লেখাটা হয়তো মাকে নিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ২৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৫:২৩:৪৫ বিকাল
ছোট খেজুর গাছটায় বাশের পোতা নলটা দিয়ে টপ টপ করে রস পড়ছে।কাঁচের একটি শিশি ভাল করে ধুয়ে সেই গাছটাতে পেতে দিয়েছি।কাঁচের শিশিতে রস পড়ছে আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে চেয়ে দেখছি।মনের ভেতর চলছে অনেক জল্পনা-কল্পনা।আচ্ছা এই শিশিতে যে রসটুকু হবে সেটা দিয়ে রসের ক্ষির রাধব, না না চালভাজা করে রসের সাথে খাব।ভাবতে ভাবতে ঘুম শেষে কখন যে সকাল হত টেরই পেতাম না।দৌড়ে চলে যেতাম ছোট খেজুর গাছটার তলায়।শিশিটা ছাপিয়ে রস অনেকটাই পড়েছে নিচে।সেই এক শিশি রস বাড়িতে এনে গ্লাসে ঢালতে গ্লাসটা কোন রকম অর্ধেকটা পুরন হল।
মাকে চাল ভেজে দিতে বলতেই বলল,তোর অত রস খাবে কে?
ঘরে মুড়ি আছে মুড়ি দিয়ে খা।
আমি জেদ ধরি চাল ভাজার গুড়ো দিয়ে রস খাব।
মা বলল,ঘরে চাল আছে ভেজে গুড়ো করে খা।
শুরু হয় আমার চাল ভাজার অভিজান।
পরে মা এসে সেই অভিজান সফল করে।
সন্ধ্যায় খুব ইচ্ছে হল ভাপা পিঠা খাব।মার কাছে বায়না ধরলাম।মা বলল,বানিয়ে খা যখন যা মনে আসে বায়না।মন খারাপ করে ঘুমাতে যায়।
পরের দিন সন্ধ্যায় মা ভাপা পিঠা বানাতে বসে আমি ছোট ইদুরের মত কুট কুট করে ভাপা পিঠা খাই।মা বলে মন ভরে খেয়ে নে আর বানাতে পারব না।
লেখাটা কেন লিখছি কি জন্য লিখছি নিজেই জানিনা।বাবা বেঁচে থাকতে তিনাকে ভয়ই পেতাম।প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতাম না।বাবা মারা যাওয়ার পরে মনে হত আমার কেউ নেই।
আর এখন মনে হয় মা যদি মারা যায় আমার এই পৃথিবীতে কেউ থাকবে না।মা-বাবাকে পাগলের মত ভাল কখনই বাসিনি বরং আমার ছোট ছোট চাওয়া গুলো পূরন না করার জন্য তাদের উপর রাগই হত।
দিন দিনের মতই চলে যাচ্ছে তবু ফেলে আসা দিন গুলোর মত দিন আর কখনই পাব না।
ফোন করে মাকে বলব,মা খুব ভাপা পিঠা খেতে ইচ্ছে করছে,মা বলবে তুই তো বানাতে পারিস দুইটা পিঠা বানিয়ে খা।মা জানে না তার ছেলে রান্নার ভয়ে দু এক বেলা না খেয়েও থাকে আর পিঠা বানানোর ঝামেলা করবে কে।
সবাই ভাবে একা থাকি ভাল-মন্দ খাই তবু মোটা হইনা কেন।তাদের কি করে বলি,প্রিয় মানুষ গুলো ছাড়া গলায় ভাল-মন্দ ঢোকে কি করে রে?
মা ভাপা পিঠা বানাচ্ছে আমি ইদুরের মত কুটকুট করে খাচ্ছি আর আমি পিঠা নিজেই বানিয়ে খাচ্ছি বিষয়টা আকাশ পাতাল না?
বিষয়: বিবিধ
১০৬৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খাবারের প্রতি ক্ষানিকটা অনিহা ছোট্ট থেকেই ছিল আমার! মা কত কথা বলতেন এই জন্যে আমাকে! আজ প্রবাসে কিছু কিছু খাবার খেতে মন চায় খুউব! তখনি মায়ের কথা বেশী মনে পড়ে!
আমার 'মা' পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ 'মা'দের একজন অবশ্যই!!
ربى ارحمهما كما ربيانى صغيرا...।
মন্তব্য করতে লগইন করুন