হিমুরাইজ = 05
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:২২:৪৫ দুপুর
হিমুরাইজ = 05
দুপুরে ঘুমানোর একটা মজা আছে।তবে সবদিন দুপুরে আমি ঘুমায় না।
সাধারন জ্ঞানের বই পড়ি।আজকাল সাধারন জ্ঞান না থাকলে চাকরির বাজারে দাম কম।মামু-খালু তো লাগবেই চাকরি পেতে গেলে,সাথে সাধারন জ্ঞান।আমি বুঝি না কেন এত সাধারন জ্ঞান দরকার।কোন নদীতে মাছ নেই,কোন প্রানী হা করে ঘুমায়,কোন গ্রহে পানি পাওয়া গেছে,মঙ্গল গ্রহের পাশে কোন গ্রহ এ গুলো জেনে আমাদের বাস্তব জীবনে কি এমন লাভ হবে।রোজ সাধারন জ্ঞান পড়তে ভাল লাগে না।আজ দুপুরে বিখ্যাতদের মজার ঘটনা পড়ছিলাম।মহাত্মা গান্ধীর একটা মজার ঘটনা পড়লাম যা আমার কাছে মোটেও মজার মনে হয়নি।ঘটনাটা এরকম-একদিন মহাত্বা গান্ধী চলতে শুরু হওয়া একটি ট্রেনে উঠার সময় তিনার এক পাটি চটি পড়ে গেল রেল লাইনের উপর।ততক্ষনে গতি বেড়ে গেছে ট্রেনের।ট্রেন থেকে নেমে ওই চটি আনা আর সম্ভব নয়।এমন সময় তিনি অন্য চটিটাও পা থেকে খুলে ছুড়ে দিলেন বাইরে।আর সেটি গিয়ে পড়ল আগের চটিটির কাছে।সহযাত্রীদের অনেকে অবাক।সহযাত্রীদের কৌতুহল মেটাতে গান্ধী বললেন,কোন গরীব লোক নিশ্চয় চটি জোড়া কুড়িয়ে নেবে তখন এটি তার পাদুকা হিসেবে কাজে লাগবে।একপাটি চটি তো আর কোন কাজে লাগত না।ঘটনাটা পড়ে আমি মোটেও মজা পায়নি।কারন এটি কোন মজার ঘটনায় না।আমার বেলায় এমন হলে আমিও এমনটিই করতাম।তাছাড়া গান্ধীর সহ যাত্রীরা ঘটনাটা দেখে নাকি অবাক হয়েছেন।অথচ অবাক হওয়ার মত কোন ঘটনায় এটা না।মূল কথা হল,বিখ্যাত ব্যাক্তিরা যা করেন তাই অবাক করা ও বিখ্যাত মজার ঘটনা হয়ে যায়।যদি বিখ্যাতরা একটা মশাও চড় দিয়ে মারেন তবে সেটা অবাক করা ও মাজার ঘটনা হয়ে যাবে।
এই মজার ঘটনা পড়ে বিখ্যাতদের আর কোন মজার ঘটনা পড়ার ইচ্ছা আমার হল না।ছোট খাটো একটা ঘুম দিয়ে ফেললাম।ঘুম ভেঙে দেখি বিকেল হয়ে গেছে।মনে পড়ল বিকালে সোমা আমার জন্য পৌর পর্কে অপেক্ষা করবে।কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ সোমার সাথে দেখা করব না। গেলে লাভ হত কিছু মজার গালি শোনা যেত।না গেলে মনে হয় লাভ আরও বেশি হবে। না যাওয়ার কারনে সোমা প্রচন্ড রেগে থাকবে।তখন সোমা আমাকে ফোন করে আরও বেশি বেশি মজার গালি দিবে।আমি খাতা কলম নিয়ে আগে থেকে রেডি থাকব।তবে সমস্যা আমি খুব দ্রুত লিখতে পারি না।সোমার কথা গুলো রেকডিং করতে পারলে ভাল হত।সজীব ভাইকে বলে একটা ব্যাবস্থা করে নেব।আর হ্যা মনে করে সোমার কাছ থেকে রাবিসের অর্থটা জেনে নিতে হবে।এখন কোথায় যাব তাই ভাবছি।নাকি আবার একটা ঘুম দেব।বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে যাওয়া যায়।কিন্তু সজিব ভাইয়ের জন্য যেতে ইচ্ছে করছে না।আমাকে দেখলে উনার ইদানিং অনুকাব্য বিষয়ে জ্ঞান দানের বাতিক দেখা দিয়েছে।আমার আবার অনুকাব্য-টনুকাব্য অত ভাল লাগে না।তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে,সজিব ভাই একেবারে খারাপ লিখছেন।অনুকাব্য লিখতে গেলে নাকি ছন্দে মিল রাখতে হয়।ছন্দে মিল না রাখলে অনুকাব্য হয় না।হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বের হলাম।পরিষ্কার নীল আকাশ।এমন অদ্ভুদ নীল আকাশ কারও মন ভাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।শরতের আকাশে কিছু সাদা মেঘ হলেও দেখা যায়।অথচ আষাঢ়ের আকাশে এক ফোটাও মেঘের দেখা নেই ।যথেষ্ট গরম পড়েছে।রাতে বৃষ্টি হতে পারে।গরমের যে ধরন আন্দাজ করে বললাম।মুরব্বীরা বলেন বেশি গরম পড়লে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
অনেকটা পথ হেটে কদরদের গ্রামে চলে এসেছি।ওই তো কদরদের বাড়ি দেখা যাচ্ছে।কদরদের বাড়িটা খুব সুন্দর স্থানে। আমার বাড়ি এমন স্থানে হলে নিশ্চিৎ আমি কবি হয়ে যেতাম।বাড়ির ভেতরে ঢুকে লম্বা করে একটা সালাম দিলাম।কোন উত্তর পেলাম না।আবারও লম্বা করে বললাম,স্লামালাইকুম।বাসায় কেউ আছেন?মোটা মত এক মহিলা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এল।গায়ের রং যথেষ্ট কালো।সবাই বলে কালো জগতের আলো।তবে এই মহিলা যদি কদরের সৎ মা হয় তাহলে ইনার মধ্যে কোন আলো আমার চোঁখে পড়ছে না।
আমি কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললাম,সালাম নিলে উত্তর দিতে হয়।এটা আমার সালাম না এই সালাম পীর বাবা হাকিম এ হিজবুল্লা শাহপরান কুতুবী ইলাহি রাঃ এর সালাম।পীরের কথা বললাম কারন গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ পীর ভক্ত।পীরকে তারা খুবই সম্মানের চোঁখে দেখে।পীর যা বলেন তাই শোনেন।পীরের কথা শুনে মহিলা মাথায় কাপড় দিলেন।আমি বললাম,আমি পীরের মুরিদ গহর ইলাহী।তুই কি কদরের মা?
জ্বী আমি কদরের মা।
এখনও সালামের উত্তর দিসনি কেন বাবার সালামের উত্তর দে।
কদরের মা মাথার ঘোমটা আরও টেনে দিয়ে বলল ওলেকুমসালাম।
তুই তো কদরের সৎ মা?
জ্বী ভাইজান।
পীর বাবা সব খবরই রাখেন।তিনি সব কিছুই দেখেন।তুই তো বড়ই অন্যায় করে ফেলেছিস।মূহুর্তের মধ্যে কদরের মা হাওমাও করে কান্না জুড়ে দিল।আমারে ক্ষমা করে দেন ভাইজান।আমি আর কোন অন্যায় কাম করুম না।আমি মহিলাকে শান্ত হতে বললাম।কদরের মা এখনও ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদছে।পীর বাবার কথা বলে তাকে যে এই ভাবে বস করতে পারব তা আমি কল্পনাতেও ভাবি নাই।
শোন তুই এখন থেকে কদরকে নিজের সন্তানের চেয়ে ও বেশী যত্ন করবি।
জ্বী ভাইজান করব।
কদরকে লেখা পড়া করাবি,
জ্বী ভাইজান করাবো।
পীর বাবার নামে সিন্নি দিবি।আর কাছের কোন মাজারে গিয়ে দুইটা মুরগী দিয়ে আসবি।জ্বী ভাইজান দিয়ে আসব।আমি এখন যায়।আল্লাহ তোর মঙ্গল করবে।কদরের মা চোঁখ মুছতে মুছতে বলল,কিছু মূখে দিয়া যান।আমি বললাম কোথাও গিয়ে কিছু খাওয়া বাবার নিষেধ । রাস্তায় এসে আবার হাটতে শুরু করলাম।মনটা খুব ফুরফুরে লাগছে।যাক এত দিনে অন্তত একটা ভাল কাজ করতে পেরেছি।ঘটনাটা কদরে সৎ মায়ের উপরে ভালই প্রভাব ফেলেছে।এখন থেকে মহিলা কদরকে আর বকবে না।মারবে না।কদর ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন।হাটতে হাটতে কখন যে বিল্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে চলে এসেছি নিজেও বুঝতে পারিনি।দোকানে বসতেই বিল্টু ভাই বললেন,কোথায় গিয়েছিলেন নীল ভাই?
একটা মেয়ে আপনার খোঁজ করছিলেন।সজীব ভাইও খোঁজ করে গেলেন এই মাত্র।সর্বনাশ সোমা আমার খোঁজ করতে এই দোকান পর্যন্ত চলে এসেছে।নিশ্চয় সজীব ভাইয়ের কাছেও গিয়েছিল।সোমা আমার বারোটা না বাজিয়ে ছাড়বে না।কদর আমার কাছে চা নিয়ে এলো।আমি বললাম হ্যারে কদর তোর এই চাকরী করতে ভাল লাগে?
ভাল না লাগলেও তো করতে হবে ভাইজান।শোন কাল থেকে তোকে আর এই চাকরি করতে হবে না।তুই স্কুলে ভর্তি হবি।নিয়মিত স্কুলে যাবি।ভাল করে পড়ালেখা করবি আর বড়দের কথা শুনবি।আমার কথা যেন কদরের বিশ্বাস হচ্ছে না।আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলি, কিরে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা।
হ নীল ভাই বিশ্বাস হইতাছে আপনার সব কথায় আমার বিশ্বাস হয়।
তোর জন্য খুব খারাপ লাগছে কদর কাল থেকে আর তোর সাথে দেখা হবে না আমার।
আমারও খুব খারাপ লাগতাছে নীল ভাইজান।সমস্যা নেই আমি মাঝে মাঝে তোদের ওদিকে হাটতে যাব।তখন তোর সাথে দেখা করে আসব।এখন আমার সাথে চল দুজনে চটপটি খেয়ে আসি।আমার চা খাওয়া শেষ।আমি বিল্টু ভাইকে বললাম কদর তোমার চাকুরী থেকে এই মূহুর্তে রিজাইন দিল।তুমি যেমন কদরকে কোন লিখিত এ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার দাওনি তেমনই কদরও তোমাকে কোন রিজাইন লেটার দিচ্ছে না।কাল থেকে কদর আর তোমার চাকরি করবে না।আমি কদর কে নিয়ে চটপটি খেতে চললাম।সন্ধ্যা হতে দেরি নেই।আকাশে মেঘ দেখা দিয়েছে।চটপটি খাইয়ে কদরকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।ইতি মধ্যে দু এক ফোটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।আমি তাড়াতাড়ি আমার ঘরে চলে এলাম।ঘরে বেশ অন্ধকার কাথাটা টেনে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।বৃষ্টির বেগ বাড়ছে মনে হয় খুব সহজে বৃষ্টি ছাড়বে না।ঘরে কিছু নেই খাবার মত।রাতে না খেয়েই থাকতে হবে।নিশ্চুপ হয়ে না শুনলে আসলে বোঝা যাবে না বৃষ্টির মধুর ছন্দ কতটা মধুর।আমি শুয়ে চুপচাপ বৃষ্টির মধুর ছন্দ শুনি।এখন রাত ঠিক কয়টা বাজে বুঝতে পারছি না।বৃষ্টির বেগ আরও বেড়েছে সাথে ঝড়ো হাওয়াও বইছে।হঠাৎ সজিব ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুললাম।প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছেন সজিব ভাই।কি ব্যাপার তুমি এই অসময়ে?তোর কাছে আসতে কি সময় অসময় লাগবে নাকি?খাওয়া দাওয়া করেছিস?না ভাইয়া করিনি।তা করবা কেন মাথায় তো শুধু হাটার চিন্তা।মনে মনে বলাম না ভাইয়া এখন হাটার চিন্তা না এখন আমার চিন্তা বাংলার গত মজার গালি নিয়ে।ভাই দুটি ছাতা নিয়ে এসেছেন বুঝলাম এখন তিনার সাথে যেতে হবে।চল তাড়াতাড়ি ইলিশ খেচুড়ি রেধেছি।ক্ষিদ লেগেছিল ভাইয়ার মূখে ইলিম খেচুড়ির কথা শুনে ক্ষিদে আরও বেড়ে গেল।কথা না বাড়িয়ে সজিব ভাইয়ের সাথে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লাম।প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি পড়ছে সাথে দমকা হাওয়া।ছাতা দিয়ে কিচ্ছু হচ্ছে না।মাথা ছাড়া সমস্ত গায়ে পানি লাগছে।সজিব ভাই আগে আর আমি পেছনে পেছনে হাটছি।আমি না খেয়ে থাকব এই কথা ভেবেই সজিব ভাই এই ঝড় বৃষ্টির রাতে আমার কাছে চলে এসেছেন।আমার প্রতি সজিব ভাইয়ের এত মমতা দেখে হু হু করে কান্না আসতে চাইল।এই বৃষ্টির মধ্যে কাদলে কেউ টের পাবে না।কিন্তু আমি কাদি না ছেলেদের নাকি কাদতে নেই।হঠাৎ এমন জোরে বাতাস আসল যে ছাতাটা হাত থেকে কোথায় উড়ে গেল বুুঝতেই পারলাম না।ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে তবুও ভিজতে কেমন জানি মজা লাগছে।ভাইয়া আমার ছাতা উড়ে গেছে।তাড়াতাড়ি আমার ছাতার নিচে আয়।মাথা ভিজাস না অসময়ে ভিজলে জ্বর হবে তো।তোকে নিয়ে আর পারি না।একটা ছাতাও ঠিক মত ধরে রাখতে পারিস না।মনে মনে বলি জ্বর হয় হোক জ্বর হলে মজা হবে তখন।সজিব ভাই সারাদিন আমার সেবা যত্ন করবেন।সোমাও আমাকে দেখতে আসবে।আমার গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠবে।কপালে হাত বুলিয়ে মাথায় পানি ঢেলে দিবে।সোমা আর সজিব ভাইয়ের ভালবাসার সেবা পেয়ে আমি আবার সুস্থ হয়ে উঠব।মানুষ ভালবাসার জন্য কত কিছুই না করতে পারে।।মানুষ কেন যে এত ভালবাসার কাঙাল হয় বুঝিনা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন