কিছুটা শূণ্যতা
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা সোহলে ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৫৭:২৮ সকাল
খোলা আকাশ।আকাশ সব সময় কিন্তু খোলা থাকে না।আকাশ মাঝে-মাঝে ঢাকা থাকে।মেঘে ঢাকা থাকে।যখন আকাশ কাল মেঘে ঢেকে থাকে আর সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে তখন আকাশের মন খারাপ থাকে।এ জন্যই হয়তো কোন গায়ক গেয়ে উঠেছেন-আকাশের মন ভাল নেই আমাদের মন ভার নেই।সত্যি আকাশের মন খারাপ থাকলে মনটা কেমন খারাপ-খারাপ লাগে।আকাশ মুখ গুমড়া করে থাকলে মনে হয় আজ দিনটাই খারাপ যাবে।এই মূহুর্তে অবশ্য আকাশের মন খুবই ভাল মনে হচ্ছে।তবে মাঝে-মাঝে কিছু খন্ড-খন্ড সাদা মেঘ আকাশের মনটা খারাপ করার বদলে আরও বেশি ভাল করে দিচ্ছে।আকাশের মনটা বিশাল ভাল হলেও ফাহাদের মনটা আজ কিছুটা খারাপ।ফাহাদের মন খারাপের কারন আছে।যদিও অনেক সময় মানুষের মন অকারনেই খারাপ হয়।ফারহানা যখন মাঝে-মাঝে ফাহাদকে ফোনে জিজ্ঞেস করে,কেমন আছ?
ফাহাদ বলে,ভাল না।
কেন ভাল না?
মন খারাপ।
কেন মন খারাপ?
জানি না।
তখন ফারহানা বলে,আরে মন খারাপ তোমার আর তুমিই জান না কেন মন খারাপ!এটা একটা কথা হল।তখন ফাহাদ বলে,শোন ফারহানা কিছু কিছু সময় কোন কারন ছাড়াই মানুষের মন খারাপ থাকে।কিন্তু ফারহানা ফাহাদের এ কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।মোবাইলে চলে দুজনার তর্ক-বিতর্ক।এক সময় মোবাইলের চার্জ ফুরায় না হয় ব্যালেন্স।আবার কখনও নেটওয়ার্কের কারনে লাইন হয় বিচ্ছিন্ন।তবে তর্কে কখনই হারে না ফাহাদ ও ফারহানার কেউই।তবে এই তর্কের কারনে তাদের দুজনের ভালবাসায় ঘাটতিও পড়ে না কখনও।
মোবাইলে চার্জ ফুরালে শুরু হয় চার্জ দেওয়ার তোড় জোর।ব্যালেন্স ফুরালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্লেক্সি করা।নেটওয়ার্ক গেলে নেটওয়ার্ক সিলেকশনে গিয়ে নেটওয়ার্ক আনার চেষ্টা।পরে আবার যখন দুজনের কথা শুরু হয় আগের সব তর্ক বিতর্ক ভুলে গিয়ে তখন তারা বলে,
এই লাইন কাটল কেন?
ব্যালেন্স ছিল না?
চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল?
নাকি নেটওয়ার্কের সমস্যা? হবে হয়তো একটা।তবে ইদানিং নেটওয়ার্কের সমস্যাটা বেশি।আচ্ছা হারামি এই নেটওয়ার্ক।সব সময় ফুল নেটওয়ার্ক থাকতে কি হয় কে জানে।...........
সোনালী রোদে আকাশটা ঝক-ঝক করছে।আকাশের মনটা যতই ভাল হয় ফাহাদের মনটা ততই খারাপ হয়।ফাহাদের মন খারাপের কারন হল ফারহানার সাথে ওর দীর্ঘ ষোল দিন দেখাও নেই কথাও নেই।ফোনটা যে কি করেছে ফারহানা লাইনই ঢুকছে না।ওর মোবাইলে কি নেটওয়ার্ক নেই নাকি ওর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।আচ্ছা ফারহানা কেমন মেয়ে এত দিন হয়ে গেল বাইরে থেকে তো ফাহাদের ফোনে একটা কল দিতে পারত।এই মূহুর্তে ফাহাদের মনে হচ্ছে পৃথিবীতে মেয়ে জাতীরা বড়ই নিষ্ঠুর।আচ্ছা মেয়েরা সুখে থাকলে কি অন্য সবার কথা ভুলে যায়।ফাহাদের মাঝে-মাঝে খুব ইচ্ছে করে মেয়ে হতে।মেয়ে হয়ে জানতে ইচ্ছে করে মেয়েদের মনটা কেমন।আসলে ছেলেদের মনটাই বেশি ভাল বেশি আবেগ প্রনব।এই একই জন্মে কোন মেয়ে যদি ছেলে হতে পারত তাহলে হয়তো তারা ছেলেদের ভালবাসার গভীরতাটাকে বুঝতে পারত।
জনতা এক্সপ্রেস চলেছে সিলেটের দিকে।ট্রেন যখন সিলেটের হরিনাকুন্ডুতে থামল তখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে।ফাহাদ যাবে মাধব কুঞ্জে।ওখানেই নাকি ফারহানার খালার বাড়ি।ফাহাদ আর ফারহানার ভালবাসার তরী যখন পাল তুলে চলছিল তখন সেটা একান থেকে ও কান হতে বেশি দেরি লাগেনি।তাই ওর মা-বাবা সেই সাতক্ষিরা থেকে ফারহানার খালার বাড়ি সিলেটে পাঠিয়ে দিয়েছে।যাতে করে ফাহাদ ও ফারহানার ভালবাসার পাল তোলা নৌকাটা লন্ড ভন্ড হয়ে যায়।কিন্তু এই ষোল দিনে ফাহাদের ভালবাসাটা প্রচন্ড থেকে প্রচন্ডতর হয়েছে ফারহানার প্রতি।ফারহানার ও কি ফাহাদের মত একই অবস্থা?ফাহাদের তো মনে হয় না।তাহলে এতদিনে একটা কল নিশ্চয় পেত ফাহাদ।আবারও ফাহাদের মনে হল মেয়ে জাতীরা বড়ই নিষ্ঠুর।ফাহাদের যদি ফারহানার প্রতি প্রচন্ড ভালবাসা নাই থাকত তাহলে কি সে সুদূর সাতক্ষিরা থেকে এই সিলেটে ছুটে আসত।থাক এসব কথা এখন যেতে হবে মাধব কুঞ্জ।ওখানে ফাহাদের এক বন্ধু থাকে।তা ভরসায় হরিনাকুন্ডু থেকে মাধবকুঞ্জ।তা না হলে ফাহাদকে হরিনাকুন্ডুর এক হোটেলেই থাকতে হত।তাতে সমস্যা ও ছিল।হোটেল ভাড়া,আবার প্রতিদিন হরিনাকুন্ডু থেকে মাধবকুঞ্জ ষোল কিঃ মিঃ যাতায়াত খরচ।ফাহাদ শুধু এতটুকু জানে ফারহানার খালা বাড়ি মাধবকুঞ্জ।কিন্তু মাধবকুঞ্জের ঠিক কোথায় তা সে ভাল করে জানে না।ফারহানার মোবাইল খোলা থাকলে অবশ্য সমস্যা হত না।টেক্সি ক্যাবে করে ফাহাদ যখন মাধবকুঞ্জের দিকে রওনা দিয়েছে তখন পৃথিবীর বুকে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে।রাস্তার দুধারে অনেক টিলা,টিলার উপরে সুদৃশ্য চা বাগান।কিছু দূর গিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ি রাস্তা।গাছে-গাছে পাখিদের রাত্রি যাপনের ব্যস্ততা।সত্যি সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।সিলেটে এই সবুজের মেলা আর সুদৃশ্য চা বাগান কারও মন কেড়ে নিতে এক মিনিটও লাগবে না।বাসা থেকে ফাহাদ যে টাকা এনেছে তাতে করে কত দিন এখানে থাকতে পারবে কে জানে।যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ফারহানাকে খুঁজে বের করতে হবে।কত কথা জমে গেছে ফাহাদের ফারহানাকে বলার জন্য।ফারহানারও কি অনেক কথা জমে গেছে ফাহাদকে বলার জন্য।ফাহাদের তো মনে হয় না।ওর মনে অনেক কথা জমলে নিশ্চয় ফাহাদের কাছে এতদিনে একটা কল করত।একরাশ অভিমান জমতে শুরু করে ফাহাদের মনে।সুদৃশ্য নয়নাভিরাম প্রকৃতু দেখতে দেখতে ফাহাদ এসে পৌছল মাধবকুঞ্জে।
সারাদিন শুয়ে থাকা আর এই মাধবকুঞ্জ ঘুরে ঘুরে ফারহানাকে খোঁজা ছাড়া আর কোন কাজ নেই ফাহাদের।ফাহাদের বন্ধু সাম্য অবশ্য অনুতপ্ত কারন ফাহাদকে সে একদম সময় দিতে পারছে না।একটা বে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে সাম্য।এখন খুব কাজের চাপ চলছে।প্রতিদিনই অফিস থেকে ফিরতে রাত আটটা বেজে যায় সাম্যর।ফ্রেস হয়ে খেয়ে টিভি দেখতে দেখতে দশটা খুব তাড়াতাড়িই বেজে যায়।দশটা বাজলেই সাম্য ঘুমাতে চলে যায়।কিছু দিন পরে কাজের চাপ কমবে তখর সাম্য ফাহাদকে ফারহানাকে খোঁজার ব্যাপারে সহযোগীতা করবে।সাম্য অবশ্য খুব আগ্রহী ফাহাদ ও ফারহানার প্রেমের ব্যাপারে।সাম্য যে বাড়িতে থাকে সেটা একটা টিলার উপরে।চারিদিকে গাছ গাছালিতে ভরা।ফাহাদের দিন গুলো একেবারে খারাপ যাচ্ছে না।অনেক রকমের ভাবনা ভাবতে ভাবতে কখন যে সময় পার হয়ে যায় ফাহাদ টেরই পাই না।ফাহাদের ভাবনা গুলো বেশির ভাগই ফারহানাকে নিয়ে।ফাহাদের মাথায় ভাবনার নেটওয়র্ক সব সময় ফুল থাকে।
আজ ঘুরতে ঘুরতে ফাহাদ যে দিকে এসেছে সেদিকটা কিছুটা সামান্তরাল।জনবসতিও ঘনো।আন মনে হাটতে হাটতে ফাহাদ দেখতে পায় একটা দেওয়ালে লেখা আছে, ফর গেট মি আমাকে ভুলে যেও না।ফাহাদ ভাবে নিশ্চই কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার উদ্দেশ্য এই কথাটা লিখে রেখেছে।আচ্ছা এই লেখাটা তো কোন প্রেমিকা ও লিখতে পারে।না এমন স্থানে কোন প্রেমিকা এটা লিখতে পারবে না।তাছাড়া প্রেমিকদের মত প্রেমিকারা অতটা রোমান্টিক নয়।হঠাৎ এমন সময় ফাহাদের ফোনটা বেজে ওঠে।স্কিনে ফারহানার নামটা দেখে ফাহাদের মনটা আনন্দে নেচে উঠে।
কলটা রিসিভ করতেই ফাহাদ শুনতে পায় ফারহানা বলছে,ফাহাদ কেমন আছ?
তারপর হ্যালো বলতেই লাইনটা কেটে যায়।ফাহাদ অনেক চেষ্টা করেও ফারহানার ফোনে লাইন ঢোকাতে পারে না।বার বার সেই একটি কথায়,দুঃখিত এই মূহুর্তে মোবাইলে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আচ্ছা মোবাইল নেটওয়ার্ক কেন ভাবনা নেটওয়ার্কের মত হয় না?
আট বছর পর...
টেমস নদীর তীরে বসে আছে ফাহাদ।এই টেমস নদীর কারনে লন্ডন শহর অনেক বিখ্যাত।ফাহাদের যখন অতীত দিনের স্মৃতি গুলো বড্ড জ্বালাতন করে তখন সে এই টেমস নদীর তীরে এসে বসে।টেমসের নৈস্বর্গীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য ফাহাদের মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি এনে দেয়। ফারহানা শেষ যে দিন ফাহাদের কাছে ফোন করেছিল তার পরের দিনই ফাহাদের চাচাতো ভাই ফোন করে তাকে বলেছিল,তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয় ফারহানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।ফাহাদ খুব তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল।কিন্তু ফারহানার বিয়েটা থামাতে পারেনি।ফারহানার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এক প্রবসী লন্ডনী ছেলের সাথে। ফারহানার স্বামীর নাম ছিল অয়ন।পরে ফারহানা তার স্বামী অয়নের সাথে ইংল্যান্ড চলে যায়।তারপর আর কোন খোঁজ জানে না ফাহাদ ফারহানার।কোন খোঁজ রাখারও চেষ্টা করেনি সে।আর খোঁজ রেখে কি লাভই বা হত।আচ্ছা মানুষ এত লাভ লসের হিসাব করে কেন।সব প্রাপ্য কি তাহলে লাভের মধ্যে।লসের মধ্যে কোন প্রাপ্য থাকে না?
কি জানি হয়তো মাঝে-মাঝে লসের মধ্যেও কিছু প্রাপ্য লুকিয়ে থাকে যেটা দেখার চোখ সবার থাকেনা।ফারহানার বিয়ের দুই বছর পর ফাহাদ ও একটা স্কলারশিপ নিয়ে চলে আসে লন্ডনে।প্রথম প্রথম ফাহাদের শুধু মনে হত লন্ডনের এই শহরের রাস্তায় কোন একদিন মুখোমুখি হবে ফারহানার। কিন্তু আজ এই আট বছরের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ফাহাদ ফারহানাকে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখতে পায়নি।আচ্ছা দেখা হলে কি বলত ফাহাদ ফারহানাকে।কিছুই তো বলার নেই ফাহাদের ফারহানাকে। এই আট বছরে ফাহাদের একবারও যে বাসায় যেতে ইচ্ছে করেনি তা নয়।মাঝে-মাঝে বাসায় যেতে ইচ্ছে করলেও কি এক অভিমান মনে এসে জমা হত।অভিমানটা ঠিক কার উপরে তা বলতে পারবে না ফাহাদ।তবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অভিমানটা যে ফারহানার উপরে নয় তা অস্বীকার করতে পারবে না ফাহাদ।
আজকের দিনটা খুবই রৌদ্রজ্জকল।সারাদিন কর্ম ব্যস্ততা শেষে ফ্রেশ হয়ে ফাহাদ বেরিয়েছিল টেমস নদীর পাড়ে যাওয়ার জন্য।রাস্তায় হাটতে হাটতে ফাহাদ হঠাৎ একটা বাঙালী নারীকে দেখে।কাছে আসতেই ফাহাদ কিছুটা ভুত দেখার মত চমকে উঠে।নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে যায় একটা শব্দ,ফারহানা!
ফারহানাকে দেখে ফাহাদ যে রকম চমকে উঠেছে নিজের মধ্যে যে একটা অস্বাভাবিকতার অনুভুতি উপলবদ্ধি করছে কিন্তু ফারহানাকে দেখে খুব স্বাভাবিকই মনে হল।
কেমন আছ ফাহাদ?ফারহানার কথা শুনে ফাহাদ কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
হ্যা ভাল তুমি কেমন আছ?
হ্যা ভালই আছি,তারপর লন্ডনে এলে কবে,বিয়ে শাদি করনি?শুরু হয় ফারহানার জেরা করা।ফাহাদও সুবোধ বালকের মত উত্তর দিয়ে যায়।
আজ যায় ফাহাদ অয়নের সাথে একটা পার্টিতে যেতে হবে।কথাটা বলেই হাটা শুরু করে ফারহানা।চলে যাচ্ছে ফারহানা!অথচ ফাহাদের তো কিছুই বলা হল না জানা হল না ফারহানার সম্পর্কে।ফারহানাও কেমন বদলে গেছে।কেমন আলগা আলগা একটা ভাব দেখিয়ে গেল।ফাহাদকে তার বাসায় পর্যন্ত যেতে বলল না।এই যা ঠিকানাটাও তো নেয়া হল না।ফাহাদ জানে মেয়েরা বিয়ের পরে বদলে যায়।কিন্তু এতটা বদলে যায় তা জানতে পারত না ফারহানাকে না দেখলে।
টেমস নদীর তীরে বসে ফাহাদের মনে হয় কার জন্য সে এত দিন এই প্রবাসে একা কাটালো।নিজেই নিজের জীবনের হিসাব মেলাতে পারে না ফাহাদ।না আর এক মূহুর্ত নয় এই প্রবাসে।দেশে ফিরে যেতে হবে।ফিরে যেতে হবে নিজের শেকড়ের কাছে।আর নিজের শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া মানেই ফাহাদকে তার জীবনের সাথে কাউকে জড়িয়ে নিতে হবে।নিলে নিতে হবে।জীবনে নতুন কেউ এলে তার দুঃখ কষ্ট গুলোকে তো সে ভাগ করে নিতে পারবে।পাবে তো তেমন একটা জীবন সঙ্গী ফাহাদ।ফাহাদ উঠে দাড়ায় টেমস নদীর উদ্দেশ্যে সে মনে মনে বলে,বিদায় টেমস আর হয়তো কোন দিন দেখা হবে না।
ফাহাদ ঘুরে দাড়িয়ে হাটতে শুরু করে।
পেছনে তখন বয়ে চলেছে নৈস্বর্গীয় টেমস।আট বছর পর...
টেমস নদীর তীরে বসে আছে ফাহাদ।এই টেমস নদীর কারনে লন্ডন শহর অনেক বিখ্যাত।ফাহাদের যখন অতীত দিনের স্মৃতি গুলো বড্ড জ্বালাতন করে তখন সে এই টেমস নদীর তীরে এসে বসে।টেমসের নৈস্বর্গীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য ফাহাদের মনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি এনে দেয়। ফারহানা শেষ যে দিন ফাহাদের কাছে ফোন করেছিল তার পরের দিনই ফাহাদের চাচাতো ভাই ফোন করে তাকে বলেছিল,তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয় ফারহানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।ফাহাদ খুব তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল।কিন্তু ফারহানার বিয়েটা থামাতে পারেনি।ফারহানার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এক প্রবসী লন্ডনী ছেলের সাথে। ফারহানার স্বামীর নাম ছিল অয়ন।পরে ফারহানা তার স্বামী অয়নের সাথে ইংল্যান্ড চলে যায়।তারপর আর কোন খোঁজ জানে না ফাহাদ ফারহানার।কোন খোঁজ রাখারও চেষ্টা করেনি সে।আর খোঁজ রেখে কি লাভই বা হত।আচ্ছা মানুষ এত লাভ লসের হিসাব করে কেন।সব প্রাপ্য কি তাহলে লাভের মধ্যে।লসের মধ্যে কোন প্রাপ্য থাকে না?
কি জানি হয়তো মাঝে-মাঝে লসের মধ্যেও কিছু প্রাপ্য লুকিয়ে থাকে যেটা দেখার চোখ সবার থাকেনা।ফারহানার বিয়ের দুই বছর পর ফাহাদ ও একটা স্কলারশিপ নিয়ে চলে আসে লন্ডনে।প্রথম প্রথম ফাহাদের শুধু মনে হত লন্ডনের এই শহরের রাস্তায় কোন একদিন মুখোমুখি হবে ফারহানার। কিন্তু আজ এই আট বছরের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ফাহাদ ফারহানাকে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখতে পায়নি।আচ্ছা দেখা হলে কি বলত ফাহাদ ফারহানাকে।কিছুই তো বলার নেই ফাহাদের ফারহানাকে। এই আট বছরে ফাহাদের একবারও যে বাসায় যেতে ইচ্ছে করেনি তা নয়।মাঝে-মাঝে বাসায় যেতে ইচ্ছে করলেও কি এক অভিমান মনে এসে জমা হত।অভিমানটা ঠিক কার উপরে তা বলতে পারবে না ফাহাদ।তবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অভিমানটা যে ফারহানার উপরে নয় তা অস্বীকার করতে পারবে না ফাহাদ।
আজকের দিনটা খুবই রৌদ্রজ্জকল।সারাদিন কর্ম ব্যস্ততা শেষে ফ্রেশ হয়ে ফাহাদ বেরিয়েছিল টেমস নদীর পাড়ে যাওয়ার জন্য।রাস্তায় হাটতে হাটতে ফাহাদ হঠাৎ একটা বাঙালী নারীকে দেখে।কাছে আসতেই ফাহাদ কিছুটা ভুত দেখার মত চমকে উঠে।নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে যায় একটা শব্দ,ফারহানা!
ফারহানাকে দেখে ফাহাদ যে রকম চমকে উঠেছে নিজের মধ্যে যে একটা অস্বাভাবিকতার অনুভুতি উপলবদ্ধি করছে কিন্তু ফারহানাকে দেখে খুব স্বাভাবিকই মনে হল।
কেমন আছ ফাহাদ?ফারহানার কথা শুনে ফাহাদ কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
হ্যা ভাল তুমি কেমন আছ?
হ্যা ভালই আছি,তারপর লন্ডনে এলে কবে,বিয়ে শাদি করনি?শুরু হয় ফারহানার জেরা করা।ফাহাদও সুবোধ বালকের মত উত্তর দিয়ে যায়।
আজ যায় ফাহাদ অয়নের সাথে একটা পার্টিতে যেতে হবে।কথাটা বলেই হাটা শুরু করে ফারহানা।চলে যাচ্ছে ফারহানা!অথচ ফাহাদের তো কিছুই বলা হল না জানা হল না ফারহানার সম্পর্কে।ফারহানাও কেমন বদলে গেছে।কেমন আলগা আলগা একটা ভাব দেখিয়ে গেল।ফাহাদকে তার বাসায় পর্যন্ত যেতে বলল না।এই যা ঠিকানাটাও তো নেয়া হল না।ফাহাদ জানে মেয়েরা বিয়ের পরে বদলে যায়।কিন্তু এতটা বদলে যায় তা জানতে পারত না ফারহানাকে না দেখলে।
টেমস নদীর তীরে বসে ফাহাদের মনে হয় কার জন্য সে এত দিন এই প্রবাসে একা কাটালো।নিজেই নিজের জীবনের হিসাব মেলাতে পারে না ফাহাদ।না আর এক মূহুর্ত নয় এই প্রবাসে।দেশে ফিরে যেতে হবে।ফিরে যেতে হবে নিজের শেকড়ের কাছে।আর নিজের শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া মানেই ফাহাদকে তার জীবনের সাথে কাউকে জড়িয়ে নিতে হবে।নিলে নিতে হবে।জীবনে নতুন কেউ এলে তার দুঃখ কষ্ট গুলোকে তো সে ভাগ করে নিতে পারবে।পাবে তো তেমন একটা জীবন সঙ্গী ফাহাদ।ফাহাদ উঠে দাড়ায় টেমস নদীর উদ্দেশ্যে সে মনে মনে বলে,বিদায় টেমস আর হয়তো কোন দিন দেখা হবে না।
ফাহাদ ঘুরে দাড়িয়ে হাটতে শুরু করে।
পেছনে তখন বয়ে চলেছে নৈস্বর্গীয় টেমস।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লেখনি। ভালো লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন