অপরাহ্নের ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ০২ মার্চ, ২০১৬, ০১:১৮:৫৭ দুপুর
সকাল সকাল নাপিতের কাছ থেকে চুল দাড়ি ছেটে এসে নিজেকে একটু ফ্রেশই লাগছিল।দশটার মধ্যে রোজ গার্ডেনে যেতে বলেছে তাজনীন।কিন্তু দশটা বাজতে এখনও দেড় ঘন্টা বাকি।আমার বাসা থেকে রোজ গার্ডেনে যেতে বাসে আধা ঘন্টা লাগবে।এত আগে গুছিয়ে বসে থাকতেও ভাল লাগবে না।আচ্ছা আমার এত অস্থির লাগছে কেন।নতুন প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গেলে একটা কথা ছিল।যাচ্ছি অনেক পরিচিত একজনের সাথে দেখা করতে।যে এক সময় আমার অর্ধাঙ্গিনী ছিল।এখনও যে তাজনীন আমার অর্ধাঙ্গিনী নয় এটাও তো অস্বীকার করতে পারব না।গত রাতে দীর্ঘ তিন বছর পরে তাজনীন আমার কাছে ফোন করে বলল,সোহেল কাল আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম কেন পারব না।তারপর কেমন আছ?কথাটা বলতেই ওপাশে তাজনীনের একটা দীর্ঘস্বাশ ছাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম।কেমন একটা মায়া অনুভব করলাম তাজনীনের জন্য।এই ছোট্ট জীবনে কত ঘটনায় ঘটে গেল সত্যি বলছি তবুও কখনই তাজনীনকে এতটুকুও ঘৃনা করতে পারিনি।সব মানুষের জীবনেই এমন একজন মানুষ হয়তো থাকে যারা শত কষ্ট দিলেও তাদের উপর মনে কখনই ঘৃনা জন্মে না।তাজনীনও আমার জীবনে এমন এক জন।
ক্লাসমেট তনুর ছোট বোন ছিল তাজনীন।আমার চেয়ে বছর চারেক ছোট।তনুর জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে পরিচয়।পরে প্রনয় ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার আরকি।তাজনীন খুব চটপটে ছিল আর আমি বরাবরই কিছুটা শান্ত।তনুর ছোট বোন সেই হিসেবে তাজনীনের প্রতি আমার অন্য কোন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না।একদিন তাজনীনের কাছ থেকেই পেলাম প্রেমের অফার।তারপর কেমন কেমন করে যেন ভালবেসে ফেলেছিলাম এই পাগলি টাইপের মেয়েটাকে।বিয়ে হয়েছিল দুই পরিবারের মতেই।বছর খানেক সংসারও করলাম।তারপর খুবই সামান্য কারনে তাজনীন একদিন রাগ করে চলে গেল।পরে ফিরিয়ে আনতে গেলেও আর ফিরে আসেনি তাজনীন।তারপর তিনটি বছর কিভাবে পার হল বুঝতেই পারিনি।শুনেছিলাম তাজনীন আবার বিয়ে করেছে।অথচ আমাদের ডিভোর্স হয়নি।
রোজগার্ডেন আমাদের শহরে নাম করা রেস্টুরেন্ট এবং প্রেমিক প্রেমিকাদের ডেটিংয়ের জন্য খুবই ভাল জায়গা।রোজগার্ডেনের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম অল্পকিছুক্ষন ঠিক তখনই রিকসা থেকে নামল তাজনীন, নীল শাড়ি পরে এসেছে তাজনীন।তাজনীন জানে আমার প্রিয় রং নীল।দুজনে রোজগার্ডেনের ভেতরে গিয়ে মূখোমূখি একটা টেবিলে বসলাম।বেশ কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বললাম না।আমিই প্রথমে বললাম,তারপর কেমন ছিলে এতদিন? স্মিত হেসে তাজনীন বলে তোমার কি মনে হয় কেমন ছিলাম আমি?
আমার আর কি মনে হবে বল ভাল থাকার জন্যইতো আমার কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলে।ভুল বললে সোহেল,কি জন্য যে আমি চলে গিয়েছিলাম তা আমি নিজেও হয়তো জানি না আবার হয়তো জানি।কেন চলে গিয়েছিলে জানতে পারি?সামান্যই তো একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
সামান্যই এটা আমিও জানি কিন্তু মাঝে-মাঝে সামান্য কিছুও তো মানুষের মনে বিশাল দাগ কাটে তাই না।আমি জানি সোহেল তুমি আমাকে এখনও ভালবাসো সেই আগের মতই।কিন্তু এই আমিই হয়তো তোমার ভালবাসার মূল্যায়নটা করতে পারিনি।দেখো তোমার সাথে এমন পাগলামী করার পরেও যেই তোমাকে ডাকলাম তুমি আমার ডাকে সাড়া দিলে।
তা বল কি জন্য ডাকলে এতদিন পরে।তাজনীন আবার স্মিত হেসে বলল,তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।
শুনেছি বিয়ে করেছ তা স্বামী কেমন আছে?
ভুল শুনেছ আমি বিয়ে করিনি।।তাজনীনের এই কথাটা শুনে মনে যেন কিছুটা শান্তি পেলাম।
আবার দুজনা চুপচাপ।
আচ্ছা সোহেল আমরা কি আবার এক সাথে থাকতে পারিনা?
মনে মনে তাজনীনের কাছ থেকে এমন কথায় আশা করছিলাম।নিশ্চুপ হয়ে রইলাম বেশ কিছক্ষন।তাজনীন বলল কি হল কিছু বলছ না যে।
না তাজনীন সেটা আর সম্ভব না।এক সময় তোমার আর আমার পথ অভিন্ন ছিল।তারপর তুমি তোমার পথে চলে গেছ।আমি চাই না দুটি ভিন্ন পথের পথিক আবার এক পথে হাটি।আমার কথা শুনে তাজনীন উঠে দাড়ায়।আবার একটা স্মিত হাসি দিয়ে তাজনীন বলে, থাকো তাহলে আমি যায়।তাজনীনের ওই স্মিত হাসির ভেতরে কোন দুঃখবোধ লুকিয়ে ছিল কি না সেটা বোঝার সক্ষমতা আমার হলনা।
বিষয়: বিবিধ
১০৪২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সব গল্পেশ্যাপি এন্ডিং হবে না এটাই জীবনের কঠিন বাস্তবতা.....।
লিখাটা সুন্দর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন