলে বলা যায়।আমার বয়স তখন আটাশ বছর।বাড়ির অভিভাবকদের পছন্দে বিয়ে করলাম।আমার বৌ সুরমা খুবই সুন্দর ছিল।সুরমার চোঁখ দুটি দেখলে মনে হত চোঁখে যেন সবসময় সুরমা লাগানো আছে।বিয়ের প্রথম থেকেই সুরমা আমাকে কেমন যেন এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করত।ইতি মধ্যে বিয়ের এক বছর তিন মাস পার হয়ে গেছে।সেবার সুরমা বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।আর আমার কাছে ফিরে আসে নি।পরে জানলাম সুরমা আগে থেকেই একটা ছেলেকে ভালবাসত।তাকে বিয়ে করে তার সাথে আমেরিকা চলে গেছে।সেই থেকে মেয়েদের প্রতি আমার মনে এক ধরনের ঘৃনা জন্মে।তাই আর বিয়ে করা হয়নি।বাইশ বছর পরে তিন মাস আগে সুরমা আমার কাছে ফোন করেছিল।ও যা বলল তাতে আমি যেমন বিষ্মিত হয়েছি ঠিক তেমনই আনন্দিতও হয়েছি।সুরমা আমাকে বলল আমার ঔরশের সন্তান ওর গর্ভে ছিল।এবং সে এখন বাইশ বছরের যুবতী।নাম জেরিন।এতদিন আমাকে বলেনি কারন জেরিনকে যদি ওর কাছ থেকে নিয়ে আসতাম তাই।জেরিনের সাথে আমার কথা হয়েছে।ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেই আমার কাছে চলে আসবে।জান নীল জেরিন ফোনে যখন আমাকে বাবা বলে ডাকে তখন আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি আমি।জেরিনের মুখ থেকে সরাসরি বাবা ডাক শোনার জন্যই এখন আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে ।কিজানি জেরিন আসা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারব কিনা।নীল জেরিন না আসা পর্যন্ত তুমি সব সময় আমার পাশে থাকতে চেষ্টা করবে।জ্বী স্যার চেষ্টা করব।
এখন কি তুমি আমাদের দুজনের জন্য কিছু রান্নার ব্যবস্থা করবে।অবশ্যই স্যার ভাত আর ভর্তা হলে চলবে।হ্যা চলবে।
খেতে ভাল বাসে কর্তা
ভাত আর ভর্তা
বাহ চমৎকার একটা অনুকাব্য হয়ে গেল দেখছি।সজিব ভাইয়ের পাশে থেকে থেকে দেখছি অনুকাব্য লেখা শিখে ফেলেছি।আমি রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।ঠিক সময়ে স্যারকে খাবার তৈরী করে দিতে হবে।এখন সজিব ভাই ভরসা।ফোন করে তিনার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে কোনটা কি ভাবে রাধতে হয়।ভাত রান্নও ভুলে গেছি।ভাত রান্নার আগে না পরে মাড় ঝরাতে হয় সেটাও মনে করতে পারছি না।মি আজাদ আমাকে ডাক দেওয়াই রুমে এলাম।আমাকে ডাকছেন স্যার।হ্যা তোমার ফোন এসেছে আগে কথা বলে নাও।আমি ফোনের কাছে এগিয়ে গেলাম।নিশ্চয় সজিব ভাই ফোন করেছেন।ভালই হল ভাত রান্না আর ভর্তা বানানোটা শিখে নিতে হবে।হ্যালো সজিব ভাই বল।আমি তোমার সোমা ভাই বলছি।ও সোমা আমার নতুন ঠিকানার ফোন নাম্বার কোথায় পেলে।যাকে গভীর ভাবে ভালবাসি তার ঠিকানা ফোন নাম্বার জোগাড় করতে আবার সময় লাগে নাকি।আমার হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই যা বলার তাড়াতাড়ি বলে ফেল।এই বেলা বারোটার সময় তুমি আবার কি করবে।ভাত আর ভর্তা রাধব।বললে প্রাইভেট এসিসটেন্ট পদে চাকরি করছ এখন তো দেখি তা না, তুমি দেখছি বুয়া পদে চাকরি করছ।তুমি এসব বুঝবে না।প্রাইভেট এসিসটেন্ট হলে অনেক কাজই করতে হয়।এখন তাড়াতাড়ি বল ফোন করেছ কেন।সমস্যায় পড়েছি খুব।সমস্যাটা কি।আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা দোকান আছে।ওই দোকানে বসে কিছু বান্দর গোছের ছেলে কলেজে যাওয়ার সময় আমাকে ইদানিং খুব ডিস্টার্ব করছে।বল কি তোমাকে ডিস্টার্ব করছে।বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে নাকি।কি যাতা বলছ।যাতা বলছি না।আগে বল তোমাকে ওরা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে কিনা।না দেয় নি।তাহলে টেনশন কর না।বিয়ের প্রস্তাব না দেওয়া পর্যন্ত এরা কিছু করে না।তাই ওরা যখন বিয়ের প্রস্তাব দিবে সোজা রাজি হয়ে যাবে।কারন এরা যখন কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় আর সে মেয়ে যদি রাজি না হয় তখনই এরা সেই মেয়ের মূখে এসিড ছুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।আমি তোমার অত লেকচার শুনতে চাচ্ছি না।তুমি বান্দর গুলারে সায়েস্তা করতে পারবে কিনা বল।পরে বলব।এখন রাখছি ও হ্যা শোন ভাতের মাড় ঝরাতে হয় কখন রানার আগে না পরে?হ্যালো হ্যালো মনে হয় লাইন কেটে গেছে ।গুরুত্ব পূর্ন কথা বলার সময় যত সব ঝামেলা হয়।এখন সজিব ভাইয়ের কাছে ফোন করতে হবে।হ্যালো সজিব ভাই ভাত আর ভর্তা রেসিপি করব কি ভাবে তাড়াতাড়ি বল।শোন গাধারাম এখন তোকে আর ঝামেলা করতে হবে না।তোর আর আজাদ চাচার জন্য আমি দুপুরের খাবার নিয়ে আসছি।এসে ভাতা আর ভর্তা করা শিখিয়ে দেব।যাক বাবা আপাতত বাঁচা গেল।মানুষ শুধু দমেই বাঁচে না মানুষ আরও কত ভাবে বাঁচে ।যে যে ভাবে বাঁচে শুধু সেই জানে সেই বাঁচার আনন্দ কতটুকু।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অবিকল!!!! কীভাবে সম্ভব!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন