কয়েকটি প্রজাপতি ও একটি হাওয়াই মিঠাই।
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:০৫:৫৮ সকাল
নিতু মেয়েটা যে কেমন বিয়ে ছাড়া কি ও কিছুই বোঝে না।এই মাস কয়েক ধরে একটাই কথা ওর মূখে,আমাকে বিয়ে কর।আচ্ছা এখন আমি ওকে বিয়ে করে রাখব কোথায়,খাওয়াবই বা কি?বেকার মানুষের কি বিয়ে করা মানায়।এই কথাটা আমি নিতুকে কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা।
নিতু মেয়েটাকেও দোষ দেব কি ভাবে,ওর বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।কালতো নিতু বলেই গেল আসছে নববর্ষে পাত্র পক্ষ ওকে দেখতে আসবে।এর মাঝেই আমি যেন কিছু করি।মাঝে-মাঝে নিজেকে এতটাই অসহায় মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই থাকে না।নিতুর মূখটা চোঁখের সামনে ভেসে উঠলে আবার সব ফালতু চিন্তা মন থেকে চলেও যায়।কিছু টিউশনি করে নিজের খরচটা কোন রকমে চালাই।এই শহরে পড়ানোর জন্য খরচ দেওয়র মত সামর্থ আমার মা-বাবার নাই।মাঝে-মাঝে মনে হয় শহরে না এলেই ভাল করতাম।তাহলে নিতুর সাথে পরিচয় হত না থাকত না কোন পিছু টান।আমি আর নিতু একই কলেজে পড়ি।নিতু আমার দুই ক্লাস নিচে পড়ে। এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিতুর সাথে পরিচয় তারপর মনের আদান-প্রদান।সব কিছু এত দ্রুত ঘটে গিয়েছিল যে সেই দিন গুলো আমার কাছে এখনও সপ্নের মতই মনে হয়।নিতু আর আমার সম্পর্কের তিন বছর পার হয়ে গেছে।আমি মাষ্টার্স শেষ করে এখন একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করছি।কিন্তু চাকরি যে এখন হীরার হরিন।আমি কখনই চাইনি নিতু আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে জড়িয়ে যাক।নিতু এবারও প্লান করেছিল নববর্ষের দিন পৌর পার্কের মেলায় সারাদিন ঘুরে বেড়াবে।হাওয়াই মিঠাই খাবে,ঘাসের উপরে ঘুরে বেড়ানো প্রজাপতি ধরবে।অথচ নববর্ষের ঠিক চার দিন আগে বাসা থেকে বলল,ওকে নববর্ষের দিন পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।ওর বাবা ছেলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল।ছেলে কানাডা প্রবাসী,বিয়ে করে বৌ বিদেশে নিয়ে যাবে।ছেলে যদি নিতুকে পছন্দ করে তাহলে নববর্ষের দিনই বিয়ে।আমি জানি ছেলে নিতুকে পছন্দ করবেই।কারন নিতু অসম্ভব একটা সুন্দরি মেয়ে।আমি ওর প্রেমিক বলে বলছি না সত্যি নিতু অসম্ভব সুন্দরী।
নববর্ষের দিন সকালে নিতু ফোন করে বলল,তানিম তুমি আরেক বার ভেবে দেখো।আমি নিতুকে সেই আগের কথায় বললাম।এখন আমার তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না।আসলে আমি কিছুতেই চাইছিনা নিতু আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে জড়িয়ে পড়ুক।
দুপুরের পরেই বেরিয়েছিলাম পৌর পার্কের মেলার উদ্দেশ্য।যে দিকটাতে মানুষ কম সেখানে সবুজ ঘাসের উপরে বসে ছিলাম।মনকে বোঝাচ্ছিলাম এ সব কিছু নয়।যতই বোঝায় মনকে মন কি বোঝে?
একটা ছোট ছেলে অনেক হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আমার কাছে এসে বলল,নিবেন স্যার একটা?ওর বলার ধরন দেখে একটা হাওয়াই মিঠাই কিনলাম।পিচ্চিটার কাছে জানতে চাইলাম ও প্রেম করেছে কিনা।লজ্জা পেয়ে পিচ্চিটা চলে গেল।ফোনটা বেজে উঠল।নিতু ফোন করেছে।
হ্যালো নিতু
তানিম...
শুধু আমার নামটা বলেই নিতু থেমে গেল এ পাশ থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কান্নাটাকে চেপে রাখতে নিতু অসম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি হয়তো নিতুর কান্নার শব্দ শুনতে পাব।না আমি নিতুর কান্নার শব্দ শুনতে চাই না তাই লাইনটা কেটে দিলাম।নিতুর আজই বিয়ে হয়ে যাবে।তারপর নিতু চির জীবনের জন্য আমার পর হয়ে যাবে।পর হয়ে যাওয়া কতই সহজ!
এই মূহুর্তে আমার চারপাশে কয়েকটি প্রজাপতি নেচে নেচে উড়ে বেড়াচ্ছে।ওরা কি নিতুর বিয়ের আনন্দে নেচে নেচে উড়ে বেড়াচ্ছে?
এখানে এই নববর্ষের মেলায় কত মানুষ অথচ এখানে আমার আপন কেউ নেই।এখানে আমার আপন বলতে আমার চার পাশে উড়ে বেড়ানো এই কয়েকটি প্রজাপতি আর আমার হাতে ধরে রাখা একটি হাওয়াই মিঠাই।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার এই ত্যাগ উভয়কে সাময়িক কষ্ট দিলেও অদূর ভবিষ্যতে তা দুজনের জন্যই সুন্দর সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে বিবেচ্য হবে।
মাল্টিপ্রেমের অস্থিরতা
বিয়ের কথায় ঘুরায় মাথা
মন্তব্য করতে লগইন করুন