হিমুরাইজ = ০৩

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ২৫ জুন, ২০১৬, ০৪:০৫:৩২ বিকাল



আমাদের শহরে ছোট বড় অনেক গলি আছে।আসলে গলি ছাড়া শহরের কথা চিন্তাও করা যায় না।গলির জন্যই যেন শহর।আমি এখন যে গলির কাছে দাড়িয়ে আছি সে গলির নাম ভূতের গলি।সন্ধ্যার পরে সাধারনত খুব দরকার না হলে এই ভূতের গলি দিয়ে কেউ যায় না।গলিটার নাম ভূতের গলি হলেও আজ পর্যন্ত কেউ কখনও এ গলি পথে চলতে গিয়ে ভূতের দেখা পেয়েছে বলে শুনিনি।তবে কেন এ গলিটার নাম ভূতের গলি নামে পরিচিত হয়েছে বুঝি না।আমারও অবশ্য এ গলি পথে সন্ধ্যার পরে যেতে ইচ্ছে করে না।কারন হল এই ভূতের গলিতে কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা সন্ধ্যার পরে দাড়িয়ে পড়ে সিগরেট খাই,গাজা খাই আরও নানান রকম নেশা করে।ছোট খাটো ছিনতাইও করে।তবে ওরা আমাকে কিছু বলে না।আমি ওদের থেকে বড় তবুও সম্মান করা তো দূরে থাক আমাকে দেখলে বলে, আসেন নীল ভাই এক টান দিয়ে যান।মাইয়্যা মানষের মত আর কত দিন ঠোট দুইটারে রাঙা কইরা রাখবেন।সবচেয়ে খারাপ লাগে আমাকে আর সোমাকে নিয়ে যখন বাজে কথা বলে।ওরা যদি দলে ভারি না হত তাহলে মজা বুঝিয়ে দিতাম।সবাইকে চিনে রেখেছি।মজা একদিন ঠিকই ওদেরকে দেখাব।আমাকে এখন যেতে হবে সজিব ভাইয়ে বাড়ি।বিকালে আমাকে খুঁজে পাননি তাই জরুরী তলব করেছেন।বিল্টু ভাইয়ের কাছে শুনে যা মনে হল তাতে ভাব খারাপ মনে হচ্ছে।আজ নাকি সজিব ভাই মাত্রাতিরিক্ত কড়া লিকারের চাও খেয়েছেন।কি জানি কড়া লিকারের চা খেয়ে তিনার মেজাজ আরও কড়া হয়েছে কিনা।তবে এই ভেবে মনে ভরষা পাচ্ছি যে,যত গর্জে তত বর্ষে না।

Barking dogs seldom bite

ভূতের গলি দিয়ে যেতে মন চাইছে না।আবার সোজা পথে গেলে অনেকটা পথ হাটতে হবে।দুপুর থেকে হাটতে হাটতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।ক্ষিদেও পেয়েছে খুব।বিল্টু ভাইয়ের দোকানে এক কাপ দুধ চা খেতে চেয়েছিলাম কিন্তু বিল্টু ভাই যে ভাবে বললেন সজিব ভাই আমাকে খুঁজে হয়রান তাতে করে আর চা খেতে পারলাম না।অসুবিধা নাই সজীব ভাইয়ের বাসায় গিয়ে খাব।এক কাপ না চার কাপ খাব।তবে সজিব ভাইয়ের মাথা যদি ঠান্ডা থাকে।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম ভূতের গলি দিয়েই যাব।না হয় দু একটা বাজে কথা শুনতেই হবে তাতে সমস্যা কি।মাঝে-মাঝে বাজে কথা শোনাও ভাল।মাঝে-মাঝে বাজে কথা না শুনলে ভাল কথার গুরুত্ব ভাল ভাবে বোঝা যায় না।ইদানিং ছেলে গুলো আমাকে দেখলে নীল ভাই বলে না সোমা ভাই বলে ডাকে।সোমা আর আমার সম্পর্কের কথা এই টেংরী বান্দর গুলো কি ভাবে জানল বুঝতে পারছি না।আমার মনে হয় সোমা আর আমাকে এরা এক সাথে ঘুরতে দেখেছে।সোমার সাথে আমার অবশ্য দিনে একবারও দেখা হয় না।সোমাই আমাকে বলেছে,আমি তোমাকে ভালবাসি নীল।কিন্তু আমি কখনও বলিনি সোমা আমি তোমাকে ভালবাসি।এ সব ভালবাসা বাসি আমার ভাল লাগে না।সোমা আমাকে ফোন করে দেখা করতে বলে।না গেলে মরে যাওয়ার ভয় দেখায়।মেয়ে মানুষ বলা যায় না কখন কি করে বসে।কথা না শুনলে কোন দিন হয়তো সুইসাইড করে আমাকে ফাসিয়ে যাবে।কোন লম্বা লেটারে লিখে রেখে যাবে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী নিলয় ওরফে নীল।বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমি সোমাকে এড়িয়ে চলি।প্রত্যেক ছেলেরই উচিৎ মেয়ে মানুষকে এড়িয়ে চলা।কারন আমার মনে হয় পৃথিবীর বেশির ভাগ ঝামেলার উৎপত্তিকারী এই মেয়েরাই।পৃথিবীর প্রথম ঝামেলা তৈরী করেছিলেন বিবি হাওয়া,নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে।আর তিনি একজন মেয়ে।গলির মূখে চলে এসেছি সামনে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।আজ কি তাহলে টেংরী বান্দর গুলা আসেনি।গলিটা মোটামুটি অন্ধকার।গলির মাঝখানে যেই এসেছি দেখি তিন টেংরি বান্দর দাড়িয়ে আছে।কেউ একজন শিষ দিয়ে উঠল।আমি ওদের তিনজনকে ছাড়িয়ে কেবল মাত্র সামনে চলে এসেছি।এরই মধ্যে কেউ একজন বলল, দেখ দেখ সোমা ভাই যাচ্ছে।রসের নাগর যাচ্ছে কথাটি বলল অন্য আরেক জন।আবার শিষ দেওয়া শুনতে পেলাম।বান্দর গুলা শিষ দিচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না।আমি কি মেয়ে মানুষ যে আমাকে দেখে শিষ দিতে হবে।মনের ভেতর রাগ জমা হচ্ছে আমি সহজে রাগি না।রাগ মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।তাছাড়া ইসলাম ধর্মে রাগকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে।মাথায় রাগ উঠলে বসে পড়লে নাকি রাগ কমে যায়।আবার শিষ দেওয়ার শব্দ কানে আসল।আমার রাগ এখন সপ্তমে চড়েছে।বসে পড়ব কিনা বুঝতে পারছি না।টেংরি বান্দর গুলার মধ্যে এবার কেউ এক জন বলে উঠল নীল ভাই সোমা আপার ভাগ একাই নিয়েন না আমাদেরও একটু ভাগ দিয়েন।রাগ আর সংবারন করতে পারলাম না,ঘুরে দাড়ালাম।আমার ঘুরে দাড়ানো দেখে ওরা মনে হয় বেশ হকচকিয়ে গেল।আমি দৌড়ে গিয়ে এক টেংরি বান্দরের মূখে মারলাম এক ঘুসি।ও মাগো বলে টেংরি বান্দর মাটিতে বসে পড়ল।অপর দুজন ঘটনার আকষ্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েছে।তারা আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়বে নাকি দৌড় মারবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।আমি অপর দুই বান্দরের দিকে এগিয়ে যেতেই তারা দিল দৌড়।ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল যে এটা আমার কাছে কেমন সপ্নের মত মনে হচ্ছে।ওরা যে ভাবে দৌড় দিল তাতে করে আমার মনে হচ্ছে এই সব টেংরি বান্দররা খুবই ভিতু হয়।আমি কিছুটা বীরের ভঙ্গী নিয়ে ভূতের গলি পার হয়ে এলাম ।মনটা কেমন ঝরঝরে হয়ে গেল।টেংরী বান্দর গুলোর একটা শিক্ষা হয়েছে।তবে ভয় হচ্ছে পরে ওরা আবার দল বেধে আমাকে আক্রমন করে না বসে।ব্যাপারটা সজিব ভাইকে বলতে হবে।সজিব ভাই নিশ্চয় সব কিছু ম্যানেজ করতে পারবেন।ঘরে ঢুকেই সজিব ভাইকে একটা লম্বা করে সালাম দিলাম।

কিরে গাধা হাটতে বেরিয়েছিলি তাই না?ভাব ভাল মনে হচ্ছে ,সজীব ভাইয়ের রাগ মনে হয় কমে গেছে।আমি বললাম জ্বী না ভাইয়া।

মিথ্যা বলবি না।মিথ্যা কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।তবুও আমি হাটার কথা অস্বীকার করলাম।না করলে ভাইয়া আজ আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বেন।কারন তিনি আমার জন্য হাটা নিষিদ্ধ করেছেন।আমি সহজ ভাবে বললাম,ভাইয়া কদর অসুস্থ ছিল তাই ওকে দেখতে গিয়েছিলাম।কদরের খুব জ্বর।

ও হ্যা কদরকে আজ দোকানে দেখিনি।তা ঔষধ পত্র কিছু কিনে দিয়েছিস?জ্বী না।

অসুস্থ মানুষকে দেখতে গেলি আর ঔষধ কিনে দিয়ে আসিসনি,ওর তো মা নেই বাপ থেকেও নেই।আসলে তুই একটা বোকা।

কদরের জ্বর কমে গেছে ভাইয়া।

তাহলে ঠিক আছে ,এখন বোস চা খাবি?

দিতে পার,একটু লিকার কড়া দেবে ।চায়ের সাথে টাও দিও ক্ষিদে লেগেছে খুব।

তোকে এত বিধ্বস্ত লাগছে কেন মারামারি করেছিস নাকি?

তা বলতে পার একটু আধটু।

কি বলছিস!তুই মাস্তানও হয়ে গেছিস।

ঘটনা না শুনেই আমাকে মাস্তান বলা তোমার কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।

ঠিক আছে আমি চা আর টা নিয়ে আসি তুই খেতে খেতে ঘটনাটা বলিস।ঘটনার আদ্যপান্ত শুনে সজিব ভাই বললেন,তোর তো দেখছি অনেক সাহস হয়েছে।আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিষয়টা দেখব।আর ভূতের গলিতে বাদর গুলো যেন নেশা না করতে পারে তার একটা ব্যাবস্থাও করব।এখন শোন যে কথা বলব বলে তোকে তলব করেছি।জানিস তো কোন আইডিয়া মাথায় এলে তোকে না বললে মনে শান্তি পায় না।মা বাবা যে সম্পত্তি রেখে গেছে তা আমার তিন পূরুষ বসে খেলেও ফুরাবে না।ব্যাংকে যে টাকা আছে তা থেকেই ইন্টারেস আসে হাজার বিশেক টাকা।গ্রামের জমি জামা থেকেও প্রচুর টাকা পায়।আমার দ্বারা তো কোন কাজই হল না,সারাদিন ঘুরে বেড়ানো আর বিল্টু ভাইয়ের দোকানে চা খাওয়া ছাড়া।তাই ভাবছি এখন থেকে লেখালেখি করব।উপন্যাস নয় ছোট গল্প আর কবিতা লিখব।বড় কবিতাও লিখব না আমি লিখব অনু কাব্য।অর্থাৎ ছোট কবিতা।একটা প্রকাশনা খুলব খুব তাড়াতাড়ি।নিজের প্রকাশনা থেকেই বই বের করব।বড় বড় লেখকদের বইও বের করব আমার প্রকাশনা থেকে।আমি খুবই উৎসাহের সাথে বললাম,খুব ভাল হবে।তোমাকে দেশের সব মানুষ চিনবে তুমি অনেক বড় লেখক হবে ভাবতেই কি যে আনন্দ লাগছে।সজিব ভাই যে কাজই করে আমি সে কাজে সজিব ভাইকে খুবই উৎসাহ দেই।

শোন নীল আমি ইতি মধ্যে তিন তিনটি অনুকাব্য লিখে ফেলেছি শুনবি?

আরে শুনব না মানে তাড়াতাড়ি বল।

তোকে কিন্তু আমার প্রাইভেট এসিসটেন্ট করে নেব।মনে মনে আল্লাহর কাছে বললাম,হে আল্লাহ তুমি সজিব ভাইয়ের এই কথাটা অন্তত কবুল কর না।কারন সজিব ভাইয়ের প্রাইভেট এসিসটেন্ট হওয়ার ইচ্ছে আমার আদৌ নেই।শোন নীল প্রথম অনুকাব্যটা হল-

মন চাইলে

মনটা আমায় দিও

তুমি আমার

পরম আত্বীয়।

বাহ খুব সুন্দর হয়েছে সজিব ভাই।সত্যি বলছিস?সজিব ভাই আরও উৎসাহ নিয়ে পরের অনুকাব্যটি পড়তে শুরু করলেন-

বাঁশে হয় বাঁশি

বলনা একটু

ভালোবাসি।

তাড়াতাড়ি তিন নাম্বারটা বল খুবই ভাল লাগছে।তাহলে শোন-

পার্কে বসে

বাদাম বুট চিবায়

বয়স হয়ে যায় পার

তবু প্রেমের দেখা না পায়।

সত্যি সজিব ভাই এক্সসিলেন্ট।তুমি অবশ্যই পারবে বিখ্যাত অনুকাব্য লেখক হতে।

এখন তুই বল আমার প্রাইভেট এসিসটেন্ট হবি কিনা।যত দিন না তোর চাকরি হচ্ছে।পি এ আর কি হব আমি তো সব সময় তোমার কাছেই থাকি।তাছাড়া কারও পি এ হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।

তা হবে কেন তাহলে তো আর রাস্তায়া রাস্তায় হেটে বেড়াতে পারবে না।এবার যে দিন শুনব হাটতে বেরিয়েছিস সোজা পাবনায় পাঠিয়ে দেব।তখন বুঝবি কত ধানে কত চাল।

আচ্ছা ঠিক আছে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটারটা দাও কাল থেকেই জয়েন দেই।এখন আমি যায়।তুমি অনু কাব্য লেখ।লেখার সময় পাশে কেউ থাকলে লেখালেখি হয় না।লিখতে হয় একাকী নির্জনে।

তুই ঠিকই বলেছিস।শোন তোকে এখন যেতে হবে না।কাল সকালে যাস।পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমা।বলা যায় না পাজি গুলো দল বেধে তোকে আবার আক্রমন করতে পারে।সজিব ভাই একেবারে ভুল বলেনি।সারাদিনের ক্লান্তি শরীরে ভর করেছে।খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি পাশের ঘরে গেলাম ভেতরে ঘুট ঘুটে অন্ধকার।এই ঘুমের ঘোরেও আমার অন্ধকার নিয়ে কবিতা মনে পড়ে গেল।আমি মনে মনে কবিতার দুটি লাইন আওড়ালাম-

আলো বলে অন্ধকার তুই বড় কালো

অন্ধকার বলে ভাই তাই তুমি আলো।

বিষয়: বিবিধ

১১২৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373097
২৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৫
নাবিক লিখেছেন :
373102
২৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
373123
২৫ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : বেশ ভালই লাগল। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File